শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৮ পূর্বাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক: টানা ১২দিন কর্মবিরতির কারণে চা শ্রমিকদের মধ্েয এখন খাদ্য সংকট, সাপ্তাহিক রেশন,এনজিওদের কিস্তি পরিশোধ না করতে পারাসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। এদিকে ন্যায্য মজুরী ৩শ’ টাকা না পেলে তাঁরা কর্মবিরতি থেকে সরে আসবেনা বলে জানান চা শ্রমিক ও নের্তৃবৃন্দরা। এদিকে দিন যতো গড়াচ্ছে প্রচন্ড বিক্ষোভ ও ক্ষোভে ফুঁসে উঠছেন চা শ্রমিকরা। মজুরী বৃদ্ধির দাবিতে তাঁদের আন্দোলন ক্রমে জোরদার হচ্ছে। এখন তাঁরা শ্লোগান দিচ্ছে মালিক পক্ষের দালালরা, চা শ্রমিকের দালালরা সাবধান। ১৪৫ টাকা মজুরী মানবোনা।
সরেজমিন আজ শনিবার দুপুর মৌলভীবাজার জেলার প্রতিটি চা বাগানের এমন তথ্য পাওয়া গেছে । গত রোববার সাপ্তাহিক ছুটি, সোমবার শোক দিবস ও শুক্রবার শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমি বাদ দিলে ২ঘন্টা কর্মবিরতি ও পূর্নদিবস কর্মবিরতি মিলে আজ শনিবার ১০ম দিনে চলছে তাঁদের কর্মবিরতি।
ভাড়াউড়া বাগানের শকুন্তলা ফুলমালি,দীপালি ফুলমালি,পরমেশ্বর হাজরাসহ আরো অনেকে বলেন, সাপ্তাহিক রেশন, প্রত্যহ খাদ্য সংকট, মেডিক্যাল সংকটসহ বিভিন্ন সংকট দেখা দিয়েছে।
এছাড়া ব্র্যাক,আশা,হিড,ব্যুরো বাংলাদেশ,উদ্দীপন,এফআইডিবিসহ বিভিন্ন এনজিও সংস্থার কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে চাপ দিচ্ছে এনজিও কর্তৃপক্ষ। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন এসব চা শ্রমিকরা। এমন অবস্থায় তাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়ে সু দৃষ্টি কামনা করছেন।
এদিকে যেসব চা শ্রমিকের কাছে জমানো টাকা নেই তারা পড়েছেন চরম কষ্টে। ঘরে কোন ধরনের খাদ্য নেই। একবেলা খেলে অন্যবেলা খেতে পারছেন না। আন্দোলন করতে গিয়ে এখন অভুক্তই থাকতে হচ্ছে অনেককে। বাগানের অনেকে বলেন, এফআইভিডিবি থেকে কিস্তি নিয়েছিলাম। সপ্তাহে সাড়ে তিনশ, টাকা কিস্তি দিতে হয়। এখন কাজ নাই কিযে করি কার কাছে যাবো। চোখে অন্ধকার দেখতাছি।
খাইছড়া চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি পুষ্প কুমার কানু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ৫ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জেনেছি সেটা মানা সম্ভব নয়। আমরা ৩শ’ টাকার নীচে মানবোনা। প্রয়োজন হলে না খেয়ে মরবো। তবু ন্যায্য দাবি ছাড়বোনা।
এদিকে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন,প্রধানমন্ত্রী মানবিক দিক বিবেচনা করে আরো ৫টাকা মজুরী বৃদ্ধি করতে বলেছেন। আমি চা শ্রমিক নের্তৃবৃন্দ ও মালিক পক্ষের প্রতিনিধি নিয়ে বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবটি জানাবো। আশা করি চা শ্রমিক নের্তৃবৃন্দ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করবেন।
আব্দুস শহীদ বলেন,প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর থেকে এসে চা শ্রমিকদের সাথে তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে বসবেন। বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের উপ পরিচালক নাহিদুল ইসলাম বলেন, চা শ্রমিকরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। কালকে থেকে তারা কাচে যোগ দেবেন। এদিকে,আজ বিকেলে সিলেট ও হবিগঞ্জের চা শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বসবেন স্ব স্ব জেলা প্রশাসক। প্রসঙ্গত, দৈনিক ৩০০টাকা মজুরির দাবিতে গত শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেন দেশের সব চা বাগানের শ্রমিকরা।
।
গতকাল শনিবার বিকেলে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের কার্যালয়ে বৈঠকের পর চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে আমর্ াধর্মঘট প্রত্যাহার করছি। আমাদের মজুরি ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর থেকে এসে আমাদের সাথে বসবেন বলে জানিয়েছেন। সেখানে আমাদের দাবিদাওয়া তাকে জানানো হবে। তাই তার আশ্বাসে আমরা আপাতত ধর্মঘট প্রত্যাহার করছি। রোববার থেকে সব শ্রমিকরা কাজে যোগ দেবে। এদিকে শ্রম অধিপ্তর ও সরকারের সাথে বৈঠকের পর ১৪৫ টাকা মজুরির আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন চা শ্রমিক নেতারা। তবে সাধারণ শ্রমিকরা এর সাথে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন
এদিকে, নেতাদের এই সিদ্ধান্তের পর শ্রম দপ্তরের সামনেই বিক্ষোভ শুরু করেন সাধারণ শ্রমিকরা। তারা ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ারও কথা জানান তারা। এসময় সমিতির নেতাদের প্রতিও ক্ষোভ জানান সাধারণ শ্রমিকরা।
অঞ্জন গোয়ালা নামের এক শ্রমিক বলেন, আমরা ৩০০ টাকা মজুরির দাবি জানিয়েছি। এখন মাত্র ২৫ টাকা মজুরি বৃদ্ধি করলে কিভাবে ধর্মঘট প্রত্যাহার করবো। এই বাজারে ১৪৫ টাকায় কিভাবে চলবো। তিনি বলেন, নেতারা আপোষ করতে পারেন। কিন্তু আমরা আপোস করবো না। ধর্মঘট চালিয়ে যাবো। চা শ্রমিকদের সাথে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. আব্দুস শহীদ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী চা শ্রমিকদের প্রতি খুবই আন্তরিক। তারই নির্দেশে আমি আজকে এখানে এসেছি। মালিকপক্ষ ২০ টাকা মজুরি বাড়াতে চেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নিজে আরও ৫টাকা বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন।