সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:১১ অপরাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট :: বাংলাদেশ করোনাভাইরাস সংক্রমণের নতুন একটি ঢেউয়ে প্রবেশ করছে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সংক্রমণের হার দীর্ঘ সময় ধরে এক শতাংশের নিচে থাকার পর হঠাৎ করে তা কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়াটা উদ্বেগজনক।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে যে, গত একদিনে বাংলাদেশে নতুন করে ৪৩৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের হার ৬.২৭ শতাংশ। মাত্র চার দিন আগেই এই হার ছিল ২ শতাংশের নিচে।
বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতেও গত তিন মাসের মধ্যে গতকাল শুক্রবার সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এখন সেখানে সংক্রমণ হার আড়াই শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের সাংহাই, উত্তর কোরিয়া এবং ভারতে যে ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে, সেই অমিক্রনের একটি উপ-ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
সরকারি সংস্থা আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন একে দেখছেন একটি নতুন ঢেউ হিসেবে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশেও সেই নতুন করে একটা সংক্রমণের ঢেউয়ে প্রবেশ করলো। তবে এটা এখনো গুচ্ছ সংক্রমণ পর্যায়ে আছে।’
তিনি আশঙ্কা করছেন আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এই সংক্রমণ আরও অনেক বাড়বে।
তিনি বলেন, ‘আমরা জানি না যে এটা নতুন কোন ভ্যারিয়েন্ট কিনা, তবে মনে হচ্ছে যে এটা অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের একটা উপ-ভ্যারিয়েন্ট বিএ৪ বিএ৫ দ্বারা হচ্ছে।’
তবে করোনাভাইরাস মোকাবেলা বা সংক্রমণ কমানোর অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের রয়েছে উল্লেখ করে মি. হোসেন বলেন, এই সংক্রমণের ফলে ‘অতিরিক্ত ভয়ের কোনো কারণ নেই’।
যে উপ-ভ্যারিয়েন্টের কথা বলা হচ্ছে সেটি অমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণের গতির তুলনায় বেশি গতি সম্পন্ন। কারণ অতিদ্রুত এটা অনেক মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে।
ছয়টি বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ
তবে এটি স্বাস্থ্যের উপর কতখানি গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে সে ক্ষেত্রে এখনো খুব একটা পার্থক্য দেখা যাচ্ছে না বলেও জানানো হয়।
কোভিডের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সরকারের জাতীয় কারিগরি কমিটি ১৪ জুন বৈঠক করে সরকারকে ছয়টি বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
এর মধ্যে রয়েছ মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা এবং জনসমাগম বর্জন করা।
এই কমিটির প্রধান মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ বলেন, অতি অল্প সময়ে সংক্রমণের হার ছয় শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি অবশ্যই উদ্বেগের।
তিনি মনে করেন, নতুনভাবে সাবধানতা অবলম্বনের এখনই সময়।
মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ বলেন, ‘তিনটি জিনিস যদি আমরা অবলম্বন করি তাহলে এক রকম ফলাফল পাবো। আর তিনটি জিনিস অবলম্বন না করলে আরেক রকম ফলাফল পাব। একটি হলো আবারো স্বাস্থ্যবিধি মানা, যারা করোনা টিকা নিয়েছে তাদের বুস্টার নেয়া, আর যারা বুস্টার নিয়েছে তাদের সতর্ক থাকা।’
তবে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত দুটি গবেষণাও জরুরি বলে উল্লেখ করেন তিনি। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, মানুষ নতুন কোনা সাব ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা এবং আরেকটি হচ্ছে, মানুষের ইমিউনিটি ফল (রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে) করেছে বলে আমরা যে ধারণা করছি সেটা কতটুকু বাস্তবসম্মত।
এই কাজগুলো সুচারুভাবে সম্পন্ন করা গেলে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সব খোলা রাখা সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।
‘এখনো মৃত্যু দেখা যায়নি’
কোভিডে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও এই রোগে বাংলাদেশে গত সাত দিনে কেউ মারা যায়নি। আর গত এক মাসে মারা গেছে চার জন।
জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ-নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বা আইইডিসিআর-এর পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরিনের মতে, এটাই তাদেরকে কিছুটা স্বস্তি রাখছে।
তিনি বলেন, ‘কোনো নতুন ভ্যারিয়েন্ট আসলো কিনা সেটা বোঝার ব্যাপার আছে। সেটার সংক্রমণ কেমন হবে সেটা বোঝার ব্যাপার আছে। এটা এখনই বলে দেয়া যাবে না তবে এখনো পর্যন্ত মৃত্যু দেখা যায়নি, এটা একটা স্বস্তির জায়গা।’
তার মতে, বাংলাদেশে যেহেতু ভ্যাক্সিনেশন কাভারেজ (টিকাদান কর্মসূচি) ভাল হয়েছে তাই কিছুটা আশান্বিত হওয়া যায়।
তবে সংক্রমণের সংখ্যা যদি অনেক বেশি বাড়তে থাকে, অনেক বয়স্ক মানুষ যদি আক্রান্ত হতে থাকে, কো-মরবিডিটি আছে এমন মানুষ আক্রান্ত হতে থাকে, তখন সেটার প্রভাব কী হতে পারে সেটা এখনো অনিশ্চিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশে সাবধানতা অবলম্বন করা বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাটাই একমাত্র করনীয় বলে জানান তিনি।
করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও কয়েক দফা লকডাউন পালন করা হয়, সরকারিভাবে যাকে বলা হয়েছিল কঠোর বিধিনিষেধ।
তবে কোভিড পরিস্থিতির উন্নতির সাথে সাথে বেশিরভাগ বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হয়। আর এখন সরকার জনসাধারণকে সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে উৎসাহিত করছে।