সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫৯ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক: হেফাজতে ইসলামের সাথে সরকারই সম্পৃক্ত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, হেফাজতের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে সরকার বিএনপি নেতা-কর্মীদের অ্যারেস্ট করছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এক বক্তব্যের প্রতি ইংগিত করে বৃহস্পতিবার বিকেলে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির উদ্যোগে ‘করোনো মোকাবিলায় স্থানীয় সরকারের ভূমিকা’ শীর্ষক এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভা হয়। এতে জেএসডির প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন দলের কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন। আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এরা (সরকার) ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। ২৬ মার্চের পর থেকে গত কয়েকদিনে বোধহয় কয়েক হাজার গ্রেফতার করে ফেলেছে। শুনলে অবাক হবেন আমাদের চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঢাকায় বিএনপির কর্মীরা রাতে বাসায় থাকতে পারে না। ব্লক রেইড করছে, কেরানীগঞ্জে ব্লক রেইড করে আমাদের নেতা-কর্মীদের অ্যারেস্ট করছে। কিছু বলতে গেলেই তারা বলে যে হেফাজতের সাথে সম্পৃক্ত আছে। আরে হেফাজতের সাথে সম্পৃক্ত তো আপনারা। আপনারা বসে, মিটিং করে তাদের (হেফাজতে ইসলাম) সাথে চুক্তি করেছেন। তাহলে আমরা হেফাজতের সাথে সম্পৃক্ত হলাম না আপনারা।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী তো সরাসরি বলে ফেলেন এতো কোটি টাকা দিয়েছি, আমরাই একমাত্র কাজ করছি। আর তো কেউ কাজ করছে না- এসব কথা বলেন। দায়িত্ব তো আপনারাই নিয়েছেন। দায়িত্ব তো পালন করতে হবে আপনাদেরকেই। সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আপনারা পদে পদে জনগণের সাথে প্রতারণা করছেন। আপনারা জনগণের সমস্ত আস্থা হারিয়েছেন, বিশ্বাস হারিয়েছেন। এখন অত্যাচার-নির্যাতন শুরু করেছেন। এই দেশটাকে একটা পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন।
২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর উপলক্ষে কয়েকটি বাম সংগঠন এবং হেফাজতে ইসলাম নামে একটি সংগঠনের প্রতিবাদ-বিক্ষোভের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যেকোনো সংগঠন, যেকোনো রাজনৈতিক দলের যেকোনো প্রতিবাদ করা তো তাদের অধিকার, এটা তার সংবিধানসম্মত অধিকার। ‘আপনি গণতন্ত্রের কথা বলবেন অথচ কাউকে প্রতিবাদ করতে দেবেন না, আপনি কাউকে কথা বলতে দেবেন না, অন্যায়গুলোকে তুলে ধরতে দেবেন না, ভুলগুলোকে চিহ্নিত করতে দেবেন না। তাহলে কিভাবে একটা সরকার চলতে পারে। যেটা তো আর যাই হোক গণতান্ত্রিক সরকার হতে পারে না,’ বলেন তিনি।
একাদশ সংসদের প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, ‘পার্লামেন্ট আপনাদের একটা আছে, সেই পার্লামেন্টে আপনাদের লোকজন সব বসে আছে, আপনারাই নিশ্চিত করে দিয়েছেন কারা কারা পার্লামেন্ট সদস্য হবেন, কারা কারা হবেন না এবং সেই পার্লামেন্টে যা খুশি তাই আপনারা করছেন। একটা দিনও শুনিনি যে করোনা নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে, একটা দিনও শুনিনি সেখানে জনগণের আর্থিক অবস্থা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে।’
করোনা মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘করোনায় এখন আমাদের আল্লাহর উপর ছেড়ে দেয়া ছাড়া আর কোনো কিছু করার নেই। ভ্যাকসিন প্রথম বার যারা নিয়েছেন, তারা দ্বিতীয়বার সবাই ভ্যাকসিন পাবেন কিনা তা আমি জানি না। কারণ যা শুনতে পাচ্ছি যে, ভারত রফতানি বন্ধ করে দিচ্ছে। একজন কিছুদিন আগে বলেছেন, একটা মাত্র দেশের উপরে এই যে নির্ভর করে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করা- এটাও তো একটা ক্রিমিনাল ওফেন্স। আপনাকে একটা সরকার চালাতে হলে অনেক পথ খোলা রাখতে হবে। আপনি চীনকে বলে দিলেন যে না তোমার এটা আমার দরকার নেই, ফেরত দিয়ে দিলেন। আপনারা ভারত থেকে নেয়া শুরু করলেন। তাও আবার অনেক বেশি দামে, তাও ব্যক্তিমালিকানায় একজন ব্যবসায়ীর হাতকে শক্তিশালী করার জন্য তার কাছ থেকে এই ভ্যাকসিন আপনি নিচ্ছেন। এটা গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট নেয়া যেতো। অন্যান্য দেশগুলো নিচ্ছে।এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি পথ বের করার আহ্বানও জানান বিএনপি মহাসচিব।
আ স ম আবদুর রবের সভাপতিত্বে ও শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন ও ফারাহ খানের সঞ্চালনায় আলোচনাসভায় সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজমুদার, জেএসডির কার্যকরী সভাপতি মো: সিরাজ মিয়া, আ ক ম আনিসুর রহমান খান কামাল, সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার হোসেন তালুকদার, সহ-সভাপতি তৌহিদুল হোসেন বক্তব্য রাখেন।