শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০৯ পূর্বাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট :: রাজধানীর যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিনব উপায়ে নকল চাবি দিয়ে মোটরসাইকেল চুরি করতো একটি চক্র। এরপর কেরানীগঞ্জ, দোহার, মুন্সিগঞ্জসহ ঢাকার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় সেসব মোটরসাইকেল অল্প দামে বিক্রি করা হতো। তবে বিক্রির সময় বলা হতো এগুলো ভারতীয় সীমান্ত থেকে আনা হয়েছে, ফলে কম দাম পড়ছে। চক্রটি আড়াই লাখ টাকার মোটরসাইকেল বিক্রি করতো ৪০ থেকে ৮০ হাজারে।
বুধবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
সম্প্রতি ডিএমপির গেন্ডারিয়া থানার একটি মোটরসাইকেল চুরির মামলা তদন্ত করতে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ ও বিভিন্ন প্রযুক্তির সহায়তায় দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতাররা হলেন নূর মোহাম্মদ (২৬) ও রবিন (২৩)। এরপর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চক্রের অন্য তিন সদস্য সজল (১৮), মনির (২২) ও আকাশকে (২২) গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন মডেলের ১৩টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে দীর্ঘদিন ধরে মোটরসাইকেল চুরি করে আসছিল একটি চক্র। প্রায় ৮ বছর ধরে এই চক্রের সদস্যরা অন্তত ৫০০ মোটরসাইকেল চুরি করেছে।
এমন অভিযোগে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় চোর চক্রকে ধরতে অভিযান শুরু করে ডিবির ওয়ারি বিভাগ। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চোর চক্রের মূলহোতা নূর মোহাম্মদ ও রবিনকে শনাক্ত করে রাজধানীর শনির আখড়া এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চক্রের অন্যান্য সক্রিয় সদস্য সজল, মনির ও আকাশকে যাত্রাবাড়ী থানার ধলপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে চক্রের মূলহোতা নূর মোহাম্মদ জানায়, তিনি মূলত জুরাইন এলাকা থেকে চুরি শুরু করলেও পরে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় চোর চক্র গড়ে তোলেন। চোর চক্রের অন্যতম সহযোগী রবিনের মাধ্যমে জিক্সার মোটরসাইকেলের চাবি তৈরি করেন। চাবি ব্যবহার করে তারা জিক্সার মোটরসাইকেল অনায়াসেই স্টার্ট করতে পারতেন। মোটরসাইকেল চুরি থেকে বিক্রি পর্যন্ত চক্রের সদস্যরা ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্ব পালন করতেন। তাদের মধ্যে অন্যতম সজল, মনির ও আকাশ ক্রেতা সংগ্রহ করতেন।
ডিবিপ্রধান বলেন, ঢাকা মহানগর এলাকা থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে মুন্সিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকা, ঢাকা জেলার দোহার ও নবাবগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করতো চক্রটি।
এ সংঘবদ্ধ চক্র চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রির সময় ক্রেতাদের বলতো, এগুলো ভারতীয় সীমান্ত থেকে আনা গাড়ি, তাই কম দামে বিক্রি হবে। প্রতিটি চোরাই মোটরসাইকেল তারা ৪০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করতো।
চক্রটি ২০১৬ সাল থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে আসছিল। তারা এ পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক মোটরসাইকেল চুরি করেছে।
গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা, তার অন্যতম সহযোগী রবিনের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা এবং অন্য তিনজনের বিরুদ্ধে একটি করে মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের ক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়ে গোয়েন্দা প্রধান বলেন, ঢাকার যেকোনো স্থানে গাড়ি পার্কিং করার ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে। এছাড়া গাড়ি নিজেদের তত্ত্বাবধানে রাখতে হবে। আর কোনো ধরনের চুরির ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে গোয়েন্দা পুলিশকে অবহিত করতে হবে।
ডিবি তার অভিজ্ঞতা, তথ্যপ্রযুক্তিগত জ্ঞান ও কৌশল দিয়ে সাধারণ মানুষের মূল্যবান সম্পদ উদ্ধার করে দিতে সর্বদা সচেষ্ট বলেও জানান গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।