1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১২:৪৪ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

দুর্ভিক্ষ রোধ : ইসলামী দৃষ্টিকোণ

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৯ নভেম্বর, ২০২২
  • ১৬০ বার পঠিত

:মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান:

সারা বিশ্বে ব্যাপক আকারে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। বাহ্যত মনে হচ্ছে দুর্ভিক্ষকে আমরা হাতছানি দিয়ে আহŸান করছি। একটা বিশেষ শ্রেণি ছাড়া বিশ্বের একটা বড় অংশ দিনদিন নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।
বিশাল এ পৃথিবীর কোথাও কোনো প্রাণী খাবারের কষ্ট পেলে তা মানুষের কারণেই পেয়ে থাকে। কখনো মানুষের সীমালঙ্ঘনের কারণে চেপে বসা দুর্ভিক্ষ জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলছে। বিশ্বের চলমান অর্থনৈতিক মন্দার হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে ইসলামি শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। যদিও মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা হিসাবে সৃষ্টিজগতের সব প্রাণীর রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহপাক নিয়েছেন। যেভাবে আল্লাহ বলেন, ‘পৃথিবীতে বিচরণশীল যত প্রাণী রয়েছে সবার রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর, তিনিই জানেন তারা কোথায় থাকে আর কোথায় তাদের মরণ হবে। সব কিছুই একটি সুবিন্যস্ত কিতাবে সংরক্ষিত আছে’ (সূরা হুদ, আয়াত ৬)। তবে আমরা কেউ জানি না কখন কোন বিপদে আপতিত হই।
বর্তমান বিশ্বের যে অবস্থা আমরা কেউ বলতে পারি না সামনে কী হতে যাচ্ছে, সর্বত্রই যেন হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে। তাই কঠিন পরিস্থিতির আগেই আমাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর আহŸান জানিয়ে বলেছেন, ‘বিশ্ব স¤প্রদায় আগামী বছরে একটি গভীর সংকটের আশঙ্কা করছে। তিনি বলেন, খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। এটি এখন আমাদের জন্য অনিবার্য এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বর্তমান এমন দেখা যাচ্ছে যে, যার আছে সে ইচ্ছামতো অপচয় করছে আর যার নেই সে কোনোভাবে দুমুঠো খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছে। অথচ কঠিন পরিস্থিতিতে মহানবি (সা.) সংযত থাকার শিক্ষা দিয়েছেন। নবিজি (সা.)-এর যুগে যখন মদিনায় দুর্ভিক্ষ এসেছিল, এই দুর্ভিক্ষ থেকে উম্মতকে বাঁচাতে সবাইকে তিনি জীবনাচারে সংযত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
জাবালা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা মদিনায় কিছুসংখ্যক ইরাকি লোকের সঙ্গে ছিলাম। একবার আমরা দুর্ভিক্ষের কবলে পতিত হই, তখন ইবনে জুবায়ের (রা.) আমাদের খেজুর খেতে দিতেন। ইবনে উমর (রা.) আমাদের কাছ দিয়ে যেতেন এবং বলতেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) কাউকে তার ভাইয়ের অনুমতি ছাড়া একসঙ্গে দুটো করে খেজুর খেতে নিষেধ করেছেন। (বুখারি)।
দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় মহানবি (সা.)-এর শিক্ষাই তার পবিত্র সাহাবারা অবলম্বন করতেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) দুর্ভিক্ষের বছর বলেন, আর সে বছর ছিল ভীষণ দুর্বিপাক ও কষ্টের। উমর (রা.) পল্লী অঞ্চলের বেদুইনদের উট, খাদ্যশস্য ও তেল প্রভৃতি সাহায্যসামগ্রী পৌঁছানোর চেষ্টা করেন। এমনকি তিনি গ্রামাঞ্চলের একখÐ জমিও অনাবাদি পড়ে থাকতে দেননি এবং তার চেষ্টা ফলপ্রসূ হলো।
