1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১১ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

অসহায় -সোয়েব মোহাম্মাদ

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৮ মে, ২০২২
  • ৫৫৫ বার পঠিত

ভর দুপুর বেলা,বাজারে জনসংখ্যার চলাচল একদম নেই বললেই চলে।দুই একজনকে রাস্তায় হাঁটা চলা করতে দেখা যাচ্ছে।এসময় শামীম ফুটপাতে দোকান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।বারোমাখার দোকান।এর উপর দিয়ে বাড়ির সমস্ত সংসার খরচ চলে।আজ খুব একটা বেঁচা বিক্রি হয়নি,এজন্য তার মুখে হাসি ভাবটা নেই।গালে হাত দিয়ে চিন্তিত চিত্রে লম্বা মোড়ায় বসে আছে।

এমন সময় তার সামনে দিয়ে একটা মাঝবয়সী লোককে হেঁটে যেতে দেখলো। মুখ পুরো শুকনো,কাঁধে একটা বড় ব্যাগ,মনে হচ্ছে সেখানে অনেকগুলো কাপড়ে বন্দি।ব্যাগ নিয়ে লোকটি হাঁটতে পারছে না,থেমে থেমে দম নিয়ে হাঁটছে।লোকটির বয়সও এমন হয় নি,যে এই ভার সহ্য করতে পারবেন না।
তবে এমন করে কেন হাঁটছে?এই ব্যাপারটির প্রতি কৌতুহল নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে ভাবছে শামীম।

লোকটি তার সামনে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পাশের দোকানে গেল।সেখানে কিছু একটা বলতেই,দোকানদার খিটখিটে মেজাজে বললো,”এই দুপুর বেলায় এমনিতেই বেচা বিক্রি নেই,তার মধ্যে ঝামেলা করতে এসেছেন ?এখান থেকে এক্ষুনি চলে জান তো মশাই।”

শামীম অনুমান করতে পারলো লোকটি ভিক্ষা চেয়েছে,আর এই জন্যই সে লোকটিকে তাড়িয়ে দিলো।এই দোকানদারের মেজাজ বরাবর ই খারাপ। কাস্টমার ছাড়া আর কাউকে চিনতে চায় না।

লোকটির মুখ তৎক্ষণাৎ বিবর্ণ হয়ে গেল,তিনি মাথা নিচু করে সেখান থেকে ধীরে ধীরে হেঁটে যাচ্ছে শামীমের দোকানের পাশ ঘেঁষে।আস্তে আস্তে লোকটি শামীমের দোকান থেকে কিছুটা দূর চলে গেল।কি যেন ভেবে লোকটিকে ডাক দিলো শামীম,”এই যে চাচা এদিকে একটু শোনেন!”

লোকটি পিছনে ঘাড় ঘুরিয়ে বললো,”আমাকে কি ডাকছো বাবা?”

শামীম বললো,”হ্যা চাচা আপনাকেই ডাকছি!”

লোকটি ধীরে ধীরে তার কাছে এগিয়ে আসলো।এসে জিজ্ঞেস করলো,”বলো বাবা।কেনো ডাকছো?”

“চাচা আপনাকে এলাকায় নতুন দেখতেছি।আগে মনে হয় এই এলাকায় ভিক্ষা করেন নি,তাই না?”

লোকটি কাঁদতে কাঁদতে বললো,”বাবা আমি ভিক্ষুক নই।গতকাল থেকে একজন অসহায় মানুষ হয়ে পথে পথে ঘুরছি।”

“তাহলে ছেলেপেলে কি আপনাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে?”

সেই বৃদ্ধ লোকটি মাথা নিচু করে বলল,”না বাবা এমন কিছুই হয়নি।আমি একজন মধ্যবিত্ত কৃষক। জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে বসবাস করি।মেয়ে জামাই রাজশাহীতে থাকে,বহুদিন হলো তাদের সাথে দেখা হয়নি। ভাবলাম ক্ষেতের কিছু শাক সবজি নিয়ে মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাবো।এই ভেবে গতকাল বাড়ি থেকে বের হই রাজশাহীর উদ্দেশ্যে।আক্কেলপুর থেকে গাড়ি করে দুপচাঁচিয়া এসে নামলাম। সেখান থেকে বাস পরবির্তন করে নওগাঁ রোডের বাসে চড়লাম। নওগাঁ পৌঁছানোর পর রাজশাহীর বাসে উঠলাম।যখন ভাড়া দিতে যাব,তখন পকেটে হাত দিয়ে বুঝতে পারি পকেট ম্যার সব কিছু ঝেরে নিয়েছে।ভাড়ার অভাবে কন্টাক্টটার বাস থেকে নামিয়ে দিলো।বাড়িতে যে ফোন দেবো,সেই ফোন টুকুও চুরি করেছে পকেট ম্যার।আমি পুরোনো যুগের মানুষ,মোবাইল টিপতে জানি না,শুধু ফোন আসলে রিসিভ করতে পারি।এখন আমি কি করি ভেবে পাচ্ছিনা।বাধ্য হয়ে মানুষের কাছে হাত পাততে থাকলাম,কেউই খুব একটা বিশ্বাস করতে চাইছিল না।যার কাছে টাকা চাচ্ছিলাম সে-ই বিভিন্ন প্রকার কথা শুনাচ্ছিল।গত রাত কাটিয়ে দিলাম খোলা আকাশের নিচে। পানি ছাড়া আর কিছুই পেটে যায় নি। রাজশাহীতে তো আর যেতে পারবো না।এখন বাড়িতে যাওয়ার ভাড়া টুকু পেলেই বাঁচি।গতকাল থেকে এই ২২টি টাকা জোগাড় করতে পেরেছি।”এই বলে বৃদ্ধা একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।

