সোমবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৩, ০৬:৪১ পূর্বাহ্ন
পরম করুনাম স্রষ্টা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন সেরা জীব হিসাবে। দিয়েছেন অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে আলাদা স্বতন্দ্র বৈশিষ্ট্যে জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেক। তবুও অনেক মানুষের মধ্যে ভাল-মন্দ বিবেচনা করে নিজের পরিবারের এমনকি সমাজের সাথে মিলেমিশে সুন্দরভাবে বাঁচার প্রবণতা খুবই কম দেখা যায়। কিন্তু কেন? আমরা কি পারিনা তার হিসাব মিলাতে? অবশ্যই। পারি। কারণ প্রত্যেক মা-বাবা যদি তাদের সন্তানকে ছোটবেলা থেকে নীতি নৈতিকতার শিক্ষা দেন, সে সন্তান কখনো মা-বাবার অবাধ্য বা খারাপ কোন কাজে লিপ্ত হবে না। আর আপনার সন্তান হবে একজন আদর্শ সন্তন। প্রত্যেক মা-বাবার চাওয়া হোক সন্তানের পরিচয়ে বেঁচে থাকা। সেজন্য প্রতিটি সন্তানকে যোগ্য ও আদর্শ নাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। প্রত্যেক মা-বাবা তার সন্তানের ভালো চান। আর আমি-আপনি অবশ্যিই চাই যে, আমার আপনার সন্তানেরা বড় হয়ে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসবে। তাই সন্তানের উত্তম চরিত্র গঠনের পিছনে সবচেয়ে বেশি ভুমিকা পালন করতে হবে মাকে, তারপর বাবাকে। মা-বাবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রতিটি সন্তান হবে আদর্শ চরিত্রবান।
বর্তমান আধুনিকতার যুগে পাপাচার ও অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকতে সন্তানের গতিবিধি ও নীতি নৈতিকতার দিকে নজর দিতে হবে। অনেকসময় বয়স কম হওয়ার কারণে অজ্ঞতাবশতঃ ছেলে মেয়ে ভূল করতে পারে, তখন তাদের প্রতি রাগ বা ধমক না দিয়ে তাদেরকে বোঝাতে হবে। কোন কাজ সঠিক এবং কোন কাজ সঠিক নয়; সেসবের ধারনা দিতে হবে এবং এই ভূলের ক্ষতির দিকটিও সন্তানের সামনে তুলে ধরতে হবে। বর্তমানে প্রায় সকল সন্তান স্মার্ট ফোন ও ইন্টারনেটের ব্যবহার করছে। অনিয়ন্ত্রিত এসব ডিভাইসের ব্যবহার অনেক ছেলে-মেয়েকে অনিরাপদ জীবনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মা-বাবার সঠিক তদারকি এবং স্রষ্টার কাছে জবাবদিহিতার মনোভাব থাকলে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাই সন্তানের মা বাবার উচিত নিজেকে এবং নিজের সন্তানকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে তৈরি করা। যাদের মধ্যে থাকবে সবসময় ইতিবাচক চিন্তা-ভাবনা। অপরের উপকার করার মনমানসিকতা। প্রত্যেক দায়িত্বশীল মা-বাবা কিভাবে রক্ষা করতে হবে-মানুষের মর্যাদা, সম্মান, উচ্চাসন সবকিছু স্রষ্টার কাছে সমানভাবে বিচার্য। তাই নিজেদের অবহেলার কারনে কোন সন্তান যদি বিপথে চলে যায়, তবে সে সব অপরাধের জন্য স্রষ্টার কাছে সবার আগে মা-বাবাকে জবাবদিহি করতে হবে। আমাদের সন্তান মাদকে আসক্ত কি না, কোন অন্যায় কাজে লিপ্ত কি না, এসব বিষয়ে খেয়াল রাখার দায়িত্ব আমাদের। অপরাধ করলে শাসন থেকে একেবারে উদাসীন হওয়া যাবে না। আবার শাসনের নামে অতিরিক্ত কিছু করাও যাবে না। সন্তানদের মূল্যবোধ ও নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়া জরুরী। অপরাধপ্রবণতা থেকে রক্ষার জন্য সন্তানদের সময় দিতে হবে। তাদের বন্ধু নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে কৌশলে প্রভাবিত করতে হবে। তাদের সুন্দর আচার-ব্যবহার শেখাতে হবে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন- ‘তেরো-চৌদ্দ বছরের মতো বালাই আর নাই’। এ সময় আবেগ আর কৌতুহলের বশবর্তী হয়ে অনেকে নানা ধরনের খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়ে। যখন বুঝে তখন আর শোধরানোর সময় থাকে না। তাই এ সময়টাতে মা-বাবাকে সন্তানের বন্ধু হয়ে কাছে থাকা একান্ত জরুরী।
প্রতিদিন খাবার দেওয়ার মতো মা-বাবার উচিত সন্তানের স্কুল ব্যাগটা একবার চেক করা, রাতে যতক্ষণ পড়াশোনা করে ততক্ষণ পাশে থাকা, স্কুলে পৌঁছলো কিনা, যথাসময়ে ফিরলো কিনা, খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো করছে কি না, পরীক্ষার ফলাফল কি, তা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা, প্রতিষ্ঠানে ৭ দিনে না হোক মাসে অন্ততঃ একবার হলেও খোঁজ খবর নেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
নিজের সন্তানকে প্রত্যেক মা-বাবা ভালবাসেন এটা স্বাভাবিক, প্রত্যেকে তাদের সন্তানকে বিশ্বাস করেন এটাও স্বাভাবিক। কিন্তু অধিক ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ও অধিক বিশ্বাস মোটেও সমীচীন নয়। বিশেষ করে সবার ক্ষেত্রেই ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগাতে হবে। পরিশেষে বলতে চাই আর হতাশা ও দূর্বিষহ জীবন নয়। সত্য সুন্দর ও মঙ্গলময় হয়ে উঠুক প্রত্যেকের জীবন।