শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০২ পূর্বাহ্ন
এস এ চৌধুরী জয়, কমলগঞ্জ : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ভানুগাছ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার (এসএম) কবির আহমদ’র টিকেট বাণিজ্যের দূর্নীতিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন অসহায় ট্রেন যাত্রীরা। চাইলে ই নাই কিন্তু অতিরিক্ত টাকা দিলে পাওয়া যায় টিকেট! সেই সাথে যাত্রীদের সাথে অশোভন আচরন। নারী যাত্রীও কবিরের অশোভন আচরণ থেকে রেহাই পাননি। শুধু তাই নয় খোদ রেলওয়ের স্টাফ পরিচয় দিয়েও বাড়তি টাকার হাত থেকে ছাড় পাননি ভূক্তভোগী ট্রেন যাত্রী। সব মিলিয়ে নাকাল ভূক্তভোগীরা তথা সাধারণ ট্রেন যাত্রীরা কবিরের টিকেট বাণিজ্যের দূর্নীতি জিম্মি দশা থেকে অনতিবিলম্বে মুক্তি চান তারা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শমশেরনগর রেল স্টেশনের মাস্টার শাহজাহান খাঁন ২০১৩ সনের ২২ এপ্রিল আকষ্মিক মৃত্যুবরণ করিলে আব্দুল মালেক মাস্টার ৪/৫ মাস দায়িত্ব পালন করেন। পরে শ্রীমঙ্গল থেকে মো: আব্দুল আজিজ স্থলাভিষক্ত হন। আব্দুল আজিজের তিন বছর মেয়াদকালীন সময়ের মধ্যে সিলেটের মাইজগাও স্টেশন হতে বদলি হয়ে এএসএম (সহকারি স্টেশন মাস্টার) হিসাবে ২০১২ সালে শমশেরনগর স্টেশনে যোগদান করেন কবির আহমদ। পরবর্তী সময়ে গ্রেড-৪ থেকে গ্রেড-৩ মাস্টার হিসাবে তিনি পদোন্নতি পান। এদিকে আজিজ মাস্টারের তিন বছর পূর্তির পর শমশেরনগরের এস এম হিসাবে কবির আহমদকে দপ্তর আদেশ প্রদান করেন তৎকালীন ডিটিও এবং বর্তমানে পূর্বাঞ্চলীয় জোনের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাজমুল হাসান। ওই আদেশ মোতাবেক ৭ আগস্ট ২০১৬ খ্রি: থেকে শমশেরনগর রেলওয়ে স্টেশনের দায়িত্ব পালন শুরু করেন কবির আহমদ। কিন্ত যোগদানের পর থেকেই তিনি (কবির) টিকেট বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। এনিয়ে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ট্রেন যাত্রীদের সাথে তার নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এমনকি মহিলা যাত্রীরা কবির মাস্টারকে অপমানিত করেছেন। এছাড়া কবির আহমদ মাস্টার উপস্থিত (শমশেরনগর স্টেশন) থেকে জনৈক গেইটম্যান দিয়ে কম্পিউটার থেকে একের পর এক টিকেট কাটানোর সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। পরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কবিরকে সিলেটের মোগলাবাজার স্টেশনে বদলি আদেশ দেন। উক্ত আদেশ ঠেকানোর জন্য অনেক চেস্টা করে শেষ পর্যন্ত মোগলাবাজার ই যেতে হয়েছে কবিরকে। সেখানে প্রায় এক বছর থাকার পর পুনরায় শমশেরনগর স্টেশনে আসার চেস্টা তদবির করে নিরাশ হয়ে ভানুগাছ রেল স্টেশনে তিনি বদলি হয়ে আসেন। এখানে এসেও কবিরের কোন পরিবর্তন হয়নি।