1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:০৫ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

একটি গাছ-একটি প্রাণ

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট, ২০২২
  • ৩১৮ বার পঠিত
আফতাব চৌধুরী

কবির ভাষায়-

‘অন্ধ ভূমি গর্ভ হতে শুনেছিলে সর্যের আহবান
প্রাণের প্রথম জাগরণে তুমি বৃক্ষ, আদি প্রাণ,
উর্ধ্বশীর্ষে উচ্চারিলে আলোকের প্রথম বন্দনা
ছন্দহীন, পাষানের বক্ষ পরে, আনিলে বেদনা
নিঃসার নিষ্ঠুর মরুতলে।’

বৃক্ষ এই পৃথিবীর মুকধাত্রী। কালের পথে সমস্ত জীবের অগ্রগামী এই গাছ। তার ¯েœহশীতল ছায়া, কোমল ¯েœহাঙ্ক, প্রশান্ত পরিবেশ মানুষকে দিয়েছে আদি আশ্রয়, ক্ষুধাবৃত্তি নিবারণের উপাদান। আমাদের প্রাচীন সভ্যতা ছিল অরণ্যকেন্দ্রিক। কিন্তু বর্তমানে শহরকেন্দ্রিক সভ্যতায় অরণ্য ব্রাত্য। কৃতঘœ মানুষ নিজ হস্তে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে বৃক্ষচ্ছেদন করে। জননীস্বরূপ বৃক্ষচ্ছেদন করে বিপদ ঘনিয়ে তুলেছে তার চারপাশে। তাই তো কবি বলেছেন-

‘আর্ত ধরার প্রার্থনা এই শোনো-
বনবীথি পাখিদের গীতি
সার্থক হোক পূর্ণ।।’

পৃথিবীতে প্রাণী ও উদ্ভিদজগৎ যে প্রাকৃতিক পরিবেশে বাস করে, সাধারণভাবে তাকেই পরিবেশ বলা হয়। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য বিশুদ্ধ পরিবেশের একান্ত প্রয়োজন। একটি গাছের মাধ্যমেও সুস্থ পরিবেশ বজায় থাকে। ভৌগলিক কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গার পরিবেশ বিভিন্ন। স্বাস্থ্যজ্জ্বল পরমায়ুর জন্য সুস্থ পরিবেশের বড় প্রয়োজন। পরিবেশই প্রাণের ধারক, জীবনীশক্তির আধার। সর্বকালের পরিবেশ বা পারিপার্শ্বিকের সঙ্গে প্রাণীর মানিয়ে নেবার সম্ভাব্যতা ও ক্ষমতার ওপর তার অস্তিত্ব নির্ভরশীল। এর ব্যতিক্রম হলেই যোগ্যতমের ঊর্ধ্বতন তত্ত¡ও মিথ্যা প্রতিপন্ন হয়। অথচ সার্থকভাবে বাঁচা ও বাড়ার জন্য চাই, কবির ভাষায়-

‘অন্ন চাই, প্রাণ চাই,
আলো চাই, চাই মৃদু বায়ু,
চাই বল, চাই স্বাস্থ্য,
আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু।

গাছ যেমন সজল মাটি, অবাধ আলো এবং উৎকৃষ্ট সার পেলে সতেজভাবে বেড়ে ওঠে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য তেমনই চাই উৎকৃষ্ট পরিবেশ। সমুদ্রের গর্ভ থেকে নতুন জাগা পঙ্কস্তরের মধ্যে অরণ্য প্রথম জন্মের ক্রদন তুলেছ। সেদিন চারদিকে পাথর, পাঁক ও পানি, পশু নেই, পাখি নেই, জীবনের কলরব নেই। প্রাণের পথের চিরপথিক এই গাছ। আদিম মানুষ, অরণ্যচারী মানুষ নির্ভয়ে আশ্রয় নিয়েছে বৃক্ষতলে। বৃক্ষের ফলই ছিল তাদের একমাত্র আহার। মুনি-ঋষিরা ধ্যানমগ্ন হতে গাছের শীতল ছায়ায়, শিষ্য পরিবেষ্টিত হয়ে। আদিম মানুষ সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল ছিল গাছের ওপর। গাছ জীবনদায়ী ওষুধ দিয়ে মানুষের প্রাণ বাঁচায়। প্রকৃতির পরিবেশ আদিম মানুষ শুরু করেছিল বানপ্রস্থ। উদার, উন্মুক্ত বনভূমির মধ্যে রচিত হয়েছিল মানুষের জীবনযাত্রা, সুখস্বাচ্ছন্দ্য, প্রাণের পথে এগিয়ে চলা।
পৃথিবীর বুকে প্রাণের স্পন্দন বজায় রাখতে বৃক্ষের অবদান অনস্বীকার্য। মানবজীবন ও অরণ্য জীবনের সদাই বেজে চলেছে একটি ছন্দ। বৃক্ষই পাবে প্রাণের তেজ, প্রাণের রস, আমাদের সেই প্রাণবায়ু জোগাতে। তার পত্রমর্মরে , নানা বর্ণের পুষ্পসম্ভারে মানব মনকে করে তোলে সতেজ, প্রাণবন্ত। বৃক্ষ প্রতিনিয়ত দুষিত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে। বিনিময়ে পৃথিবীকে ফিরিয়ে দেয় জীবন ধারণের প্রধান উপাদান অক্সিজেন। শুধু কি তা-ই ? মাটির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি, ভূমিক্ষয় রোধ, বায়ুর গতিবেগ প্রতিরোধ প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে গাছ উদ্ধার করে মানুষকে। বিশ্ব উষ্ণায়ন রোধে বৃক্ষের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষায় ভেষজ ওষুধ, কুইনাইন, রাবার প্রভৃতি উপাদানে গাছের অবদান অনস্বীকার্য। বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারে যেদিন থেকেই নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থসিদ্ধির তাগিদে মানুষ শুরু করেছে বৃক্ষনিধন যজ্ঞ। এদিকে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিনের পর দিন। ফলে বাসযোগ্য এবং চাষযোগ্য জমির প্রয়োজনে নির্বিচারে চলেছে বৃক্ষনিধন। ফলে বাড়ছে পরিবেশ দূষণের মাত্রা, নষ্ট হচ্ছে প্রকৃতির ভারসাম্য, বৃদ্ধি পাচ্ছে ভূমিক্ষয়, পরিবর্তিত হচ্ছে ঋতুচক্র, অনিশ্চিত হয়েছে বৃষ্টিপাত, মানুষ পড়ছে খরার কবলে, আক্রান্ত হচ্ছে দুরারোগ্য ব্যাধিতে, ব্যাহত হচ্ছে কৃষি উৎপাদন, দেখা দিয়েছে মানবজাতির অস্তিত্বের সঙ্কট।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে সরকারি উদ্যোগে বাংলাদেশে প্রথম বৃক্ষরোপণ উৎসবের সুচনা হয়। ক্রমশ মানুষ বৃক্ষের গুরুত্ব অনুভব করে। তাই দিকে দিকে শুরু হয় বৃক্ষরোপণ উৎসব। অরণ্য ধ্বংস নয়, বরং অরণ্য সৃষ্টির আনন্দে মানুষ আজ নিমগ্ন। তাই কবির কন্ঠে ধ্বনিত হয়-

