বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩, ০১:০৫ পূর্বাহ্ন
চৌধুরী ভাস্কর হোম: লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন বনে অগ্নিকান্ডে বন এলাকার ছোট-বড় লতা-গুল্ম ও গাছ পুড়ে যাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে এই বনের বন্যপ্রানী ও জীববৈচিত্র্য। বনের প্রায় চার একর জায়গা জুড়ে পশুপাখির নিরাপদ আবাসস্থল এবং গাছপালাসহ অনেক পাখির বাসা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ঘন ঘন বনে আগুন লাগার উৎস এখনও উৎঘাটন করতে পারেনি বন বিভাগ। সর্বশেষ গত শনিবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের বেসকারি উন্নয়ন সংস্থা হীড বাংলাদেশের কার্যালয় সংলগ্ন বাঘমারা বন ক্যাম্পের পাশে একটি টিলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে প্রায় ৪ একর এলাকা জুড়ে বাশ ও বেত বাগানের ক্ষতি হয়। এ ঘটনায় রোববার আগুনে পুড়ে যাওয়া লাউয়াছড়া বন পরিদর্শন করেছে শ্রীমঙ্গল লাউয়াাছড়া বন ও জীববৈচিত্র রক্ষা আন্দোলন কমিঠি।
এদিকে লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনে অগ্নিকান্ডের ঘটনা তদন্তে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বনবিভাগ। ওই কমিটিতে রয়েছেন বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মীর্জা মেহেদী সরওয়ার ও বন মামলা পরিচালক জুলহাস উদ্দিন। তাদের দুই দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী।
লাউয়াছড়া বন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা আন্দোলন কমিঠির আহবায়ক জলি পাল বনবিভাগের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনাঞ্চলে আগুনের সুত্রপাত কিভাবে ঘটলো? যে শ্রমিকরা স্টুডেন্ট ডরমিটরি অংশে কাজ করছিলেন তারা কারা? আর সংরক্ষিত বনাঞ্চলে শ্রমিক নিয়োগের কারন কি? তা জানতে চায় লাউয়াছড়া বন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা আন্দোলন কমিঠি।
কেমন আছে মিশ্র চিরহরিৎ বন লাউয়াছড়ার প্রাণবৈচিত্র্য? উদ্ভিদ ও প্রাণবৈচিত্র্যে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে জানতে চাইলে বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মির্জা মেহেদি সরোয়ার বলেন, অগ্নিকাÐের কারণ উদঘাটনে আমরা তদন্ত শুরু করে দিয়েছি। দুইদিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবো। তদন্ত কাজ চলছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (বাপা) সিলেট বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম বলেন, প্রায় দেড় বছর আগে এবারের ঘটনাস্থলের কাছে লাউয়াছড়া বনে আগুন লেগেছিল। ওই ঘটনার কোনো তদন্ত হয়নি। এখন আবার আগুন লেগে বনের ক্ষতি হলো। এর দায় বন বিভাগকে নিতে হবে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বন বিভাগের খামখেয়ালির জন্য এখানে বারবার আগুনের ঘটনা ঘটছে। এর ফলে শত শত একর বনভ‚মি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কিন্তু বন বিভাগের পক্ষে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় বারবার আগুনের ঘটনা ঘটছে।
এ বিষয়ে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, তদন্ত কমিটিকে আগামী দুই দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পেলে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।
উল্লেখ্য, মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত ১২৫০ হেক্টর জমি নিয়ে লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনাঞ্চল। ১৯৯৬ সালে সরকার এটিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। উদ্ভিদ আর প্রাণীবৈচিত্র্যের আঁধার এই বন বিভিন্ন বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। বন বিভাগের হিসেব মতে, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৫৯ প্রজাতির সরীসৃপ (৩৯ প্রজাতির সাপ, ১৮ প্রজাতির লিজার্ড, ২ প্রজাতির কচ্ছপ), ২২ প্রজাতির উভচর, ২৪৬ প্রজাতির পাখি ও অসংখ্য কীট-পতঙ্গ রয়েছে। এই বনে বিরল প্রজাতির উল্লুক, মুখপোড়া হনুমান, চশমাপড়া হনুমানও দেখতে পাওয়া যায়। বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের জন্য এ বন বিখ্যাত। উল্লুক ছাড়াও এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভ জীবজন্তু, কীটপতঙ্গ এবং উদ্ভিদ। নিরক্ষীয় অঞ্চলের চিরহরিৎ বর্ষাবন বা রেইন ফরেষ্টের মতো এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। সুর্যের আলোর জন্য প্রতিযোগিতা করে এ বনের গাছপালা খুব উঁচু হয়ে থাকে, এবং অনেক ওপরে ডালপালা ছড়িয়ে চাঁদোয়ার মত সৃষ্টি করে। এই বন এতই ঘন যে মাটিতে সুর্যের আলো পড়েনা বললেই চলে।