বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০৭ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রে জিনিসপত্রের দাম বেশ দ্রুত গতিতে বাড়ছে। ১৯৭০-র দশকের পর থেকে থেকে সেখানে দ্রব্যমূল্য কখনো এতটা বাড়েনি। মুদিদোকানে যেসব জিনিসপত্র বিক্রি হয়, সেগুলোর দাম গত এক এক বছরে ১৩.৫ শতাংশ বেড়েছে।
আসছে নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ অবস্থায় মানুষ এখন যে বেতন পাচ্ছে, সেটি দিয়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। সুতরাং জিনিসপত্রের দাম কবে কমে আসবে? আসছে নির্বাচনে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কি কোন প্রভাব ফেলবে?
দ্রব্যমূল্য এখন এত বেশি কেন?
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র এক কার্টন ডিমের দাম ৩ ডলারের বেশি (বাংলাদেশি মুদ্রায় যেটি ৩১৩ টাকার মতো)। ২০২১ সালের শুরুর জো বাইডেন যখন প্রেসিডেন্ট হন, তখন এর দাম ছিল এখনকার চেয়ে অর্ধেক। গরু ও মুরগির মাংসের দাম প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া একগুচ্ছ কলার দাম ১০ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
‘এটা খুব কঠিন সময়,’ বলেন ৭৮ বছর বয়সী এড্ডা চার্বন।
জিনিসপত্রের দাম বাড়তে শুরু করে করোনাভাইরাস মহামারির সময়, যখন মানুষ রেস্টুরেন্টে খাওয়া ব্যাপকভাবে কমে গিয়েছিল এবং মুদিদোকানের জিনিসপত্রের চাহিদা বাড়ে। এ ছাড়া করোনাভাইরাস মহামারির কারণে উৎপাদন ব্যবস্থাও ব্যহত হয়।
উৎপাদনের জন্য কোম্পানিগুলোর যে অতিরিক্ত খরচ হয়, সেটি তারা ভোক্তাদের ওপর ঠেলে দিয়েছে। যেমন তাদের মজুরি বাড়াতে হয়েছিল এবং জ্বালানির দাম আগের তুলনায় বেড়েছে। এরপর চলতি বছরে যখন ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর সাথে সাথে সার, গম এবং অন্যান্য শস্যের সরবরাহ বিঘ্নত হয়। খারাপ আবহাওয়ার কারণে শস্যের উৎপাদন ব্যহত হয়েছে। অন্যদিকে বার্ডফ্লু ছড়িয়ে পড়ার জন্য ডিমের সরবরাহ কমে যায়।
দ্রব্যমূল্য কখন কমে আসবে?
রেস্টুরেন্টে খাবার দাম শুধু বেড়েই চলেছে। যদিও মুদি দোকানের জিনিসপত্রের দাম মাঝেমধ্যে কমেছে। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম কমে আসার জন্য চাহিদার সাথে সংগতি রেখে জোগানও বাড়তে হবে। সেক্ষেত্রে কিছু ভালো খবর আছে। গত কয়েকমাসে জিনিসপত্রের দাম বিশ্বজুড়ে কমেছে। জ্বালানি তেলের দামও কমেছে। এড্ডার মতো অনেকেই কমদামী খাদ্য পণ্যের দিকে ঝুঁকেছেন। খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো যদিও দাম বাড়িয়ে দিয়ে ভালোই মুনাফা করছে, কিন্তু জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়ানো তাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে খুব সহসা জিনিসপত্রের দাম কমবে না। কোকাকোলা ও বিভিন্ন কোম্পানি বলছে, চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত জিনিসপত্রের দাম বাড়তে থাকবে।
জো বাইডেন কী করছেন?
