1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:২৬ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

করোনাভাইরাস : ফের সামাজিক সংক্রমণের ইঙ্গিত

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২২ জুন, ২০২২
  • ২৯২ বার পঠিত

ডেস্ক রিপোর্ট : দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ তিন সপ্তাহ ধরে ঊর্ধ্বমুখী। টানা ছয় দিন নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের বেশি ধরা পড়ছে। করোনার এমন ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ফের সামাজিক সংক্রমণ শুরুর ইঙ্গিত বলে আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, সংক্রমণে এমন ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকলে আগামী সপ্তাহে দেশে করোনার চতুর্থ ঢেউ প্রবেশ করবে। এই সময়টায় পরীক্ষা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার ১৭ শতাংশের বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত এক দিনে করোনা পরীক্ষা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার ১১ দশমিক ০৩ শতাংশ। এর আগে দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ চলাকালে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সংক্রমণের হার ছিল ১২ দশমিক ২ শতাংশ।

গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৮৭৪ জনের, যা প্রায় চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এক দিনে এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল সর্বশেষ গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। সেদিন ৮৯৭ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। তবে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে গত তিন সপ্তাহে দুজনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এটা কিছুটা হলেও স্বস্তিদায়ক খবর।

এদিকে শীর্ষস্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জিনোম সিকোয়েন্সিং করে মঙ্গলবার দুজনের শরীরে ভাইরাসের ওমিক্রন ধরনের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট ইঅ. ৪/৫ শনাক্তের তথ্য দিয়েছেন। দৈনিক রোগী শনাক্তের হার ১১ শতাংশে পৌঁছে গেছে। চতুর্থ ঢেউয়ের কারণে এমনটা হচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোশতাক হোসেন বলেন, ‘সংক্রমণের যে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে তাতে বলা যায় আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যেই দেশে ফের সামাজিক সংক্রমণ শুরু হবে। এর শুরুটা হবে রাজধানী ঢাকায়। এরপর চট্টগ্রাম এবং ধীরে ধীরে সারা দেশে এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে।’

নমুনা পরীক্ষা অনেক কম হচ্ছে জানিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘নমুনা পরীক্ষা আরও বাড়াতে হবে। যারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া যথাসময়ে টিকা নিয়ে নিতে হবে। মাস্ক পরিধান করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে সামাজিক দূরত্ব। আর পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।’

মোশতাক হোসেন আরও বলেন, ‘অনেকেই জ্বর, সর্দি-কাশিসহ করোনার অন্যান্য উপসর্গে ভুগলেও নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। এতে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। এখন স্বাস্থ্য বিভাগের করোনা টেস্ট করার সক্ষমতা অনেক বেশি। নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গেলেই সহজে নমুনা পরীক্ষা করানো যায়। সঙ্গে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করাতে হবে। জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটি যে ছয়টি নির্দেশনা দিয়েছে সেগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ মানতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ডা. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘দেশে কয়েক দিন ধরে করোনা সংক্রমণ ও শনাক্ত হার বাড়ছে। তবে করোনা শনাক্ত হওয়ার সংখ্যাটা আরও বেশি হবে। কারণ অনেকের উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষা করাচ্ছেন না।

‘ভারত, চীন, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডেও করোনা রোগী বাড়ছে। বুস্টার ডোজ নিয়েও মানুষ করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। তাতে মনে হচ্ছে দেশ এখন করোনার চতুর্থ ঢেউয়ে প্রবেশের দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছে।

