1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০২:৩৯ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

আমার যত স্যারঃ আমাদের হল সুপারঃ প্রফেসর ডক্টর এম.এ.মজিদ: সম্মানঃ স্মরনঃ শুভ কামনা

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২১
  • ৩৬৭ বার পঠিত

:: মুজিবুর রহমান মুজিব::
শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। একজন আদর্শ শিক্ষক সোনার মানুষ তৈরীর সুমহান, কারিগর। একজন আদর্শ শিক্ষক তাঁর প্রিয় ছাত্রকে পুত্রবৎ ¯েœহ মমতা করে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করে মিত্র বৎ মানুষের মত মানুষ করে তুলেন। একজন কৃতি ছাত্রের সাফল্যে একজন নিবেদিত প্রাণ শিক্ষাবিদ জীবন যন্ত্রনা দূঃখ বেদনার মাঝে ও তৃপ্তির হাসি হাসেন, আনন্দ প্রকাশ করেন। আমাদের বাল্য-কৈশোর কাল- সেই পঞ্চাশ-ষাটের দশকে আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষা গুরু গণ সামান্য টাকা মায়নার বিনিময়ে শিক্ষা ও জ্ঞান বিস্তারে নিজেদেরকে উজার করে দিয়েছেন-উৎসর্গ করেছেন। জীবন সায়াহ্নে এসে এই পড়ন্ত বেলায় ভয়ানক বৈশ্বিক, ব্যাধি করনা আক্রান্তি মৃত্যো ঝুকির মধ্যে অবস্থান করে বার্ধক্য জনিত অসুস্থতা-দূর্বলতা এবং ব্যাধির বোঝা বইতে হইতে ক্লান্ত হয়ে যখন বাউল স¤্রাট শাহ আব্দুল করিম এর মত আমার অবস্থা “গাড়ি চলে না চলে না রে” এর মত তখন আমার বাড়ি রসুলপুর মিয়ার বাড়ির পাঠশালা থেকে আমার প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর স্যার দের কথা বার বার আমার মনে পড়ছে। আমার একটি ধারাবাহিক রচনা ছিল আমার যত স্যার”। এই শিরো নামে আমার শিক্ষা গুরুদের মধ্যে আমার পাশের বাড়ি রায়পুরের মিয়াছাব আব্দুল গফুর থেকে ঢাবি ভিসি জাষ্টিস আবু সাঈদ চৌধুরীর কর্ম ও জীবন দর্শন এর উপর কিঞ্চিত আলোকপাত করেছি। থ্রি জেনারেশনস্ টিচার শ্রদ্ধেয় প্রফেসর করুনাময় রায় আমার লেখা, গ্রহ্ণ ও বক্তৃতার পাঠক-শ্রোতা-সমর্থক-পরামর্শক ছিলেন। আমার একটি প্রবন্ধ সংকলনে আমার যত স্যার শিরোনামে প্রবন্ধ পাঠ করে আমার শ্রদ্ধেয় স্যার প্রফেসর করুনাময় রায় নীরবে অশ্রæপাত করে ছিলেন। তাঁর আনন্দাশ্রæতে বইর পাতা ভিজে গিয়ে ছিল। তিনি এখন পরলোকে। তাঁর আত্বার শান্তি ও সদগতি কামনা করছি।
আমার স্যারদের মধ্যে একমাত্র কবি ও কলামিস্ট এ.এইচ.মোফাজ্জল করিম এখনও সুস্থ। কর্মক্রম আছেন, যোগাযোগ রাখেন। খুঁজ খবর নেন। সম্প্রতি করনা আক্রান্ত হলে মহান মালিকের করুনায় সুস্থ হয়ে টিভি টক শো-তে সক্রিয় হয়েছেন। জাতীয় পত্র পত্রিকায় নিয়মিত লিখছেন। ১৯৬৪ সালে এ.এইচ. মোফাজ্জল করিম ঐতিহ্যবাহী এম.সি.কলেজে আমার ইংরেজীর প্রফেসর ছিলেন। তাঁর মায়া ও মহানু ভবতায় ছাপ্পান্ন বৎসর পরও ছাত্র শিক্ষকের পবিত্র সম্পর্ক এখনও বহাল আছে-মমতার বন্ধন আরো মজবুত হয়েছে।