‘আয় আয় আমাদের অঙ্গনে-
অতিথি বালক তরুদল।
মানবের ¯েœহ অঙ্গনে,
চল আমাদের ঘরে চল।’

বিশ্বকবিও অনুভব করেছিলেন মর্মে মর্মে বৃক্ষের মৃতসঞ্জীবনী ক্ষমতা। তিনি আহবান জানিয়েছিলেন বনমহোৎসবের। ‘মরু বিজয়ের কেতন উড়াও শূণ্যে/ হে প্রবল প্রান/ ধুলিরে ধন্য করো করুনার পুণ্যে/ হে কোমল প্রাণ।’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর সাংস্কৃতিক সৃষ্টির আবর্তে বৃক্ষের প্রসঙ্গ তুলে ধরেছন বারবার। মানুষের সভ্যতাকে বাঁচাতে যান্ত্রীকভ্যতার কুফল রুখতে প্রয়োজন মানবভিত্তিক বনসৃজন প্রকল্প। তাই ¯েøাগান উঠেছিল- ‘গাছ লাগান, প্রাণ বাঁচান।’ একটি গাছ একটি প্রাণ।’ সরকারি উদ্যোগে শুরু হয়েছে নগরায়নের পাশাপাশি সবুজায়ন। খানিকটা হলেও বন্ধ হয়েছে নির্বিচারে গাছ কাটা। তাই কবি এ-ও বলেছেন- ‘মৌন মাটির মর্মের গান করে উঠিবে ধ্বনিয়া মর্মর তব রক্তে/মজ্ঞুরি ভরিবে ফুলে ফুলে পল্লবে হে মোহন প্রাণ।’
তবে হ্যাঁ, গাছ লাগানোর পরিকল্পনাই যথেষ্ট নয়, তাকে বাঁচিয়ে রাখাও আবশ্যিক কর্তব্য। তাই আমাদের প্রয়োজন বনসংরক্ষণের, প্রয়োজন যতœ-পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষনের। এই উদ্দেশ্যে জন্ম নিয়েছে সরকারি ‘বনবিভাগ’। তারই সক্রিয় কর্মপ্রচেষ্টায় যেমন অরণ্য সংরক্ষিত হবে, তেমনই পরিকল্পিতভাবে সম্প্রসারিত হবে বনভূমি। তাই বন সংরক্ষণের প্রয়োজনীতা ভুললে মানব সভ্যতারই বিপদ। এই প্রচেষ্টা সুষ্টুভাবে চালিয়ে যাওয়ার জন্য সমাজের সকল স্তরের মানুষকে সামিল হতে হবে। জীবনকে নতুনভাবে গড়তে হলে, জৈবিক পরিবেশে ফিরিয়ে আনতে হবে আরণ্যক পরিবেশ। আমাদের পরিবেশ হবে তরতাজা, আমরা হব স্বতঃস্ফুর্ত। আমরা তাই বলতেই পারি- ‘দাও ফিরে সে অরণ্য লহ এ নগর/ দাও সেই তপোবন পূর্ণ ছায়ারাশি।’
সাংবাদিক-কলামিস্ট। বুক্ষরোপনে জাতীয় স্বর্ণপদক (১ম) প্রাপ্ত। সদস্য- বন ও পরিবেশ উন্নয়ন কমিটি, সিলেট।

 

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..