সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৩১ পূর্বাহ্ন
আকাশ যখন মেঘাচ্ছন্ন, প্রকৃতি তখন গম্ভীর রূপ ধারন করে আছে। জমিন এর আবহাওয়া দেখে মনে হচ্ছে এই বুঝি বৃষ্টি বর্ষিত হবে। আনমনে জানালার পাশে বসে আছে তাইরাত। আচ্ছা এই মুহূর্ত টা এতো ভালো কেনো লাগছে? আচ্ছা এই মুহূর্ত টা কি বৃষ্টি না হয়ে এমন শীতল থাকলে কোনো দোষ হবে পৃথিবীর?
এই সময় টা তে যদি বেস্টু কে নিয়ে ঘুড়ে আসা যায় তবে মন্দ হবেনা! কিন্তু ও কি রাজি হবে? একবার জিজ্ঞাসা করেই দেখি। যেই ভাবা সেই কাজ তাইরাত কল করলো তার বেস্টু ইন্তেহা কে। হ্যালো দুস্ত!
-হুম বল।
-চল না আজ ঘুরে আসি। প্লীজ প্লীজ।
-এই ওয়েদার এ বলছিস ঘুড়তে যাবি?
-প্লীজ চল না।
-বাসায় কি বলবি?
-প্রাইভেট এর কথা বলে যাই চল না!
-আচ্ছা রেডি হয়ে নে আসছি।
-তারপর বাসায় বলে দুই বান্ধবী রিক্সা করে চলে গেলো মেঘনা ব্রিজ এর কাছে। দুই বান্ধবী একে অপরের হাত ধরে হাটছে। বিভিন্ন কথা বলে হাসতে লাগলো।
-আচ্ছা তাইরাত! এখন যদি বৃষ্টি আসে তখন কি করবি?
-ওইযে দেখতে পাচ্ছিস ব্রিজ এর পাশ টায় কৃষ্ণচূড়া গাছ টা ওইটার নিচে গিয়ে লুকিয়ে পড়বো।
-আচ্ছা তাই না! তুই কি তাহলে ভেজা থেকে বেচে যাবি?
-না তা হবেনা কিন্তু যাওয়ার তো আর যায়গা নেই।
-তাইরাত বৃষ্টি আসছে কিন্তু। বলতে বলতেই ঝুম ঝুম করে বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো। চারপাশের লোকজন ছোটাছুটি করে দিলো। তাইরাত ইন্তেহার হাত ধরে ছুটতে লাগলো। একটা সময় তারা ব্রিজ থেকে নিচে নেমে এলো আর কৃষ্ণচূড়ার ডালের নিচে দাড়িয়ে রইলো। কিছু সংখ্যক ছেলে মেয়ে ও এখানে এসে দাঁড়িয়েছে। হটাৎ তাইরাত ইন্তেহার হাত ছেড়ে দিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলো।
-এই তাইরাত তোর জ্বর আসবে তো আন্টি বকা দিবে চলে আয় না।
-তুই থাক ওখানে একটু ভিজে নেই কতদিন ভিজতে পারিনা। এসব বলছে আর ঘুড়ে ঘুড়ে লাফাচ্ছে একদম বাচ্চাদের মতো।
-দূর থেকে দাঁড়িয়ে এক যুবক সেটা দেখছে। আর মুচকি মুচকি হাসছে। বৃষ্টি যখন থেমে গেলো তখন তাইরাত ইন্তেহা কে নিয়ে নদীর পাশ টায় পাথরে গিয়ে বসলো। তখন পেছন থেকে কেও একজন বলল, হেই মিস.!
-তাইরাত পেছনে তাকিয়ে বলল, আমাদের বলছেন?
-আশে পাশে আর কাউকে দেখছেন আপনি?
-হে হে! কেবলা মার্কা হাসি দিয়ে বলল, না তো! কি বলবেন বলুন।
– ইউ ডোন্ট মাইন্ড প্লীজ! এইভাবে পাব্লিক প্লেসে বৃষ্টি তে লাফিয়ে ভেজা টা কি আপনার উচিত হয়েছে?