লোকটির করুণ ঘটনাটি শোনার পর শামীমের ভিতর থেকে কান্না পেয়ে গেল। তিনি বৃদ্ধাকে বললেন,”চাচা চলেন কিছু খেয়ে নেন। বৃদ্ধ লোকটি তার কাছে দুটো হাত তুলে বললেন,”বাবা যে টাকা আমাকে খেতে দিতে সেটা দয়া করে আমাকে দাও। আল্লাহ জানেন বাড়ির লোকেরা কতো চিন্তা আর কষ্ট পাচ্ছেন।

“আরে চাচা গতকাল থেকে খান নাই।আগে নিজের জীবনটাকে বাঁচান,তারপর আপনার বাড়ি যাওয়ার ব্যাপারটা দেখা যাবে।”

লোকটি আর কোন কথা বলল না।পাশের দোকান থেকে দুটি রুটি ও কলা কিনে দিলো শামীম। লোকটি কোন দ্বিধা না করে ক্ষনিকের মধ্যে ক্ষুধার্ত সিংহের মতো খেয়ে নিলেন।

খাওয়া শেষে মাটিতে বসে পড়লেন আর বললেন,” গতকাল থেকে কিছু খেতে পাইনিতো বাবা,এজন্য খাবার পেটে ঢোকার পর শরীরটা একটু খারাপ লাগছে।”

“চাচা শরীর কি খুব খারাপ করছে?”

“না না বাবা, একটু পরে ঠিক হয়ে যাবে।”

লোকটি একটু পর উঠে বললো,”বাবা যা করলে অনেক ভালো করেছ,আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুন।তোমার কাছে ঋণী হয়ে থাকলাম।এখন আমাকে উঠতে হবে,দেখি বাড়ি যাওয়ার ভাড়া টুকু জোগাড় করতে পারি কিনা।

শামীম লোকটিকে বললো,”চাচা আপনার বাড়ি যেতে কত টাকা লাগবে?”
বৃদ্ধ লোকটি বলল বাবা,”গতকাল থেকে ২২ টাকা জোগাড় করতে পেরেছি,আর ৬০ টাকা জোগাড় করতে পারলে গাড়ি ভাড়াটুকু হয়ে যাবে।

শামীম তার লুঙ্গির গিট্টু খুললো,এবং সেখান থেকে ১০০ টাকার একটি নোট বের করে বৃদ্ধটির উদ্দেশ্য করে বললো,”এই যে চাচা আপনার ভাড়াটা!”

লোকটি টাকা দেখে অনেক অবাক হলেন। নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না।খুশি না হয়ে পারছেন না,তার মুখ ভরা হাসি দেখা গেল।টাকা হাতে নিয়ে বৃদ্ধটি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বললো,”বাবা,তুমি আমার যত বড় উপকার করলে এটা বলার মত নয়।রাস্তা দিয়ে কত ধনি,শিক্ষিত মানুষেরা হেঁটে গেল।তারা কেউই আমার দিকে তাকিয়ে দেখল না।তাদের কাছে টাকা চাইতে গেলে টাকা তো দিলোই না উল্টো আমাকে বিভিন্ন কথা শুনিয়ে দিলো।

আর তুমি সাধারণ এক বারমাখার দোকানদার।তুমি আমার কষ্টটা কত সহজেই বুঝে নিলে।পৃথিবীতে তোমার মতো লোক আছে বলেই হয়তো পৃথিবী টিকে আছে।না থাকলে হয়তো এতোদিনে পৃথিবীর ধ্বংস ঘটতো।”

বৃদ্ধা তার বাড়ির ঠিকানার কথা জানিয়ে বললো, কোন দিন আকক্কেলপুরে গেলে আমার বাড়িতে যেও বাবা।এই বলে বৃদ্ধা বাসে উঠে পড়লেন।শামীম লোকটিকে বাসে তুলে দিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বিদায় জানালো।

যার মনুষ্যত্ব আছে সেই মানুষ।ধনী-গরীব এগুলো শুধু মাত্র সমাজের দেওয়া এক শ্রেণীবিভাগ।মূল কথা হলো মানুষ হতে গেলে মনুষ্যত্ব থাকতে হয়,তবেই সে সত্যিকারের মানুষ হয়।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..