শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১১ পূর্বাহ্ন
আউয়াল কালাম বেগ : মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের চাটি মেলাগড় গ্রামের মৃত মন্তাজ মিয়ার ছেলে মাহমুদ মিয়া এক সময় একেবারে নিঃস্ব ছিলেন। ধার দেন করে অন্যের কাছ থেকে ৮ বিঘা জমি লীজ নিয়ে কলা দিয়ে চাষাবাদ শুরু করেন। লাভের টাকা দিয়ে জমিনের পরিধি বাড়িয়ে ৪৫ আইটেমের ফল ও সবজি চাষ করে বর্তমানে স্তাবর অস্তাবর এক কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক তিনি। এখন মাহমুদ মিয়ার খরছ বাদ দিয়ে বার্ষিক আয় ১৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
সব সাধকের চেয়ে বড় সাধক হলেন আমার দেশের কৃষক। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে যে কৃষক শরীরের ঘাম ঝরিয়ে উৎপাদন করেন সোনার ফসল। পুরো জাতি তাকিয়ে থাকে ওই কৃষকের দিকে, যে কৃষকের কারণে অর্থনৈতিক মুক্তি আসে নিজের, পরিবারের এবং সমাজের। ফলে বদলে যায় একটি জনপদ, উৎসাহিত হয় আশেপাশের অগণিত মানুষ। এমনই একজন কৃষক মাহমুদ মিয়া( ৫০) শুনালেন ফল ও সবজি চাষ করে শূণ্য থেকে কোটি হবার গল্প।
তিনি জানান পৈত্রিক সম্পতি যতটুকু ছিল বাবা জীবীত থাকা অবস্থায় বিক্রি করে দিলে নিঃ স্ব হয়ে তিনি নানা বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে বর্গা চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন কিন্তু বর্গা চাষের আয় দিয়ে চলছিলনা পরিবার । মাহমুদ মিয়ার সংসারের অভাবের কথা চিন্তা করে মামা শাশুর জব্বার মিয়া মনু নদীর পারে নীজের ৮ বিঘা জমিতে কিছু একটা করার পরামর্শ দেন। মামা শশুরের কথা মত টাকা ধার দেন করে ২০০৭ সালে সাড়ে চার হাজার কলা চারা লাগিয়ে চাষাবাদ শুরু করেন কলার পাশাপাশি রাংগা, মুলা, পানি লাউ চাষ করেন কঠোর পরিশ্রম আর দক্ষতার কারণেই প্রথমবার কলা ও সবজির চাষে মাহমুদ মিয়া দেখেন সফলতার মুখ প্রথম বছর চাষাবাদে এক লাখ টাকা পুঁজি খাটান । কলা ও সবজি বিক্রি করে ওই বছরই খরছ বাদে প্রায় তিল লাখ টাকা আয় করে নিজে বদলে যাওয়ার পাশাপাশি পরিবারে এনেছেন সুখের হাসি। কয়েক বছর পরে লাভের টাকা দিয়ে আরো ১০ বিঘা জমি ক্রয় করে জমিনের পরিধি বৃদ্ধি করে ব্যায়াপক ভাবে শুরু করেন ৪৫ আইটেমের ফল ও সবজি চাষাবাদ। বর্তমানে ১৮ বিঘা জমিতে উনার ফল ও সবজি চাষাবাদ হচ্ছে।
এর মধ্যে রয়েছে কলা, লেবু, পেঁপে, লিচু, পেয়ারা বারি২ বারি ১, থাই সেভেন, মাল্টা বারি -১, ইন্ডিয়ান জারা লেবু সিকলেস, আদা লেবু, পাতু লেবু, সাতকরা, কমলা, বল সুন্দরী, বারমাসী বরই ও কাশ্বমীর কুল বরই, আপেল, কাপরেংগা, আমড়া, বে লেম্বু জলপাই, কাঁচ কলা, চাম্পা কলা, লম্বি কলা, জলপাই, আম বারি ৭, কাটিমন বারমাসি আম, আখ, লটকন, থাই জাম্বুরা, লিচু, কালা জাম, গোলাফ জাম, আমলকি, বরিশালি আমড়া, কাঁঠাল, আনার ফল ও আংগুর ইত্যাদি।
সবজির মধো রয়েছে কয়েক জাতের লাউ, বড়বটি, শষা, ঝিংগা, সিম, ঢেন্ডি, নালিতা ( স্থানীয় নাম নালি পাতা) পুই শাক, বারমাসি মরিছ, নাগা মরিছ, করলা ও বারমাসি বেগুন ইত্যাদি ছাড়াও যে সময় যে ফসল চাষাবাদের যোগ্য সেটা চাষাবাদ করে থাকেন। বাগান পরিচর্যার জন্য ৫ জন শ্রমিক নিয়োজিত থাকেন শ্রমিকের সাথে ছেলেকে নিয়ে মাহমুদ মিয়াও বাগানে শ্রম দেন। তিনি জানান স্থানীয় পাইকারের মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে ৭ হাজার টাকার ফল ও সবজি বিক্রি করেন। এতে উনার খরছ বাদে দৈনিক ৪ হাজার টাকা লাভ হয়। বছরে তার আয় দাঁড়ায় ১৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ফল ও সবজি বিক্রির আয় থেকে দুইটি (অটো রিক্সার) সিএনজি ক্রয় করেছেন, ৭ লাখ টাকা খরছ করে এক ছেলেকে দুবাই আরেক ছেলেকে ওমান পাটিয়েছেন। জমি ক্রয় করে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। মামা শশুরের কাছ থেকে লীজ নেয়া জমির আট লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। এছাড়াও জমি জমাসহ অনেক আসয় বিষয় করেছেন। বর্তমান বাজার দরে তার স্থাবর – অস্থাবর সম্পত্তির মূল্য কোটি টাকা।
মাহমুদ মিয়া বলেন বর্তমানে এ ব্যবসায় আরো ৩ লাখ টাকা পুঁজি খাটাতে পারলে দৈনিক ৮ হাজার টাকা তাঁর মুনাফা দাঁড়াবে। তিনি বলেন উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে গত ১৫ বছরে মাল্টা ও লেবুর ৬০ টি চারা, ৯০ কেজি সার, একটি স্প্রে মেসিন এবং নগদ তিন হাজার টাকা সহযোগীতা পেয়েছেন।
সদ্য যোগদানকৃত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা৷ মোঃ রেজাউল করিম বলেন কৃষক মাহমুদ মিয়ার কথা শুনেছি। আমি উনার ফল ও সবজির বাগান দেখতে যাবো। উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে উনি সকল সহযোগীতা পাবেন।