শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৫ পূর্বাহ্ন
সিলেট প্রতিনিধি: সিলেট সদর উপজেলার দেশের প্রথম চা-বাগান মালনীছড়ার চা শ্রমিকদের আন্দোলনের ধারাবাহিক অব্যাহত রয়েছে। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বুধবার (২৪ আগস্ট) সকাল থেকে সিলেট বিভাগের চা বাগানের সকল শ্রমিক কর্মবিরতি পালন করেন। ১২ দিন ধরে দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে টানা কর্মবিরতি পালন করছেন চা শ্রমিকরা।
আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বুধবার চা শ্রমিকদের পাশে দেখা গেছে স্কুল পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীদের। চা শ্রমিকদের সন্তানরা আন্দোলনে যুক্ত হয়ে শ্লোগান দিচ্ছেন। ‘৩০০ টাকা দাও নাইলে বিষ দাও’। ‘বাচার মত বাচতে চাই ৩০০ টাকা মজুরি চাই’।
এদিকে মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) সিলেটের কোনো চা বাগানে কাজে যোগ দেননি শ্রমিকরা। সোমবার (২২ আগস্ট) যেসব বাগানের শ্রমিকদের একাংশ কাজ শুরু করেছিলেন, মঙ্গলবার তারাও ফের কর্মবিরতি শুরু করেন। আন্দোলনের বিষয়ে মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) দুপুর সোয়া ১২টা থেকে সিলেটের ২৩ বাগানের পঞ্চায়েত কমিটি লাক্কাতুড়ায় বৈঠকে বসেন। বৈঠকে চা শ্রমিকরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
বৈঠকে সব শ্রমিক একযোগে জানান- তারা কাজে যোগ দিবেন না। এসময় তাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা।
উল্লেখ্য, ১২০ থেকে ৩০০ টাকায় দৈনিক মজুরি উন্নতকরণের দাবিতে সিলেটসহ সারা দেশের চা শ্রমিক গত ৯ আগস্ট থেকে আন্দোলনে নেমেছেন। ৯ থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত তারা ২ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালনের পর গত ১৩ আগস্ট থেকে তারা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন। আন্দোলন থামাতে শ্রম অধিদপ্তরের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক হলেও সমাধান আসেনি। চলমান জটিলতা নিরসনে সর্বশেষ গত ২০ আগস্ট মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলস্থ বিভাগীয় শ্রম দফতর অফিসে মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী ও চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেণ পাল বৈঠকে বসেন।
তিনপক্ষীয় ওই বৈঠকে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে নেতারা এ সিদ্ধান্ত মেনে আসলেও শ্রমিকরা তা প্রত্যাখ্যান করে ৩শ’ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এ অবস্থায় ওই দিন রাতে সিলেট ভ্যালির শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন জেলা প্রশাসক। বৈঠকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন। এসময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয় চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দের প্রতি। সে আহ্বান মেনেও নেন স্থানীয় চা শ্রমিক নেতারা। কিন্তু সাধারণ চা শ্রমিকরা বেঁকে বসেন এবং সিলেট বিভাগে পরদিন (২১ আগস্ট) দিনভর কর্মবিরতি পালনের পাশাপাশি সড়ক অবরোধ, মিছিল ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তারা।
এক পর্যায়ে ২১ আগস্ট রাতে জেলা প্রশাসন, শ্রমদপ্তরের প্রতিনিধি, শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এক বৈঠকে ১২০ টাকা মজুরি রেখেই কাজে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। প্রস্তাব মেনে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন ইউনিয়নের নেতারা। এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আবারও কর্মবিরতি অব্যাহত রাখেন সিলেট বিভাগের বেশিরভাগ চা শ্রমিক। এ অবস্থায় ২১ আগস্ট (রোববার) রাত সাড়ে ৮টার দিকে সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চা শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ ও সিলেট আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
দেড় ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান, সিলেট জেলা পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) ফরিদ উদ্দিন, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুদ উদ্দীন আহমদ ও জেলা সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর সেক্রেটারি অধ্যাপক জাকির হোসেন, জেলা সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান এবং চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা ও অন্যান্য চা শ্রমিক ইউনিট এবং পঞ্চায়েত প্রধান।
বৈঠকে সিলেটের জেলা প্রশাসক চা শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবগত আছেন বলে চা শ্রমিক নেতাদের জানান। তিনি বলেন- প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে চা শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বৈঠক করবেন। বৈঠকে এর সমাধান করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন জেলা প্রশাসক। কিন্তু উপস্থিত চা শ্রমিক নেতারা বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে পরবর্তীতে তাদের সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে জানান।
তবে রাজু গোয়ালা এমন কথা বললেও উপস্থিত বেশিরভাগ চা শ্রমিক ও পঞ্চায়েত প্রধানরা প্রশাসনের প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।