রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০৭ পূর্বাহ্ন
জাফর ইকবাল: মৌলভীবাজার শহরে লকডাউন ও মাহে রমজান মাসেও শপিং মলের কারনে যানজটের অবসান হয়নি। বড় বড় শপিং মল গুলো শহরের ব্যস্ততম রাস্তার পাশে থাকায় মলে আসা গ্রহকদের গাড়ী যত্রছত্র রাখা বা ইচ্ছা মতো গাড়ী ঘোরাতে গিয়ে মারাতœক যানজটের সৃস্টি হয়। অনেক সময় ঘটছে দূর্ঘটনা। এ সমস্ত শপিং মলের পার্শ্বে থাকে না কোন পুলিশ বা ট্রাফিক। তাদের নিজস্ব চৌকিদার নিয়ন্ত্রন করে সে রাস্তা। যার ফলে প্রশাসন ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ যানজট নিরসনের চেষ্টা করেও সেন্টাল রোড, কুসুমবাগ, পশ্চিম বাজার, চৌমূহনাতে দীর্ঘ যান জটের অবসানে সফল হচ্ছেন না।
রমজানের ঈদকে সামনে রেখে করোনা মহামারীতে কোন স্বাস্থ্য বিধি না মেনে শপিং মলের সামনে গ্রহকের ভিড় ও গাড়ির যানজট চোখে পড়ার মতো। শহরে যানজটের জন্য সেন্টাল রোড, পশ্চিম বাজার শপিং মলের সামনা প্রথম স্থান দখল করে আছে। নিজস্ব পাকিং ব্যবস্থা না করেই অলিগলিতে শপিং মহল, ও মার্কেট নির্মানের ফলে যানজট চরম পর্যয়ে। জনগনে চরম ক্ষোভ জনসাধারনের দুর্ভোগ কষ্টের বানী শুনার ও দেখার মতো কেউ যেন নেই। পৌর কর্তৃপক্ষকে তোয়াক্কা না করেই নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা না করেই একের পর এক তৈরি হচ্ছে শপিং সেন্টার ও মার্কেট এবং অট্রালিকা। এটা শহরের যানজট দীর্ঘদিনের।
এরপরও ন্যায়,নীতিপরায়ন এবং পৌরবাসীর দুর্ভোগ,সমস্যা সমাধানের জন্য অধীর আগ্রহে ছিলেন সেই পৌর পিতার ভুমিকা নিয়ে পৌরবাসী। অনেকেই এ প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে বলেন- অতীতের সকল পৌর মেয়রের চেয়ে আন্তরিকতার সাথে কাজ করেন। কিন্তু বাস্তবে কেন করছেন না আলোচনা-সমালোচনার সর্বত্র। পৌরবাসীর দাবী মেয়র একজন রাজনৈতিক,ক্রিড়াবিদ ও প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার। মেয়র পৌরবাসীর যানজট ও নিরাপধে চলাচলে সার্বিক কাজ করে যান সেই প্রত্যয় তাদের।
মৌলভীবাজার শহরের ব্যস্ততম সেন্ট্রাল রোডে শতাধিক শপিং মল,ব্যাংক,বীমা,বস্ত্রবিতান,রেষ্টুরেন্ট,বিভিন্ন কোম্পানীর শো-রুমসহ বড়বড় শপিং মল এবং বহুতল ভবন গুলোতে নেই কোন নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা। প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট বিভাগের অন্যতম মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ক্রেতারা রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করে কেনাকাটা করছেন। এছাড়াও সিএনজি, রিক্সা, ভ্যান,ঠেলা গড়ি,একি রাস্ত্ায় চলাচল করে। সবাই সকলের আগে যেতে চায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেউ কারও আগে যেতে পারেনি। বরং আরো সমস্যার সৃষ্টি হয়। যার ফলে আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে অন্যান্য বছরের মতো এই বছরও তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ দিনের এই যানজট নিরসনে কর্তৃপক্ষের নেই কোন কার্যকরী প্রদক্ষেপ। প্রশাসনের এই দীর্ঘদিনের সভা-সমাবেশ ও বৈঠকের কোন ফলাফল পায়নি জনগন বরং জনগন ক্ষুদ্ধ ও হতাশায় আর তীব্র যানজটে অতিষ্ট।
সাধারন জনগনের অভিযোগ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে রাস্তায় চলছে ব্যবসায়ীদের এই পার্কিং ব্যবস্থা। আর যদি পৌরসভা ও প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতো তাহলে দীর্ঘদিনের যানজট নিরসন হতো। জনগনের চরম দুর্ভোগ দেখেও না দেখার ভান করছেন। এনিয়ে কেনাকাটা করতে আসা সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যেও চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রবাসী অধ্যুষিত এ জেলার বাসিন্দাদের কাছে সেন্টাল রোডের ব্যস্ততম কয়েকটি শপিং মল খুবই পরিচিত। যেখানে টেইলারিং ও জুতা থেকে