১৯৬৪ সালে সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ভালো ফল নিয়ে এস.এস.সি. পাশ করি। সব বিষয়ে ভালো নাম্বার ছিল। দেশের যেকোন নামী দামী কলেজে ভর্ত্তি হওয়া কোন অসুবিধা ছিল না। শিক্ষানুরাগি পিতার একান্ত ইচ্ছা ছিল, আমার কাছে দাবী ছিল দেশের সব চাইতে ভালো কলেজ, ঢাকা কলেজে ভর্তি হওয়া দেশের সর্ব্বোচ্চ ডিগ্রী নেয়া, মানুষের মত মানুষ হওয়া। বৃহত্তর সিলেটের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রিন্সিপাল সলমান চৌধুরী তখন ঐহিত্যবাহী এম.সি.কলেজের অধ্যক্ষ। দেশব্যাপী এম.সি.কলেজ এর নাম ডাক। অভিজ্ঞ অধ্যাপক মন্ডলি।

প্রচুর ছাত্র। উন্নত ফলাফল। চমৎকার আবাসিক ব্যবস্থা। বাড়ির কাছে থাকায় এম.সি.কলেজে ভর্তির সিদ্ধান্ত হল। আমার আত্মীয় সিরাজুল হক কুতুব ইতিমধ্যে ভর্ত্তি হয়ে গেছেন। জাদরেল প্রিন্সিপাল সলমান চৌধুরীর কাছে ভাইবা দিতে হল। আমার ছু-ফুটি ফিগার এবং পূরুষালি বাহারি গোঁফ তাঁর পসন্দ হল না, কটমট করে আমার দিকে তাকান, মার্কশীট ওলট পালট করেন, কিন্তু ভালো নাম্বার থাকায় ভর্ত্তি হতে বেগ পেতে হয়নি। আয়তন-অবস্থান এর দিক দিয়ে এম.সি. কলেজ বাংলা দেশের অন্যতম বৃহত্তম কলেজ। বøক ভিত্তিতে বিভক্ত লাল টিনের ছাত্রাবাস গুলি ও আকর্ষনীয়। পাহাড় টিলার সমাহারে অপরূপ প্রাকৃতিক নিসর্গ। ইতিমধ্যে এম.সি. কলেজ নামে বিভক্ত হয়ে এম.সি.ইন্টার মিডিয়েট কলেজ নাম ধারন করেছে। এই অংশের নুতন বহুতল ভবন বিশিষ্ট বিশাল ছাত্রাবাস নির্মিত হয়েছে তামাবিল সড়ক সংলগ্ন রেডিও ষ্টেশনের সম্মুখে। তখন এম.সি ইন্টার মিডিয়েট কলেজের প্রিন্সিপাল আব্দুল লতিফ। নুতন হোষ্টেলের পাশেই প্রিন্সিপাল কোয়ার্টার। আমি নুতন হোষ্টেলের দোতালায় সিট পেলাম। আমার রুমমেট ছিল সুনামগঞ্জের সফিকুল ইসলাম। সহপাঠি সফিক সহজ সরল বড় ভালো মানুষ ছিল। আমাদের হল সুপার ছিলেন কুলাউড়া নির্বাসি প্রফেসার এম.এ. মজিদ। দীর্ঘদেহী, উজ্জল ফর্সা চেহারার ধব ধবে সাদা কড়া ইস্ত্রি করা সার্ট পেন্ট পরিহিত এম.এ.মজিদ সিনেমার নায়োকচিত সুপূরুষ ছিলেন। মৃদুভাষি-ব্যক্তিত্ববান ভদ্রলোক ছিলেন। রাস ভারি বিজ্ঞানের এই শিক্ষক আমাদের হোষ্টেলের দোতালায় কর্নার কক্ষে সিঙ্গেঁল লাইফ কাটাতেন। অল্পবয়সী হলেও কলেজ, হোষ্টেল ও ছাত্রদের দেক ভালে অধ্যাপক মজিদ অত্যন্ত আন্তরিক ও একান্তই দায়িত্ববান ছিলেন। নব নির্মিত বহুতল বিশিষ্ট কলেজ হোষ্টেল এর

আবাসিক ছাত্রদের লেখাপড়া, হোষ্টেলের আইন শৃংঙ্খলা ও লেখাপড়ায় পরিবেশ রক্ষায় অধ্যাপক এম.এ. মজিদ একান্ত আন্তরিকই নয় কড়া নযর রাখতেন, দায়িত্ব পালনে তাঁর কোন শৈতিল্য ছিল না, কাউকে কোন ছাড় দিতেন না।
