সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৫২ অপরাহ্ন
মো: জাফর ইকবাল: মৌলভীবাজারের বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) শিল্পনগর নানা সমস্যা আর অব্যবস্থপনায় নাজুক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কারখানা গুলোর উৎপাদনে বিঘœ হচ্ছে। ২০ দিন যাবৎ বিসিক শিল্প নগরীতে নেই কোন পানি। কারখানার বর্জ্য ব্যবস্থা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট, পরিবেশের বেহাল দশায় ও পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার অভাবে প্রতিনিয়ত বন্ধ হচ্ছে কারখানা। ফলে শিল্প মালিকদের এই শিল্পনগরী নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। ১৯৮৭ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সময়ে মৌলভীবাজারের গোমরা এলাকায় ১৪ দশমিক ৫৯ একর জায়গা নিয়ে বিসিক শিল্পনগরী বাস্থবায়ন করা হয়। রাস্থা, প্রশাসনিক ভবন এলাকা ও মসজিদ বাদে ১১ দশমিক ৫৯ একর জায়গায় ১০১টি প্লট তৈরি করা হয়।
এর মধ্যে তিনটি ক্যাটাগরিতে ৯৯টি প্লট বরাদ্ধ দেওয়া হয়। যার মধ্যে অনুমোদিত শিল্প ইউনিট রয়েছে মাত্র ৬৩টি। এতে প্রায় ৪২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন শিল্প উদ্যোক্তারা। এর মধ্যে বর্তমানে ১১ ধরনের মাত্র ৩৫টি ইউনিটে পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। মামলা ও দেউলিয়া হয়ে বন্ধ রয়েছে আটটি প্রতিষ্ঠান। সরেজমিনে দেখা যায়, শিল্পনগরীটির কাগজে কলমে ৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে উৎপাদনরত দেখানো হলেও বাস্তবে তা আরও কম। প্লট বরাদ্ধ দেওয়ার বছরের পর বছর পার হলেও এখনও উৎপাদনে আসতে পারছে না এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে পাঁচটি। এছাড়া শিল্পনগরীর পুরো এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কলকারখানার বর্জ্য-আবর্জনা। নেই কোনো ওয়েস্ট ম্যানেজম্যান্ট সিস্টেম। যেখানে সেখানে ফেলে রাখা হচ্ছে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতিকর বর্জ্যও। পুরো এলাকায় নেই যথাযথ ড্রেনেজ ব্যবস্থা। বিসিকের শুরুতে ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা হলেও ভুল নকশার কারণে তা কার্যকর হচ্ছে না। ড্রেনের সামনের মুখ বন্ধ থাকায় পানি চলাচল করতে পারে না। ড্রেন গুলোর উপর আগাছা ও কচু জন্মে পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। শিল্প প্রতিষ্ঠানের ব্যবহৃত পানি জমে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে আশপাশে। অনেকে উপায় না পেয়ে পাশের ফসলি জমিতে কেমিক্যাল মেশানো পানি ফেলছে। ফলে পরিবেশে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। এ নিয়ে আশপাশের জমি মালিকদের কোনো আপত্তিই কাজে আসছে না। আশ পাশের জমিতে কৃষি কাজের জন্য শ্রমিক বা কৃষক গেলে হাত পায়ে ফোসকা পড়ে যায়। এছাড়া একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা তৈরি ব্যাহত হয়ে বিসিক এলাকায় উৎপাদনে বিঘœ হয়। অন্যদিকে, বিসিকের কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। ছোট সীমানা প্রাচীর আর উন্মোক্ত দুই ফটক দিয়ে যখন তখন সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার রয়েছে। নিয়মে কলকারখানায় শ্রমিকরা বসবাস করতে পারেবন না বলা হলেও একাধিক কারখানায় তৈরি হয়েছে বাসস্থান। অবাদ চলাফেরার সুযোগ থাকায় রাতের আঁধারে বখাটে মাদকাসক্তদের আড্ডা বসছে। ফলে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে বিসিকের খানাখন্দ ও ভাঙা রাস্তা। মূল ফটকেই বিশাল বিশাল গর্তে জমে আছে পানি ও কাঁদা। বড় বড় পণ্যবাহিী গাড়ি আসা যাওয়া ও ভেতরে ঢুকতে পারছে না। রাস্তার পাশে যত্রতত্র মালামাল রাখার ফলে সমস্যায় রয়েছেন উদ্যোক্তারা। এছাড়া ভেতরের রাস্তায়ও খানাখন্দে ভরা। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ এই শিল্পনগরীতে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় একের পর এক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে মালিকানা পরিবর্তন করছে। এরইমধ্যে বন্ধ হয়ে পড়েছে আটটিরও বেশি প্রতিষ্ঠান। সরকারের সুদৃষ্টি না থাকায় বিনিয়োগ করে বিপাকে আছেন ব্যবসায়ীরা। শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত এর কোনো উন্নয়ন হয়নি। কারখানা মালিকদের অভিযোগ বিসিক কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় বিসিকের কার্যক্রম অচল হয়ে পড়েছে। তাদের কাছ থেকে সার্ভিস চার্জ নিলেও বিসিক থেকে কোনো সার্ভিস পাচ্ছেন না। রাস্তাঘাট, ড্রেন ও নিরাপত্তার সমস্যা তো আছেই। মৌলভীবাজার বিসিক শিল্পনগরী ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: বিল্লাল হোসেন ভূঁইয়া দৈনিক মৌমাছি কন্ঠকে বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রকল্প আবেদন জমা দিয়েছি। আশা করছি শিগগির তা বাস্তবায়ন হবে। পানির সমস্যা বিশয়ে তিনি বলেন, পানির মটওে সমস্যা হয়েছে। টিকাদার মটর নিয়ে গেছে। শীগ্রীই মটর লাগানো হবে। পানির লাইনে জং ধরেছে। এব্যাপারে টেন্ডার হয়েছে কিন্তু ঠিকাদার কাজ করছেনা দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে। অনেক প্রতিষ্টান বন্ধ হয়েছে ব্যাংক ঋনের কারনে। এরইমধ্যে অন্যান্য সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এ নিয়ে রিজন্যাল অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথাও হয়েছে।