1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩০ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

বউ শ্বাশুড়ির ঝাল মিষ্টি সম্পর্ক — আফতাব চৌধুরী

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ৪০৭ বার পঠিত

বউ শাশুড়ি অথবা শাশুড়ি বউ দুটি সমার্থক শব্দ। শব্দ দু’টো দেখতে গোছানো মনে হলেও আদতে তা কিন্তু না। শাশুড়ি বউ ব্যানারটা আমাদের সমাজের খুব জনপ্রিয়া একটি ধাপ। বংশ পরম্পরার উপকরণ। এ ব্যানারের লেশ কখনো বিচ্ছিন্ন হচ্ছে না। তা হবারও অবকাশ নেই। সমাজ সৃষ্টি হয়েছে সভ্যতাকে উপলক্ষ করে। পৃথিবীর জন্মলগ্নের শুরুতে সভ্যতা ভব্যতা বলে কিছু ছিল না। প্রাণ সৃষ্টি হলেও প্রাণের অলংকার সভ্যতা ঐতিহ্য ও কৃষ্টি থেকে তখনকার মানুষের দূরত্ব ছিল বিশাল ও অপরিসীম। সভ্যতা সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান ছিল না বলে মানুষ ¯্রফে দু’টুকরো কাপড় দিয়ে লজ্জা ঢাকতো। এখন সে সব আমলের ঘটনা চিন্তায় আনলে তাদেরকে নির্লজ্জ অসভ্য সমাজের প্রাণী মনে করা হয়। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে কালচার আর সোশালিজমে অভ্যস্ত হয়েছে মানবকূল। তৈরি হয়েছে রিলেশান। পূর্বসরী থেকে উত্তরসূরী। এ পর্যায়টি চিরাচরিতভাবে কন্টিনিউ করেছে। কন্যা জায়া জননী। নারী সম্পর্কেও এক সিঁড়ি ভেঙ্গে আরেক সিঁড়িতে পরিচিত হচ্ছে। স্বাদ পাচ্ছে বৈচিত্র্যময় ধারার সম্পর্কের। স্ত্রী থেকে মা, মা থেকে শাশুড়ি তারপর জোড়াতালি দেয়ার মত নানী দাদী এবং সর্বশেষে নিবু নিবু প্রাণপ্রদীপের নীচে বসে জীবনের অন্তিম মুহূর্ত গণনা। এ যে সম্পর্কের যে সিঁড়ির কথা বললাম তারই একটি শাশুড়ি। শাশুড়ি হবার আগে পরিবারে বউ হয়েই পদার্পণ করেছিল সে। বউ থেকে শাশুড়ি ছেলেমেয় নিয়ে বেশ ভালভাবে কেটে যায় অনেকের সময়। বিপত্তি দেখা যায় ছেলের বিয়ের পর। ছেলের বউ ঘরে তোলার পর পরই কিছু শাশুড়ি আটঘাট বেধে নেমে পড়েন পুত্রবধুর দোষত্রæটি তল্লাশির জন্য। বৌ-এর সামান্য ভুলক্রুটিকে মেকাপ সাজিয়ে অপরূপ ঢংয়ে ছেলের কাছে বয়ান করতে কসুর করেন না। ছেলে যদি প্রভাবান্বিত হয় তবে তো শাশুড়ির পোয়া বারো। হাত পা লাঠি সোটা নিয়ে বউয়ের উপর শুরু হয় ধুম ধাড়াক্কা আক্রমন।
দেখে চোখ জুড়োয় শাশুড়ি আম্মার। শাশুড়ি মাত্রই সবাই কিন্তু এক রকম নন। সেখানে ক্লাসিফিকেশান আছে। উল্লেখিত শাশুড়িগণ আরও একটি মারাত্মক দোষেও দুষ্ট। ছেলের সঙ্গে বউয়ের অন্তরঙ্গ মাখামাখি (মেলামেশা) চোখে তাদের বিষ ঢেলে দেয়। স্ত্রীর সঙ্গে ছেলের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ঘোর বিরোধী ওই সমস্ত শাশুড়ি। এমনকি গ্রামাঞ্চলে যেটা বেশী ঘটে থাকে-কিছু কিছু শাশুড়ি রাতে নিঃশব্দে চোরের মত দাঁড়িয়ে ছেলে-বউয়ের কথাবার্তা শোনে। সব ছেলেই বিয়ের পর খুব একটা ইনফ্লুয়েন্স হয় না মা’দের দ্বারা। কিছু সংখ্যক ভদ্রলোকের ছেলে মা’র ডায়গল ডেলিভারী এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে ফেলে দেয়। শওকত সুদর্শন যুবক। তিনি চাকরি করেন জিএমসিতে। ক্লাস এইটে পড়া