1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৩৩ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

১১ নভেম্বর জন্ম তারিখ : মৃত্যুর অন্তরালে এক স্বার্থক জীবন

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর, ২০২২
  • ৪০৫ বার পঠিত
আফতাব চৌধুরী

আমাদের জীবনে মহান মানুষ যারা, স্মরনীয় মানুষ যারা, তাদের যে স্মরণ- মনন সেটা আমরা অনুসরণ করি তাদের জীবনের ¤øান সায়াহ্নে সপ্ততিবর্ষ- অথবা আশি বছর পূর্তিতে। কখনওবা শত বছর পূর্তিতে। তার পরের ধাপটা হচ্ছে একশো পঁচিশ এবং তারপরে সার্ধশতবর্ষ। মাঝখানের এই কোয়ান্টাম স্টেপগুলোতে তাঁদের স্মরণ করি না। এটি প্রায় জাতিগত নিয়মের অধীন।
আমাদের সমাজ এখন সীমাবদ্ধ, সীমিত। এ প্রেক্ষাপটে সৎ, সত্য-সুন্দরের উপাসক প্রত্যয়ী নিষ্ঠাবান, দৃঢ়চেতা একজন মানুষ আমাদের ক্লেদাক্ত চারপাশকে উদ্ভাসিত করে তোলে, অন্তত ক্ষণিকের জন্য হলেও, সে রকম একজন সাদামনের, হৃদয়বান, যুক্তিবুদ্ধি সম্পন্ন উদারমনা মানুষ- হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী-আমলা থেকে সফল কুটনীতি ও রাজনীতিবিদ। এটি তাঁর পেশাগত পরিচয়। প্রকৃত পরিচয় তাঁর অস্তিত্বের গভীরে প্রোতিত। তিনি চলনে, বলনে, কথনে একজন পারফেক্ট জেন্টুলম্যান, সাধারণের মধ্যে ছিলেন অসাধারণ একজন মানুষ।
হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী এ পৃথিবীরই একজন মানুষ- আপাদমস্তক ভদ্রলোক, যিনি ভালবাসতেন পৃথিবীর তৃণলতা থেকে আকাশের বুক ফুড়ে বেরিয়ে আসা প্রথম সাম্যবাদী আলো। সঞ্চরণশীল মেঘ। ঝড়-ঝঞœা। সমুদ্র ও পর্বতে বিরাজমান প্রাণীসত্তা। জগতের সমস্ত দেখা ও অদেখা সুন্দর অতীত ও বর্তমানের সমস্ত শুভ ও কল্যাণের ধারক ও বাহক শক্তিকে। পৃথিবীর বুকে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সংগ্রামরত ইতর, নিরীহ জীব জন্তু, দানব ও মানবকেও। কেননা পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষায় তাঁর কোন উপাদান- উপকরণকেই অস্বীকারের জো নেই। আমাদের পূর্ব পুরুষরাও সে কথা বলেছেন নানা গল্প গাথা কাহিনী কিংবদন্তি উপকথায়। তাঁরা এ কালের অর্থে তথাকথিত বিদ্বান হয়তো ছিলেন না, বই, কিতাব পড়ে জ্ঞানী খেতাবও পাননি- এও সত্য। আবার এ সমস্ত মানুষগুলোর মধ্যেই ছিল অসাধারণ সতেজ, সুস্থ ও সক্ষম কর্মেন্দ্রিয়- বাক, হাত,পা, পায়ূ আর জননেন্দ্রীয়। এ দিয়ে তাঁরা যে জ্ঞান কর্ম ও অধ্যাত্মবোধ রেখে গেছেন আমাদের চরাচরে তা বেশ ফলপ্রদ, আলোকসঞ্চারী ও যুৎসই জীবনবিন্যাস বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে দিন দিন।
ভোগ ও প্রাচুর্যে প্রলুব্ধ প্রাচী-প্রতীচ্যের মানুষেরা এখন তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। তাই তো চিৎকার পড়েছে পরিবেশ বাঁচাও, জলবায়ুর স্বভাব- চারিত্র্যে আর করো না আঘাত। গুটাও সংহারী, বিধ্বংসি থাবা। জীবে করো দয়া। ধারবাহিকতা বজায় রাখো মৃত্তিকার, সমুদ্রের, অরণ্যের, কীট- পতঙ্গের, পশুপাখি আর গাছপালাদের। সাসটেইনেবল কালচারের এই তো মোদ্দা কথা। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী এই ধারাবাহিকতারই মাটিমাখা সন্তান। ধীর- স্থির বাচন ভঙ্গিতে যিনি জারি রাখতেন ভালোলাগা ও ভালোবাসার সফেদ ফরমান। সান্নিধ্যে যার অতৃপ্ত আত্মাসকল মধুপায়ী ভ্রমরের মতো প্রথমত ডৌল ও পরে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। সুদীপ্ত অনুরাগের লাল আগুনে গলে পড়ে যেমন লোহার শরীর।
হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী আজীবন বক্তা, আজীবন শ্রোতা। তিনি নিরলস পাঠক, মজ্জাগত রসবোধ ও অর্জিত বৈদগ্ধে দীপ্র- এমন চমকপ্রদ মানুষ, এমন আকর্ষণীয় মানুষ বড় দুর্লভ।
তিনি নিছক ‘শিল্পের জন্য শিল্প’ নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি সাহিত্যকে ও বৈশ্বিক ভাবধারায় উদ্দীপ্ত জাতীয় নবজাগরণ, সমাজসংস্কার, শিক্ষাবিস্তার, সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এবং অশিক্ষা, অজ্ঞানতা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের হাতিয়ার হিসাবে দেখেছেন। সব কিছুর মূলে কাজ করেছে তাঁর সামাজিক দায়িত্ববোধ স্বদেশ- স্বজাতিপ্রেম এবং সামাজিক ও জাতীয় নব জাগরণে প্রেরণা সৃষ্টির উদ্দেশ্য ও আকাক্সক্ষা।
একজন মানুষের জীবনের আলোচনায় দেখা যায়, তাদের জীবনে পরিবেশ ও পরিস্থিতির ছাপ থাকে প্রবল, প্রকৃতপক্ষে মানব- মানস থেকে পরিবেশের আহŸানকে পৃথক করে দিলে তাতে অবশিষ্ট বিশেষ কিছু থাকেনা, তবে এই সাধারণ শ্রেণির মানুষ ব্যতীত আরও একদল মানুষ সেসব পরিবেশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁরা এ পরিবেশগত মানুষের অধিকারী হয়েও এবং তাকে অস্বীকার না করেও তার সংশোধনের জন্য আত্মনিয়োগ করেন। এদেরই বলা হয় অসাধারণ মানুষ, হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী তাঁদেরই একজন। সরল স্বাস্থ্যের অধিকারী ও প্রাণবান এ মানুষটি সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, মনে শ্রদ্ধাবোধ জাগিয়ে তোলেন। আজীবন উদার, মানবতাবাদী, শিক্ষাব্রতী, সাহিত্যসেবী ও কর্মীপুরুষ সফল রাজনীতিবিদ হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী তাঁর জীবনের ম‚ল্যবান সময় আমাদের জন্য ব্যয় করেছেন । আমরা হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর কাছে ঋণী ।
হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী আমার রক্তের কিংবা দুঃসম্পর্কের কোনো আত্মীয়ের মধ্যে পড়েন না। তবু তাঁর প্রতি আত্মার কিঞ্চিৎ টান অনুভব করি। কখনো তাঁর চাটুকারিতা করেছি বলে মনে পড়ে না, কোনো স্বার্থ-সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করেছি বলে মনে পড়ে না। বয়সের ব্যবধান, অনাত্মীয়তায় কিংবা স্বার্থহীন যোগাযোগের কারণেই তাঁর সাথে আমার সম্পর্ক যথেষ্ট শীতল ছিল। তাঁর জ্ঞান-গভীরতা ছিল অপরিমেয়। তাই তাঁর সম্পর্কে আমার যা কিছু বলা তার সবটুকু আমার সভাবজাত বৈশিষ্ট ও বাস্তব দর্শনের অভিজ্ঞতা থেকে।
