1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৫৬ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

২৩ এপ্রিল বিশ্ব পুস্তক দিবস- বই হোক আমাদের নিত্যদিনের বন্ধু

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২২
  • ৬৮৫ বার পঠিত

আফতাব চৌধুরী :: আমাদের বই পড়ার অভ্যাস নাকি অনেকটাই কমে গেছে, এরকমই বলছেন অনেকেই। তারা বলছেন যে টিভি, ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোন আমাদের বই পড়ার অভ্যাস থেকে ক্রমাগত বিচ্ছিন্ন করে চলেছে। সত্যিই কি তাই? কথাটি অনেকাংশই সত্যি। লাইব্রেরিতে গিয়ে দেখতে পাই সেখানে মানুষের যাতায়াত অনেকটাই কমে গেছে। সকলের একটাই কথা- বই পড়ার সময় নেই। সময়ের অভাব আমাদের আছে একথা স্বীকার করছি। জীবিকার প্রয়োজনে আমাদের অনেকটা সময় অতিবাহিত হয় একথাও সত্য। বাকি সময়টা? বাকি সময়টা আমরা টিভির সামনে বসি কিংবা যাদের ইন্টারনেট সংযোগ আছে তারা সেখানে বসে সময় কাটাই। সময়ের অভাব ঠিক নয়, আমাদের স্বভাবটাই ক্রমাগত বদলে যাচ্ছে। আমরা সারাদিন কাজকর্মে ব্যস্ত থাকার পর সন্ধ্যার দিকে টিভির সামনে বসে জীবনের সাথে যার কোনো নিবিড় যোগাযোগ নেই সেইসব অবাস্তব কাহিনীর ওপর ভিত্তি করে তৈরি বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের সিরিয়ালগুলো দেখতে থাকি, থুড়ি গিলতে থাকি। সেইসব সিরিয়ালগুলোর সংলাপ শুনলে হাসি পায়। জীবন থেকে উঠে আসা কোনো গভীর অনুভূতির ছোঁয়া নেই সেই সব সিরিয়ালগুলোতে। তারপরে আছে আবার ‘রিয়েলিটি শো’। এ বিষয়ে বেশি কথা না বলা বোধ হয় ভালো। বিভিন্ন আলাপচারিতায় এই ‘রিয়েলিটি শো’-এর কথা শুনে বোঝা যায় এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। ওই লিখতে লিখতে যেমন ‘লাভ’ হয়ে যায়, তেমনি দেখতে দেখতে ভালো লেগে যায় এই আর কি! আর এই ইন্টারনেটের যুগে পৃথিবী এখন আমাদের হাতের মুঠোয়। এর সঠিক ব্যবহার আমাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করছে, জ্ঞানের পরিধির বিস্তার ঘটাচ্ছে একথা ঠিক। কিন্তু এর সদ্ধবহার কি আমরা করছি? এই ইন্টারনেটের সাহায্যেই তো এখন নানা রকমের অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে।
যে সময়ে আমরা দাঁড়িয়ে আছি সেখানে আমাদের অনেকেরই মনে হয় বই পড়ে কী লাভ? সব কিছুর মধ্যেই এখন আমরা লাভ-ক্ষতির হিসাব করতে শিখেছি। নির্ভেজাল আনন্দের জন্য আজ আমরা কোনো বই পড়তে চাই না। কাজেই বই যদি পড়তেই হয় তাহলে কাজের বই পড়া ভালো এ রকম একটা ধারণা তৈরি হয়েছে বস্তুগত লাভের কথা ভেবে। কিছু মানুষ আছেন যারা পেশাগত কারণেই বই পড়তে বাধ্য হন। এর বাইরে একটা বৃহৎ শ্রেণীর মানুষ আছেন যারা নির্ভেজাল আনন্দ লাভের জন্য, অজানাকে জানার জন্য, বাড়িতে বসেই বিভিন্ন চরিত্রের মানুষদের সঙ্গলাভ করার জন্য, লেখকের অভিজ্ঞতাকে নিজের জীবনের অভিজাত্যর কষ্টিপাথরে যাচাই করার জন্য, দৈনন্দিন জীবনের