1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩৬ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

ক্যানসারের চিকিৎসায় বনৌষধির ব্যবহার — আফতাব চৌধুরী

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ৫৪৩ বার পঠিত

আধুনিক প্রযুক্তি ও সভ্যতার সঙ্গে যে রোগটি আমাদের ‘মেজর কিলার’ হিসাবে জীবনের গতিকে স্তব্ধ করে দিচ্ছে সেটি হল ক্যান্সার। চরক সংহিতায় এই কর্কট রোগটির উল্লেখ আছে। পুরাকাল থেকে বিভিন্ন বনৌষধি অর্থাৎ গাছ-গাছড়া থেকে তৈরি ঔষধের প্রয়োগের উল্লেখ আছে। বর্তমানে বিজ্ঞানের যুগে বনৌষধির একটি বড়ো অংশকে ক্যান্সার রোগের চিকিৎসায় ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
হাজার বছর ধরে বিভিন্ন রোগের নিরাময়ে প্রাকৃতিক উপাদান বিশেষ করে গাছ-গাছড়ার ভূমিকা অনস্বীকার্য। এ সমস্ত উপাদান থেকে নিত্যনতুন ঔষধ আবিষ্কার হচ্ছে। পাইপরাস নামক গাছ থেকে ৭০০ রকমের ঔষধ আবিষ্কার হয়েছে যা মিশরে ঐতিহাসিক কারণ ঘটিয়েছে। চীন দেশে ম্যাটেরিয়া মেডিকা থেকে ৬০০ ধরনের অন্যান্য ঔষধি গাছের খোঁজ মেলে। এই গাছটিকে আঞ্চলিক ভাষায় মেগামেডিকা বলা হয়। ১১০০ খ্রিস্টাব্দ এর সর্বপ্রথম অস্তিত্ব মেলে। আমাদের এ অঞ্চলে হাজার খ্রিস্টাব্দ পূর্বে যে সমস্ত আয়ুর্বেদিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে তার অস্তিত্ব সুশ্রত এবং চরক নামে গ্রন্থে উল্লেখ আছে। গ্রিক বিশেষজ্ঞরা আয়ুর্বেদিক ঔষধ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ উন্নতির নিদর্শন দিয়েছেন।
ক্যান্সার চিকিৎসায় বহু যুগ ধরে উদ্ভিদের ব্যবহার করা হয়েছে। ভারতের ন্যাশনাল ক্যান্সার ইন্সটিউিট ৩৫০০০ প্রজাতির গাছ পৃথিবীর ২০ টি দেশ থেকে সংগ্রহ করেছে, যা থেকে ১ লক্ষ ১৪ হাজার নির্যাস পাওয়া গিয়েছে যা ক্যান্সারের প্রভাব রুখতে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীব্যাপী ক্যান্সার রোধক ঔষধের বাজারের প্রায় তিনভাগের একভাগ উদ্ভিদ উদ্বৃত্ত প্যাকলিট্যাক্সেল ও ক্যাম্পেটোথেসিনের ব্যবহার হয়েছে। ক্যান্সার রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করারজন্য উদ্ভিদ ক্ষমতাশীল জৈবযৌগের উৎপাদন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।
ক্যান্সার চিকিৎসায় বনৌষধি : আগে থেকে সর্তক হয়ে অসুখের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যে অনেক বেশি বিজ্ঞানসম্মত, আধুনিক সচেতন মানুষ সেটা বুঝে গিয়েছেন। মানুষ জানে যে প্রাণীজ খাদ্য থেকে উদ্ভিদ খাদ্য অনেক বেশি নিরাপদ। ক্যান্সার চিকিৎসায় প্রাকৃতিক বস্তুর মধ্যে আছে ভেষজ বস্তু, প্রাণীজ বস্তু এবং অ্যান্টিবায়োটিক যা ক্যান্সার প্রতিরোধে ব্যবহার করা হয়। ভিনক্রিসটিন এবং ভিনরাসটিন হল এক প্রকার ইন্ডোল অ্যালকালয়েড যা নয়নতারা গাছ থেকে পাওয়া যায়। এটি কোষ বিভাজনের মেটাফেজ দশায় কাজ করে। ভিস্কা অ্যালকালয়েডগুলিকে ‘জাদুকর’ ঔষধ বলা হয়। এদের আশ্চর্য কার্যকারিতা। যার মূল কারণ, ট্যাক্্েরন পাওয়া যায় ট্যাক্সেন গোত্রের টেক্সাস অন বিশিষ্ট উদ্ভিদ থেকে। মানুষের শরীরে এই শ্রেণীর ঔষধের কার্যকরীক্ষমতা বেশি বলে জানা গিয়েছে। ট্যাক্সন শ্রেণীর ঔষধ কাজ করে মাইটোসিস পদ্ধতিতে কোষ বিভাজন বন্ধ করে দিয়ে। ক্যাকটাস গাছ থেকে ইটোপসাইড নামক ঔষধ পাওয়া যায়, যা ব্যবহার করা হয় লিম্পোসা ও লিউকোমিয়া-র মতো অসুখে। ক্যাথরনথাস রোসিয়াম : নয়নতারা। নয়নতারার সাদা ফুল গাছ থেকে ভিনকা অ্যালকালয়েড পাওয়া যায়। ভিনক্লাসটিন ও ভিনক্রিসটিন দু’টি প্রধান যৌগ, যেগুলো ব্যবহার ক্যান্সার রোধে