ওমর (রা.) দোয়া করতে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি তাদের রিজিক পর্বতচূড়ায় পৌঁছে দিন।’ আল্লাহ তার এবং মুসলমানদের দোয়া কবুল করলেন। তখন বৃষ্টি বর্ষিত হলে তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর শপথ! যদি আল্লাহ এই বিপর্যয় দূর না করতেন, তবে আমি কোনো সচ্ছল মুসলমান পরিবারকেই তাদের সঙ্গে সমসংখ্যক অভাবী লোককে যোগ না করে ছাড়তাম না। যতটুকু খাদ্যে একজন জীবন ধারণ করতে পারে, তার সাহায্যে দুজন লোক ধ্বংস থেকে রক্ষা পেতে পারে। (আদাবুল মুফরাদ)।
আজ মুসলমান দেশগুলোও মানব সৃষ্ট অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় বিশ্বাসী। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এদের কোনো চেতনাই নেই। বিশ্ব মোড়লরা নিজেদের আখের গুছাতে ব্যস্ত, দেশ যদি রসাতলে যায় তাতে তাদের কিই-বা আসে যায়। বর্তমানে গোটা বিশ্বে যে অর্থনৈতিক মন্দাভাব বিরাজ করছে তাতে ধনী-দরিদ্র সব দেশই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বিশ্ব অর্থনীতিতে আকস্মিক ধস নামার কারণ কি তা এখনো কেউ অনুধাবন করতে পারছে না। এর মূল কারণ হচ্ছে সব কুদরত ও শক্তির আঁধার রাজ্জাক খোদাকে অস্বীকার করা। আজ মুসলমান দেশগুলোর আর্থিক ব্যবস্থাপনাও খোদা প্রদত্ত শিক্ষা মোতাবেক নয়। তারা সেই রীতি-নীতির ওপর পরিচালিত হওয়ার চেষ্টা করেনি যার নির্দেশ আল্লাহতায়ালা দিয়েছেন। তারা নিঃসন্দেহে দেশের কাঠামোকে উন্নত করেছে কিন্তু সেভাবে সম্পদের ব্যবহার করেনি যেভাবে আল্লাহতায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন। দৃষ্টান্তস্বরূপ বিভিন্ন দেশ প্রয়োজনাতিরিক্ত অর্থ সুদ পাওয়ার আশায় পাশ্চাত্যের ব্যাংকে গচ্ছিত রাখছে কিন্তু অসহায় দরিদ্র মুসলিম দেশগুলোকে সাহায্য করছে না। মোটকথা মুসলমানরাও আজ ইসলামি শিক্ষার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে যার ফলে বর্তমানে সর্বত্র বিপর্যয় নেমে আসছে। অর্থনৈতিক মন্দার এ অস্বাভাবিক কবল থেকে উদ্ধার পেতে হলে কুরআন হাদিসের আলোকে ইসলামি অর্থনীতির অনিন্দ্য সুন্দর শিক্ষা এবং সম্পদের সুষম বণ্টন ও ব্যবহার জরুরি। বিশ্বের কোনো দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে অন্য রাষ্ট্রের প্রয়োজন তাদের সাহায্য করা। যেভাবে মহানবি (সা.) মক্কাবাসীদের সাহায্য করেছিলেন।
আমরা জানি, হজরত মুহাম্মদ (সা.) কাফিরদের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য হিজরত করে মক্কা থেকে মদিনা গমনের কিছুদিন পর অনাবৃষ্টি এবং খরার কারণে মক্কায় প্রবল দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। মক্কার চারদিকে খাবারের জন্য প্রবল হাহাকার। খাদ্যের অভাবে মানুষ মৃত পশু, পশুর চামড়া খাবার হিসাবে গ্রহণ করতে বাধ্য হলো। মক্কার প্রতাপশালী, সর্দার এবং ধনাঢ্য আবু সুফিয়ান তখনো মুসলিম হননি এবং ইসলামের প্রবল বিরোধীদের একজন, তিনি জানতেন যে, নবিজি দোয়া করলে কবুল হয়। তাই তিনি গোপনে মদিনায় গিয়ে হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর সঙ্গে দেখা করেন এবং মক্কায় খাদ্যের অভাবে তার আত্মীয়স্বজনরা কষ্ট করছেন এ কথা জানিয়ে বৃষ্টির জন্য দোয়া করতে বলেন। নবিজি আবু সুফিয়ানের কথা শুনে তাকে কিছু বলেননি কিন্তু মক্কায় বৃষ্টির জন্য দোয়া করেন, মক্কায় বৃষ্টি হয় এবং মক্কার মানুষ কষ্ট থেকে রক্ষা পায়। এ ছাড়া রাসূল (সা.) ও সাহাবিরা নিজেরাই তখন মারাত্মক কষ্টে