গøানি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য, সর্বোপরি এই মূঢ়তা থেকে মুক্তিলাভের একটা প্রবল আকাক্সক্ষা থেকেই তারা বই পড়েন। তারা কোনো পার্থিব লাভক্ষতির হিসাবের ধার ধারেন না। হাজার কাজের ভিড়েও তাই তারা ঠিক সময় বের করে বই হাতে তুলে নেন। তাদের কাছে বই এক অমূল্য সম্পদ। এই বৃহৎ শ্রেণীর মানুষের মধ্যেই ইদানীং বই পড়ার প্রবণতা কমে আসছে বলেই শঙ্কা হচ্ছেÑধীরে ধীরে পৃথিবীটা ইট-কাঠের জঙ্গলে না পরিণত হয়।
আসলে ছোটবেলা থেকে এক সময় মাস্টার সাহেবের উৎসাহে কিংবা বাড়িতে মা-বাবা বা কোনো আপনজনের উৎসাহে এই সু-অভ্যাস গড়ে উঠত। এখন সেই মাস্টার সাহেবরা নেই আর বাড়িতে তো এখন এমন একটা পরিবেশ যে সকলে বলছেন ওই সব গল্পের বই রেখে দিয়ে পড়ার বই পড়ো, ফালতু সময় নষ্ট করো না। আর ছোটোরাও সিলেবাসের চাপে পড়ে ঘাড় সোজা করতে পারছে না, খেলাধূলাও বন্ধ হয়ে গেছে। কাজেই ছোট বেলাতেই এখন ছেলেমেয়েদের মধ্যে বই পড়ার প্রবণতা গড়ে তোলার পরিবর্তে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এই কথা অধিকাংশ বাড়ির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
বাবা-মা বইমেলাতে স্কুল-পড়–য়াদের নিয়ে গেলে সব সময়ই নির্দেশ দেন কাজের বই কেনার জন্য। এই প্রবণতা থেকে উঠে আসছে এক ধরণের বই না-পড়া নাগরিক। বইপড়া বলতে আমি এখানে নির্ভেজাল আনন্দের জন্য বই পড়ার কথা বলছি। ছোটবেলা থেকে বই পড়তে পড়তেই এক সময় বই-এর প্রতি যে প্রবল আকর্ষণ সৃষ্টি হয়, সেটা কিন্তু আজকের দিনে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।
যিনি বই পড়েন তিনি ঠিক সময় বের করে বই পড়েন। যারা বলছেন সময় পাচ্ছি না তারা ঠিক বলছেন না। যিনি ঘন্টার পর ঘন্টা টিভি দেখেন, গভীর রাত পর্যন্ত নেট সার্চ করেন তিনি সময় পান না বলতে এ কথা কেউ বিশ্বাস করবেন? সত্যি কথা হল রুচির অভাব, মননের অভাব এবং শিক্ষার অভাব। টিভি সিরিয়াল দেখবেন না বই পড়বেন এটা তাকেই ঠিক করতে হবে। চিন্তাশীল বিখ্যাত মানুষদের জীবন কথা পড়তে গিয়ে আমরা জানতে পারি তাঁদের বই পড়ার প্রবল আগ্রহের কথা। তাঁদের পড়াশুনার ব্যাপ্তির কথা জেনে ‘বড় বিস্ময় লাগে’। বই-এর কোনো বিকল্প নেই। এক সময় বিয়ে, জন্মদিনে, উপনয়নে বই উহার দেওয়া হত। এখন সেটা করতে গেলে অনেকেই হাসবে। কিছু ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রের কথা বাদ দিলে এই ধারা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে বলা যায়। আমরা নিজে থেকেই বই-এর সংশ্রব ত্যাগ করছি। বেঁচে থাকার জন্য অর্থের অবশ্যই প্রয়োজন আছে একথা স্বীকার করে নিয়েই বলতে হচ্ছে বিদ্যাচর্চার চেয়ে অথচর্চাই এখন বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। ভোগবাদী জীবনের হাতছানি মানুষকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। তাই বই পড়ার জন্য কেউ সময় নিতে চাইছেন না। এ যেন সেই ‘তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই।’ সোনার হরিণের পিছনেই আমরা ক্রমাগত ছুটে চলছি। আমাদের আচার-আচরণই সে কথা জানান দিচ্ছে। বই না-পড়ার ফলে অসংস্কৃত, অমার্জিত মানুষজনের সংখ্যা বাড়ছে। সুভদ্র, রুচিশীল, সংবেদনশীল, হৃদয়বান মানুষের সংখ্যা দিনে দিনে কমে আসছে। মানুষের জীবনের এক গভীর কে আত্মসংকট দেখা দিয়েছে। সংবেদনশীল মানুষরাই সমাজের কথা, দেশের কথা, পরিবেশের কথা খুব গুরুত্ব সহকারে ভাবেন এবং প্রয়োজনে মানুষের ভালো করার জন্য তারা সর্বস্ব পণ করতে পিছপা হন না। এই দুঃসময়ে তাদেরই বেশি প্রয়োজন। বই না-পড়লে তো আমরা কূপমন্ডুক হয়ে যাব। এই মানবজমিন পতিত থেকে যাবে। বই আমাদের চেতানীর কাজ করে। অনেকদিন আগেই বিখ্যাত জ্ঞানী ব্যক্তি ব্রেথট বলেছেনÑ‘ভুখা মানুষ হাতে নাও বই, এই তোমার হাতিয়ার।’ বই যদি শক্তিশালী না-ই হবে তবে তাহলে বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীতে এত বই পোড়ানোর ঘটনা কেন ঘটেছে? সত্যজিতের ‘হীরক রাজার দেশে’ ছবিটির কথা ভাবুন সেখানে পাঠশালার পন্ডিতমশাইয়ের বাড়ি থেকে সব বই বের করে হীরকরাজার অনুচরেরা পুড়িয়ে দিয়েছে। পৃথিবীতে বই পোড়ানোর বহু ঘটনার কথা আমাদের জানা।
বই পড়ে আমরা অনেক অজানা রহস্যের সমাধান করতে পারি। যারা নিয়মিত বই পড়েন তারা একথা নিশ্চয় স্বীকার করবেনÑকোনো একটা বইতে কোনো বিষয় পড়ে বুঝতে পারলেন না অথবা হয়তো কোনো শব্দের প্রকৃত অর্থও হৃদয়ঙ্গম করতে পারলেন না কিন্তু পরে অন্য বই পড়তে পড়তে আপনি সেসব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর পেয়ে যান। তখন নিশ্চয়ই কোনো কিছু আবিষ্কারের মতো আনন্দ উপভোগ করেন। আশা করি পাঠক মাত্রেই এরকম অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন। বই পড়ার নিয়মিত অভ্যাস থাকলে স্মৃতিশক্তি প্রখর থাকে, মন প্রফুল্ল থাকে। এই অভ্যাস আমাদের মানসিক অবসাদ ও ক্লান্তি দূর করে এবং মনসংযোগ বাড়িয়ে তোলে। আরো একটা আশ্চর্যের কথা বই পড়তে পড়তেই আমরা কত বিচিত্র, জটিল এবং মহানুভব ও সর্বত্যাগী মানুষের সন্ধান পাই। বই মানুষকে যেমন কর্মপটু রাখে তেমনি অনেক ভাবনাকেও সে সক্ষম করে তোলে। এমন কতগুলো বই আছে যা পড়ে মানুষ সমস্ত পৃথিবীকে পরিবর্তনের পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হতে পারেন। জীবনকে সঠিকভাবে বুঝতে হলে, অভ্যাসের বেড়া ভাঙতে হলে সর্বোপরি সংস্কারমুক্ত হতে হলে বই আপনাকে পড়তেই হবে। বই আমাদের মনের দরজা খুলে দেয়। বই সম্পর্কে ওমর খৈয়াম বলেছেন- ‘রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে, কিন্তু বইখানা অনন্ত যৌবনা- যদি তেমন বই হয়।’ কাজেই আমাদের বই পড়ার অভ্যাস ফিরিয়ে আনতেই হবে কেননা শেষ পর্যন্ত বই-ই আমাদের প্রকৃত বন্ধু।

সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

 

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..