বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৩ অপরাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট : জ্বালানির দাম বাড়ার পর ঢাকা-বরিশাল নৌপথে লঞ্চগুলোতে প্রতি ট্রিপে খরচ প্রায় দ্বিগুণ হওয়ার কথা জানিয়েছেন লঞ্চ মালিকরা।
পদ্মা সেতু চালুর পর লঞ্চে যে ভাড়া নেয়া হতো সেই ভাড়ার পরিবর্তে অঘোষিতভাবে আগের ভাড়া নেয়া হচ্ছে ডেকে। পাশাপাশি তেলের দাম বাড়ার পরদিন থেকে কেবিনের ভাড়া না বাড়ালেও রোববার থেকে ১০০ থেকে ২০০ টাকা বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন লঞ্চ মালিকরা। তবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে লঞ্চ মালিকদের আলোচনা শেষে ভাড়া নির্ধারণের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে সোমবার রাতে।
এমভি মানামী লঞ্চের সুপারভাইজার শাহাদাৎ হোসেন শুভ বলেন, ‘ঢাকা-বরিশাল রুটে আপ-ডাউন করতে ৩২ থেকে ৩৩ ব্যারেল ডিজেল প্রয়োজন হয়। অন্যান্য লঞ্চে কম-বেশি হতে পারে। আগে যে তেল কিনতে ৫ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকার প্রয়োজন হতো, সেই তেল এখন কিনতে হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ দামে। তিন থেকে চার লাখ টাকা বেশি লাগছে। গড়ে এখন ৮ থেকে সাড়ে ৮ লাখ টাকায় আসা-যাওয়ার তেল কিনতে হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কেন্দ্রীয়ভাবে ভাড়া বৃদ্ধির কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। পদ্মা সেতু চালুর পর আমরা লঞ্চের ডেকের ভাড়া করেছিলাম ২০০ টাকা। সেটা এখন পূর্ব নির্ধারিত বা সরকার নির্ধারিত ৩৫০ টাকা নেয়া হচ্ছে। আর সিঙ্গেল কেবিন এক হাজারের পরিবর্তে ১২০০ থেকে ১৪০০ এবং ডাবল কেবিন ১৮০০ টাকার পরিবর্তে ২০০০ হাজার থেকে ২২০০ টাকা নেয়া হচ্ছে।’
শুভ জানান, খরচ পোষাতে ভাড়া বাড়ানো ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় নেই।
এদিকে ঢাকা-বরিশাল সড়ক পথে নন-এসি বাসের ভাড়া বেড়েছে ৫০ টাকা ও এসি বাসের ভাড়া বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।
সাকুরা পরিবহনের বরিশাল কাউন্টার ম্যানেজার আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখন ৪৫০ টাকার নন এসি বাসের ভাড়া নিচ্ছি ৫০০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ৬০০ থেকে বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা নেয়া হচ্ছে। অনেকে ৭০০ বা ৭৫০ টাকাও নিচ্ছে। আগের থেকে ঢাকা-বরিশাল রুটে এখন ২৭৫০ টাকার তেল বেশি লাগছে।’
বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, ‘বরিশালের নথুল্লাবাদ থেকে অভ্যন্তরীণ ১৪ রুটে বাস চলাচল করে থাকে। এর মধ্যে বরিশাল ভূরঘাটা রুটে ভাড়া ছিল ৮৫ টাকা, এখন করা হয়েছে ১০৩ টাকা, বরিশাল-মুলাদী রুটে ভাড়া ছিল ৮৫ টাকা, তা থেকে বাড়িয়ে ১০৩ টাকা, বরিশাল-স্বরূপকাঠি রুটে ৫৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০ টাকা ও বানারীপাড়ায় ৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা করা হয়েছে। অন্যান্য রুটেও ৫ থেকে ১০ টাকা করে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর বরিশাল-ভূরঘাটা, মুলাদীসহ বেশ কয়েকটি রুটে প্রতি ট্রিপে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা বেশি খরচ বেড়েছে।’
বরিশালের রূপাতলী বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন বলেন, ‘জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির আগে বরিশাল কুয়াকাটা রুটে তেল লাগত ৪ হাজার টাকার, এখন তা বেড়ে ৭ হাজার টাকা হয়েছে। এই রুটে ভাড়া ছিল ২৫০ টাকা, সেটা ২৯০ টাকা করা হয়েছে। ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা করে বেশি লাগছে সব রুটে। খুলনায় এখন ভাড়া নির্ধারণ হয়েছে ২৯৫ টাকা, বাগেরহাট ২১৫, পিরোজপুর ১১৪, মঠবাড়িয়া ২২০, ঝালকাঠি ৪০ ও পাথরঘাটায় ২৭০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।’
বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত ভাড়ার থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে অভিযান পরিচালনা করা হবে। অন্যদিকে জ্বালানি তেল যাতে ভোক্তা সঠিক মাপ অনুযায়ী নিতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে ফিলিং স্টেশন বা পেট্রল পাম্পগুলোতে তদারকির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’