-ইন্তেহা বলল, ইয়ে মানে ভ ভাইয়া ও একটু দুষ্ট তো তাই এমন করেছে।
-যাই হোক কিন্তু এটার কোনো লজিক খুজে পাচ্ছিনা। নেক্সট এমন বোকামী না করলেই ভালো হবে। যদি এখনই বাসায় চলে যান তবে আপনার জন্য বেটার হবে। তাইরাত কে উদ্দেশ্য করে বলল ছেলেটা।
-তাইরাত ব্রু কুচকে বলল, আপনাকে বলে ভিজতে হবে নাকি?
-ভুল বুঝবেন না আপনার ভালোর জন্যই বলেছি।
-আচ্ছা থাক আমার ভালো আমি বুঝে নিতে জানি। চিনিনা জানিনা হুট করে এসে এডভাইস দেয়া শুরু করলেন। চল তো দুস্ত। বলেই ইন্তেহা কে টেনে নিয়ে গেলো।
————
-পরদিন কলেজ ক্যাম্পাস এ মাঠে বসে বাদাম খাচ্ছে ইন্তেহা আর তাইরাত। বেল পড়ার সাথে সাথে ক্লাসে গিয়ে একদম লাস্ট বেঞ্চে বসে পড়লো। যদিও ইন্তেহা এটার বিরুদ্ধে কিন্তু ফ্রেন্ড এর খুশি তার কাছে বেশি ইম্পর্ট্যান্ট। ক্লাসে প্রিন্সিপাল স্যার একজন নতুন স্যার কে নিয়ে ঢুকেছে। তাইরাত যখন মাথা তুলে তাকালো কারেন্ট এর মতো শক খেলো। বাজ পড়লো তার মাথায়। কারন সে আর কেও নয় গতকালের সেই ছেলেটা যার সাথে ব্রিজের নিচে দেখা হয়ে ছিলো।
-স্টুডেন্টস এটেনশন প্লীজ। ওনি তোমাদের কেমিস্ট্রি নিউ টিচার। আজকেই জয়েন করেছে মাত্র। এখন থেকে ওনিই পার্মানেন্ট টিচার। আজকে যেহেতু নতুন তাই আর তোমাদের ক্লাস হচ্ছেনা তোমরা স্যার এর সাথে সবাই পরিচিত হয়ে নাও কি বলো। তারপর প্রিন্সিপাল স্যার চলে গেলেন।
-একে একে সবার পরিচয় নিলেন স্যার। সব শেষে তাইরাত এর পালা এলো। সে আমতা আমতা করে বলল, আ আমার নাম তাইরাত জাহান।
-ওহ আচ্ছা ধন্যবাদ বসুন। তারপর স্যার সবার উদ্দেশ্যে বললেন, আমার নাম সাইয়ান খন্দকার। আর বাকি ডিটেইলস না হয় ধীরে ধীরে জানতে পারবেন আপনারা।
-কলেজ ছুটির পর লেইট করে বাসায় ফিরলো তাইরাত। বসার রুমে ঢুকতেই সোফায় বসে থাকা ব্যক্তিকে দেখে যেনো আকাশ থেকে পড়লো। হাত পা কাপা কাপি শুরু করলো। সোফায় তাইরাত এর আম্মু আর একজন মহিলা আর তার সাথে সেই স্যার বসে আছে। তাইরাত গুটি গুটি পায়ে মাথা নিচু করে হেটে রুমে চলে গেলো। আর বের হলোনা রুম থেকে। একদম সন্ধ্যা বেলায় বের হয়ে তার মা কে জিজ্ঞাসা করলো ওনারা কে ছিলো।
-আমার বান্ধবী আর তার ছেলে। তোর তো চেনার কথা তোর কলেজ টিচার।
-হুম ওনাকে আজই কলেজে চিনেছি।
-তো আর কি।
-কিছুনা।
———
-মাস খানেক পর হুট করেই একদিন তাইরাত এর আম্মু তাইরাত কে বলল, শাড়ি পড়ে রেডি হয়ে নে তোকে আজ দেখতে আসছে।
-আম্মু তুমি কি বলছো? আমি বিয়ে করবোনা এখন। দেখতে আসবে মানে কি আব্বু কি জানে?
