বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:০০ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :: হাসপাতালে ঠাঁই নেই। তাই রোগীদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। বাড়ি থেকেই চিকিৎসা নিতে বলা হচ্ছে। কিন্তু এতেও মারাত্মক সঙ্কট। সমস্যার কোনোই সমাধান হচ্ছে না। কারণ, বাড়িতে চিকিৎসা দিতে হলেও প্রয়োজন সেই অক্সিজেন সিলিন্ডার। তা যোগাড় করতে পরিবারগুলোকে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে। অক্সিজেন সিলিন্ডার পাওয়া আর আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া সমান হয়ে গেছে। যাওবা কোথাও সন্ধান মিলছে, তার দাম অস্বাভাবিক বেশি। একই অবস্থা কনসেনট্রেটর এবং অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের। কালোবাজারে যা কিছু পাওয়া যাচ্ছে তা সাধারণ মানুষ স্পর্শ করতে পারছেন না। দিল্লি এবং ভারতের অনেক শহরে এ অবস্থা বিরাজ করছে।
এতে বলা হয়েছে, রাজধানী দিল্লি এবং ভারতের অন্যান্য স্থানের বেশির ভাগ হাসপাতালের বেড রোগীতে পূর্ণ। এ অবস্থায় নতুন রোগী গেলে তাকে ফেরত পাঠাচ্ছে হাসপাতালগুলো। রোববার এমন অবস্থার শিকারে পরিণত হন অংশু প্রিয়া। তার শ্বশুরের অবস্থা ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছিল। এ সময় তিনি একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার খুঁজে পেতে পুরোটা দিন ব্যয় করেন। দিল্লি বা নয়ডাতে কোনো হাসপাতালে একটিও বেড খুঁজে পাননি তিনি। দোকানে দোকানে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার খুঁজে ফিরেছেন। কিন্তু সব কিছুতেই তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। বাধ্য হয়ে তাকে হাত বাড়াতে হয়েছে কালোবাজারে। তিনি ৫০ হাজার রুপি দিয়ে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনতে সক্ষম হন। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে এর দাম ৬ হাজার রুপি। অংশু প্রিয়ার শাশুড়ির অবস্থাও খারাপ। তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। এখন তাকে নিয়েও উদ্বিগ্ন অংশু প্রিয়া। তিনি বলেছেন, শাশুড়ির জন্য কালোবাজার থেকে আরেকটি অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনার মতো সামর্থ এখন আর নেই। এ অবস্থায় অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করে এমন কয়েকটি স্থানে যোগাযোগ করেন বিবিসির সাংবাদিক। তার কাছে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কমপক্ষে ১০ গুন দাম বেশি চাওয়া হয়।
ভারতে যে শুধু এমন লড়াই করছেন অংশু প্রিয়া একা- তা নয়। তার ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। দিল্লি, নয়ডা, লক্ষ্মী, এলাহাবাদ, ইন্ডোরসহ বহু শহরের হাসপাতালের বেড শেষ হয়ে গেছে। এ কারণে বহু পরিবার তাদের রোগী নিয়ে বাড়িতে আলাদা ব্যবস্থাপনা করে সেখানে চিকিৎসা দিচ্ছেন। তবে দিল্লির পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়ানক। সেখানে আর কোনো আইসিইউ বেড নেই। যেসব পরিবারের সামর্থ আছে, তারা নার্সদের হায়ার করে নিয়ে এবং ডাক্তারদের পরামর্শ নিয়ে প্রিয়জনের চিকিৎসা করাচ্ছে। প্রতিদিন যেন পাল্লা দিয়ে ভারতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আর গড়ছে নতুন নতুন রেকর্ড। সোমবার সেখানে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন কমপক্ষে ৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৯১ জন। মারা গেছেন ২৮১২ জন।
এত বিপুল পরিমাণ মানুষের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ফলে দেশের বহু শহরে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেছেন। এ অবস্থায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের পরিবারের সামনে কোনো উপায় নেই। ফলে তারা বাধ্য হয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাসায় রেখেই চিকিৎসা করাচ্ছেন। কিন্তু রক্তের পরক্ষা থেকে শুরু করে সিটি স্ক্যান বা এক্স-রে করানো ভয়াবহ এক দুর্ভোগের বিষয় হয়ে উঠেছে। এসব টেস্ট করাতে গিয়ে ল্যাবরেটরিগুলোতে রোগীতে উপচে পড়ছে। কোন পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে তিনদিন পর্যন্ত। ফলে চিকিৎসকদের জন্যও চিকিৎসা দেয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এসব রিপোর্ট পেতে বিলম্বের কারণে বহু রোগীর অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় কয়েকদিন লেগে যাচ্ছে।
বাসায় ফিরে গিয়ে অঞ্জু তিওয়ারি তার ভাইকে চিকিৎসার জন্য একজন নার্স ভাড়া করেছেন। কারণ, তারা কোনো হাসপাতালে বেড পাননি। কেউই ভর্তি করতে রাজি হয়নি তার ভাইকে। অনেক হাসপাতাল বলছে তাদের কাছে আর বেড নেই। আবার কেউ বলছেন, অক্সিজেন সরবরাহে অনিশ্চয়তা থাকার কারণে তারা নতুন রোগী ভর্তি নিচ্ছেন না। অক্সিজেনের অভাবে দিল্লিতে বেশ কিছু মানুষ মারা গেছেন। অনেক হাসপাতাল প্রতিদিন সতর্কতা দিচ্ছে। তারপর সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। অক্সিজেন ট্যাংক পাঠানো হচ্ছে। দিল্লিতে একজন চিকিৎসক বলেছেন, এভাবেই হাসপাতালগুলো কাজ করছে। ‘এখন বাস্তবেই এক আতঙ্ক গ্রাস করেছে যে, বড় রকমের এক ট্রাজেডি গ্রাস করতে পারে’। সূত্র :বিবিসি