রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫, ০৮:৫৪ অপরাহ্ন
বড়লেখা প্রতিনিধি :: বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের পাশে সবাই দাঁড়িয়েছে। খাদ্যসহায়তা নিয়ে ছুটে যাচ্ছে। কিন্তু গবাদিপশুগুলোর কথা কেউ ভাবেনি। ওদের জন্য কেউ খাদ্য নিয়ে ছুটে যায়নি। তবে অবলা প্রাণিগুলোর কথা ভেবেছে ‘বড়লেখা পিসি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি-২০১২ ব্যাচ ও বড়লেখা সরকারি কলেজের এইসএসসি-২০১৪’ ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
তারা বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুগুলোকে খাদ্যের পাশাপাশি বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা এবং ওষুধ দিচ্ছে। এ পর্যন্ত তারা বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর, বর্ণি, দাসেরবাজার ও উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন বন্যাদুর্গত এলাকার প্রায় ২০০ গৃহপালিত গবাদিপশুকে খাদ্য ও ৯০০ গবাদিপশুকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ দিয়েছে। পাশাপাশি এসব এলাকার ২০০ পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী ও ৬০০ মানুষকে বিনামূল্যে চিকিসাসেবা এবং ওষুধ দেওয়া হয়েছে। তাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
জানা গেছে, চলতি বছরের জুন মাসের শেষের দিকে ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সৃষ্ট বন্যায় বড়লেখা উপজেলার ২০০ গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে তলিয়ে যায় বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, ফসলের মাঠ। প্রাণ বাঁচাতে মানুষজন বাড়িঘর ছেড়ে পরিবার নিয়ে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে ওঠেন। তবে অনেকে মানুষ গবাদিপশু নিয়ে পড়েন চরম বিপাকে। উঁচু জায়গা খুঁজে গবাদিপশু নিয়ে রাখলেও খাদ্যসংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যক্তি সংগঠন বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ালেও গবাদিপশুগুলোর কথা কেউ ভাবেনি। কোনোধরনের খাদ্য সহায়তা দেয়নি। খাদ্যের অভাবে অনেকের গরু-ছাগল মারা গেছে। কেউ আবার বিক্রি করে দিয়েছেন। এ বিষয়টি নাড়া দেয় বড়লেখা সরকারি কলেজের এইসএসসি-২০১৪ ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থী শাহরিয়ার ফাহিমকে। তিনি বন্যাদুর্গত এলাকায় মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুগুলোর জন্য কিছু করার তাগিদ অনুভব করেন। ফাহিম ফেসবুকে গ্রুপে বিষয়টি তার সহপাঠি ‘বড়লেখা পিসি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি-২০১২ ব্যাচ ও বড়লেখা সরকারি কলেজের এইসএসসি-২০১৪’ ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের জানান। এতে গ্রুপের সবাই সাড়া দেন। পরে সবাই মিলে মানুষের পাশাপাশি গৃহপালিত গবাদিপশুগুলোর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসাসেবা প্রদানের উদ্যোগ নেন। এরপরই শুরু হয় টাকা সংগ্রহ। এতে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা সবাই মিলে এক লাখ টাকা সংগ্রহ করেন। সেই টাকা দিয়ে বন্যাদুর্গত এলাকার গৃহপালিত গবাদিপশুর জন্য ধানের গুড়া (কুঁড়া) ও ভ‚ষি এবং বিভিন্ন ধরনের ওষুধ কেনার পাশাপাশি মানুষের জন্য চাল-ডালসহ খাদ্যসামগ্রী ও ওষুধ কেনা হয়। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৩০ জুন থেকে তা বিতরণ শুরু হয়। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
চুয়ারকান্দি গ্রামের বাসিন্দা শাহাব উদ্দিন বলেন, চারিদিকে পানি। আমরা অনেক কষ্ট আছি। গরুগুলো নিয়ে বিপদে পড়েছি। কচুরিপানা ছাড়া খড় ও ঘাস খাওয়াতে পারছি না। সবকিছু তলিয়ে গেছে পানিতে। কয়েকজন তরুণ আমার গরুগুলোকে কিছু খাবার ও ওষুধ দিয়েছে। তাদের ধন্যবাদ।
বড়লেখা সরকারি কলেজের এইসএসসি-২০১৪ ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থী শাহরিয়ার ফাহিম বলেন, মানুষ তো মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে। কিন্তু অবলা প্রাণিগুলোর কথা কেউ ভাবেনি। খাদ্যের অভাবে অনেক জায়গায় দেখেছি গরু-ছাগল মারা গেছে। বিষয়টা আমাকে খুব নাড়া দিয়েছে। ভাবলাম এই প্রাণিগুলোর জন্য কিছু করা যায় কিনা। পরে বিষয়টি ফেসবুক গ্রুপে আমার সহপাঠিদের সাথে শেয়ার করি। তারা সবাই তাতে সাড়া দেন। এরপর সবাই টাকা সংগ্রহ করে মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুগুলোর জন্য খাদ্যসামগ্রী ও ওষুধ কিনে বন্যা কবলিত এলাকায় নিয়ে গিয়ে বিতরণ করেছি। একজন চিকিৎসক নিয়ে গিয়েছিলাম। তিনি রোগীদের দেখে ওষুধ দিয়েছেন। পাশাপাশি পশু চিকিৎসকও নিয়ে গিয়েছি। আমাদের এই কার্যক্রম চলমান আছে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আমিনুল ইসলাম বলেন, বড়লেখা পিসি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ও বড়লেখা সরকারি কলেজের এইসএসসি ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুদের খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা দিচ্ছে। এটা মহৎ কাজ। প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবাই যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন সেভাবে যদি অবলা প্রাণিগুলোর জন্য কিছু করতেন। তাহলে এ সংকট দ্রুত কেটে যাবে। তাদের যে কোনো সহযোগিতা লাগলে আমরা পাশে থাকবে।