-হ্যাঁ জানে। আর তোর কোনো কথা নেই। তারপর ওনি চলে গেলেন।
-তাইরাত বসে কান্না করতে লাগলো। তারপর ইন্তেহা কে কল করলো। ইন্তেহা বলল, দুস্ত তুই কি করবি। দেখতে আসলেই তো আর বিয়ে হয়ে যায়না সমস্যা নেই।
-তারপর তাইরাত রেডি হয়ে নিলো। তাইরাত এর আম্মু কিছুক্ষন পর এসে তাইরাত কে নিয়ে সোফায় বসালো। সামনে বসে থাকা মহিলার কন্ঠসুর চিনতে পেরে মাথা তুলে তাকালো। হ্যাঁ এ যে তার কেমেস্ট্রি টিচার আর তার মা বাবা। তাইরাত কিছু বুঝে উঠতে পারছেনা। কিছুক্ষন কথা বলার পর সাইয়ান এর মা একটা রিং বের করলো তাইরাত কে পড়ানোর জন্য। কিন্তু সাইয়ান বলল, মা আমি আগে ওনার সাথে পার্সোনালি কথা বলতে চাই।
-তারপর তাইরাত এর রুমে নিয়ে গেলো সাইয়ান কে। সাইয়ান বলল, আপনি কি রাজি এই বিয়েতে?
-নিশ্চুপ তাইরাত।
-কিছু বলছি শুনতে পাচ্ছেন।
-হুশে ফিরে তাইরাত কিছু না বুঝেই বলল হুম রাজি।
-তো কি জন্য রাজি হলেন।
-তাইরাত কিছু বলল না মনে মনে বলল, জানিনা কেনো রাজি কিন্তু আপনাকে এতোটা কাছে থেকে উপলব্ধি করার পর কেনো জানিনা অমত পোষণ করতে ইচ্ছে করছেনা।
-কি হলো চুপ করে আছেন কেনো?
-না এমনি কিছুনা। আমি পরিবার এর ইচ্ছেকেই প্রাধান্য দিচ্ছি তাই রাজি।
-আচ্ছা তাই! পারবেন আমার সাথে মানিয়ে নিতে। বয়সের ও অনেকটা পার্থক্য আছে আমাদের মাঝে।
-সমস্যা নেই ঠিক পারবো। আর বয়স ফ্যাক্ট নয় যদি সব কিছু মনে ধরে থাকে।
————–
অল্প পরিসরেই তাদের বিয়ে হয়ে গেলো। বাসর ঘরে তাইরাত বসে আছে। সাইয়ান রুমে ঢুকে দরজা লক করে এসে খাটে বসলো। কিছুক্ষন কথা বলে দুজনে নামাজ পড়ে নিলো। তারপর সাইয়ান বলল, অনেক রাত হয়ে গেছে ঘুমিয়ে পড়ুন।
-তাইরাত কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল, আজ কি ঘুমানোর রাত!
-মানে!
-আচ্ছা আমাদের বিয়েটা তো স্বাভাবিক ভাবেই হয়েছে তাহলে। আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে অস্বাভাবিক কিন্তু কেনো?
-কোথায়! ভুল বুঝছেন।
-তাহলে আমাকে এখনো আপনি আপনি করে বলছেন কেনো?
-অভ্যস্ত যে তাই।
-তুমি বললে খুশি হবো।
-ধন্যবাদ অনুমতি দেয়ার জন্য।
-আচ্ছা শুয়ে পড়ুন।
-হুম তুমিও। তারপর সাইয়ান খাটেই বেশ খানিকটা দূরত্ব রেখে শুয়ে পড়লো। তাইরাত কিছুটা অস্বস্তি বোধ করলো আর বলল, বেড শেয়ার করতে অসুবিধা হলে আমি ফ্লোর এ শুয়ে পড়ছি। আপনি ওই কর্নারে গেলে তো পড়ে যাবেন।
-সাইয়ান উঠে বসে পড়লো আর বলল, তা কেনো হবে।
-তাহলে দূরে যে!
-দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল সাইয়ান তারপর স্বাভাবিক ভাবেই শুয়ে পড়লো। তাইরাত বলল, লাইট অফ করে দিবো।
-সমস্যা না হলে করে দিতে পারো।
-তারপর তাইরাত লাইট অফ করে এসে শুয়ে পড়লো কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছেনা। সাইয়ান ও ঘুমায়নি। তাইরাত হুট করেই সাইয়ান এর বুকের উপর গিয়ে শুয়ে পড়লো সাইয়ান কে জড়িয়ে ধরে।
-বেচারা ভয় পেলো কিছুটা। আর বলল, কি হয়েছে এমন করছো কেনো।
-ঘুম আসছেনা আর আপনি এতো টা দূরে কেনো ভয় লাগছে তো।
-সাইয়ান মুচকি হাসলো। অন্ধকার এ সেটা তাইরাত এর নজরে পড়লোনা।
-এইযে আপনাকে একটা কথা বলব।
-হুম বলো। তাইরাত কে জড়িয়ে ধরে বলল।
-আমার না খুব শখ ছিলো যে বিয়ে করে প্রেম করবো বরের সাথে। তাইতো বিয়ের আগে প্রেম করিনি। কিন্তু আপনি তো খালি চুপ চাপ থাকেন। আমার সাথে একটু কথা বলেন না।
-সাইয়ান হালকা হেসে বলল, হুম করাই যাই তবে তোমায় যে অনেক পড়াশুনা করতে হবে প্রেম করলে কি করে হবে।
-না আমি আর পড়াশুনা করবোনা। আমার কাজিনদের মতো বেবি হবে আর পড়াশুনা বেড়াতে চলে যাবে।
-আচ্ছা তাই না! বেবি হলে তো তোমায় অনেক কাজ করতে হবে কিন্তু তুমি তো ছোট বেবিকে লালন পালন করতে পারবে?
-একদম পারবো।
-সত্যি তো!
-হুম।
-তাহলে ঠিক আছে এখন ঘুমিয়ে পড়ো সময় হলে বেবি চলে আসবে।
-তাহলে আপনি আমাকে এখন বলুন যে আপনি আমায় ভালোবাসেন সবার হাজবেন্ডের মতো।
-সবার মতো নয়। আমি আমার নিজের মতো করে আমার বউ কে ভালোবাসি আর সব সময় বাসবো।
-তাইরাত সাইয়ান এর বুকেই ঘুমিয়ে পড়লো।
———–
আস্তে আস্তে তাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হলো। ২ বছর পেড়িয়ে গেলো। কিন্তু কোনোভাবেই তাইরাত কে আর পড়াশুনা করানো সম্ভব হয়নি। এখন তাইরাত অনেক টা বুঝতে শিখে গেছে।
-রাতে ঘুমানোর সময় তাইরাত সাইয়ান কে জড়িয়ে ধরে বলল, শুনছেন।
-হুম বলো।
-এখনো কি সময় হয়নি।
-কিসের?
-আমাদের বেবি আসার।
-সাইয়ান তাইরাত কে বালিশে শুইয়ে দিয়ে তাইরাত এর উপর ঝুকে বলল, বেবি আসলে যে তোমায় কিছু প্রতিদান দিতে হবে সেটা কি জানো?
-তাইরাত চোখ বন্ধ করে বলল, হুম! কিছুটা লজ্জা পেলো তাইরাত। সাইয়ান কিছু না বলে তাইরাত এর কপালে চুম্বন করলো গভীর ভাবে। অতঃপর দুজনে এক অন্যত্র জগতে পাড়ি জমালো। পূর্ণতা পেলো এক দম্পত্তির জীবন।