সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৫১ অপরাহ্ন
কুলাউড়া প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দোকানের সামনে-আশপাশে বখাটে যুবক ও ইভটিজারদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে কর্মক্ষেত্রে যাতায়াতকারী মহিলা ও স্কুল-কলেজগামী ছাত্রীদের স্বাভাবিক যাতায়াতের মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
জানা গেছে, পৌর শহরের কুলাউড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কুলাউড়া সরকারি কলেজ, কুলাউড়া ইয়াকুব-তাজুল মহিলা ডিগ্রি কলেজসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের সামনে ইদানিং বখাটেদের আনাগোনা চরম আকার ধারণ করেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোর আশেপাশে দলবদ্ধ ভাবে অবস্থান নিচ্ছে তারা। পথেঘাটে ছাত্রীদের প্রেম
নিবেদন এবং আপত্তিকর মন্তব্যও করছে বখাটেরা। এতে ছাত্রীরা লজ্জায় মানসম্মান হারানোর ভয়ে এর প্রতিবাদ করতে পারছে না। কোনো সচেতন এবং প্রতিবাদী মানুষ বখাটেদের প্রতিবাদ করলে অথবা বাধা দিলে
উল্টো প্রতিবাদকারীরা রোষানলে পড়তে হচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কুলাউড়া পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে সবগুলোর প্রধান ফটকের সামনে বা আশপাশে বেকার ও বখাটে যুবকদের (ইভটিজারদের) দৌরাত্ম্য মারাত্মক লক্ষ করা গেছে। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোর বিশেষ করে ছাত্রীদের চলাচলের পথে বিভিন্নভাবে সমস্যা সৃষ্টি করছে বখাটে তরুণ-যুবকরা। তারা বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে মেয়েদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে। নিরাপত্তার কথা ভেবে ছাত্রী ও সংশ্লিষ্ট অভিভাবকগণ এসব বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করতে সাহস পাচ্ছেন না। এতে করে বখাটেদের কাছে জিম্মি হয়ে
আছেন ভুক্তভোগীরা।
এদিকে, বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্তকারী গ্রুপগুলো নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত রয়েছে। কিন্তু বখাটেরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় দাপটের সঙ্গে রাস্তায় হৈ-হুল্লোড় করে স্কুল-কলেজগামী ছাত্রী ও পথচারীদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়।
অপরদিকে, বিভিন্ন স্থানে রেললাইনের পাশে স্কুলের সামনে দোকানপাট, বাসস্টেশন, রেলওয়ে স্টেশনসহ বিভিন্ন পয়েন্টের সামনে বশে বখাটে ছেলেরা আড্ডা জমায়। এমনকি স্কুল-কলেজ ছাত্রীদের পিছু নিয়ে তাদের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে যায়, যার কারণে স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের চলাফেরায় মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে। কয়েকজন ছাত্রী জানান, বখাটেরা পিছু নিয়ে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে যায়, অনেক ভয় করে। তাদের ছবি ও ভিডিও তুলতে গেলে ছাত্রীদের মোবাইল কেড়ে নেওয়ারও হুমকি দেয় বখাটেরা।
এ ব্যাপারে কুলাউড়া থানার ওসি বিনয় ভূষণ রায় জানান, আমরা ইভটিজিং বন্ধে বিভিন্ন স্কুল-কলেজে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা করেছি। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে পুলিশের নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। ছাত্রীরা যেন নির্ভয়ে স্কুল-কলেজে যেতে পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে গত ২৪ মে প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে ১০ম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নের মনসুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কাদিপুর ইউনিয়নের মনসুর এলাকার ফখরুল বক্সের ছেলে বিজয় বক্সের (২১) বিরুদ্ধে ওই ছাত্রীর বাবা কুলাউড়া থানায় মামলা দায়ের করলেও ১২ দিন অতিবাহিত হলেও রহস্যজনক কারণে পুলিশ আসামীকে আজো গ্রেফতার করতে পারেনি।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বিজয় অনেকদিন যাবৎ ওই স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করে আসছে। স্কুলে যাওয়ার পথে বিভিন্ন ধরনের অশ্লীল কথা বলে এবং প্রেমের সম্পর্ক করার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। গত ২৪ মে বিকেলে স্কুল থেকে ফেরার পথে কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় কাদিপুরের মনসুর এলাকায় অটোরিকশা থেকে নামিয়ে ওই ছাত্রীর স্কুল ড্রেস ধরে টানাহেঁচড়া করে মারধর করে বিজয়। এ সময় স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসলে বিজয় সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর বাবা জানান, আমার মেয়েকে স্কুলে যাতায়াত পথে বিজয় বিভিন্ন সময় রাস্তায় উত্যক্ত করত। বিষয়টি জানার পর আমি তার অভিভাবকদের জানালে সে আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। আসামীকে গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান অব্যাহত আছে বলে কুলাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম জানান।