বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:০৩ অপরাহ্ন
ওসমানীনগর প্রতিনিধি : ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার প্রায় দেড় শতাধিক গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত রয়েছে। এতে উপজেলার আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তবে উপজেলা প্রশাসনের তালিকায় রয়েছে মাত্র ৮৫ হাজার। ফলে ত্রাণ সহায়তাও পেতেও বিলম্ব হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
মঙ্গলবার দিবাগত রাতে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হওয়ায় বেড়েছে কুশিয়ারা নদীর নদীর পানি। ফলে নতুন করে আরো কয়েকটি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। আতঙ্কে রাত কাটিয়েছেন পানিবন্দিরা।
বন্যার পানি অব্যাহত বৃদ্ধি পাওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্র্রে উঠছেন পানিবন্দি মানুষ। তবে বেশির ভাগ আশ্রয়কেন্দ্রও রয়েছে পানিবন্দি। তলিয়েগেছে টিওয়ব ওয়েল। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। শুকনো খাবারের জন্য আহাকার করছেন পানিবন্দি মানুষ। বেশিরভাগ আশ্রয়কেন্দ্রে সরকারি সহায়তা না পৌঁছায় আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দারা ভুগছেন খাদ্যসংকটে। দুই একটি ইউনিয়ন থেকে সরকারি বরাদ্দের ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হলেও রান্না করার মতো ব্যবস্থা না থাকায় বিপাকে রয়েছেন ব্যাক্রান্তরা। তবে অনেক ইউনিয়নের এক সাপ্তায়ও বানবাসী মানুষের হাতে এখনো ত্রাণ সহায়তা পৌছায়নি। কিছু কিছু সামাজিক সংগঠন বা ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে যা সকল আশ্রয়কেন্দ্রে পৌছানো সম্ভব হচ্ছে না।
এমন পরিস্থিতিতে বন্যাক্রান্ত মানুষের প্রকৃত সংখ্যা উপজেলা প্রশাসন প্রকাশ করছে না অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা বলছেন, বন্যাক্রান্তদের সঠিক কোন তালিকা উপজেলা প্রশাসন তৈরী করতে পারেনি। একেক সময় একেক তালিকা করলেও সঠিক কোন তালিকা প্রশাসন প্রকাশ করছে না। ফলে বানবাসী মানুষের সরকারি ত্রাণ সহায়তা পেতেও বিলম্ব হচ্ছে।
জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে উসমানপুর ইউনিয়নের ৩০ হাজার, বরুঙ্গা ইউনিয়নের ২০ হাজার, গোয়ালাবাজর ইউনিয়নে ৪০ হাজার, দয়ামীর ইউনিয়নে ২৫ হাজার, উমরপুর ইউনিয়নের ২৫ হাজার, তাজপুর ইউনিয়নের ৩০ হাজার, পশ্চিম পৈলনপুর ইউনিয়নে ৩০ হাজার, সাদিপুর ইউনিয়নে ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। সব মিলিয়ে উপজেলায় প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্যানেল চেয়ারম্যানরা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত এক হাজার ৩১ পরিবারের ৮৪ হাজার ৯শ ৮০ জন মানুষ বন্যাক্রান্ত রয়েছে। তাদের জন্য ৪১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকারি বরাদ্দ ২৪ মেট্রিকটন চাল ও নগদ সাড়ে তিন লক্ষ টাকা বিতরণ কার্যক্রম চলমান।
উপজেলার একাধিক আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখো গেছে, এক সাপ্তায়ও সরকারি কোন ধরণের খাদ্য সহায়তা অনেকের হাতে পৌছায়নি। সাদিপুর ইউনিয়নের খসরুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্র দিয়ে দেখা গেছে সরকারি ভাবে কোন খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়নি তাদের। স্থানীয় এক ব্যক্তির উদ্যোগে কিছু পরিমান চিড়া পেয়েছেন তারা। উপজেলা বেশিরভার আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে এমন পরিস্থিতির চিত্র দেখা গেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিলন কান্তি রায় বলেন, পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যাক্রান্তদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা বন্যাক্রান্তদের সঠিত তথ্য তুলে আনার চেষ্টা করছি।