এমসি ইন্টার মিডিয়েট কলেজ হোষ্টেলের প্রথম ব্যাচ এর ছাত্র, কলেজ এর ক্লাশমেট সহপাঠি বন্ধু বান্ধবদের নাম ধাম এতদিন-ছাপ্পান্ন বৎসর পর আর সম্পূর্ণ স্মরন নেই। তবুও হোষ্টেল এর ব্যাচ মেন্ট বন্ধুদের মধ্যে আতাউর রহমান তরফদার, ফজলুল হক তরফদার, মোস্তফা নূরুজ্জামান মিনার, গোলাম মোহাম্মদ, আহমদুর রহমান, মোজাম্মেল হক, শফিকুল ইসলাম, আব্দুল আহাদ, আব্দুল ওয়াদুদ এর নাম এখনও মনে আছে। অনেকের সাথে এখনও বন্ধুত্বের সু-সম্পর্ক বহাল আছে। সুনামগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় সদ্য প্রয়াত শ্রদ্ধেয় নূরুল হক আম্বিয়া পিতৃতুল্য চাচাদের কঠোর-কঠিন শাসন রহিমা রহমান, ছালেহা-ছত্তার ফুফুফু-দের মায়ার বন্ধনে মায়া জালে আবদ্ধ ছিলাম। স্কুল লেখাপড়ায়, সময়, নিয়মনীতি মেনে চলতে হত। ফলতঃ সুনামগঞ্জ থেকে সিলেট এসে, স্কুল বয় থেকে কলেজ ষ্টুডেন্ট হয়ে মাথার উপর কোন গার্জিয়ান না থাকায় খাঁচার পাখি থেকে বনের পাখি হয়ে হাওয়ায় উড়লাম। পকেটে টাকা, বুকে সাহস, চোখে দুনিয়া দেখার স্বপ্ন নিয়ে আনন্দ উল্লাস-হৈহৈ হৈ রৈ রৈ ত্র মেতে উঠলাম। ইউ.অ.টি.সি.তে (টহরাবৎংরঃু ড়ভভরপবৎং ঃৎধরহরহম ঈড়ঁৎংব) নাম লেখালাম। খাকি পোষাক পরিধান করে লেফট-রাইট ট্রেনিং ছিল রোমাঞ্জকর মৌচাক স্কাউট জাম্মুরীতে অংশগ্রহণ ছিল আনন্দ দায়ক ও শিক্ষনীয়। সিলেট শহরে শ্রদ্ধেয় আমিনুর রশীদ চৌধুরী সাহেবের যুগভেরী কেন্দ্রীক সাংবাদিকতা,

পাঠাগার ও মুক্ত বুদ্ধির আন্দোলনের পথিকৃত মৌলভী নুরুল হক এর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ, কেমুসাস এবং সংস্থার মুখপত্র আল ইসলাহ কেন্দ্রীক সাহিত্য এবং এম,সি, কলেজের ইংরেজীর অধ্যাপক বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের পন্ডিত কবি মোফাজ্জল করিমের নেতৃত্বাধীন কাব্যান্দোলন বেশ বেগবান হয়ে উঠেছে। ছাত্র সমাজের মধ্যে আমাদের নেতা সৈয়দ মোস্তফা কামাল “রং এর বিবি” গ্রহ্ণ প্রকাশ করে রস রচনাও সাহিত্যাঙ্গঁনৈ রং এর দ্যোতি ছড়ান-নিজের সরব উপস্থিত জানান দেন। সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গঁনে আওয়ামী লীগ নেতা একজন শ্রদ্ধেয় দেওয়ান ফরিদ গাজি ছিলেন একাই একশ। ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে দেওয়ান নুরুল হোসেন চঞ্চল, আখতার আহমদ, শাহ আজিজুর রহমান, আ¯্রাফ আলী, লুৎফুর রহমান প্রমুখ ছিলেন কর্ম তৎপরও জনপ্রিয়। ছাত্রলীগ কর্মি হিসাবে তাঁদের প্রিয় কর্মি ছিলাম, কেডার ছিলাম না, এদের অনেকেই এখন পরলোকে। লুৎফুর রহমান ভাই সিলেট জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এর দায়িত্ব পালন করছেন। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে লেখা লেখিতে উৎসাহী ছিলেন সৈয়দ ফজলুল্লাহ (অবসর প্রাপ্ত অধ্যক্ষ। বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, ধর্ম ও সমাজ সেবক) আহমেদুর রহমান, আব্দুল ওয়াদুদ, মোস্তফা নুরুজ্জামান মিনার প্রমুখ। তখন এখনকার মত এত পত্র পত্রিকা, প্রেস, সাংবাদিক, সাহিত্যিক ছিলেন না, তখন হাতে লেখা দেয়াল পত্রিকার পদ্ধতি প্রচলন ছিল। আমাদের সময় দেয়াল পত্রিকা-সারথী-প্রশংসিত ছিল, পঠিত হত। আমাদের বন্ধু মোস্তফা নূরুজ্জামান মিনার কথায় কথায় কবিতা আওড়াত। সদা হাসি খুশী সুদর্শন মিনার আমাকে ক্ষেপাবার জন্য হোষ্টেলের ভীম কালা ভের কাটা বয় সজিব ও আমাকে নিয়ে “মুজিব মুজিব” তোর ভাই সজীব বলে লম্বা চওড়া একটি কবিতা লিখে ফেলে।

সহজ সরল সাদা মনের মানুষ বন্ধুবর মিনার এর মৃত্যোর পর আমি তাঁকে নিয়ে স্মৃতি কথা লিখেছিলাম-“মিনার-ভারোবাসা ও বন্ধুত্বের কতুব মিনার।
আমি ছাত্র রাজনীতি-সাহিত্য-সংস্কৃতির-পেছনের কাতারের একজন কর্মি ছিলাম। কোন বন্ধন ও মাথার উপর শাসন না থাকায় কলেজের ক্লাশ এবং হোষ্টেলের নিয়ম শৃংঙ্খলার প্রতি অমনযোগী হয়ে উঠি। আমার সবুজ রং এর চক চকে রে‌্যলি সাইকেলে বন্দর-সিলেট শহর ময় চক্কর দেই। পারিবারিক অভিবাভক হীন হলেও কোন অনৈতিক-অসামাজিক কাজে জড়িত ছিলাম না, হোষ্টেলের ছাত্র হিসাবে হোষ্টেল সুপার প্রফেসার মজিদ সাহেবের কাছে আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগও ছিল না, তবুও তিনি সময় মত সন্ধ্যা রাতের পূর্বে হোষ্টেলে না ফেরা, হলের নিয়ম নীতি না মানায় আমার-আমাদের উপর নাখোশ নারাজ হয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করতঃ ভৎসনা করেন, হোষ্টেলে থাকতে হলে হোষ্টেলের নিয়ম নীতি মেনে চলার নির্দেশ দেন। একজন আদর্শ অধ্যাপক ছাত্রদের একজন দায়িত্ববান অভিভাবক হিসাবে এমন নির্দেশ তিনি দিতেই পারেন, এটা তাঁর নৈতিক অধিকার। আমরা আমাদের বন্ধু মহল নিয়ে হোষ্টেলেই সভা করি। আলোচনায় দেখা গেছে হোষ্টেলে সুবোধ বালকের মত বসবাস করা আমাদের সম্ভব নয়। তাঁর সঙ্গেঁ বে-আদবি ও ঝগড়া বিবাদও করা উচিত নয়, তাই আমরা হোষ্টেল ছেড়েই চলে যাব। অথছ হোষ্টেলে সিট পাবার পূর্বে আমি অধিক অর্থ ব্যয় করে মোবারক হোটেলে অতঃপর নয়া সড়ক মেসে অবস্থান করেছি। তামাবিল সড়কেই অনতি দূরে আমরা একটি বাসা ভাড়া করলাম। আমি, আতাউর রহমান তরফদার, ফজলুল হক তরফদার, মোস্তফা নূরুজ্জামান মিনার প্রমুখ স্বেচ্ছায় হোষ্টেল ত্যাগ করে চলে গেলাম। বন্ধু বর মিনার মনের দূঃখে কবিতা লিখলেন, নিজেই গান ধরলেন “নিয়মনীতি জানিনা, ঘটি ধরা চিনি না নিয়ম মানি নাই, ঘটি ধরি নাই, হোষ্টেল ছেড়ে চলে যাই, তবু মোরা ঘটি ধরি নাই।” এক বিষন্ন বিকালে ক্ষোভ মিশ্রিত বিষাদ সভার মাধ্যমে আমাদেরকে বিদায় দেয়া হয়, তখন এখনকার মত