শুরু করে এখানে পাওয়া যায় সব ধরনের পণ্য সামগ্রি। যার কারণে এখানে প্রবাসী ক্রেতাদের ভীড় থাকে সব সময়। ওই শপিংমল গুলো সেন্ট্রাল রোডের পশ্চিমবাজার এলাকায় রাস্তার পাশে। ক্রেতাদের গাড়ি পার্কিং করার নিজস্ব কোন স্থান নেই। যার কারণে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ক্রেতারা বাধ্য হয়ে রাস্তার পাশে ঘন্টার পর ঘন্টা প্রাইভেট গাড়ি দাঁড় করে কেনাকাটা করতে দেখা যায়। এসব শপিং মল গুলোর সম্মুখে গাড়িতে যাত্রী চলাচলের রাস্তার প্রায় অর্ধেক দখল হয়ে যায় ক্রেতাদের গাড়ি পার্কিং এর ফলে। ৫মিনিটের ওই রাস্তায় অতিক্রম করতে হয় ৩০মিনিটে। চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় ঈদের কেনাকাটা করতে আসা সাধারণ ক্রেতাদের।
শহরের পুরাতন হাসপাতার রোড ও সেন্ট্রাল রোডে সব ধরনের দোকান এবং অন্যান্য প্রতিষ্টান অবস্থিত। যাত্রীরাও এই রোড দিয়ে বেশি চলাচল করেন। যার ফলে তীব্র যানজট লেগে থাকে সবসময়। পুরাতন হাসপাতালের পশ্চিম বাজারে ট্রাক দাঁড় করিয়ে মালামাল খালাস করা হয়। ব্যাবসায়ীদের আলাদা ভাবে গডাউন না থাকায় মালপত্র দোকানের সামনে নামানো হয়। ফলে তীব্র যানজট সৃস্টি হয়। এর দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে আসা শত শত পথচারী। সরেজমিন শহরের চৌমূহনী পয়েন্ট থেকে সেন্ট্রাল রোড ঘুরে দেখা যায়,শহরের চৌমুহনী এলাকায় ৫তলা বিশিষ্ট আখিঁ প্লাজা, ৩তলা বিশিষ্ট ওয়াছির প্লাজা,৪র্থ তলা বিশিষ্ট আহমদ ম্যানশন,৪র্থ তলা বিশিষ্ট জুলিয়া শপিং সিটি,বউরাণী বিউটি পার্লার,৪র্থ তলা বিশিষ্ট হোসেইন মার্কেট,৪র্থ তলা বিশিষ্ট হাজি মন্তাজ মিয়া ম্যানশন,৪র্থ তলা বিশিষ্ট শরিফ ভিলা,পশ্চিমবাজার এলাকায় ৩য় তলা বিশিষ্ট রহমান প্লাজা,৭তলা বিশিষ্ট ওয়েষ্ট পয়েন্ট, ৪র্থ তলা বিশিষ্ট হাজেরা ভবন,হোসেন ম্যানশন,২তলা বিশিষ্ট সেলিনা স্টাইল,৬ষ্ট তলা বিশিষ্ট কবির টাওয়ার,সেন্ট্রাল রোডের লোট শো-রুম,এপেক্স জুতার শো-রুম,সেরাটাউন প্লাজা,শাপলা ম্যানশন,১০তলা বিশিষ্ট আরণ টাওয়ারসহ আরও একাধিক ভবন ও দোকানে নেই কোন নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা। এ সকল বহুতল ভবনে শতাধিক শপিং মহল,ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্টানের অবস্থান। ক্রেতারা বাধ্য হয়ে পথচারী চলাচলের রাস্তার পাশে গাড়ি পার্কিং করে কেনাকাটা এবং ব্যাংক লেনদেন করছেন। ফলে ওই রাস্তায় চরম যানজটের সৃষ্টি হয়। চৌমুহনী হতে কুসুমবাগ যেতে ৫মিনিটের রাস্তা যেতে সময় লাগে ৩০মিনিট। এসময় ঈদের কেনাকাটা করতে আসা কয়েকজন ক্রেতাদের সাথে কথা হলে তারা বলেন,শপিং মহল গুলোতে পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় আমরা স্বাচ্ছন্দভাবে কেনাকাটা করতে পারছিনা। একস্থান থেকে অন্য স্থানে সহজে যাতায়াত করাও সম্ভব হচ্ছে না। যার কারণে আমাদেরকে সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাতে হয়। হিসেব করলে দেখা যাবে এই যানজটে পড়ে কর্মব্যস্ত মানুষ গুলো মাসে কয়েক শত ঘন্টা মূল্যবান সময় হারাচ্ছেন। অনেকে যানজটে পড়ে মূমুর্ষ রুগীকে সময় মতো ডাক্তার বা হাসপাতালে গিয়ে পৌছতে পারেনি। এ বিষয়ে মৌলভীবাজার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন,যে সময় এই শপিং মহল গুলো নির্মাণ করা হয় তখন আইনীভাবে পার্কিং রাখার বাধ্যবাধকতা ছিলনা। কিন্তু ২০০৯সালের পরে যে সকল বিল্ডিং নির্মাণ করা হচ্ছে সে গুলোতে পার্কিং এর ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। অভিজ্ঞ মহলের ধারনা যানজট সমস্যা সমাধান না হওয়ার মূল কারন সমন্বয়হীনতা। যে যার মতো করে সমস্যা সমাধানের চিন্তা করেন। ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসায়ীক ভাবে, আর প্রশাসন তাদের মতো করে সমাধানের চেষ্টা করেন। ফলে তা কাজে না এসে উল্টো আরো সংকট সৃষ্টি হচ্ছে।