শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৬ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক: বাংলাদেশে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার জন্য সরকার অনুমতি না দেয়ায় তাঁর পরিবার এবং দল বলেছে, আইনগত এবং অন্য কী উপায় আছে, সবই তারা খতিয়ে দেখবে।বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবিসিকে বলেছেন, এ মুহুর্তে বিদেশে নেয়ার পথ বন্ধ হওয়ায় মিসেস জিয়াকে দেশের হাসপাতালেই সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা তারা করবেন।ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার ব্যাপারে তাঁর ছোট ভাই শামীম এসকান্দরের আবেদন গত রোববার নাকচ করে দিয়েছে সরকার।সরকার অনুমতি না দেয়ায় বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে পারছেন না। এমুহুর্তে তাঁর ঢাকায় চিকিৎসা নেয়া ছাড়া বিকল্প নেই।তবে বিদেশে নেয়ার প্রশ্নে বিএনপি কী করতে পারে, তাদের সামনে কোন পথ খোলা আছে কীনা- এসব প্রশ্নে দলটির নেতারা আলোচনা করার কথা বলছেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এখন ঢাকায় সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করার চেষ্টা তারা করবেন। একইসাথে বিদেশে নেয়ার জন্য আইনগত বা অন্য কোন উপায় আছে কীনা-তা খতিয়ে দেখে দলের নীতি নির্ধারণী ফোরাম সিদ্ধান্ত নেবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।”আমরাতো জোর করে তাঁকে বিদেশে নিয়ে যেতে পারবো না। এখানে সরকার না করে দিয়েছে। সুতরাং আমরা চেষ্টা করবো, এখানেই তাঁকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়ার জন্য। একই সময় অন্য কোনো অপশন আছে কীনা-আইনগত বা অন্য কোনো উপায়, সেটাও আমরা দেখবো।”অন্যান্য অপশনগুলো আমরা ভেবে দেখবো এবং সেগুলো আমরা আমাদের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো” বলেন মি: আলমগীর।
বিএনপির অন্য একাধিক সিনিয়র নেতা জানিয়েছেন, বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি মানবিক এবং ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হতে পারে-সরকারের পক্ষ থেকে এমন ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল। এরপর খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এসকান্দর আবেদনটি করেছিলেন।
এখন আবেদন নাকচ হওয়ায় ভিন্ন কোন উপায় আছে কীনা- তা খতিয়ে দেখার কথা বলছে বিএনপি।আইনজীবীদের অনেকে বলেছেন, অনুমতির জন্য বিএনপি আদালতে যেতে পারে এবং সাজার ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চেয়ে আবেদন করার সুযোগ রয়েছে।তবে বিএনপির একজন আইনজীবী নেতা বলেছেন, দুর্নীতির দু’টি মামলায় ১৭ বছরের সাজা সরকার তার নির্বাহী ক্ষমতায় স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছিল, ফলে আইনগত অন্য প্রক্রিয়ায় কতটা লাভ হবে-তা নিয়ে তাদের সন্দেহ রয়েছে।এই আইনজীবী নেতা আরও বলেছেন, যে দু’টি মামলায় সাজা হয়েছে, সেই মামলাগুলোর অভিযোগই তারা মানতে রাজি নন। ফলে ক্ষমা চাওয়ার পথে তারা হাঁটতে পারেন না। এরপরও সব বিষয় নিয়ে তারা আলোচনা করবেন।
ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়া যায় না বলে সরকার যে যুক্তি দিচ্ছে তা বিএনপি নেতারা মানতে রাজি নন।মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারের এখতিয়ারে থাকার পরও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেয়া হলো না বলে তারা মনে করছেন।”দেশের সব মানুষই আশা করেছিল যে, বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের এই অবনতির কথা ভেবে সরকার মানবিক কারণে হলেও তাঁকে বাইরে যাওয়ার অনুমতিটা দেবে। দুঃখজনক হলো, এরা (সরকার) একটা ধারণা দিয়েছিল যে, আমরা মানবিক কারণে এটা দেখবো। কিন্তু শেষমুহুর্তে তারা আইনের কথা বলে এটা নাকচ করে দিয়েছে,” বলেন মি: আলমগীর।
তিনি আরও বলেছেন, “এটা অত্যন্ত নোংরা একটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু আইনে পরিস্কার বলা আছে যে, এটা সরকার দিতে পারে, যেকোনভাবে দিতে পারে।তবে সরকার আইনী বাধার একই যুক্তি তুলে ধরছে।আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, যেহেতু বাসভবনে থেকে চিকিৎসা নেয়া এবং বিদেশে না যাওয়ার শর্তে সাজা স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল- সেই বিধিতে শর্ত শিথিলের সুযোগ নেই।”ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়ার আদেশটাকে গ্রহণ করেই খালেদা জিয়া মুক্ত হয়েছিলেন। এখন এই যে দরখাস্তটা, এটা নিস্পত্তি হয়ে গেছে। সেটা আবার পুনরায় খুলে শর্ত শিথিল করা শর্ত পরিবর্তন করার সুযোগ আইনে দেয়া নেই,” বলেন মি: হক।
তিনি আরও জানান, “৪০১ ধারার ছয়টা উপধারা আছে। এর কোনো একটা উপধারায় বলা নাই যে, এই শর্ত রিভাইস করা যাবে বা পরিবর্তন করা যাবে। এখন আইনের ব্যপ্তয় ঘটিয়ে কোনো দরখাস্ত এন্টারটেইন করা সম্ভব না।গত শনিবার পরীক্ষায় করোনাভাইরাসের নেগেটিভ ফলাফল আসার পরও সংক্রমণ পরবর্তী জটিলতার কারণে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে সিসিইউতেই রাখা হয়েছে।তাঁর একজন চিকিৎসক বলেছেন, খালেদা জিয়ার দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস বা আর্থরাইটস সহ বিভিন্ন পুরোনো রোগের কারণে জটিলতা বেশি হয়েছে।খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম বলেছেন, এ মুহুর্তে বিদেশে নেয়ার উপায় না থাকায় পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে ঢাকায় হাসপাতালে রেখেই চিকিৎসা দেয়া হবে।”এখন হাসপাতালে থেকেই চিকিৎসা দিতে হবে। হাসপাতালেই থাকবে, যতদিন ভাল না হয় ততদিন। এছাড়াতো আর উপায় নাই। কারণে বাসায় নিয়েতো এই চিকিৎসা দেয়া যাবে না।তিনি আরও বলেছেন, বিদেশে নেয়ার অনুমতির জন্য পরিবারের পক্ষে আর কিছু করার আছে কীনা-তা তারা আলোচনা করে দেখবেন।খালেদা জিয়ার করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার দুই সপ্তাহ পর গত ২৭শে এপ্রিল তাঁকে ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।কিন্তু গত ৩রা মে তিনি শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে তাঁকে নেয়া হয় করোনারি কেয়ার ইউনিট বা সিসিইউতে। এখন সিসিইউতে রেখেই সংক্রমণ পরবর্তী জটিলতা নিয়ে চিকিৎসা দেয়ার কথা বলছেন তাঁর চিকিৎসকরা।