থাকা সত্তে¡ও মদিনা থেকে ৫০০ স্বর্ণমুদ্রা পাঠিয়ে দেন মক্কার কাফের সর্দার আবু সুফিয়ান ও সাফওয়ান ইবন উমাইয়ার কাছে। মক্কার দরিদ্র মানুষদের মাঝে তা বণ্টন করে দিতে বলেন। (ফাতাওয়ায়ে শামি ৩/৩০২)। ইসলামে জাকাত পদ্ধতির দান অভাবি এবং দরিদ্রের আত্মসম্মান ও মানমর্যাদা ক্ষুণ্ধসঢ়;ন না করে তাদের অভাব-অনটন এবং দারিদ্র্য ক্লেশ মিটিয়ে থাকে। অপর পক্ষে সুদের লগ্নি গরিবের অভাবমোচন তো করেই না বরং তার দারিদ্র্যকে আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। এতে দেখা যায় একদিকে অভাবিরা আরও দরিদ্রতার দিকে অগ্রসর হয় আর অপরদিকে প্রভাবশালীরা তাদের ধনসম্পদ আরও বৃদ্ধি করছে। মানুষের বিভন্ন অংশের মধ্যে যে বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠই দারিদ্র্যের যুপকাষ্ঠে নিষ্পেষিত হচ্ছে আর একটা সংখ্যালঘিষ্ঠ গোষ্ঠী সম্পদের পাহাড় গড়ে তার ওপর গড়াগড়ি খাচ্ছে আর এর মলে রয়েছে সুদ। সুদের কাঠামো আর সুদের প্রতিষ্ঠানই এ মহাবৈষম্যের জন্য সর্বাপেক্ষা বেশি দায়ী। এ ছাড়া বর্তমান মানুষের মাঝে পাপ ও নোংরামি এতটাই বিস্তার করেছে মনে হয় সব যুগকে হার মানিয়েছে। মানুষের পাপ যখন বেড়ে যায় তখনো আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি নেমে আসে।
সৃষ্টিকর্তা কখনো মহামারি বা দুর্ভিক্ষ দিয়ে পাপে নিমজ্জিত জাতিকে ধ্বংস করেন। যেভাবে মহানবি (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে, তখন তাদের মধ্যে দুর্ভিক্ষ ও মহামারি ব্যাপক আকার ধারণ করে, যা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে ছিল না।’ (ইবনে মাজাহ)। তাই আমাদের অনেক বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজন। দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় যে জরুরি বিষয়গুলো আল্লাহতায়ালা হজরত ইউসুফ (আ.)-এর যুগে দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে মানুষকে অবগত করেছিলেন তার মধ্যে প্রধান বিষয় ছিল কৃষি ও খাদ্য বিভাগের দায়িত্বশীলকে অবশ্যই খাদ্য ও ফসল উৎপাদন বিদ্যায় পারদর্শী এবং সুষম বণ্টনে অভিজ্ঞ হতে হবে।
জনগণের সামর্থ্যানুযায়ী বিনিময় মূল্য গ্রহণ করে এবং সামর্থ্যহীনদের বিনামূল্যে খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। দুর্ভিক্ষকবলিত জনগণের প্রতি অনুগ্রহ নয় বরং অধিকার হিসাবে আপদকালে তাদের খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। ব্যবস্থাপনা এমন থাকবে যেন মানুষ সরকারি ত্রাণ সম্মানের সঙ্গে নিতে পারে।স্বজনপ্রীতি এবং চুরি বন্ধ করতে হবে। কোনো জমিকে চাষাবাদ ছাড়া রাখা যাবে না। সরকারি ব্যবস্থাপনায় খাদ্য সংরক্ষণ করতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ওপর আস্থা রেখে বেশি বেশি দোয়া করতে হবে, কেননা তিনিই সবার উত্তম রিজিকদাতা। বর্তমানে বিশ্বে যে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটেছে এটি মূলত হওয়ারই কথা, কেননা মানুষ খোদা প্রদত্ত শিক্ষা পরিত্যাগ করে নিজেদের মনগড়া ব্যবস্থাপনা দ্বারা অন্যের সম্পদ ও অর্থ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করার অপকর্মে মেতে উঠেছে। আল্লাহতায়ালা যা করতে নিষেধ করেছেন তা থেকে যদি আমরা দূরে থাকি তাহলেই কেবল সব বিপর্যয় থেকে সমগ্র বিশ্ব রক্ষা পেতে পারে।

লেখক : মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান, পাঠান পাড়া, (খান বাড়ী) কদমতলী, সদর, সিলেট-৩১১১

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..