শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:০০ অপরাহ্ন
এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ শিক্ষার্থী পাস করেছে। এসএসসি এবং সমমানের পরীক্ষায় ভালো ফলাফলে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা উচ্ছ্বসিত হলেও সে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে উৎকণ্ঠাও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের এক বড় অংশই এখন উদ্বিগ্ন তাদের কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়ে।
অধিকাংশ জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী সবাই ভালো কলেজে ভর্তির আশা করলেও সাধ ও সাধ্যের সীমাবদ্ধতায় তাদের এক বড় অংশ হতাশার শিকার হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারি মিলে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে পড়ার জন্য ৩ হাজার ৭৫৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৯১৪টি একক কলেজ ও ৮৪৬টি স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
এই কলেজগুলোর মধ্যে খ্যাতনামা কলেজের সংখ্যা ১৬৬টি। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে এ ধরনের কলেজ রয়েছে ৭০টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭টি, রাজশাহী বিভাগে ৫টি, খুলনা বিভাগে ১১টি, বরিশাল বিভাগে ১২টি, সিলেট বিভাগে ২২টি ও রংপুর বিভাগে ২৯টি, প্রায় এক লাখ মেধাবী শিক্ষার্থীর জন্য ১৬৬টি মানসম্মত কলেজ যথেষ্ট নয়। দেশে সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের নানামুখী উদ্যোগে পড়াশোনার মানের উন্নতি তিনি হয়েছে তেমন বেড়েছে পাসের হার।
কিন্তু সময়ের চাহিদা পূরণে মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়েনি। বরং বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর পাসকে কেন্দ্র করে কলেজের নামে গড়ে উঠছে ব্যাঙের ছাতার মতো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে তারা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ফাঁদে ফেলে অর্থ আয় করছে।
শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, একাদশ শ্রেণিতে কোনো আসন সংকট হবে না। আক্ষরিক অর্থে মন্ত্রীর বক্তব্য শতভাগ ঠিক। দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা কলেজের অভাব নি:সন্দেহে নেই। মানসম্মত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না এমন অনেকে এসব কলেজে শিক্ষক হিসেবেও আসীন। সেসব কলেজে মেধাবীদের ভর্তি হতে হলে তা হবে দুর্ভাগ্যকে বরণ করার সামিল।
মাধ্যমিক স্তরের বিপুল সংখ্যক শিক্ষকের শিক্ষাদানে অদক্ষতার বিষয়টি বারবার আলোচনায় এলেও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের দক্ষতা কোন পর্যায়ে রয়েছে, তা সেভাবে আলোচনায় আসে না। দেশে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে হাজার হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র কয়েকশ। এ তথ্য থেকে দেশে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দক্ষ শিক্ষকের সংখ্যার বিষয়ে একটি ধারণা পাওয়া যায়। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্তত ১৬ লাখ আসন শূন্য থাকবে।
পাস করা শিক্ষার্থীর তুলনায় এ স্তরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আসন বেশি থাকায় শিক্ষার্থীর ভর্তি নিয়ে চিন্তামুক্ত থাকবে, এটাই স্বাভাবিক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তব চিত্রটি ভিন্ন। পছন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবে কিনা, এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা এখন চিন্তিত। জিপিএ-৫ সহ ভালো ও মধ্যম মানের ফল করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবার অনেক বেশি। ফলে পছন্দের শীর্ষে থাকা কিছু প্রতিষ্ঠানে তুমুল ভর্তি যুদ্ধ হবে। এর বিপরীতে অখ্যাত, নাম সর্বস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষা সংকটে পড়বে।
প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতে মানসম্মত শিক্ষাদান নিশ্চিত হয়, সে ব্যাপারে সরকারকে যত্নবান হতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা বোর্ড সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। শিক্ষাখাতে যেহেতু জনগণের ট্যাক্সের টাকা ব্যয় হয় সেহেতু এ ক্ষেত্রে কোনো অবহেলার অবকাশ থাকা উচিত নয়।
বর্তমান সরকার জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নসহ শিক্ষা ক্ষেত্রে এ সংস্কার ও গুণগত পরিবর্তন সাধনে বদ্ধ পরিকর। এ লক্ষ্যে কিছু কার্যক্রম ও পদক্ষেপ গ্রহণও শুরু হয়েছে। পরীক্ষা গ্রহণ ও ফল প্রকাশের ক্ষেত্রেও এসেছে যুগোপযোগী পরিবর্তন। আমরা যদি আমাদের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে চাই, তাহলে শিক্ষার সবস্তরে মান উন্নয়নের পদক্ষেপ নিতে হবে।
এখন উচিত হবে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া হ্রাসসহ শিক্ষার মানের উন্নতিকরণ। নৈতিকতাসহ আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষসহ চলমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পারলে, শিক্ষার সার্বিক উন্নয়ন সাধন সম্ভব নয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় পর্যায়ক্রমে তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হবে বলেই প্রত্যাশা।