‘এই ঢেউ কতটা ছোট রাখা যায় সে ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমে একটি জিনোম সিকোয়েন্সিং বা রোগতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ দরকার। তাতে বোঝা যাবে বর্তমান ধরন কোনটি। দ্বিতীয়ত, কারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন তা জানা জরুরি। যেমন- কেউ টিকা নেননি, কেউ হয়তো এক ডোজ নিয়েছেন, কেউবা দ্বিতীয় ডোজ এবং বুস্টার সম্পন্ন করেছেন। অর্থাৎ টিকার শেষ ডোজ থেকে সংক্রমণ হওয়া পর্যন্ত সময় হিসাব করতে হবে। এসব তথ্য জানা গেলে পদক্ষেপ নেয়া সহজ হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দ্রুত টিকার আওতায় আনা অথবা আরেকটি বুস্টার ডোজ লাগবে কি না তা জানা যাবে। উৎস নির্ণয় করতে পারলে সংক্রমণে লাগাম টানা সম্ভব হবে। ১২ বছরের নিচের শিশুরা টিকা পায়নি। ফলে তাদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ালে মৃত্যু বাড়বে।’

আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, ‘সংক্রমণ পরিস্থিতি দীর্ঘদিন নিয়ন্ত্রণে থাকার পর গত এক সপ্তাহ ধরে যে হারে রোগী শনাক্ত হচ্ছে, এটি চতুর্থ ঢেউয়ের ইঙ্গিত।

‘রোগতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, একজন রোগী শনাক্ত হলে অন্তত পাঁচজন শনাক্তের বাইরে থাকে। এ হিসাবে অনেক সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্তের বাইরে রয়েছে। কিন্তু বড় একটি জনগোষ্ঠী টিকা নেয়ায় মারাত্মক আক্রান্ত কম হচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যু কম হচ্ছে। তবে যে হারে রোগী বাড়ছে তাতে আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দৈনিক মৃত্যু তিন থেকে পাঁচের ঘরে চলে যাবে। এটি প্রতিরোধে এখনই স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং টিকা নেয়া জরুরি।’

দেশে করোনা সংক্রমণের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৭ ফেব্রুয়ারির পর ২০ জুন অর্থাৎ দীর্ঘ চার মাস পর প্রথমবারের মতো দৈনিক শনাক্তের হার ১০ শতাংশ (১০ দশমিক ৮৭) ছাড়িয়ে যায়। তার আগের দিন এই হার ছিল ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ। সবশেষ মঙ্গলবার ১১ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা এই মুহূর্তে আরেকটি ঢেউসহ রোগী বৃদ্ধির শঙ্কা জাগাচ্ছে। পরীক্ষা বাড়লে শনাক্তও বাড়বে।

এদিকে মঙ্গলবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে দুজনের শরীরে করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট ইঅ.৪/৫ শনাক্ত হয়েছে।

যবিপ্রবির গবেষক দল-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, আক্রান্ত ব্যক্তির একজন করোনা টিকার বুস্টার ডোজ এবং অন্যজন দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন। ইঅ.৪/৫ সাব-ভ্যারিয়েন্টে স্পাইক প্রোটিনে ওমিক্রনের মতোই মিউটেশন দেখা যায়। তবে তার সঙ্গে এই সাব-ভ্যারিয়েন্টে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের মতো স্পাইক প্রোটিনের ৪৫২ নম্বর অ্যামাইনো অ্যাসিডে মিউটেশন থাকে। এ ছাড়া এই সাব-ভ্যারিয়েন্টে স্পাইক প্রোটিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ৪৮৬ নম্বর অ্যামাইনো অ্যাসিডেও মিউটেশন দেখা যায়।

করোনার এই নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের বিষয়ে যবিপ্রবির উপাচার্য ও জেনোম সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই সাব-ভ্যারিয়েন্টটি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সহজেই ফাঁকি দিতে সক্ষম। টিকা নেয়া ব্যক্তিরাও ‌এতে আক্রান্ত হচ্ছেন।

‘আগামী দিনে এই সাব-ভ্যারিয়েন্ট বর্তমানে সংক্রমণশীল অন্যান্য সাব-ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় বেশি সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এ জন্য মাস্ক ব্যবহারসহ কঠোরভাবে করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী করোনার কোনো ঢেউ চলার সময় শনাক্তের হার পর পর দুই সপ্তাহ ৫ শতাংশের নিচে থাকলে সেই ঢেউ নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে ধরা যাবে। আবার করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকার পর দুই সপ্তাহ শনাক্তের হার ৫ শতাংশের বেশি হলে পরবর্তী ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধরা হবে।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..