শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩৮ পূর্বাহ্ন
বড়লেখা প্রতিনিধি :: বড়লেখায় স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি ভুমিহীন নারী মনোয়ারা বেগমের নিকট থেকে ৫ শতাংশ জমি বিক্রির চুক্তিমোতাবেক মূল্যগ্রহণ করে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বিক্রিত জমির দখল ও কাগজ করে না দিয়ে উল্টো দরিদ্র এ মহিলাকে তার নানা হয়রানী ও ভয়ভীতির প্রদর্শণের ঘটনা নজরে আসায় স্বপ্রণোদিত হয়ে থানার ওসিকে মামলা রুজুর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার বিকেলে পাখিয়ালা গ্রামের প্রভাবশালী মুজিবুর রহমান ওরফে মুজিব মিয়ার বিরুদ্ধে এ আদেশ জারি করেন বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জিয়াউল হক। মুজিব মিয়া পাখিয়ালা গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে।
আদালত ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, মনোয়ারা বেগমের স্বামী আব্দুল কাইয়ুমের আদি বাড়ি হবিগঞ্জ জেলায়। প্রায় ৩৫ বছর ধরে শ্বশুড় বাড়ির সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে স্বামী-সন্তান নিয়ে তিনি বড়লেখায় বসবাস করছেন। পাখিয়ালা গ্রামে ভাড়া বাসায় থেকে দিনমজুরী করে তারা জীবিকা নির্বাহ করতেন। মনোয়ারা বেগমের মাথা গুঁজার ঠাঁই নাই থাকায় ৫ শতাংশ জমি ক্রয়ের জন্য চুক্তি করেন স্থানীয় প্রভাবশালী মুজিবুর রহমান ওরফে মুজিব মিয়ার সাথে। ২০১৮ সালের ৪ আগষ্ট মুজিব মিয়া চুক্তি অনুযায়ী জমির মূল্য বাবত মনোয়ারা বেগমের কাছ থেকে নগদ ২ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। পরে তিনি আরও ২০ হাজার নিয়ে জমিটি ভরাট করালেও দখল ও রেজিষ্ট্রী করে দেননি। প্রায় ৪ বছর ধরে উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরমেয়র, কাউন্সিলর ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের নিকট নালিশ দিয়েও ভুক্তভোগী মনোয়ারা বেগম কেনা ভুমির দখল পাননি। মুজিবুর রহমান ওরফে মুজিব মিয়া তার বিচার কেউ করতে পারবে না বলে মনোয়ারা বেগমকে হুমকি-ধমকি দিতে দেন। এতে তিনি নিরুপায় হয়ে টাকা ও জমি ফেরৎ পাওয়ার আশা ছেড়ে দেন। এরমধ্যে মুক্তিযোদ্ধা মানিক মিয়া মনোয়ারা বেগমকে বোন বানিয়ে কোন উপায় করে দেয়ার আশ্বাস দেন। তার আশ্বাসে শাহবাজপুর চা বাগান এলাকায় সরকারী খাস জমিতে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছিলেন মনোয়ারা বেগম।
এদিকে সরকারী পাহাড়ী খাস জমি দখলের ঘটনায় মনোয়ারা বেগমসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করে চা বাগান কর্তৃপক্ষ। গত ২৫ জুলাই অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে গেলে পুলিশের সাথে দখলদারদের সংঘর্ষ ঘটে। এঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে দলখদারদের বিরুদ্ধে পৃথক আরেকটি মামলা দায়ের করে। ওই দুই মামলার একটি মামলায় পুলিশ মনোয়ারা বেগমতে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে। ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী প্রদানকালে মনোয়ারা বেগম সরকারী খাস জমি দখলের নৈপথ্য কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে প্রতারিত ও হুমকি-ধমকির শিকার হওয়ার ঘটনাটি আদালতের নিকট তুলে ধরেন। ভুমিহীন নারীর সাথে এমন অমানবিক আচরণের ঘটনা জেনে মঙ্গলবার আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে থানার ওসিকে প্রভাবশালী মুজিবুর রহমান ওরফে মুজিব মিয়ার বিরুদ্ধে ২৪ ঘন্টার মধ্যে মামলা দায়েরের আদেশ দিয়েছেন।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী ইকরাম হোসেন জানান, খাস জমি দখলের মামলায় পুলিশ মনোয়ারা বেগমকে গ্রেফতারের পর আদালতে সোপর্দ করে। ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দীতে তিনি এ অপরাধের পেছনের কারণ তুলে ধরেন। আদালতের মনে হয়েছে মুজিবুর রহমান ওরফে মুজিব মিয়া টাকা নিয়েও বিক্রিত জমি বুঝিয়ে দেননি। বিভিন্ন জনের নিকট নালিশ করেও মনোয়ারা বেগম বিচার না পেয়ে সরকারী ভুমিতে ঘর তৈরীর মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। ভুক্তভোগীর ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতেই আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে মুজিবুর রহমান ওরফে মুজিব মিয়ার বিরুদ্ধে ২৪ ঘন্টার মধ্যে মামলা দায়েরের জন্য থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।