1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৯:২০ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

জীবন হোক সুন্দর ব্যবহারে প্রস্ফুটিত।

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২২
  • ২৯২ বার পঠিত

আফতাব চৌধুরী
জীবন চলার পথে লক্ষ্য করছি আমাদের দেশে বর্তমান মানুষের মধ্যে ক্রোধ বা রাগের পরিমাণটা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমাজ জীবনের প্রতিটি স্তরে পারিবারিক বা সামাজিক ক্ষেত্রে বলুন অথবা রাজনীতির ক্ষেত্রে বলুন অনেকেই আজ তাদের মেজাজকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন বলে মনে হচ্ছে না। দেশের সর্বত্র নৈতিক অবক্ষয়, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, নিরাপত্তার অভাব, অহংকার, হিংসা, লোভ, সততা, অন্যায়, অবিচার ইত্যাদি কারণেও রাগ বা ক্রোধের পরিমাণ অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। মনিষী ইমাম মালেক বলেছেন, মানুষের সর্বাপেক্ষা ভারী বোঝা হচ্ছে ক্রোধ। ইমারসনের ভাষায়, ‘যখন আমরা ঝগড়া করি তখন ক্রোধে অন্ধ হয়ে যাই। নির্বাচনে জয়যুক্ত হবার পর অথবা যে কোন উপায়ে যারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত হন তাদের মধ্যে কেউ ক্রোধের বশবর্তী হয়ে ঔদ্ধত্য প্রকাশেও বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেন না। টমাস ক্যাম্বেল বলেছেন, ঔদ্ধতা মানুষের জীবনে দুঃখ আনে। পারিবারিক বা সংঘটিত মারাত্মক ঘটনাগুলো পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও অনেক ঘটনাই অপ্রকাশিত থেকে যায়। মনীষী হেবারটন লুলহাস-এর ভাষায় ‘স্বামী রাগান্বিত হওয়ার সাথে স্ত্রীও যদি সমপরিমাণ রেগে যায় তবে সে গৃহে শয়তান প্রবেশ করে মধ্যখানে অবস্থান নিয়ে বগলদাবা করতে থাকে।’ সামাজিক জীবনে অর্থাৎ পারিবারিক ক্ষেত্রে কোন কারণে ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই কিন্ত যখন রাষ্ট্রীয় জীবনে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এ ক্রোধ পরিলক্ষিত হয় তখন আমরা অজানা আশংকায় আতঙ্কিত হই। রাজনীতিবিদদের মতবিরোধ, কাদা ছোড়াছুড়ি, একে অপরের বিরুদ্ধে অশালীন, অযৌক্তিক, অমার্জনীয় মন্তব্য পত্রিকার পাতায় যখন লক্ষ্য করি তখন মনে হয় এ বুঝি দুর্যোগ পোহাবার ঘন্টাধ্বনি বেজে উঠলো। কারো ক্রোধের মধ্যে বংশ মর্যাদা, পারিবারিক ঐতিহ্য, মেধা বা প্রতিভার অথবা ক্ষমতা লাভের বা ধন-সম্পদের অহংকার বিদ্যমান থাকে। আবার কারো ক্রোধের মধ্যে অপরের সফলতাকে সহ্য করতে না পারার, অপরের প্রশংসনীয় কাজকে স্বীকার করে না নেয়ার, নিজেকে সর্বেসর্বা মনে করতে গিয়ে অপরকে তুচ্ছ জ্ঞান করা মনোভাব প্রকাশ পায়।
