শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৩৫ পূর্বাহ্ন
বড়লেখা প্রতিনিধি: হাকালুকি হাওরের অভয়াশ্রম ও ইজারাকৃত মৎস্য বিলের ইজারা শর্তভঙ্গ করে অবৈধভাবে সেচ মেশিনে বিল শুকিয়ে মাছ আহরণের অভিযোগ উঠেছে ইজারাদারদের বিরুদ্ধে। শনিবার হাওরের ৬শ’ একর আয়তনের নাগুয়া-ধলিয়া বিলে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। এর আগে রনচি বিল অভয়াশ্রম থেকে বড়লেখা মৎস্য বিভাগ সেচ মেশিনসহ মাছ ধরার ব্যাপক সরঞ্জাম জব্দ করেছে।
জানা গেছে, হাকালুকির ইজারাকৃত তুরল, নাগুয়া-ধলিয়া এবং অভয়াশ্রম ঘোষিত রনচি, চৌলাসহ বিভিন্ন বিলের ইজারাদার ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে সেচ মেশিনে বিল শুকিয়ে মাছ আহরণ করতে থাকে। প্রায় ১৫ দিন সেচ মেশিনে অভয়াশ্রম ‘চৌলা বিলে’র পানি শুকিয়ে প্রভাবশালীরা লাখ লাখ টাকার মাছ লুট করেছে। রনচি অভায়শ্রম বিলের মাছ লুটের পর লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে বড়লেখা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল হাসান একটি সেচযন্ত্র ও মাছ ধরার সরঞ্জাম জব্দ করেই দায় সারেন। ৬শ’ একরের নাগুয়া-ধলিয়া বিলের ইজারাদার সমিতির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ১০টি সেচ মেশিনে বিল শুকিয়ে মাছ আহরণের অভিযোগ উঠে। বৃহস্পতিবার জুড়ী উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভায় বিষয়টি উত্থাপন করেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাছুম রেজা। এব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু ইউসুফকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সভায় সিদ্ধান্ত হয়। অভিযোগ উঠেছে, মৎস্য কর্মকর্তার গোপন আতাতেই ইজারাদার সমিতি অবৈধভাবে বিল শুকিয়ে মাছ ধরছে। যার কারণে তিনি কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেননি। এদিকে শনিবার সকালে ওই বিলে থানার এসআই আব্দুল মন্নানের নেতৃত্বে পুলিশ অভিযান চালায়। অভিযানের খবর পেয়ে অসাধুরা সেচ মেশিন সরিয়ে নেয়। তবে এসময় প্রত্যক্ষদর্শীরা নাগুয়া-ধলিয়া বিলের বিভিন্ন অংশ শুকিয়ে থাকতে দেখেন। স্থানীয় লোকজনও বিল শুকিয়ে মাছ ধরার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাছুম রেজা জানান, ১০টি সেচ মেশিন বসিয়ে পানি শুকিয়ে নাগুয়া-ধলিয়া বিলের ইজারাদার যমুনা মৎস্যজীবি সমিতির সভাপতি ফৈয়াজ আলী মাছ আহরণ করেন। বিষয়টি তিনি বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভায় উত্থাপন করলে মৎস্য কর্মকর্তাকে একজন ইউপি মেম্বারসহ সরেজমিনে পরিদর্শণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। কিন্তু মৎস্য কর্মকর্তা আবু ইউসুফ ইউপি মেম্বারকে না নিয়েই বিল পরিদর্শন করে সেচ মেশিন পাননি মর্মে সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেন। ইউপি চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন, বিল শুকিয়ে শুধু ওপরের মাছই আহরণ করা হয়নি। একধরণের কীটনাশক প্রয়োগ করে কাদার নিচের মাছও (বাইন, গুতুম) ধরা হয়েছে। এতে হাকালুকির মাছের বংশ বিস্তার মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।
এব্যাপারে জুড়ী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু ইউসুফ জানান, শুক্রবার তিনি নাগুয়া-ধলিয়া বিল পরিদর্শণ করেন। ৬শ’ একরের বিশাল বিলের সব এলাকা লক্ষ করা কঠিন কাজ। যেটুকু দেখেছেন তাতে সেচ মেশিন বসানো ও বিলের কোন অংশ শুকনো থাকতে দেখেননি। একজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে সাথে নিয়ে পরদর্শণ করার সিদ্ধান্ত হলেও কেন একা গেলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উনি নতুন মেম্বার, সবকিছু বুঝেন না, তাই নেননি।
এসআই আব্দুল মান্নান জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার দুপুরে তিনি নাগুয়া-ধলিয়া বিল পরিদর্শণ করেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই সেচ মেশিন সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে তার মনে হয়েছে। বিষয়টি তিনি ইউএনও’কে জানিয়েছেন।
নাগুয়া-ধলিয়া বিলের ইজারাদার ফৈয়াজ আলী জানান, তিনি বিলে কোন মেশিন বসাননি। মৎস্য কর্মকর্তা শুক্রবার পরিদর্শণ করে পানিতে বিল ভর্তি থাকতে দেখেছেন। কেন যে তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উঠছে তা বুঝতে পারছেন না।