মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪৬ অপরাহ্ন
সাখাওয়াত লিমন: প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি চায়ের রাজধানীখ্যাত শ্রী আর মঙ্গলে নিহিত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল। এখানকার আবহাওয়া, মাটি-পানি-বাতাস, হাওর-নদী, বাগান-বাড়ি আর পাহাড়-টিলায় বেষ্টিত পর্যটন স্থানগুলো সুন্দর্য্য উপভোগ করতে দেশ বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ভীড় জমান এখানে। পর্যটক স্থান এর সাথে সাতে এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকদের অন্যতম একটি আকর্ষণ হচ্ছে মণিপুরী তাঁতবস্ত্র। মনিপুরী তাঁতবস্ত্র দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে একটি প্রধান আকর্ষন। মণিপুরী নারীদের নিপুণ হাতে গড়া রকমারী পোষাকগুলো যে কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিঃসন্দহে। কাপড়ের আঁচলে আঁকা রঙ-বেরঙের নকশাগুলো যেন সহসাই মনে করিয়ে দেয় মণিপুরী সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের কথা। তাই শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে এসে এই মণিপুরী তাঁতবস্ত্রের প্রতি সবারই দৃষ্টি আকর্ষিত হয়।
মণিপুরি কাপড়ের বিশাল সমাহার শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোণ ইউনিয়নের রামনগর মণিপুরী পাড়ায়। এখন দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আনাগোনায় মূখরিত হয়ে উঠে প্রায় প্রতিদিনই। মণিপুরী তাঁতবস্ত্র সমূহের মধ্যে থ্রি-পিস, শাড়ি, ওড়না, ফতুয়া, পাঞ্জাবী, চাঁদর, গামছা, শাল, ব্যাগ ইত্যাদি কিনতে প্রায় প্রতিদিন কয়েকশত পর্যটক তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে এখানে আসেন।
মণিপুরীদের তৈরী পোশাক গুলো বিক্রয় করার জন্য এখানে দীপা, শর্মিলা, প্রীতি, বর্ণা, থিংগুজাম, মাঙান সহ নামে বেনামে ছোট-বড় প্রায় ১০/১২টি হ্যান্ডিক্রাফটস্ এর দোকান তৈরী গড়ে উঠেছে।
মণিপুরী হস্ত শিল্পের এসব বিক্রেতা দের দৈনিক মৌমাছি কন্ঠের এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলে জানা যায়, শীতকালে মণিপুরী তাঁতবস্ত্রের চাহিদা কিছুটা বেশী থাকে। কারণ শীতে পুরুষ ও মহিলাদের অন্যতম ফ্যাশন্যবোল পোষাক হিসেবে মনিপুরী চাঁদর ও শাল দেশ ছেড়ে বিদেশেও সুখ্যাতি অর্জন করেছে। অন্যদিকে ভ্রমন পিপাষুরা ভ্রমনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় বেশী ঘুরে বেড়ায় এই শীতকালেই। আর স্থানীয় বাসিন্দাদের চেয়ে অধিক পরিমানে মণিপুরী পোষাক কিনে থাকেন পর্যটকরাই। সামনে শীতের সিজন আসছে বিদায় মণিপুরী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে এখন নারী-পুরুষ সকলেই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। মনিপুরী পরিবার গুলোর মধ্যে এসময় দিন-রাত বিরামহীন প্রতিযোগীতায় চলে তাঁতের কাপড় বুননের কাজ।
বাংলাদেশের প্রাচীন হস্ত শিল্পগুলোর মধ্যে মনিপুরী হস্তশিল্প সু-প্রসিদ্ধ । মনিপুরী হস্তশিল্প অনেকটা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত। তাঁত শিল্পের সঙ্গে মনিপুরীদের রয়েছে যুগযুগান্তরের স¤পর্ক মনিপুরী সমাজে মেয়েদের তাঁত শিল্পের অভিজ্ঞতাকে বিয়ের ক্ষেত্রে পূর্বযোগ্যতা হিসেবে দেখা হয় । মনিপুরীদের বস্ত্র তৈরির তাঁতকল বা মেশিন প্রধানত তিন প্রকার যেমন, কোমরে বাঁধা তাঁত,হ্যান্ডলুম তাঁত ও থোয়াং। এই তাঁতগুলো দিয়ে সাধারণত টেবিল ক্লথ, স্কার্ফ, লেডিস চাদর, শাড়ি, তোয়ালে, মাফলার, গামছা, মশারী, ইত্যাদি ছোট কাপড় তৈরি হয়। প্রধানত নিজেদের তৈরি পোশাক দ্বারা নিজেদের প্রয়োজন মেটাতেই মনিপুরী স¤প্রদায়ের মধ্যে তাঁত শিল্প গড়ে উঠেছিল। পরবর্তীকালে তাঁত শিল্পে নির্মিত সামগ্রী বাঙালি সমাজে নন্দিত ও ব্যবহৃত হয়।
নিজের চাহিদা মিটিয়ে দেশ বিদেশের মানুষের জন্য মণিপুরীরা তৈরী করছেন নানান পোশাক । যা দেশের বাহিরেও রপ্তানি হচ্ছে আজ। ঐতিহ্যের ধারায় মনের সপ্ন ফোঁটিয়ে তুলতে যেমন ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছেন মনিপুরী নারীরা তেমনি ব্যস্ত হয়ে উঠেছে তাঁতগুলোও। তাঁতের প্রতিটি সুতার ফাঁকে যেন লোকিয়ে আছে মণিপুরী জীবনের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য।