নির্বাচনের সময় এ ক্রোধের মাত্রা অধিক পরিমাণে পরিলক্ষিত হয় তবে তা প্রতিদ্ব›দ্বীর বা তার কর্মীদের মধ্যে কিন্তু ভোটার বা সাধারণ জনগনের সাথে প্রার্থীর বিনয়ের অভিনব ভাব দেখে অবাক হতে হয়। অনেক প্রার্থীকে দেখে মনে হয় জীবনে বোধ হয় এ প্রার্থী কোনদিন কারো উপর রাগ করেনি।অনেক প্রার্থী জয়লাভের পর পরাজিত প্রার্থী বা তার কর্মীদের চাকুরী, ব্যবসা বা সামাজিকভাবে হয়রানি করাটাকে নির্বাচনে বিরোধীতা করার কারণে শাস্তি হিসাবে বিবেচনা করে থাকেন।একটু চিন্তা করলে দেখা যাবে এ শাস্তিটাই রাগ বা ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ।
এটা অতি বাস্তব সত্য যে, ক্রোধ হচ্ছে মানুষের চরম শত্রæ। মানুষের মনুষ্যত্ব বিনাশ করে এ ক্রোধ। পৃথিবীকে নরকে পরিণত করছে যে লোমহর্ষক ঘটনাগুলো তার মূলেও রয়েছে ক্রোধ। মানুষকে পশুভাবাপন্ন করে তোলে এ ক্রোধ। সুন্দরকে মুহুর্তের মধ্যে কুৎসিত করতে অন্য কোন রিপু ক্রোধের ন্যায় কৃতকার্য হয় না। বিখ্যাত মনীষীদের মতে যে কাউকে আছড়ে মেরে ফেলতে পারে সে কখনো বলবান বা ক্ষমতাশালী নয় কিন্তু যে ব্যক্তি নিজের ক্রোধ দমন করতে পারে সেই প্রকৃত বলবান। অন্য একটি বাণীতে আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, ক্রোধ প্রদর্শন করার ক্ষমতা থাকা সত্তে¡ও যে কেউ তা দমন করে রাখে, আল্লাহতায়ালা এ জন্য তাকে পুরস্কৃত করবেন। আমরা হুজুরে পাক (স.) এর আরেকটি হাদীস লক্ষ্য করলে দেখি তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি ক্রোধ দমন করে রাখে আল্লাহতায়ালা তার হৃদয় ঈমান ও শান্তি দ্বারা পূর্ণ করেন। নবী করীম (স.) আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টিকল্পে ন¤্রতা অবলম্বন করে আল্লাহ তাকে উন্নত করেন কিন্তু যে ব্যক্তি অংকার করে আল্লাহ তাকে হেয় করেন।
ক্রোধ বা রাগ সম্পর্কে লিখতে গিয়ে আজ একটি কথা বলার প্রয়োজন মনে করছি যে, জীবন চলার পথে যে বিষয়গুলো আমার হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে আবার কখনো আমাকে হতাশ করেছে, কখনো আমার জীবনকে আলেড়িত করেছে আবার কোন বিষয় আমাকে অনুশোচনায় দগ্ধ করেছে, কোন বিষয় কখনো আমাকে অণুপ্রাণিত করেছে আবার কোন বিষয় আমাকে সচেতন করেছে সেসব বিষয়গুলো পাঠক-পাঠিকাকে জানাবার একটি ঐকান্তিক ইচ্ছা হৃদয় থেকে অনুভব করি এবং এ অনুভবের ফলশ্রæতিতে কোন বিষয় নিয়ে লিখতে গিয়ে যখন লক্ষ্য করি এ বিষয়ের উপর ধর্মীয় গ্রন্থ, মহাপুরুষ ও বিভিন্ন মনীষীর অনেক মূল্যবান বাণী রয়েছে