তিনি টাকা ছাড়া টিকেট দিতে বড্ড নারাজ। কয়েক দিন আগে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এম মাহমুদুর রহমান আলতার কাছে ঢাকাগামী আন্তনগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের শোভন চেয়ারের তিনটি টিকেট বাবদ ১১০০ টাকা দাবি করেন কবির মাস্টার। পরে অনেক কষাকষি করে এক হাজার টাকায় তা দফারফা হয়। তাছাড়া গত আগস্টে কম্পিউটার থেকে একের পর এক টিকেট কেটে তার (কবির) পকেটে ভরার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয় এবং অনেকেই কবির আহমদ মাস্টারের বিরুদ্ধে তাদের মতামত প্রকাশ করেন। ৩ আগস্ট ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিওতে উল্লেখযোগ্য কিছু কমেন্ট পাঠকদের জন্য তোলে ধরা হল- রাইট মামা (পোস্ট দাতাকে) গত পরশু আমি আম্মু সিলেট যাইবার লাগি টিকেট কাউন্টারে যাওয়ার পর আমি একজন মেয়ের সাথে যে ব্যবহার করেছে সে (স্টেশন মাস্টার কবির) ইচ্ছে করেছিলো পায়ের জুতা খুলে চড় দেই। অবশ্যই সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি। আরও একজন একই পোস্টের কমেন্টে বলেন, আমি রেলওয়েতে চাকরি করেও সে (কবির) আমার কাছ থেকে প্রতি টিকেট কমপক্ষে ৫০ টাকা করে বেশি নিছে। সালা ফকিরের বাচ্ছা বলে কবিরকে কমেন্টকারি ইঙ্গিত করেন।
স্থানীয় সাংবাদিক নুরুল মোহাইমিন মিল্টন তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, ভানুগাছ রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে সোজা বোকা সাজলাম। সিলেট যাবো টিকেট নেই। জানতে পারলাম এখানে স্টেশন মাস্টার কবির আহমদের মাধ্যমে টিকেট কালোবাজারি সিন্ডিকেট চক্র আছে। তাদের কাছে টিকেট পাওয়া যায়। লাল শার্ট পরিহিত মুন্সি হিসাবে পরিচিত লোকটির সাথে কথা বলার পর বেচারা চলে গেল স্টেশন মাষ্টারের রুমে। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে আগেই টিকেটের জন্য ১৫০ টাকা নিয়ে গেল। বললো আম গাছের ওখানে থাকতে। ট্রেন আসার সাথে সাথেই টিকিট দেয়া হবে। এভাবে ওই দিন ৬ জনের কাছ থেকে বেচারা টাকা নিয়ে চোরাই পথে টিকেটের ব্যবস্থা করে দেয়। অবশ্য ভাগ বড়টা স্টেশন মাস্টারেরও। ১ম ভিডিওতে স্টেশন মাস্টারের রুম থেকে সিগারেট টেনে বেচারা বেরিয়ে আসলো তারপর টাকা নিলো। ২য় ভিডিওতে আমাকে পরামর্শ কোথায় দাঁড়াতে হবে। ৩য় ভিডিওতে ট্রেনে উঠার পর টিকেট বুঝিয়ে লোকটা নেমে গেল। আসলে সেবা অনেক!
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে ভানুগাছ রেল স্টেশনের মাস্টার কবিরের বিরুেেদ্ধ অনেকেই চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং সিলেট-আখাউড়া সেকশন থেকে তাকে অন্যত্র বদলি আদেশের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান তারা।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে ভানুগাছ রেল স্টেশনের মাস্টার কবির আহমদ’র মোবাইল ফোনে চেস্টা করে একাধিকবার রিং বাজলেও তিনি ফোন কল রিসিভ করেন নাই।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় জোনের ডিসিও (ডিভিশনাল কমার্শিয়াল অফিসার) শাহ আলম’র মোবাইল ফোনে অনেকবার চেস্টা করে রিং বাজলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সিসিএম (চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার) নাজমুল হাসান’র মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেস্টা করে রিং বাজলেও তাকে পাওয়া যায়নি।