মার্কিনিরা ধারাবাহিকভাবে বলছে, অর্থনীতি ও মূল্যস্ফীতি তাদের জন্য সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ওপর অসন্তুষ্ট ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে তার প্রতিপক্ষ রিপাবলিকানরা আরও বেশি অসন্তুষ্ট। ‘তিনি ভালো কাজ করেননি,’ বলছিলেন টেক্সাসে বসবাসরত ৩৬ বছর বয়সী রোমিশা লোয়ারি। তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক ভোটার।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে খাদ্য, গ্যাস এবং অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়ে যাবার কারণে তার পরিবার ফুড প্যান্ট্রিতে গিয়ে সাহায্য চাইতে হয়েছে। ‘গত দুই বছরে আমার মনে হচ্ছে, ট্রাম্পের সময় আমরা যতটা গরিব ছিলাম, এখন তার চেয়ে অনেক বেশি গরিব হয়ে গেছি,’ বলেন রোমিশা লোয়ারি। দাম কমানোর জন্য বাইডেন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। গ্যাসের দাম কমিয়ে আনার জন্য আমেরিকার তেলের রিজার্ভ থেকে বিপুল পরিমাণ তেল ছাড় দিয়েছেন তিনি। এটা অভূতপূর্ব।
খাদ্যপণ্যের মূল্য কমিয়ে আনার জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেন মাংসের বাজারে প্রতিযোগিতার বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি কৃষকরা যাতে সার কিনতে পারে, সেজন্য তাদের সহায়তা বাড়ানো হয়েছে। ডেমোক্রেটরা তথাকথিত ‘ইনফ্লেশন রিডাকশন অ্যাক্ট ২০২২’ পাস করেছে। দ্রব্যমূল্য কমানোর জন্য আইন প্রণয়নের মতো পদক্ষেপ হয়তো রাজনৈতিকভাবে ভালো হতে পারে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন আইন প্রণয়ন করে মূল্যস্ফীতির কোনো প্রভাব পড়বে না।
অন্যদিকে রিপাবলিকানরা মূল্যস্ফীতির বিষয়টিকে তাদের বিজয়ের জন্য একটি ইস্যু হিসেবে দেখছেন। নেব্রাস্কার রিপাবলিকান প্রতিনিধি একটি বিজ্ঞাপন বানিয়েছেন। সেখানে দেখানো হচ্ছে যে তিনি তার স্ত্রীকে ‘বাইডেন বার্গার’ দিচ্ছেন। এটি ছোট আকারের, কিন্তু উচ্চ মূল্যের একটি বার্গার। দ্রব্যমূল্য কোথায় গিয়ে ঠেকেছে – সেটি বোঝানোর জন্য তিনি এটির নাম দিয়েছেন ‘বাইডেন বার্গার’।
মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য মূল্যস্ফীতি কত বড় ইস্যু?
আগামী নভেম্বরে মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে কংগ্রেস কাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং অনেক অঙ্গরাজ্যের নেতৃত্ব ঠিক হবে। তবে এই নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ কম থাকে।রাজনৈতিক দলগুলো চেষ্টা করে তাদের মূল সমর্থকদের ভোটদানে উদ্বুদ্ধ করতে।
সাধারণত প্রেসিডেন্টের দল মধ্যবর্তী নির্বাচনে আসন হারায়। তবে ডেমোক্রেটরা মনে করছে, তারা যতটা আশংকা করেছিল নির্বাচনের ফলাফল ততটা খারাপ হবে না। যদিও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তাদের বিপক্ষে। রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনে রিপাবলিকানরা জো বাইডেন এবং ডেমোক্রেটদের ওপর দায় দিচ্ছেন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার প্রতিযোগীও কম।
ডেমোক্রেটদের শক্ত ঘাঁটিগুলোয় গর্ভপাত বিতর্কে মূল্যস্ফীতির বিষয়টি কিছুটা চাপা পড়েছে। গর্ভপাত করার যে সাংবিধানিক অধিকার, সেটি সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করে দেবার পর আলোচনায় এসেছে।এ ছাড়া গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়েও উদ্বেগ আছে। রাজনীতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পৃক্ত হবার পর থেকে এটি তৈরি হয়েছে।
রিপাবলিকানদের জন্য অর্থনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষ করে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়া। এ ছাড়া রিপাবলিকান প্রার্থীরা ইমিগ্রেশনের বিষয়টিকেও সামনে আনছে।‘শুধু গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষয়টিকে সামনে এনে নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ,’ জনমত জরিপ বিশ্লেষক লি মিরিঙ্গফ।‘মানুষের ধারণা পরিবর্তন হয়ে যায়। সেজন্য আপনি শুধু একটি ইস্যুর ওপর ভিত্তি করে প্রচারণা চালাতে পারে না,’ বলেন মিরিঙ্গফ।
জনমত জরিপে দেখা গেছে, অর্থনৈতিক বিষয়গুলো নির্ভর করে রাজনৈতিক পক্ষপাতের উপর।
মিরিঙ্গফ বলেন, অনেক ভোটার এরই মধ্যে তাদের মনস্থির করে ফেলেছে। তিনি মনে করেন, ভোটারদের মনোভাব খুব একটা পরিবর্তন দেখা যাবে না।
খবর বিবিসি