1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৫৩ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

অন্তহীন ভাবনা

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২২
  • ১৭১ বার পঠিত

আফতাব চৌধুরী:
জীবনে যখন অশান্তি আসে, মন যখন বিরহের বেদনায় ভরে ওঠে তখন নজরুল সাহিত্য পাঠ করে সান্ত¦না পাই। জীবন ও মৃত্যু এবং সৃষ্টির রহস্য তাঁর অজ¯্র কবিতায় যেভাবে ফুটে উঠেছে তেমন একমাত্র শেক্সপীয়রের রচনাবলী ছাড়া আর অন্য কোন কবি-সাহিত্যিকের রচনায় এমন ব্যাপকভাবে ফুটে উঠেনি। তাই তো নজরুল একদিন বলেছিলেন, “আমাকে হারালে বাঙালি আপনাকে হারাবে” প্রবোধকুমার সান্ন্যাল বলেছেন, “লন্ডনের জাতীয় সংরক্ষণ শালায় একটি কাঁচের দেয়ালে শ্বেতবর্ণে আঁকা নজরুলের পূর্ণাঙ্গ চিত্র দেখে আনন্দ পেয়েছিলাম। পাশাপাশি মোট ১০টি মূর্তি আঁকা। সক্রেটিস হতে আরম্ভ। হাজার বছর ধরে মানব বংশ পরস্পরায় সভ্যতা বিস্তারের কাজে যাঁরা সহায়তা করেছেন, তাঁদেরই একজন হয়ে নজরুল যেন হিমালয়ের সর্বোচ্চ গিরিচূড়ার মতো উন্নতশির।” বিশ্বের মহৎ কবি সাহিত্যিক ও মনীষীদের তীর্থ ভূমি সুদূর ইংল্যান্ডের মহাকবি শেক্সপীয়রের জন্মভূমি অ্যাভন নদীর তীরে সম্প্রতি শেক্সপীয়রের পাশে নজরুলের আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে এবং এরপর অন্য কারো মূর্তি স্থাপন করা হবে না বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন।
ভাষাচার্য ডঃ সুনীতি কুমার চ্যাটার্জিও বিশ্ব সাহিত্যের তুলনামূলক বিচার বিশ্লেষণ করে বলেছেন, মানব সভ্যতার হাজার হাজার বছরের ইতিহাসে যাঁদের সাহিত্য-কীর্তি মানব সভ্যতা বিকাশে সহায়তা করেছে পৃথিবীর সে সবের দশজন শ্রেষ্ঠ কবি-সাহিত্যকের গ্রন্থ-সম্পুটের মধ্যে আধুনিক ভারতের নজরুলের সাহিত্যকীর্তি অন্যতম। নজরুল একবার তাঁর বন্ধু লোকেন পালিতকে লিখেছিলেন, মানুষের প্রবাহ হু হু করে চলে যাচ্ছে। তার জীবনের সমষ্টি কেবল সাহিত্য ছাঁড়া আর কোথাও থাকছে না। সঙ্গীতে চিত্র বিজ্ঞানে দর্শনে সমস্ত মানুষ নেই। এই জন্যই সাহিত্যের এত আদর। এ জন্যেই সাহিত্য সর্বদেশের মনুষ্যত্বের অক্ষয় ভান্ডার। এই জন্যেই প্রত্যেক জাতি আপন সাহিত্যকে এত বেশি অনুরাগ ও গর্বের সহিত রক্ষা করে। আসলে কেবল মানুষ হিসাবেই মানুষের যে চিরন্তর মহিমা, উত্তম ও অধম নির্বিশেষ যে কাহিনী তার জীবনের সত্যিকার ইতিহাস, সেই প্রতিদিনের হাসিকান্না, সুখ দুঃখই ধরনীকে চিরশ্যামল করে রেখেছে। কবির বিভিন্ন নাটক বসন্তের প্রশস্তি-সংগীত। ইহার মর্মবাণী কবি তাঁর অনবদ্য ভাষা ও ভঙ্গিতে এভাবে বর্ণনা করেছেন-“জীবনকে সত্য বলে জানতে গেলে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তার পরিচয় চাই। যে মানুষ ভয় পেয়ে মৃত্যুকে এড়িয়ে জীবনকে আকড়ে রয়েছে, জীবনের পরে তার যথার্থ শ্রদ্ধা নেই বলে জীবনকে সে পায়নি। তাই সে জীবনের মধ্যে বাস করেও মৃত্যুর বিভীষিকায় প্রতিদিন মরে। যে লোক নিজে এগিয়ে গিয়ে মৃত্যুকে বন্দী করতে
ছুটেছে, সে দেখতে পায়, যাকে সে ধরেছে সে মৃত্যু নয়, জীবন যখন সাহস করে তার সামনে দাঁড়াতে পারেনি, তখন পিছন দিকে তার ছায়াটা দেখে। সেইটে দেখে ডরিয়ে ডরিয়ে মরে, নির্ভয়ে যখন তার সামনে গিয়ে দাঁড়াই’ তখন দেখে যে সর্দার জীবনের পথে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যায়, সেই সর্দার মৃত্যুর তোরণদ্বারের মধ্যে আমাদের বহন করে নিয়ে যাচ্ছে।” তাই তো মৃত্যুকে ভয় না করে, কীর্তির মধ্যে বেঁচে থাকতে চাওয়াই উত্তম।
কবিগুরুর ভাষায় বলি, “মহাকাল প্রবাহিত হইয়া চলিয়া যাইতেছে, মানুষ তাহার কাছে নিজের সমস্ত কৃতকর্ম কীার্ত সমর্পণ করিতেছে এবং মহাকাল সেই সমস্তই গ্রহণ করিয়া এককাল হইতে অন্যকালে বহন করিয়া লইয়া যাইতেছে, সেগুলোকে রক্ষা করিতেছে। কিন্তু যকন মানুষ মহাকালকে অনুরোধ করিল যে, এখন আমারে লহ করুণা করে তখন মানুষ নিজেই দেখিল যে, “ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই! ছোট সে তরী আমারি সোনার ধানে গিয়াছে ভরি। মহাকাল মানুষের কর্মকীর্তি বহন করে নিয়ে যায়, রক্ষা করে কিন্তু স্বয়ং কীর্তিমান মানুষকে সে রক্ষা করতে চায় না। হোমার বাল্মীকি ব্যাস কালিদাস শেক্সপীয়ার নেপেলিয়ন আলেকজান্ডার প্রতাপ সিংহ প্রভৃতির কীর্তিকথা মহাকাল বহন করে নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সে সব কীর্তিমানের মহাকাল রক্ষা করে নাই, যিনি প্রথম অগ্নি আবিস্কার করেছিলেন, বস্ত্রবয়নের
তাঁত আবিস্কার করেছিলেন, তাদের নাম ইতিহাস রক্ষা করেনি, কিন্তু তাঁদের কীর্তি মানব-সভ্যতার ইতিহাসে অমর হয়ে আছে।” প্রত্যেক মানুষ জীবনের কর্মের দ্বারা সংসারকে কিছু না কিছু দান করছে, সংসার তার সমস্তই
গ্রহণ করছে, রক্ষা করছে, কিছুই নষ্ট হতে দিচ্ছে না-কিন্তু মানুষ যখন সে সঙ্গে অংহকেই চিরন্তর করে রাখতে চাচ্ছে, তখন তার চেষ্টা বৃথা হচ্ছে। কিন্তু সত্যি কথাটি হলো যে, “মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে/মানবের
মাঝে আমি বাঁচিবার চাই।” পৃথিবীতে মৃত্যু সব হরণ করে, তথাপি চিরজীবী প্রেম পরাভব মানতে চায় না। প্রেম মৃত্যু অভিমুখ। পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দর্য্যক্ষণিক এবং ¯েœহ-প্রেমের সমস্ত সম্পর্ক অনিত্য। কিন্তু ভালোবাসা, পার্থিব প্রেম পরাভব মানতে চায় না। আপনজনকে কেউ বিদায় দিতে চায় না। “যেতে নাহি দিব” কবিতায় মানুষের চিরন্তর বিরহের করুণ সুর ফুটে উঠেছে। কবিতাটির যিনি বক্তা তাঁর চার বছরের কন্যাটি যেন পৃথিবীরই প্রতিনিধি, পৃথিবীর ¯েœহ-মমতার প্রতিচ্ছবি। যেতে নাহি দিব কবিতায় কবিগুরু একটি অতি সাধারণ বিদায়ের দৃশ্যের ভিতর হতে জগতের একটি চিরন্তর বেদনার পরিচয় উদঘাটন করে দেখিয়েছেন। প্রত্যেক বিদায়ের দৃশ্যের মধ্যে মৃত্যুর একটি ছায়াপাত আছে। চারি বছরের কন্যা যেন অবুঝ মানব, সে কিছুই বুঝতে চায় না শুধু বলে ‘যেতে নাহি দিব। ধরিত্রী, মাতার অসীম সৌন্দর্য ও বিপুল ঐশ্বর্য থাকা সত্তে¡ও তাঁর দুঃখের অন্তনেই কারণ তিনি সন্তানের অনন্ত ক্ষুধা মিটাতে পারেন না, সন্তানকে কাছে ধরে রাখতে পারেন এমন সামর্থ্য তাঁর নেই। তাই তো সমস্ত আকাশে বাতাসে
একটি করুণ সুর ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হচ্ছে- “কী গভীর দুঃখে মগ্ন সমস্ত আকাশ,সমস্ত পৃথিবী! চলিতেছে যতদূর
শুনিতেছি একমাত্র মর্মান্তিক সুর,যেতে নাহি দিব না তোমায়।”
কিন্তু মানুষের প্রেম কিছুতেই পরাভব মানতে চায় না-“——যতবার পরাজয় ততবার কহে, আমি ভালোবাসি যারে
সে কি কভু আমা হতে দূরে যেতে পারে। কিন্তু প্রিয়জনকে হারাবার পর ¤œান নির্বাক মুখে বসে থাকেন আর
ভাবেন, ‘দিব না দিব না যেতে-ডাকিতে ডাকিতে হু হু করে তীব্র বেগে চলে যায় সবে পূর্ণ করি বিশ্বতট আর্ত কলরবে।

“স্বর্গ হইতে বিদায়” এর মর্মবাণীটি হলো, মানুষের জীবনটা তুচ্ছ নয়, মর্ত্য লোক হেলার সামগ্রী নয়, বরং মর্ত্যই স্বর্গ অপেক্ষা অনেক লোভনীয় ও সুন্দর। মর্ত্যরে সঙ্গে মানুষের সুখ-দুঃখ, আশা-নিরাশা, আনন্দ- ব্যথার সম্বন্ধ, সে আমাদেরকে জন্মকাল হতে ¯েœহ দিয়ে আহার দিয়ে শিক্ষা দিয়ে বড় করে তুলেছে। এক ধারা অবিশ্রান্ত সুখ যেখানে, সেখানে সুখের কোন বিশেষত্ব নেই। মানব-মন পরিবর্তনের দ্বারা, বৈষম্য-বৈপরীত্য ও তারতম্যের দ্বারা সুখ ও আনন্দ উপলব্ধি করে মর্ত্য লোকের দুঃখের সঙ্গে ব্যথার সঙ্গে সুখ ও আনন্দ ওতপ্রোতভাবে বিজড়িত হয়ে রয়েছে বলেই সুখের মাধুর্য এত প্রবল, আনন্দের মূল্য এত অধিক। দুঃখকে এড়াতে চাইলে চলবে না, সুখ, দুঃখকে
সমভাবে বুকে চেপে ধরে জীবন পথে চলতে হবে তবেই সুখ-দুঃখ উভয়ে মিলে ফেলে দেবে আবার আনন্দ। স্বর্গের অপসরা পৃথিবীর মানবের বুকে কেবল প্রেমহীন কামনার বহ্নি জ্বেলে তাকে প্রলুব্ধ করে। কিন্ত পৃথিবীর কন্যা তার
প্রেমাকাঙ্খী মানবকে বরণ করে নেয়, তার নিমিত্ত সর্ব দুঃখ-গøানি অকাতরে সহ্য করে, পরের জন্যে আপনাকে দান করে দুঃখ বহন করাতে সে গৌরব ও আনন্দ অনুভব করে। তাই কবি-কল্পিত নিষ্ঠুর স্বর্গের প্রলোভন অপেক্ষা ধরনীর
এই সহানুভূতিময় দুঃখপূর্ণ জীবন মানবের অধিক কাম্য; তাই সুখ-দুঃখ ভরা হাসি-কান্নায় পরিপূর্ণ পৃথিবীই কোন অচেনা অজানা স্বর্গ অপেক্ষা অধিকতর ইপ্সিত। পৃথিবী মাতৃভূমি। আর স্বর্গ মানবের প্রবাস।
সাংবাদিক-কলামিস্ট।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..