এত যানবাহনের প্রচলন না থাকায় আমরা বিক্সা মিছিল সহ হোষ্টেল ত্যাগ করি। হোষ্টেলের বয়-বাবুর্চি আমাদের জন্য খুব দুঃখ প্রকাশ করলেন। কালো চেহারার কালা সজিব বিষন্ন বদনে কেঁদেই দিল। হোষ্টেল ছেড়ে আমরা বাড়ি ভাড়া করে মেস সিষ্টেমে বসবাস করলেও লেখাপড়ার পরিবেশ না থাকায় আমাদের কারোই-মেস-জীবন ভালো লাগে নি, আলোচনা ক্রমেই আমরা-মেস-জীবনের অবসান ঘটালাম। বন্ধুবর সৈয়দ ফজলুল্লাহ এম.সি.কলেজ এর ঐতিহ্যবাহী সেকেন্ড বøকে একটি-সিট-ম্যেনেজ করে তার কক্ষেই আমাকে নিয়ে যায়। তাঁর রুমমেট হিসাবে একই কক্ষে বসবাস করে দেখেছি, শিখেছি নিয়ম নীতি, ধর্ম কর্ম, ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে সমন্বয় সাধন করে আদর্শ জীবনের অনুসারি ছিলেন এই পরিনত বয়সেও একজন পূর্ণ মানুষ হিসাবে সৎ ও মহৎ জীবন যাপন করছেন।
অধ্যাপক এম.এ.মজিদ আমার ক্লাশ টিচার-হাউস টিচার, আত্মীয় স্বজন ছিলেন না, তবুও তাঁর সঙ্গেঁ আমি ও আমরা কোন বে-আদবি, অসৌজন্য মূলক আচরন করিনি, অধ্যাপক-শিক্ষক হিসাবে সৌজন্য প্রদর্শন করেছি, সম্মান দেখিয়েছি আমিও আমরা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব পালন করেছি। এম.সি কলেজি জীবন শেষে তাঁর সঙ্গেঁ আমার আর দেখা হয়নি। একাশি সালে বৃটেন ভ্রমন কালে লন্ডন ইউনিভার্সিটির ক্যেফেটারিয়াম তাঁর সঙ্গেঁ আমার দেখা। সঙ্গীঁয় বন্ধু বিলেত প্রবাসী নজরুল ইসলাম সহ হালাল আহার এর জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে ঘুরতে তাঁর মুখোমুখী। নিরাপদ খাবার “এগ এড চিপস” এর সন্ধানে আমরা এখানে আসি। চৌষট্টি সালের এম.সি. কলেজ হোষ্টেলের ছাত্র জীবন শেষে একাশি সালে লন্ডন ইউনিভার্সিটির ক্যেফেটোরিয়া-প্রায় দুই দশকে তিনি তেমনি আছেন-উজ্জল ফর্সা চেহারার গোফ হীন ক্লিন শেভে সুবেশি মজিদ স্যারের মুখে মৃদু মিষ্টি মুচকি হাসি-কেমন আছ মুজিব-বস। এই দুই দশকে আমি কর্ম পেশায় লেখায় বলাই কিছু পায় পরিচিতি পেয়েছি, কিছু নাম ডাক ও হয়েছে। আমরা স্যারের টেবিলের বসলাম, জানলাম তিনি লন্ডনে পি.এইচ.ডি করছেন। আমাদেরকে আদর আপ্যায়ন করলেন, লেখালেখিতে নাম কমিয়েছি বলে খুশী হলেন। বন্ধুবর নজরুল ইসলাম লন্ডনে চাকরি নয় উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের জন্য গিয়েছেন জেনে আনন্দ প্রকাশ করলেন। ডক্টর এম.এ.মজিদের সঙ্গেঁ সেই ছিল আমার শেষ দেখা যদি ও আমরা একই জেলার আদি বাসিন্দা। বাল্য কৈশোর কাল থেকে ভার্সিটির শ্রদ্ধেয় শিক্ষা গুরুদের অনেকেই এখন পরলোকে- পরিণত বয়সেই অনেকের মৃত্যো হয়েছে। এম.সি.কলেজের স্যারদের মধ্যে কবি ও কলামিষ্ট এ.এইচ.মোফাজ্জল করিম মাশাআল্লাহ এখনও সুস্থ সচল কর্মক্ষম। টিভি টকশো সমুহে প্রাণ বন্ত, করনা বিজয়ী বীরও। মহান মালিক তাঁকে ছহি ছালামতে রাখুন এই মোনাজাত করছি।
