শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৬:১০ অপরাহ্ন
বড়লেখা প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের জুড়ীর নয়াগ্রামের সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে নানা প্রলোভণে অভিনব বাহানায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে জোহরা দম্পতি। টাকা খুয়ানো ভুক্তভোগীদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম হতাশা।
ভোক্তভোগীদের সূত্রে জানা গেছে, জোহরা বেগম ও মোহাম্মদ আলী দম্পতির এক ছেলে প্রবাসে ও আরেক ছেলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকুরি করছে। এক ছেলেকে প্রবাসে পাঠাতে ও অন্য ছেলের সেনাবাহিনীতে চাকুরি নিতে প্রচুর টাকার প্রয়োজন জানিয়ে গ্রামের সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে নানা প্রলোভণে টাকা হাতিয়ে নিতে থাকে। কারো কাছ থেকে ধার, আবার কারো কাছ থেকে কিস্তি পরিশোধ করার শর্তে বিভিন্ন এনজিও থেকে টাকা উত্তোলন করিয়ে নিয়ে নেন। কিন্তু ধার ও উত্তোলন করা টাকা পরিশোধ না করেই একপর্যায়ে ঐ দম্পতি এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরে জানান যায়, এভাবে তারা বিভিন্ন জনের কাছ থেকে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
গ্রামের ভুক্তভোগী তৈয়ব আলী (৫৫) বলেন, আমার কাছ থেকে নগদ ৪০ হাজার ও এনজিও থেকে কিস্তি তুলে নিয়েছে আরো ১ লাখ টাকা। টাকা পরিশোধের কথা বললে নানা টালবাহানা করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা পালিয়ে গেছে। এখন চোঁখে অন্ধকার দেখছেন।
আরেক ভুক্তভোগী মিজানুর রহমান (৭০) বলেন, দুই ব্যাংক থেকে ৮০ হাজার টাকা করে মোট ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা উত্তোলন করে দেই। ব্যাংকের কর্মকর্তারা বর্তমানে কিস্তি পরিশোধ করার জন্য আমার বাড়ি ছাড়ছেন না। এ কিস্তি পরিশোধ করতে না পেরে আমি এখন বাড়ি ছাড়া।
প্রতারণার শিকার অঞ্জনা রানী দাস (৩৫) জানান, কিস্তি চালাবে বলে আমাকে দিয়ে এনজিও থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নেওয়ায়। বর্তমানে তারা টাকা পরিশোধ না করে পালিয়ে যাওয়ায় আমার সংসার টিকানো দায় হয়ে পড়েছে। রেজিয়া বেগম (৩০) জানান, তার ছেলে সেনাবাহিনীতে চাকরীর জন্য আমার কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা ধার নিয়ে আর ফেরত দেয়নি। প্রতারণার শিকার আক্কাস আলী (৫০) জানান, তিনিসহ গ্রামের শতাধিক মানুষের কাছ থেকে ওই দম্পতি ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা হাতিয়ে উধাও হয়ে গেছে। এ নিয়ে গ্রামের সকলে মিলে তাদেরকে পাকড়াও করলে ছেলে সেনাবাহিনী থেকে বেতন ভাতা পেয়ে সবার পাওনা পরিশোধ করবেন বলে সময় নেয়। কিন্তু টাকা পরিশোধ না করেই রাতের আধারে তারা পালিয়ে গেছে।
সরেজমিনে, রহস্য নারী জোহরা ও মোহাম্মদ আলী দম্পতির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের ঘরে তালা ঝুলছে। সাংবাদিকদের উপস্থিতির খবর ছড়িয়ে পড়লে আশেপাশের দুই শতাধিক নারী পুরুষ সেখানে জড়ো হয়ে তাদের সাথে প্রতারণার কাহিনী সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন। এক পর্যায়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তিনিও তাদের কথাগুলো শুনেন। ভুক্তভোগীরা এই বিষয়টির আশু সমাধানে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তিনি আগেই অবগত হয়েছেন। জোহরা অত্যন্ত চতুর প্রকৃতির মহিলা। সে গ্রামের সহজ সরল মানুষকে নানা প্রলোভণ দেখিয়ে প্রতারনার ফাঁদে ফেলে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে পালিয়ে গেছে। এখন আর তাদের সাথে যোগাযোগও করা যাচ্ছে না। যোগাযোগ করা গেলে হয়ত বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করা যেত।
প্রতারণার ব্যাপারে জানতে এ দম্পতিকে ফোন দিলে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। যার ফলে এব্যাপারে তাদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জুড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সঞ্জয় চক্রবর্তী জানান, এ বিষয়টি সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। তবে কেউ থানায় অভিযোগ দিলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।