জন্মেছেন স্বাধীনতা পূর্ব পাকিস্তানে, সক্রিয় ছিলেন ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনে, প্রত্যক্ষ অংশ নিয়েছেন ১৯৬২ এর শিক্ষা আন্দোলনে। রাজনীতির ক্রমবিকাশ তিনি নিজের তরুণ বয়স থেকে আত্মস্থ করেছেন। ফলে দেখেছেন, শিখেছেন বাঙালির জাতীয়তাবাদের সংগ্রাম এবং অংশ নিয়েছেন ১৯৭১ এর মহান মুক্তি যুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসাবে একাত্তর তাঁর জীবন চেতনার প্রত্যক্ষ অংশ। এই মহান মানুষটিকে শ্রদ্ধা জানাই তাঁর সত্যনিষ্ঠ ও জ্ঞানের বাতিঘরের চর্চার জন্য।
আরো একটা বিষয় আমি লক্ষ্য করেছি। তাঁর কাছে কেউ গেলে তিনি ক্ষণিকের মধ্যে তাকে আত্মস্থ করার তীব্র সম্মোহন শক্তি সংরক্ষন করতেন। শিষ্টাচার দ্বারা চালিত এই ভদ্রলোক এতই মার্জিত এবং এতই রুচিবোধ সম্পন্ন যে, তাঁর সাথে ঘনিষ্ঠ মেলামেশার সুযোগ পাওয়ায় আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। কোন কুপরামর্শ নেই। খারাপ উপদেশ নেই। বৈষয়িক আর্তি নেই। গঠনম‚লক আলোচনায় অন্যকে প্রভাবিত করার যে ক্ষমতা তাঁর ছিল তা অনেকেরই নেই। আন্তরিকতার পরশে, আলোকিত হৃদয়ের আলোকছটায় অন্যের অন্ধকার দ‚র করার ব্রত নিয়েই যেন হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর জন্ম। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের হয়ে থাকা এই নির্লোভ ব্যক্তিত্বের জীবনাচরণ থেকে, কাছে থাকা আপন লোক হিসাবে আমি যা পেয়েছি, যা শিখেছি- তদ্বারা আমি নিজেই ফলবান হয়েছি। কিন্তু তাঁর মত বিশাল অন্তর খুলে দিয়ে আমি এ পর্যন্ত অন্য কাউকেও এমনভাবে ফলবান করতে পারিনি। মিশতে পারিনি। মিশাতেও পারিনি। নিজের অক্ষমতার এমন গøানির ভারে আমি ভারাক্রান্ত। তাঁর প্রতি আমার ভারাক্রান্ত হৃদয়ের নিঃসরিত হিংসায় আমি নিজেই জ্বলছি। কিন্তু তাঁকে জ্বালাতে পারিনি। তাঁর জ্ঞানের গভীরতা ও পাÐিত্য যেমন অতুলনীয় তেমনি তাঁর হৃদয়ের প্রসারতাও ছিল সীমাহীন। তিনি এক মহান হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী যখন কাউকে কিছু দান করতেন আমি দেখেছি, তখন তিনি তা অকৃপন হস্তেই দান করতেন।
হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর কথা বলার রীতিটা স্বক্রীয়, আরো দশজন থেকে একেবারেই আলাদা। ভাষার ভিতরে কাঠিন্য নেই, আছে ঋজু-ভাব, তবে নান্দনিকতায় যা উদ্ভাসিত, পাÐিত্যে তা প্রকাশিত আর মানবিকতায় তা উজ্জীবিত। এত্তোসব গুণের সমাহার ঘটলে মানুষের জনপ্রিয়তা এবং পরিচিতির দুয়ার খুলে যায়- তবে তাঁর জন্য প্রয়োজন আরো লেখা, এবং তাঁর জীবন ও কর্মকে পাঠ্যবইয়ের অন্তর্ভূক্ত করা যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাঁকে আরো বেশী করে জানতে এবং তাঁর অবদানের কথা মনে রাখতে পারে। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী আজ এপারে নেই- ওপারে। তাঁর রুহের মাগফিরাতের জন্য আমি দোয়া করি মহান আল্লাহর দরবারে, তিনি আমাদের এ মহান নেতাকে জান্নাতবাসী করেন, আমিন। প্রবীণ সাংবাদিক-কলামিস্ট। ০৩.১১.২০২২

 

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..