1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:০৮ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

পীরানে পীর-ইয়েমেনী বীর হযরত শাহ জালাল এর স্মৃতিধন্য পূন্যভূমি সিলেট প্রসঙ্গেঁ “রবীন্দ্রনাথের শ্রী ভূমি বনাম লিন্ডসের এডিনবার্গ” প্রতিবেদনের প্রাসঙ্গিঁকতা: কিছু কথা

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২০ মে, ২০২১
  • ৫০০ বার পঠিত

মুজিবুর রহমান মুজিব:

আধুনিক বিশ্বে-সংবাদ পত্র দেশ ও জাতির দর্পন। হাল আমলে-মিডিয়া-কল্যান কামী গণতান্ত্রীক রাষ্ট্রে- রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ-ফোর্থ এষ্টেট-হিসাবে খ্যাত ও স্বীকৃত। মিডিয়া ভূবনে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া আবিষ্কার-ব্যবহারে এই ভূবনে পূর্ণতা এসেছে-শান-শওকত-মান-মর্য্যাদা সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই ষাটের দশকের একজন সংবাদ কর্মি আমি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক শ্রদ্ধেয় শেখ ফজলুল হক মনি-র সাপ্তাহিক বাংলার বানীর মাধ্যমে আমার লেখা লেখিতে হাত পাকানো। পরে বাংলার বানী দৈনিক হয়ে বিপুল পাঠক প্রিয়তা পায়-আমি ফিচার রাইটার হিসাবে নিয়মিত হই। ষাটের দশকে দৈনিক সংবাদপত্র সাংবাদিকও ছিলেন সীমিত সংখ্যক। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে সংবাদপত্র, মেধাও মননের ভূবনে, মঞ্চও কবিতায় গুণগত মৌলিক পরিবর্তন আসে, মুক্ত জীবনের জয়গান ধ্বনিত হয়। পত্র পত্রিকার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে- প্রকাশনা শিল্পের শুভ সূচনা হতে থাকে। স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তিতে এসে বিভিন্ন প্রতিকুলতার মাঝেও সংবাদপত্র শিল্প একটি পর্য্যায়ে এসে পৌচেছে। বাংলা-ইংরেজী জাতীয় দৈনিক এবং সংবাদ-সাংবাদিকতা সংক্রান্ত প্রতিষ্টান সমূহ এবং জাতীয় সাংবাদিক সমাজের পেশাগত দক্ষতা ও সুনাম স্বদেশের সীমানা পেরিয়ে বহির্বিশ্বে ও ছড়িয়ে পড়েছে।
সেই ষাটের দশক-যৌবনের সোনালি দিনগুলি থেকে এখন পর্য্যন্ত-জীবন সায়াহ্নে এই পড়ন্ত বেলায় ও সংবাদ পত্র শিল্প মিডিয়া ভূবনের-মায়া পরিত্যাগ করতে পারিনি, নিজেকে জড়িয়ে রেখেছি।
সাম্প্রতিক কালে ভয়াবহ বৈশ্বিক ব্যাধি কোভিড নাইনটিন এর কারনে স্বাস্থ্যবিধি মোতাবেক স্বেচ্ছা গৃহবন্দি-সেলফ কোয়ারেনন্টাইন আইসলেশেনে আছি। এই বার্ধক্যে বহুবিধি বার্ধক্য জনিত ব্যাধি নিয়ে ঘর থেকে না বেরুতে পরিবারেরও জোর দাবী ও চাপ আছে। ফলতঃ চেম্বার বন্ধ রেখে আমার প্রিয় পুস্তক সমূহ নিয়ে অস্থায়ী ভাবে দো’তালায় স্থানান্তরিত হয়েছি। এই কঠিন কালে বিস্মিল্লাহ্ বলে আল্লাহ ভরসা করে কোরআন-হাদিস-টিভি-পত্র পত্রিকা নিয়েই আমার সকাল-সন্ধ্যার সময় কর্তন। পাঁচ বছর-দশ বছর বয়সী আমার প্রিয় দুই দৌহিত্র মাহতির রহমান এবং মুমতাহিন তাওসিফ নাহিয়ান ইদানিং খুব “মুডে” আছে। বিগত একুশের বই মেলায় প্রকাশিত আমার গবেষনা গ্রহ্ণ “আমার দেখা একাত্তোর-মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি কথা” তাদের নামে উৎসর্গ করেছি তাদের সচিত্র উৎসর্গ পত্র দৃষ্টে তারা দু’জনেই দারুন উৎফুল্ল ও আনন্দিত। আমি পরিতৃপ্ত। তাদেরকে উত্তরাধিকার সূত্রে আমার আয়রোজগারের কোন সামান্যতম বিত্ত বেসাত রেখে না যেতে পারলেও আমার দেশ ও জাতির গৌরবময় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস উপহার দিয়ে গেলাম-তাঁদের নামে উৎসর্গ করে তাদেরকে সম্মানিত করলাম। আমরা-আমাদের প্রজন্ম যা পারিনি স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জিবিত বর্ত্তমান প্রজন্ম যেনো তা পারে তার জন্য দোয়া করে গেলাম আমার এই দুই দৌহিত্রই এখন আমার সকাল সন্ধ্যার সাথী। নিত্য সহচর। রসুলপুর মিয়ার বাড়িতে পৈত্রিক সুত্রে আমার প্রচুর ভূ-সম্পত্তি জায়গা জমি থাকলেও আমি তা চিনি না আমার প্রয়াত পিতা আমাকে চিনান নি, আমি আমার একমাত্র ছেলেকে ও চিনাই নি। শুধু আমার পিতা মাতার কবরের পাশে আমার কবরের জন্য সামান্য ভূমি চিহ্নিত করে রেখেছি, বাউন্ডারি ওয়ালও দিয়েছি।
বাংলাদেশের প্রবীন সাংবাদিক-মেধাবি সম্পাদক মতিউর রহমান সম্পাদিত বহুল প্রচারিত-পাঠক নন্দিত জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর গ্রাহক ও পাঠক আমি। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত ইতিহাস ঐতিহ্য কৃষ্টি সংস্কৃতি সচেতন প্রথম আলো আমাদের প্রায়ান্ধকার জীবনও জগতকে আলোকিত করছে-বস্তনিষ্ট তথ্য ও তত্ব বহুল মান সম্মত সাংবাদিকতার মাধ্যমে সংবাদপত্র শিল্প ও আধুনিক সাংবাদিকতার মান মর্য্যাদা বৃদ্ধি করছে। ইতিপূর্বে আমাদের জাতীয় দৈনিক সমূহ ছিল রাজধানী কেন্দ্রীক আটষট্টি হাজার গ্রাম ছিল গৌন। সাম্প্রতিক কালে জাতীয় দৈনিক সমূহ মফস্বল পাতার আকার বৃদ্ধি করতঃ মফস্বলের কথা ও কাহিনী গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করছেন।
আমাদের কালে মফস্বল সাংবাদিকদের সম্মানি ছিল আনার হিসাবে লাইনেজ, টাকার হিসাবে ছবি। এই হিসাবে মাসিক সম্মানী শ-টাকার অর্ধেকও হত না। এখন মাশাল্লাহ্ সম্মান ও সম্মানী অনেকাংশেই বৃদ্ধি পেয়েছে-সাংবাদিকতা এখন একটি সম্মান জনক পেশা। অনেকের কাছে একটি মিশনও বটে। দৈনিক প্রথম আলোর বিগত সাতই মে-র সংখ্যায় পঞ্চম পৃষ্ঠায় অর্ধপাতা ব্যাপী ছয় কলামে “রবীন্দ্রনাথের শ্রীভূমি বনাম লিন্ডসের এডিনবার্গ” শিরোনামে সিলেট প্রতিনিধি সুমন কুমার দাশ এর নামে একটি তথ্য বহুল সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনের উপশিরোনামে বলা হয়েছে “বড় শহর ১, সিলেট। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে রাজধানী ঢাকা যেমন বড় হয়েছে, তেমনি সম্প্রসারিত হয়েছে দেশের পুরানো শহর গুলোও। বড় শহরের পরিবর্তনও বাস যোগ্যতা নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজন।”
