সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০২:২৭ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক: চলমান কঠোর লকডাউনে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও ঈদকে সামনে রেখে নানান ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা ছাড়ছেন ঘরমুখো মানুষ। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ঢাকার গাবতলী ও সায়েদাবাদ এলাকা দিয়ে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন তারা। দূরপাল্লার বাস না থাকলেও এসব টার্মিনাল পয়েন্ট থেকে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে নানা যানবাহনে করে বাড়ি ফিরছেন নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ। টার্মিনালের সামনে পৌঁছলেই দূরপাল্লার বাসের বিকল্প হিসেবে খোঁজ মিলছে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, নছিমন, মাহেন্দ্র, হিউম্যান হলার, সিএনজি অটোরিকশা ও বিভিন্ন রুটে চলাচলরত বাসের খোঁজ পেয়ে যাচ্ছেন। এসব বাহনে স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই ঠাসাঠাসি করে বসে বাড়ি ফিরছেন তারা। এ দিকে পদ্মা নদীর পাটুরিয়া ও শিমুলিয়া এলাকায় ঘরমুখো মানুষের তীব্র স্রোত শুরু হয়েছে। যানবাহন তোলার আগেই ফেরি পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে মানুষে। অনেক সময় মানুষের ভিড়ে ফেরিতে যানবাহন তুলতেও অসুবিধায় পড়ছে কর্তৃপক্ষ। যাত্রীরা বলছেন, করোনার বিস্তার ঠেকাতে দূরপাল্লার বাস বন্ধ রাখা হয়েছে। অথচ মানুষ ঠিকই বিকল্প উপায়ে বাড়ি ফিরছে। আর এই বিকল্প পদ্ধতি কতটা স্বাস্থ্যসম্মত সেটা ভাবার বিষয়।
গতকাল শুক্রবার গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে ঘরমুখো মানুষের সাথে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, ট্রাক, পিকআপ ভ্যান এমনকি উবার-পাঠাও-এ চলাচলরত মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেলে করে তারা পাটুরিয়া ঘাটে যাচ্ছেন। সেখান থেকে লোকাল বাসে করে ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে যাচ্ছেন। টার্মিনালে থাকা বিভিন্ন বাস শ্রমিক যাত্রীদের সাথে কথা বলে মোটা অঙ্কের কমিশন নিয়ে প্রাইভেট গাড়ি ঠিক করে দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আগে যেখানে ৫০০ টাকা খুলনা চলে যাওয়া যেতো সেখানে পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছতে প্রকারভেদে নেয়া হচ্ছে জনপ্রতি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা করে। বাকি পথে আরো খরচ রয়েছে।খুলনাগামী ওহিদুল ইসলাম নামে একজন যাত্রী বলেন, তিনি একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। ওহিদুল বলেন, ঈদের আগে বাড়ি গেলেও এ বছর ঈদের আমেজ নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন না তারা। পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকার মতো সামর্থ্য নেই বলেই বাড়ি যাচ্ছেন। স্ত্রী-সন্তানদের সেখানেই রেখে আসবেন। কারণ চাকরি থাকলেও তাদের বেতন অনেক কমিয়ে দেয়া হয়েছে। করোনার কারণে তাদের প্রতিষ্ঠানের আয় কমে যাওয়ায় মালিক পক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বর্তমানে যে বেতন পাচ্ছেন তা দিয়ে পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকা সম্ভব হচ্ছে না। উপায় না থাকায় অনেক কষ্ট করেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তাদের। ১৬ সিটের একটি মাইক্রোবাসে তিন পরিবারের সদস্যরা এক সাথে রওনা হয়েছেন। এখানেই তো চেষ্টা করেও স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দূরত্ব মানা সম্ভব হচ্ছে না। আবার ভাড়াও গুনতে হচ্ছে কয়েক গুণ বেশি।
আল আমিন নামে অপর এক যাত্রী বলেন, প্রতিটি যানবাহনে ঠাসাঠাসি করেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তাদের। তিনি বলেন, যাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে তারা ঢাকায় থেকে যাচ্ছেন। কিন্তু নানা কারণে যারা ঢাকায় থাকতে পারছেন না তারা বাধ্য হয়ে গ্রামে যাচ্ছেন। দূরপাল্লার বাস না চলায় গাবতলি আমিন বাজার ব্রিজ পার হয়ে নছিমনে ঠাসাঠাসি করে বসে সাভার যাচ্ছেন। সেখান থেকে জেলা ভিত্তিক চালিত বাসে করে পাটুরিয়া যাবেন। এরপর ফেরিতে পদ্মা পার হয়ে আবার জেলা ভিত্তিক চালিত বাসে করে গন্তব্যে যাবেন।
আব্দুর রহমান নামে এক প্রাইভেট কার চালক বলেন, গত ১৪ এপ্রিল কঠোর লকডাউন ঘোষণার আগের দিন মানুষ ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছিল। মাঝে কিছুটা কম হলেও গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে আবার ছুটতে শুরু করেছে ঘরমুখো মানুষ। তিনি বলেন, উবারে গাড়ি চালালেও ঘরমুখো মানুষের ভিড় থাকায় অ্যাপস বন্ধ করে ভাড়ায় গাড়ি চালাচ্ছেন। তার প্রাইভেট কারে সামনে একজন ও পেছনে চারজন নিয়ে পাটুরিয়া ঘাটে নামিয়ে দিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে জনপ্রতি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা ভাড়া আদায় করছেন। এত বেশি টাকা কেন নিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশের বাধার কারণে টার্মিনালের আশপাশে অবস্থান করে যাত্রী তোলা যাচ্ছে না। যার কারণে টার্মিনালের কিছু লোক দালালি করে যাত্রী একত্র করছেন। এরপর তাকে ফোন করলেই তিনি দ্রুত গাড়ি নিয়ে এসে যাত্রী তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে ওই দালালদের যাত্রী প্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। আবার রাস্তায় পুলিশে ধরলে সেখান থেকে ছাড়া পেতেও ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে তার খুব একটা লাভ হচ্ছে না।