ব্যবহৃত হয় তা ভিনকা অ্যালকালয়েড থেকে পাওয়া যায়। এগুলো ক্যান্সার চিকিৎসায় সর্বপ্রথম ব্যবহার হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এগুলো লিউকোমিয়া, লিস্ফোমাস, অ্যাডভান্সড টেস্টিকিউলার ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার ও ফুসফুস ক্যান্সারে ব্যবহৃত হয়। ক্যান্সার প্রতিরোধ বনৌষধি যেহেতু আগে উল্লিখিত আরওএস গুলো ক্যান্সারের কারণ হিসাবে দায়ী সেহেতু অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং প্রি-র‌্যাডিকাল স্ক্যাভেঞ্জার সকল টিউমার বা ক্যান্সারের সৃষ্টি, বৃদ্ধি বা বিস্তারের প্রত্যেকটি ধাপে বাধা দিতে পারে এবং দেহকোষগুলোকে রক্ষা করতে পারে ও কোষের ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়তে পারে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এই সমস্ত ক্যান্সার প্রতিরোধক উপাদানগুলোকে চিহ্নিত ও নির্দিষ্ট করতে পারলে মানুষের উপর ক্যান্সারের আক্রমণ অনেকটা প্রতিহত হয়। ক্যান্সার প্রতিরোধে বিভিন্ন খাদ্যসমূহ : টকজাতীয় ফল। টিউমার কোষের বিরুদ্ধে সাতাশ ধরনের সাইট্রাস ফল ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। যার মধ্যে আছে পাতিলেবু, কমলালেবু, মোসাম্বি লেবু ইত্যাদি। কমলালেবুর মধ্যে যে বিভিন্ন ধরনের বাউমারিন পাওয়া যায় সেগুলো ম্যাক্রোফাই কোষ হিসাবে কাজ করে এবং সেটা সুপার অক্সাইড ও নাইট্রাস উৎপাদনে বাধা দেয় ও যে লিমোনয়েড সংগৃহীত হয় তা জীবাণুমুক্ত হতে সাহায্য করে। আঙুর : আঙুরের রস থেকে যে রাসায়নিক পাওয়া যায় তা ইস্ট্রোজেন হরমোন গ্রাহক ও অ্যারোমটোস দমনকারী হিসাবে ও দুর্বল প্রতিদ্ব›দ্বী হিসাবে কাজ করে। লাল আঙুরের ছাল থেকে রিসভোরেটল নির্গত হয় যা ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা করে এবং শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট হিসাবে কাজ করে। এর মধ্যে কালো আঙুর বেশি কার্যকার। ডুমুর : ডুমুর ফুল সংগ্রহের সময় যে সাদা রস নি:সৃত হয় তা চামড়ায় গঠিত টিউমার ও ক্ষত চিকিৎসায় ব্যবহার করা যায়। আদা : আদা থেকে যে সুগন্ধি মিশ্র উপাদান যথা জিনজেরল ও প্যারাডল পাওয়া যায় তা টিউমার আটকাতে সাহায্য করে। চা : চা গাছ থেকে একটি কার্যকারী যৌগ ‘অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ’পাওয়া যায়। মুক্ত মৌল দ্বারা সৃষ্টি কোষের ক্ষত রুখতে এটি ব্যবহৃত হয়। পরীক্ষাগারে বিভিন্ন জীব-জন্তুদের উপর গবেষণায় জানা যায়, সবুজ ও কালো চা ফুসফুসের টিউমার সৃষ্টি রোধে কার্যকারী। হলুদ : হলুদ থেকে যে ধরনের কারকিউমিন পাওয়া যায় তা জীবদেহে রাসায়নিকভাবে ক্যান্সার সৃষ্টি রোধে কাজ করে। রোজমেরি : চিরহরিৎ সুগন্ধ গুল্ম বিশেষ। এটি সুস্বাদু মশলা হিসাবে বাড়িতে ব্যবহার করা হয়। বয়রা : যার বিজ্ঞানভিত্তিক নাম ‘কমব্রেটাস ক্যাপ্রার্স’-এর ছাল থেকে কমব্রেটাসটিন সংগৃহীত হয়। এটি কোলন, ফুসফুস এবং লিউকোমিয়া ক্যান্সার প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়। সয়াবিন: সয়াবিনে প্রচুর প্রাকৃতিক ইস্টোজেন থাকে, যার ফলে স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। মৌমাছির চাক : তিনশো খ্রিস্টাব্দ থেকে পরম্পরা অনুযায়ী এর ঔষধ রূপে ব্যবহার জানা যায়। এটি বৃহত্তরভাবে অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট, ক্যান্সার রোধক ও রোগজীবাণুর হাত থেকে মুক্ত হতে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে।

 

সাংবাদিক-কলামিস্ট

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..