শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৬ পূর্বাহ্ন
চৌধুরী ভাস্কর হোম : মৌলভীবাজার থেকে প্রাথমিক অধিদপ্তর কর্তৃক বদলীর প্রজ্ঞাপনে একাংশের শিক্ষকদের মানবাধিকার হরণের অভিযোগ উঠেছে মন্ত্রনালয়ের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন পর বদলী চালু হওয়ার পর নীতিমালার ফাঁকফোকরে অনেকেই বদলীর জন্য আবেদন করতে পারবেন না। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই মানষিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন। প্রাথমিক শিক্ষকবৃন্দের বদলী কার্যক্রম অনলাইন করার জন্য প্রায় তিনবছর বদলী বন্ধ ছিলো। এ অবস্থায় দীর্ঘ কার্যক্রম সম্পাদন করার পর ১৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার থেকে অনলাইনে বদলী কার্যক্রম চালু করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়। এতে শিক্ষকদের মধ্যে অনেকটা স্বস্তি আসলেও বদলী নীতিমালায় যে স্কুলে ৪ জন বা তার কম শিক্ষক রয়েছেন সে সকল বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বদলী হতে পারবেন না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করা অনেক শিক্ষক বিপাকে পড়েছেন। এ ব্যপারে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক জহর তরফদার জানান, তিন বছরের অধিক সময় ধরে কর্মরত শিক্ষদের তাদের পছন্দমত স্থানে বদলী হওয়ার অধিকার রয়েছে। অনলাইনে বদলী হওয়ার প্রজ্ঞাপন এমনভাবে করা হয়েছে এতে যে সকল বিদ্যালয়ে ৪ জন শিক্ষক রয়েছেন তারা আবেদন করতে পারবেন না। তিনি জানান, এক্ষেত্রে প্রতিস্থাপন সাপেক্ষে বদলীর হওয়ার বিধান সংযুক্ত করলেই এই সংকট দূর হয়ে যাবে। তিনি সকল শিক্ষকদের সমতা দানে এটি পুন: বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ করেন। এ ব্যপারে শ্রীমঙ্গল হরিণছড়া চা বাগান সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আপিয়া আক্তার লাকী জানান, তিনি ১০ বছর ধরে ওই বিদ্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন। তার বিদ্যালয়ে শুরু থেকেই ৪জন শিক্ষক রয়েছেন। এবার বদলীকরণ চালু হলে তার আসার কথা ছিলো পছন্দের স্কুলে। চলমান বদলীর নির্দেশনারই অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। কিন্তু বদলী নীতিমালায় ৫জন শিক্ষক থাকায় তিনি আবেদন করতে পারবেনা। শ্রীমঙ্গল নিরালা পুঞ্জির শিক্ষিকা রুপালী আক্তার ও কনিকা দত্ত জানান, আমরা অনেক দিন ধরে বদলীর অপেক্ষা করছি। এখন এমন প্রজ্ঞাপন দেখে হতবাক। তারা বলেন প্রতিস্থাপন সাপেক্ষে তাদের বদলীর সুযোগ করে দেয়ার। এ বদলী হতে পারবেন না এমন সংবাদ শুনে শ্রীমঙ্গল চন্দ্রনাথ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নেতাদের কাছে এসে কান্নায় ভেঙ্গেপড়েন সহকারী শিক্ষিকা পাপিয়া আচার্য্য। এমন বক্তব্য সহকারী শিক্ষক কাকলী রানী দেব, পীযুষ পাল, কনিকা দত্তসহ মৌলভীবাজার জেলার আরো অন্তত ৩০/৪০জন শিক্ষকের। শিক্ষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা কোমলমতি শিশুদের মানবিক বিকাশের কাজ করছি। আজ আমরাই অবহেলিত। আামদের নায্য অধিকার থেকে আমরা কেন বঞ্চিত হবে।” এ সময় বিষয়টি তারা বিবেচনা করার জন্য প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের প্রতি অনুরোধ করেন। এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল সহকারী প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রনবেশ চৌধুরী অন্তু জানান, এ প্রজ্ঞাপনে কিছু শিক্ষকদের অধিকার খর্ব করা হয়েছে। তিনি জানান, এ বিষয়ে প্রতিস্থাপন সাপেক্ষে বলদলী চালু রাখলেই এ সমস্যার সমাধান অনেকাংশে কমে যাবে। সহকারী প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সিলেট বিভাগীয় নেতা অজিৎ পাল জানান, ৫জন শিক্ষক নেই যে স্কুলে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে এটা বিমাতাসুলভ আছরণ। তিনি বলেন ১৫/২০ বছর ধরে অনেকে অপেক্ষা করছেন তাদের বাড়ির পাশের বিদ্যালয়ে আসবেন। সেই স্কুল গুলোতে শূন্যপদও হয়েছে। এখন না আসতে পারলে আর বাড়ির পাশের স্কুলে অনেকেরই আসা হবেনা। তিনি বলেন, অনলাইন বদলী নীতিমালায় প্রতিস্থাপন এবং নিয়োগ সাপেক্ষে বদলী হওয়ার সুযোগ রাখলেই হাজার হাজার শিক্ষকের বদলী সুবিধা নিশিচত হতো। এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলার শ্রেষ্ট প্রধান শিক্ষক ও বাংলাদেশ প্রাথমিক
শিক্ষক কল্যাণ সমিতির মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি মো: আব্দুস শহীদ বলেন, সমতার ভিত্তিতে বদলী হলে কারো মনে কষ্ট থাকবে না। যে সমস্যা দেখা দিয়েছে তাতে প্রতিস্থাপনের সুযোগ দিলেই সমাধান হয়ে যাবে। তিনি বলেন, এখন তাদের বদলী কাগজে কলমে হবে। নতুন শিক্ষক নিয়োগ হওয়ার পর তারা ওই স্কুলে যাবেন।
এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো: জাকির হোসেন এপি সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি নিয়ে এ সংক্রান্ত যে কমিটি রয়েছে তাদের সাথে কথা বলবেন।