তখন সেগুলো আমায় লেখায় তুলে ধরার চেষ্টা করি যাতে পাঠক-পাঠিকা লেখার বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারেন, লেখার বিষয়টিকে অনুধাবন করার চেষ্টা করেন। প্রায় লেখায় বেশ কিছু বাণী তুলে ধরতে গিয়ে আমার লেখা কিছুটা দীর্ঘ হয়ে যায় এবং লেখা দীর্ঘ করার কাজটি অত্যন্ত সচেতন ভাবে করে থাকি এ জন্যে যে, আমার লেখায় কিছু স্মরণীয় বাণী বা উদ্ধিৃত থাকলেও লেখককে খুঁজে পেতে পাঠক-পাঠিকার যেন কোন কষ্ট না হয়।
আমরা সমাজে এমন কিছু মানুষ বসবাস করি যারা কথায় কথায় ক্রোধ প্রদর্শন করি। সামান্য ঘটনাতেই উত্তেজিত বা রাগাম্বিত হয়ে যাই। অনেক সময় রাগাম্বিত অবস্থায় কি বলে যাচ্ছি তা বুঝতে চেষ্টা করি না। ক্রোধের সময় আমাদের কোন মনুষ্যত্ববোধ থাকে না। ইমাম গাজ্জালী (রাঃ) বলেছেন, ‘ক্রোধ মনুষ্যত্বের আলোক শিখা নির্বাপিত করে দেয়।’ তাই এ ক্রোধকে সংযত করার উদ্দেশ্যে মনীষী প্লেটো উপদেশ দিচ্ছেন এভাবে, ‘কথাবার্তায় ক্রোধের পরিমাণ আহার্যে লবণের মত হওয়া উচিৎ, পরিমিত লবণ রুচিকারক আর অপরিমিত হলে ক্ষতিকারক।’ মনীষী সিডনী স্মিথও ক্রোধ বা রাগ সম্পর্কে মানুষকে উপদেশ দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তাঁর ভাষায় ‘সময় ও পরিবেশ বুঝে রাগাম্বিত হওয়া উচিৎ, যিনি রাগকে সংযত করতে জানেন, তিনি জীবনে সুখী হতে পারবেন।’ অনেক সময় আমরা ক্রোধ প্রদর্শন করতে গিয়ে নিজের ক্ষতিতো অবশ্যই করে থাকি সাথে সাথে যার উপর রাগাম্বিত হই তারও সমুহ ক্ষতিসাধান করি। এ ক্রোধের মাধ্যমে তাকে অন্যের সম্মুখে অপদস্থ করছি, অপমানিত করছি, লজ্জা দিচ্ছি, ছোট করছি সর্বোপরি তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছি। মনিশী সেনেকা বলেছেন,‘ক্রোধ হলো সে বস্তু বিশেষের মতো যা নিজে কিছুর উপর পতিত হওয়ার ফলে নিজেও বিনষ্ট হয় এবং যার উপর পতিত হয় তাও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।’ তাই এ ক্রোধের কারণে নিজের ক্ষতি বা অপরের ক্ষতি হয়ে গেলে পরবর্তীতে আক্ষেপ করি, অনেক সময় অনুতাপে দগ্ধ হই। মনিষী ইবনে আবু ওবাই বলেছেন,‘ক্রোধের শুরুতে থাকে উম্মাত্ততা এবং পরিণতি হলো আক্ষেপ।’ অনেকটা একই সুর লক্ষ্য করি মনীষী পিতাগোরাস এর বাণীতেও। তিনি বলেছেন,‘রাগ বোকামী থেকে উদ্ভুত হয় ও অনুতাপে শেষ হয়।’ সমাজ জীবনে এমন কিছু মানুষকেও দেখি যারা সহজে ক্রোধান্বিত হন না। ঝগড়ার মুহুর্তেও তার মেজাজকে শান্ত রাখেন। কথায় কথায় তারা রাগ করেন না। সামান্য বিষয়ে বা ঘটনায় তাদের মধ্যে উত্তেজিত হবার লক্ষণ দেখা যায় না কিন্তু যখন তাদের ধৈর্য্যরে বাঁধ ভেঙ্গে যায় তখন তারা ভীষণ ভাবে রাগান্বিত হন এবং এ ধরণের মানুষেরা যখন ক্রোধান্বিত হন তখন অন্যরা তাদের সহজে শান্ত করতে পারেন না। এসব মানুষ সম্পর্কে মনিষী ড্রাইডেন বলেছেন,ধৈর্য্যশীল লোকের ক্রোধ থেকে সাবধান হও।’ যারা প্রায় সময় রাগ বা ক্রোধের সম্মুখীন হয় অর্থাৎ যারা এ অশুভ পরিস্থিতির শিকার হয় তাদের প্রতি শান্তনার বাণীর মাধ্যমে মনীষী মেরী কুইন উপদেশ দিচ্ছেন এভাবে,‘মানুষ ক্রোধের বশবর্তী হয়ে যা বলে তা হাল্কাভাবে গ্রহণ করে। জীবন চলার পথে আমরা অনেক কিছু নিয়ে অহংকার করি, কোন কিছুর ক্ষমতা প্রাপ্ত হলেই আমাদের মধ্যে অহংকারের বীজ বপন হয়, সম্পাদশালী হলে অনেকে জঘন্য অন্যায় করতেও সংকোচবোধ করি না। এক ধরনের অহংকারকে হৃদয়ে লালন করি বলেই অনেক সময় সামান্য বিষয়েও ক্রোধ প্রদর্শন করি। ক্ষমতা, সম্পদ, লোভ,অহংকার, হিংসা ইত্যাদি কখনো কখনো মানুষকে এমন উম্মাদ করে দেয় যে তুচ্ছ ঘটনাতেই তাদের মধ্যে ক্রোধের সঞ্চার হয়। হযরত ইমাম হোসাইন (রা:) বলেছেন, ব্যক্তিত্ব গঠন এবং মর্যাদা প্রাপ্তির সর্বোত্তম পন্থা হলো উদারতা। মনীষী রোনাল্ড ডিকি-এর ভাষায়, যার মধ্যে দয়া ও সহানুভূতি নেই প্রকৃতপক্ষে তার কোন গুণই নেই। মনীষী মার্শাল বলেছেন,‘মনের উদারতার সাথে ঐশ্বর্যের তুলনা করা চলেনা।’ মনীষী ডেমোক্রিটাস এর একটি বাণী হচ্ছে,‘ প্রতিদান পাওয়ার আশা করে অথচ স্বভাববশতঃ মানুষের উপকার করে সে প্রকৃত উদার লোক।’
তাই আসুন, আজ আমরা ক্রোধের পরিবর্তে, অহংকার এবং হিংসার পরিবর্তে ন¤্রতার কথা বলি, ভদ্রতা এবং অমায়িক স্বাভাবের কথা বলি, উদারতা এবং বিনয়ের কথা বলি। হযরত ওসমান হারীনী (রাঃ) বলেছেন, সম্মুখে যাকেই দেখ তাঁকেই তোমার চেয়ে উত্তম মনে করার নামই বিনয়।’ হযরত ঈসা (আঃ) এর বাণী হচ্ছে,‘দুনিয়াতে যারা লোকের বিবাদ মিটিয়ে দেয় তারা ধন্য, রোজ কিয়ামতে সর্বোচ্চ বেহেশতের অধিকারী হবে। সংসারে যারা হৃদয়কে পবিত্র রাখে তারা ধন্য রোজ কিয়ামতে তারা আাল্লাহর দীদার লাভ করবে।’ আমাদের শেষ ও শ্রেষ্ট নবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (স.) বলেছেন,‘যখন কোন লোক ন¤্রতা অবলম্বন করে আল্লাহ তাকে সপ্ত আসমানে উপস্থিত করেন।’ তিনি আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি স্বীয় পরিবারের আবশ্যকীয় দ্রব্য সহস্থে বহন করে তার অহংকার এরুপ কার্য দ্বারা চূর্ণ হয়ে যায়। হযরত সোলায়মান (রাঃ) বলেছেন,‘অহংকার মানুষের পতন ঘটায় কিন্তু বিনয় মানুষের মাথায় সম্মানের মুকুট পরায়।’ ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) বলেছেন ‘যখন কোন লোক আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন¤্রতা অবলম্বন করে আল্লাহ তার জ্ঞানকে উন্নত করেন। আর যখন সে মানুষের সাথে অহংকার ও শক্রুতা করে তিনি তাকে ধ্বংস করে দেন।’ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রাঃ) বলেছেন,‘বিনয় হচ্ছে জ্ঞানের ফলশ্রæতি।’ এ বিনয়কে সমর্থন ও প্রশংসা করে ইমাম শাফেয়ী বলেছেন,‘বিনয় এমন এক সম্পদ যা দেখে কেউ হিংসা করতে পারে না।’মনীষী মেলানডার এর ভাষায়, বিনয়ী লোকেরা সব সময়েই সম্মান পায়। অথচ এ বিনয় সভাবটি এখন কোথাও পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ভদ্রতা, ন¤্রতা ও বিনয় স¦ভাবটিকে যেন আমরা আজ নির্বাসন দিয়েছি। বদমেজাজ বা ক্রোধের বহিঃপ্রকাষ ঘটছে সর্বত্র। আগেও বলেছি আবারও বলছি একমাত্র নির্বাচন আসলেই অনেক প্রার্থীদের মাঝে আমরা ভদ্রতা,ন¤্রতা ও বিনয় স্বভাবটিকে যেন আমরা আজ নির্বাসন দিয়েছি। বদমেজাজ বা ক্রোধের বিহিঃপ্রকাশ ঘটছে সবৃত্র আগেও বলেছি আবারও বলছি একমাত্র নির্বাচন আসলেই অনেক প্রার্থীদের মাঝে আমরা ভদ্রতা , ন¤্রতা ও বিনয় স্বভাবটি লক্ষ্য করি। এটা অতি বাস্তব সত্য যে জনগণ একমাত্র নির্বাচনেই প্রার্থীদের বিনয়ের অভিনয়টা দারুণভাবে উপভোগ করে।
মনিষী থ্যাকার বলেছেন,‘কথাবার্তায় বিনয় ভাল কিন্তু চরিত্রের দৃঢ়তা থাকতে হবে। বিনয়ের অভিনয় কথাটা আমি এজন্য বলছি নির্বাচনে প্রার্থী জয় লাভের পর তাঁর বিনয় চরিত্রের স¦ভাবটি কোথাও উধাও হয়ে যায়। ক্ষমতার অপব্যবহার সে আগ্রহী হয়ে উঠে, অহংকার তার উপর চেপে বসে, বদমেজাজ বা ক্রোধ প্রদর্শনে সে কোন প্রকার সংকোচ বোধ করেনা। হযরত আবু সোলায়মান দারাণী বলেছেন,‘নিজের অপেক্ষা অপর লোক নিকৃষ্ট যতক্ষণ এ ধারণা কোন লোকের মনে থাকে ততক্ষণ সে অহংকারীরুপে গণ্য থাকে। সে বিনয়ী তখন হবে যখন সে নিজের কেনা মর্যাদা বা সম্মান আদৌ দেখাবে না।’ ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) বলেছেন,‘ আমরা পরহেজগারীর মধ্যে পেয়েছি সম্মান, দৃঢ় ঈমানের মধ্যে পেয়েছি সন্তোষ এবং ন¤্রতার মধ্যে পেয়েছি কৌলিন্য। হযরত হাসান (রহঃ) বলেছেন গৃহ থেকে বের হয়ে কোন মুসলামানের সাথে সাক্ষাৎ হলে তাকে উত্তম মনে করার নামই বিনয়। হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (স.) বলেছেন,‘যখন তোমরা আমার উম্মতদের মধ্যে বিনয়ী লোকদের দেখতে পাও তাদের দেখাদেখি তোমরা বিন¤্র হয়ে যাও। আর যখন তাদের মধ্যে অহংকারীদেরকে দেখতে পাও, তাদের সাথে তোমরাও অহংকারী ব্যবহার ও আচরণ কর তাহলে তারা নিজেদেরকে অপমানিত ও হেয় মনে করবে।’ হযরত আলী (রাঃ) বলেছেন,‘আল্লাহর নিকট ছওয়াব লাভের আশায় দরিদ্রের সম্মুখে আমীর লোকের বিনয় বড়ই উত্তম, তবে তার