অবস্থায় তারা বাবা মারা যান। তিন বোন দুই ভাইয়ের সংসার নিয়ে মা হিমশিম খাচ্ছিলেন। অভাবে টলে পড়া সংসারের দিকে মামারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। শওকত ভাল একটা চাকরী করছেন এখন। অন্য ভাইকে দুবাই চাকরী দিয়ে নিয়ে গেছে মামাতো ভাই। সংসারে স্বাচ্ছন্দ্য এসেছে ভালই। চাকরীতে ঢোকামাত্র মা’র পছন্দে বিয়ে করতে হয় তাকে। বিয়ের মাস কয়েক পর থেকেই মা’র আচরণগত কিছু বৈশিষ্ট্য অবাক করেছে তাকে। অফিস সেরে বাসায় ফেরা মাত্র পুত্রবধূ সম্পর্কে অসংখ্য অভিযোগ-অনুযোগ শুরু করেন ছেলের কাছে। শওকত এসব শুনতে শুনতে প্রচন্ড ত্যক্ত বিরক্ত। তার ভাষ্য হচ্ছে-বিয়ে করে এত অশান্তি হবে জানলে বিয়েই করতাম না। মা যেন দিন দিন অবুঝ আনাড়ী হয়ে যাচ্ছেন। বাইরে থেকে এসেই সোজা মা’র কামরায় ঢুকি। ফলমূল খাবার দাবার যা কিছু নিয়ে আসি তাঁর হাতে তুলে দেই। শাড়ি কাপড় বউকে আলাদা করে কিছু কিনে দেই না। বোনরা আগে পছন্দ করে নিজেদের জন্য। বউদের জন্য একটা থ্রীপিস কিনলে তিন বোনের জন্য তিনটা কিনি। দু’বোন অবিবাহিত। ম্যারেড বোনের স্বামী বাইরে থাকে। বোন প্রেগন্যান্ট। শুরু থেকেই আমাদের সাথে থাকছে। আমার বউও পাঁচ মাসের প্রেগন্যান্ট। কিন্তু আছি ভীষণ বেকায়দায়। নিজের মেয়ের স্বাস্থ্য সম্পর্কে মা যতখানি এ্যালার্ট পুত্রবধূর ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিপরীত। মা’র এসব বৈষম্যে মনে মনে কষ্ট পাই। কিছু বলি না কারণ তিনি কষ্ট পাবেন। শওকতের সাথে পূর্ব পরিচয়ের সুবাদে তিনিই বউ শাশুড়ি সম্পর্কে লিখার জন্য অনুরোধ করছেন।
ঘটনা এক বৃত্তে থেমে নেই। পাশাপাশি ঘটনা রূপ নিচ্ছে ভিন্নতায়। ঝগড়াটে পুত্রবধূও কমতি নেই আমাদের চারপাশে। রাজহাঁসের মত গলা উঁচিয়ে শ্বশুর শাশুড়ির সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হচ্ছে অনেক। স্বামী বাইরে থেকে এসে মা’র কামরায় গেলে তাদের ঊনপঞ্চাশ বায়ু চড়ে যায়। মেনে নেয়ার মানসিকতা একদম নেই বলে শাশুড়ি-বউ সম্পর্কে দ্বিধা দ্বদ্বর আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। দ্বদ্বর জটিলতা, ঠান্ডা লড়াই ইচ্ছে করলে খতম করে দেয়া যায়। মা-ছিলেন সখ্য সহজভাবে মেনে নিলে সমাধান হয়ে যায় স্নায়ুযুদ্ধের। বউ-শাশুড়ির দ্বন্দ্বের বহুল সম্পর্কের অন্যতম আরেকটি নমুনা হচ্ছে পরস্পরের আত্মীয়-স্বজন। স্বামীর আত্মীয় পরিজন গ্রাম থেকে বেড়াতে এলে অসন্তুষ্ট হয়ে উঠে বউ। একদিনের বেশি দু’দিন গড়ালে শুরু হয় আছাড় আছাড় আচরণ। আদর আপ্যায়নে বিরাট ঘাটতি ধরা পড়ে। কিন্তু নিজের বোন ভাই বেড়াতে এলে বাহারী বৈচিত্রম্যয় আতিথেয়তা পর্বটি কনটিনিউ করে। তখন আর বলে দিতে হয় না পোলাও বিরিয়ানী রান্নার কথা। শাশুড়ির উপর বউ নির্ভরশীল হয় না। যদিও গুটি কয়েক ক্ষেত্রে হয় তাও খুবই সামান্য সময়ের জন্যে। বাবার বাড়ির অতি চেনা জগত থেকে ভিন্ন নতুন একটি পরিবেশে এসে ভিন্ন ভিন্ন মন মানসিকতার খাপ খাইয়ে নিতে পারে না কোন মেয়ে। সবার মনের ধরন বুঝা এবং তাদের মনের বাতাসের সঙ্গে বাদাম তুলে দেয়া যে কোন