বিশ্বব্যাপী ভয়ানক বৈশ্বিক ব্যাধি কোভিড-১৯-এ-বিপর্য্যস্থ-বিধ্বস্থ-লন্ড-ভন্ড আধুনিক বিশ্ব। মৃত্যোর মিছিল ক্রমশঃ বাড়ছেই। এখন জন স্বার্থেই লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন আইসলেশন আমাদের নিত্য সঙ্গীঁ। ইসলামি চিন্তাবিদ-মানব প্রেমিক বন্ধুবর আলহাজ্ব সৈয়দ ফারুক আহমদ বার্ধক্যজনিত বহুবিধ জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। পাঁচ ওয়াক্ত মসজিদে জামাতে নামাজ আদায় কারি। তাবলীগ জামায়ত এর নিবেদিত প্রাণ খাদেম আলহাজ্ব সৈয়দ ফারুক আহমদ শ্রীমঙ্গল সড়কস্থ তাঁর বিশাল বাসা বাড়ির একটি গৃহ কেই মসজিদ বানিয়েছেন-ইমাম নিয়োগ দিয়ে এখানে পাঁচ ওয়াক্ত জামাতে নামাজ আদায় হয়। ষাটের দশকে বেড়ে উঠা সত্তরোর্ধ এই আমি মেঘে মেঘে অনেক বেলা শেষে আমিও আসির কোঠায়। আসিতে এসেও মুখে সামান্য হাসি ধরে রাখার চেষ্টা করলেও হাতে আর বাঁশি নেই, আছে বাঁশ-বাঁশের লাঠি। বন্ধুবর সৈয়দ ফারুকের আমন্ত্রনে আমরা পাঁচ বন্ধু- প্রফেসর সৈয়দ ফজলুল্লাহ ইঞ্জিনিয়ার কফিল উদ্দিন, শেখের গাঁও এর শহীদুর রাজা এবং অধম এই আমি জামাতে এশার নামাজ আদায় করি। পাঁচ বন্ধুর এক সঙ্গেঁ নৈশ ভোজও নিয়মিত। লক ডাউনের কারনে বাহিরে জন জমায়েতে আমরা নেই। সামাজিক দূরত্ব-স্বাস্থ্যবিধি মেনে-আমরা নৈশভোজ ও ধর্মালোচ না করি। এ ব্যাপারে সিলেটি কন্যা ফারুক গিন্নি সৈয়দ সাহেবানী একান্তই আন্তরিক ও হৃদয় বতি-দয়া বতী ও বটেন। লিখিয়ে ও কলামিষ্ট হিসাবে আমার উপর বিভিন্ন বিষয় ও ব্যক্তি ভিত্তিক লেখার দাবী থাকে। আমি ও বিদায় বেলা শেষ সময়ে আমাদের উৎসাহী-মেধাবী-পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কিছু কাজ রেখে যেতে চাই। জীবনী ভিত্তিক রচনা খুবই কঠিন কারন একজন মানুষের কর্ম ও জীবন দর্শন স্বল্প পরিসরে বয়ান করা যায় না। আল্লাহ্ ও রাসুল প্রেমে ফানা ফিল্লাহ্-প্রফেসর সৈয়দ ফজলুল্লাহ জানালেন প্রফেসর ডক্টর এম.এ.মজিদ লন্ডনে পি.এইচ.ডি. শেষে সফল শিক্ষা জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন, ভার্সিটি জীবনের শিক্ষকতা শেষে বর্ত্তমানে অবসর জীবন যাপন করছেন, তাঁদের সাথে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন-মধুর সম্পর্ক বেআই হয়েছেন। ডক্টর মজিদ এর সন্তানগন ও সুশিক্ষিত। কর্ম জীবনে প্রতিষ্ঠিত।
আমি এই কৃতি শিক্ষাবিদ এর সু-স্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ূ ও পারিবারিক কল্যান কামনা করি।

[ষাটের দশকের সাংবাদিক। মুক্তিযোদ্ধা। সিনিওর এডভোকেট হাইকোর্ট। সাবেক সভাপতি, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব]+

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..