সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:১৩ অপরাহ্ন
বড়লেখা প্রতিনিধি :: দ্বিতল বাড়ির ছাদের দুইপাশে টিনের ছাউনির ঘর। ঘরের চারপাশ কাঠ ও তারের নেট দিয়ে ঘেরা। খামারের ভেতর কবুতরের পাশাপাশি বিভিন্ন জাতের পাখি রয়েছে। পাখিদের কিচিরমিচিরে বাড়িটি সবসময় মুখরিত থাকে। খামার মালিক পাখিগুলোকে খাবার দিচ্ছিলেন, যত্ন নিচ্ছিলেন। খামারটি মো. শাহরিয়ার ফাহিমের। বর্তমানে তাঁর খামারে ২০ জাতের কবুতর ও বিভিন্ন প্রজাতির ৮ জাতের প্রায় ৭০০ পাখি রয়েছে। কবুতর পালনের পাশাপাশি বার্ডস কেয়ার নামে তাঁর একটি পাখিখাদ্যের দোকানও রয়েছে।
পাখি ও পশুপাখির খাদ্য বিক্রি করে ফাহিম প্রতি মাসে ৬০-৭০ হাজার টাকা আয় করছেন। অবশ্য ফাহিমকে শুরতেই পরিবারের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। তবে সব বাধা ডিঙিয়ে তিনি আজ সফল। ফাহিমকে দেখেই উপজেলার অনেকে তরুণ কবুতর পালনে আগ্রহী হচ্ছেন। ফাহিম মৌলভীবাজারের বড়লেখা পৌরসভার পাখিয়ালা এলাকার মৃত মো. আব্দুল মতিনের ছেলে। তিনি ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড়। বড়লেখা সরকারি কলেজ থেকে তিনি স্নাতক শেষ করেছেন।
আলাপকালে মো. শাহরিয়ার ফাহিম বলেন, আমি কখনও বেকার থাকতে চাইতাম না। যার কারণে নবম শ্রেণিতে লেখাপড়ার পাশাপাশি ব্যবসা শুরু করি। এসএসসি পাশ করে ২০১২ পাশ করে কলেজে ভর্তি হই। তখন কবুতর পালনের শখ জাগে। শুরুতেই দুই জোড়া কবুতর কিনে আনি। এগুলো লালন-পালন করতে শুরু করি। কয়েকদিন পর কবুতরগুলো ডিম দেয়। পরে তা থেকে ফুটে বাচ্ছা হয়। এরপর বাণিজ্যিকভাবে কবুতর পালনের চিন্তা আসে।
ফাহিম জানান, তার খামারে বর্তমানে ২০ জাতের কবুতর ও বিভিন্ন প্রজাতির ৮ জাতের ৭০০ পাখি রয়েছে। এর মধ্যে ফেনসি, রেসার, গিরিবাজ কবুতরের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। অন্য পাখিগুলোর মধ্যে বাজরিগর, ককাটিয়েল, অস্ট্রেলিয়ান ঘুঘু পাখির চাহিদাও আছে। একজোড়া কবুতর ১৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা দাম। এরমধ্যে রেসার কবুতর সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। ফাহিম ২০২০ ও ২০২১ সালের সিলেট বিভাগীয় পর্যায়ে কবুতর রেসে ঢাকা ভৈরব থেকে ১৫০ কিলোমিটার আকাশ পথে রেসে অংশগ্রহণ করে পুরস্কার পেয়েছেন।
তিনি বলেন, অনেক পরিশ্রম করে তিনি কবুতর খামারটি গড়েছি। প্রথমে পরিবারের কেউ চাইত না যে কবুতর পালন করি। কিন্তু এখন কেউ আর বাধা দেননা। তিনি বলেন, এখন আমাকে দেখেই অনেকে পাখি পালনে আগ্রহী হচ্ছেন। তাদের অনেকে আমার কাছ থেকে পাখি নিচ্ছেন। বিভিন্ন পরামর্শ নিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, পরিশ্রম করলে যে কেউ সফলতা অর্জন করতে পারবেন। আমাদের সমাজের অনেকে আছেন যারা সবসময় চাকরির পেছনে ছুটছেন। তাদের উচিত চাকরির পেছনে না ছুটে ভালো কোনো কাজে লেগে থাকা। তাহলে সফলতা আসবেই।
পাথারিয়া গাংকুল মনসুরিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার আইসিটি প্রভাষক পানিধার গ্রামের বাসিন্দা সঞ্জীব সরকার বলেন, এক বছর ধরে আমি বাড়ির ছাদে কবুতর পালন শুরু করেছি। মূলত ফাহিমের খামার দেখে কবুতর পালনে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। আর আমারও শখ ছিল। যে কারণে তা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে আমার কাছে ৩০-৩৫ জোড়া দেশি ও ফেন্সি কবুতর আছে। আমি ফাহিমের দোকান থেকে পাখির খাদ্য ক্রয় করি।
লাইসিয়াম স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আফসার হোসেন বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি আমি দীর্ঘদিন ধরে কবুতর পালন করছি। কবুতরের বিষয়ে আমাদের ধারণা কম ছিল। কীভাবে এগুলো পালন করতে হবে। অসুস্থ হলে কীভাবে চিকিৎসা করাতে হবে। এসব পরমার্শ ফাহিম ভাইয়ের কাছ থেকে পেয়েছি। এখনও পাচ্ছি। উনার দোকান থেকে কবুতরের খাদ্য কিনি।
বড়লেখা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মুহাম্মদ তাজ উদ্দিন বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি কবুতর পালন করে ফাহিম সাবলম্বী হয়েছেন। ফাহিমের মতো এখনকার তরুণরা যদি লেখাপড়ার পাশাপাশি এভাবে গবাদিপশু-পাখি পালন শুরু করেন। তাহলে দেশে বেকারত্ব কমবে। অপরাধ কমবে। দেশে এগিয়ে যাবে।