নববধূর জন্য রীতিমতো কঠিন ব্যাপার। স্বামীর বাড়ির পরিবেশের সঙ্গে সহজে খাপ খাইয়ে নিতে প্রয়োজন শ্বশুড়-শাশুড়ি, দেবর-ননদ, জ্যা’র আন্তরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ। নতুন বিয়ের পর স্বামীর পরিবারের লোকজন যদি হেল্পমেটের ভূমিকা না নিয়ে তাকে বিব্রত করার পন্থা খোঁজে তাহলে দ্বন্দের আবির্ভাব না হয়ে যায় কোথায়? বলা বাহুল্য ছেলের বউয়ের উপর শাশুড়ির রাজত্ব চলে অল্প কিছুদিন। এক সময় আপনা থেকে বা প্রকৃতিগত নিয়মে তা স্তিমিত হয়ে আসে। বয়সে ভারাক্রান্ত শাশুড়ি প্রকৃতির অবিচল নিয়মে ছেলের বউয়ের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। শুরুর দিকে যেটা বললাম (ছেলের বউকে বৈষম্যমূলক আচরণ উপহার দেয়া) পুত্রবধূদের উচিত মেনে নেয়ার মানসিকতাভাবে পাকাপোক্ত করা। শাশুড়িদের সব ভূলক্রটি অগ্রাহ্য করে আন্তরিকতাকে সুসংহত করা উচিত। শাশুড়ির প্রতি কর্তব্যটিকে যথাযথভাবে পালন করা উচিত। তেমনি শাশুড়িদেরও ‘‘আমার মেয়ে পরের মেয়ে’’ পার্থক্য ভুলে যাওয়া দরকার। তাঁর মেয়ে পরের বউ এবং পরের মেয়ে তাঁর বউ-কথাটি যথার্থভাবে উপলব্ধি করলে জটিলতা বলে কিছু থাকে না , থাকার কথাও নয়। বউ-শাশুড়ির প্রত্যক্ষ দ্ব›দ্ব হলেই তা কেবল শোনা যায়। কিন্তু পরোক্ষ দ্ব›দ্ব খুব মারাত্মক বিষয়। একে অন্যের প্রতি ক্ষোভে রাগে ফুলে ফেঁপে সম্পর্কের অবনিত ঘটে। বিচার বিবেচনার দিক এক্ষেত্রে দু’জনেরই মাথায় রাখা উচিত। শাশুড়ি বউ মানে মন কষাকষি, দূরত্ব নয়। তাদের মধ্যেও গড়ে উঠতে পারে বন্ধুত্বের সম্পর্ক। হিংসা অশ্রদ্ধা বৈরী মনোভাব ডিঙ্গিয়ে শাশুড়ি-বউ সম্পর্কের নিবিড় ঘনিষ্ঠতা নিয়ে কয়েকটি সুন্দর কথা বলেছেন ফারাহ তানজিনা। থাকেন আমেরিকার কানেকটিকায়। স্বামী কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। তানজিনা বললেন, আমার সঙ্গে আমার শাশুড়ির চমৎকার ফ্রেন্ডশীপ। তিনি আমাকে নিজের মেয়ের মত ভালবাসেন। মেডিটেশনে আমাকের নিজের মেয়ের মত ভালবাসেন। প্রেগন্যান্ট পিরিয়ডে আমাকে টেক-কেয়ার করেন। আমরা এক সাথে জগিং করি। মার্কেটিং করি, ম্যাগডোনালসে যাই। স্বামী ফারদিনের সঙ্গে টুকটাক ঝামেলা হলে তাঁর কাছে খুলে বলি। ইনফ্যাক্ট তাঁর এডভাইজ আমার খুব কাজে আসে। মন খারাপের বিষয় তাঁকে বলতে পারছি। তিনিও বন্ধুর মত শেয়ার করছেন। তিনি কাজী নজরুলের কবিতা ভালবাসেন। প্রতি রাতে ঘুমোতে যাবার আগে তাঁকে কবিতা পড়ে শোনাই। এটা রুটিন হয়ে গেছে। আমি কোথাও গেলে তাঁকে প্রচন্ড মিস করি। আসলে ফারাহ তানজিনার মন মানসিকতার সৌন্দর্য অনেক। তিনি বাঙালী সমাজের একটি জ্বলজ্বলে দৃষ্টান্ত। অনুরূপ ভাবে তাঁর শাশুড়িকেও আরেকটি অনন্য দৃষ্টান্ত বলা যায়। একটু সদিচ্ছা থাকলেই বউ-শাশুড়ির সম্পর্ক শাশ্বত সুন্দর ও প্রাণবন্ত করে তোলা সম্ভব। নৈতিক অবক্ষয়ে আক্রান্ত বউদের ফারাহ তানজিনাকে ফলো করা উচিত। কারণ তানজিনা ভিন্ন গ্রহের বাসিন্দা নন। তিনি আমাদেরই বাঙালী সমাজের একজন প্রতিনিধি।

সাংবাদিক-কলামিস্ট।

 

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..