বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:২৭ পূর্বাহ্ন
এম এ রকিব :: প্রচন্ড খরায় ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শহরের বিভিন্ন এলাকায় পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। সাধারন টিউবওয়েল চাপিয়ে এবং ডিটিউবওয়েলে সাধারন পাম্প দিয়ে পানি উঠানো যাচ্ছে না। এতে পানির জন্য মারাত্মকভাবে দুর্ভোগে পড়েছেন শহরের অনেক বাসিন্ধা। অনেকেই দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পানির চাহিদা মেটাতে পানি কিনে আনছেন, আর যারা কিনতে পারছেন না তারা পানির জন্য হাহাকার করছেন। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা জনসাধারনকে পানির অপচয় রোধ করার পাশাপাশি সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
ভুক্তভোগীদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, হঠাৎ করে গত কয়েক দিন যাবত তাদের বাসা-বাড়ির পানির পাম্প দিয়ে পানি উঠাতে পারছেন না। প্রথমে বুঝতে পারেননি কি কারনে পানি উঠছে না, তাই তারা মেকানিক নিয়ে চেষ্টা করেন পানি উঠানোর। অনেকে মেকানিকের পরামর্শে অতিরিক্ত ১০/১৫ ফুট পাইপ যুক্ত করেন। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি বলে জানান।
শহরের হবিগঞ্জ রোডের আহাদ ম্যানশনের মালিক কুটি মিয়া নয়া দিগন্তকে জানান, তাঁর বাসায় পানির জন্য হাহাকার শুরু হয় গত শনিবার থেকে। চেহরী খাবার সময় টেংকির পানি শেষ হয়ে গেলে মটর চালান কিন্তু তাতে পানি না উঠায় বিষম সমষ্যা পড়তে হয় তাদেরকে। পরদিন মেকানিক এনে ১০ ফুট পাইপ সংযুক্ত করেও পানি উঠাতে পারেননি। তিনি টাকা দিয়ে পানি কিনে প্রয়োজন মিটিয়েছেন ক’দিন। এখন পাশের একটি রেস্টুরেন্ট থেকে পানি এনে প্রয়োজনিয় কাজে ব্যবহার করতে হচ্ছে।
কলেজ রোডের অধিবাসি সৈয়দ সালাউদ্দিন বলেন, গত কয়েক দিন যাবত তার বাসার মটরে পানি উঠাতে পারছে না। তিনিসহ বাসার বাসিন্ধারা পানির জন্য হাহাকার করছেন। দৈনন্দিন পানির চাহিদা মেটাতে পানি ক্রয় করে আনতে হচ্ছে বলে তিনি যোগ করেন।
শহরের সুরভিপাড়া আবাসিক এলাকার বাসিন্ধা সিফাত চৌধুরী জানান, পুরো সুরভিপাড়ায় একই অবস্থা বিরাজ করছে। মটর চলতে চলতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কিন্তু পানি উঠছে না। পানির জন্য খুব কষ্টে আছেন এলাকার বাসিন্ধারা।
মিশন রোডের বাসিন্ধা আকবর হোসেন শাহিন ও আসিফ আলী জানান, মিশন রোডেরও একই অবস্থা বিরাজ করছে। সাধারন পাম্প দিয়ে পানি উঠানো যাচ্ছে না। যাদের সাবমারসিবল মটর আছে কেবল তারাই পানি পাচ্ছেন।
সৈয়দ শাহাবুদ্দিন আহমেদ নামের এক ভূক্তভোগি জানান, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিম্নে যাওয়ার কারনে ডিপ-টিবওয়েল থেকেও সাধারন পাম্প দিয়ে পানি না উঠায় ১০ ফুট পাইপ সংযুক্ত করে পানি উত্তোলনের ব্যবস্থা করেন।
এছাড়া শহরের কালিঘাট রোড, সিন্দুরখান রোড, মৌলভীবাজার রোড, হবিগঞ্জ রোড, কলেজ রোড, মিশন রোড, বঙ্গবীর রোড, শ্যামলী, পূর্বাশা, শান্তিবাগ, শাপলাবাগ আবাসিক এলাকার অনেকেই ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নামার কারনে মটর দিয়ে পানি উঠাতে না পারায় তাদের দুর্ভোগের কথা জানান।
পানির স্তর নিচে নামায় অনেকেই আবার ফেসবুকে বিভিন্ন রকমের মন্তব্য করেছেন। আসিফ আলী নামের একজন বলেন, আল্লাহ বড় নাখোশ আমাদের উপর! ফাতিন টি লিখেছেন, আসমানী গুজব শুরু হইছে। দেওয়ান রায়হান লিখেছেন, ইয়া আল্লাহ এই সময়ে অনেক বৃষ্টি হয়, এখন নাই আসলে মনে হয় কিয়ামতের আলামত দেখছি, আল্লাহ পাক যেন পবিত্র মাহে রমজানের উছলিয়া আমাদেরকে বৃষ্টির নিয়ামত ধারা পরিপূর্ণ করে দেন।
পানির স্তর নিচে নামার কারন জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মোঃ জহিরুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় শ্রীমঙ্গল শহর ও শহরতলী এলাকায় পানির স্তর প্রায় ৩০ ফুট নিচে নেমে গেছে। এতে টিউবয়েল এবং সাধারন পাম্প দিয়ে পানি উঠানো যাচ্ছে না। তিনি কলম পাইপে ৩০/৩৫ ফুট পাইপ সংযুক্ত করার পরামর্শ দেন।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর শ্রীমঙ্গল এর উপ প্রকৌশলী মোঃ সাইফুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, শ্রীমঙ্গলের অধিবাসিরা পুরোপুরি ভাবেই ভূগর্ভস্থরের পানির উপর নির্ভরশীল। এখানে প্রাকৃতিক পানির ব্যবহার নাই বললেই চলে বিশেষ করে নদী-নালার। শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন ফ্যাক্টরী এবং পৌরসভায় যে কয়টি বড় বড় পাম্প বসানো হয়েছে সবগুলোই ভূগর্ভস্থর থেকে পানি উঠানো হয়। এছাড়া এখন শুষ্ক মৌসুম থাকায় এবং অনেক দিন যাবত বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারনে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে । তিনি জনসাধারনকে পানির অপচয় রোধ করার পাশাপাশি সচেতন থাকার পরামর্শ দেন।