চেয়েও উত্তম আমীর লোকের সম্মুখে দরিদ্র লোকের অহংকার যদি তারা আল্লাহর উপর ঈমান এনে তা মেনে চলে।’ হযরত সালমান ফারসী (রাঃ) বলেছেন,‘ দুনিয়ায় আল্লাহর সন্তুষ্টি কল্পে বিনয় ও ন¤্রতা অবলম্বন করো কেনোনা যে ব্যক্তি দুনিয়ায় বিনয় অবলম্বন করে আল্লাহ তাকে রোজ কিয়ামতে সম্মানিত করবেন। হযরত কাদাদাহ (রাঃ) বলেছেন,‘যাকে ধন সম্পদ, সৌন্দর্য, সুন্দর পোষাকপরিচ্ছদ বা বিদ্যা জ্ঞান প্রদান করা হয়েছে তারপর সে যদি ন¤্রতা অবলম্বন না করে রোজ কিয়ামতে সে বিষয়গুলো তার বিরুদ্ধে যাবে। হযরত সালমান ফারসী (রাঃ) আরও বলেছেন,’আমার জন্ম এক বিন্দু অপবিত্র শুক্র থেকে, অবশেষে আমি মৃত ঘৃণিত শবে পরিণত হবো, শেষ বিচারের দিন আমার নেকীর পাল্লা ভারী হলে জান্নাতে যাব আর গুনাহের (পাপের) পাল্লা ভারী হলে জাহান্নামে যাবো। বিনয় প্রকাশের একটা উজ্জল দৃষ্টান্ত দেখতে পাই আমরা হযরত মালেক ইবনে দীনার (রহঃ) এর কথায়। তিনি বলেছেন,‘মসজিদের দরজায় এসে যদি কেউ বলে তোমাদের মধ্যে যে নিকৃষ্টতম ব্যক্তি সে যেন মসজিদ থেকে বের হয়ে যায়। তাহলে আল্লাহর কসম আমার অগ্রে অন্য কেউ মসজিদ থেকে বের হবার উপযুক্ত হবে না।
আসুন, আমরা সবাই নিজেদের রুক্ষ মেজাজকে সংযত করার চেষ্টা করি। ক্রোধ, বদমেজাজ বা রাগকে সংযত করতে না পারলে নিজের তথা সমাজের ও দেশের মঙ্গল আর এর বিপরীত হলে আমরা নিজেদের ক্ষতি, সমাজের ক্ষতি তথা দেশের ক্ষতি সাধন করবো। আমরা যে ক্ষমতাই লাভ করিনা কেন সে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ক্রোধ প্রদর্শন থেকে যেন নিজেদের বিরত রাখি, আবার যারা নিজেদের যোগ্যতাবলে বা জনগণের ভালবাসায় ক্ষমতায় ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়েছেন তাদের ঘৃণা করতে গিয়ে হিংসার বশবর্তী হয়ে যেন ক্রোধ প্রদর্শন না করি। শুধু রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নয়,সমাজের যে কোন স্তরে সকলকে হিংসা এবং অহংকার বা গর্ব করা থেকে বিরত থাকা উচিৎ। আমাদের ভেবে দেখা প্রয়োজন আমরা কোন গুণে ক্ষমতা, পদ, শ্রদ্ধা, সম্মান ইত্যাদি লাভ করি আবার কোন দোষে ক্ষমতাহীন, পদচ্যুত, ঘৃণা অসম্মান, পরাজয় বরণ করি। জীবন চলার পথে আমাদেরকে সব সময় হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (স.) এর একটি মূল্যবান হাদীস স্মরণ রাখা উচিত তা হলো, আল্লাহ ভদ্রতা ও ন¤্রতাকে ভালবাসেন এবং বিনয়ীকে যাহা দেন অহংকারীকে তাহা দেন না।
সাংবাদিক- কলামিস্ট। সদস্য- পরিচালনা পর্ষদ।

 

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..