দৈনিক প্রথম আলোর এই উদ্যোগটি অত্যন্ত প্রশংসনীয়। দেশের আটটি বিভাগীয় সদর-শহরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে সম্ভাবনা-সমস্যার কথা আলোচিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ-সরকার অবহিত হবেন, আগামী দিনের উন্নয়ন কর্মকান্ড ও পরিকল্পনা প্রনয়নে সহায়তা দেবে।
প্রতিবেদনের শুরুতে প্রতিবেদক সুমন কুমার দাশ লিখেছেন “স্কট ল্যান্ডের নাগরিক রবার্ট লিন্ডসে ১৭৭৮ থেকে ১৭৯০ সাল পর্যন্ত সিলেটের কালেক্টার পদে দায়িত্ব পালন করেন। সিলেট দেশের আটটি বিভাগীয় শহরের একটি। দেশের দীর্ঘতম নদী সুরমার উত্তর পাড়ে প্রায় ৭০০ বছর আগে এ শহরের যাত্রা শুরু হয়”।
রবীন্দ্রনাথ এর শ্রীভূমি শ্রীহট্টের প্রাচীন ইতিহাস এর তথ্য সম্বলিত সাংবাদিক সুমন কুমার দাশ এর এই সচিত্র প্রতিবেদন তথ্য বহুল হলেও ইতিহাসের তত্ব, প্রকৃত সত্য উপেক্ষিত হয়ে সংবাদ প্রতিবেদনটি খন্ডিত ও অসম্পূর্ণ হয়ে গেছে। সিলেটের একজন নাগরিক, ইতিহাসে একজন পাঠক হিসাবে প্রতিবেদনে অনুল্লেখিত প্রাসঙ্গিঁক তথ্যাদি প্রকাশ একজন সিলেটির নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করছি। দুধ ছাড়া যেমনি দধি-দুগ্ধ জাত সামগ্রী হয় না, ছানা-চিনি-পানি ছাড়া যেমনি রশে ভর্তি রশগোল্লা হয় না, সর্ব্বোপরি চাল ছাড়া যেমনি ভাত হয় না ঠিক তেমনি পীরানে পীর ইয়েমেনী বীর হযরত শাহজালালকে বাদ দিয়ে সিলহট-সিলেটের ইতিহাস হয় না কারন সিলেটের পূর্ব নাম-গৌড়-এর পতন এবং সিলেটের পত্তন হয় শাহ জালালের হাত দিয়েই- ১৩০৩ সালে। শত গ্রহ্ণ তথ্য, শিলা লিপি-তা¤্র ফলক মতে ১৩০৩ খৃষ্টাব্দে হযরত শাহ জালাল ইয়েমেনী ৩৬০ আউলিয়া সহ আউলিয়া বাহিনী নিয়ে গৌড়-এর শেষ স্বাধীন শাসক সামন্ত রাজা গোবিন্দকে পরাজিত করে ইসলামের বিজয় নিশান ওড়ান। আউলিয়া বাহিনীর সিপাহ সালার ছিলেন দীর্ঘদেহী বীর যোদ্ধা ধর্ম প্রাণ সাচ্চা সুন্নী মুসলমান সৈয়দ নাসির উদ্দিন। হবিগঞ্জের মুড়ার বন্দ-এ-এই বীর যোদ্ধার পূর্ব পশ্চিমি মাজার বিদ্যমান। প্রসঙ্গঁত উল্লেখ্য-প্রাচীন কালে সমগ্র বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল ১। লাউড়, ২। গৌড়, ৩। জৈন্তিয়া, ৪। তরফ এবং ৫। ইটা- এই পাঁচটি প্রধান সামন্ত রাজ্যে বিভক্ত ছিল। রাজা গোবিন্দ গৌড় এর রাজা ছিলেন বলে ইতিহাসে গৌড় গোবিন্দ হিসাবে খ্যাত। গোবিন্দের পরাজয়, পলায়ন এবং গৌড় রাজ্যের পতনের পর এই ভূখন্ডের নুতন নামাকরন হয় শ্রীহট্ট-সিলহেট-সিলেঠ। সিলেট নামাকরনে সিলি চতলা কিংবা শিল্-হট এই দুটি তথ্য ইতিহাসের উল্লেখিত আছে। ১৩০৩ সাল থেকে এই পূন্যভূমি নতূন নামে অভিহিত হতে থাকে। এই শতাব্দীতে দিল্লীর তুঘলক বংশীয় বিখ্যাত শাসক সুলতান মোঃ বিন তুঘলক এর শাসনামলে সর্বকালের সেরা আফ্রিকান পর্য্যটক দিল্লীর কাজি ও সুপন্ডিত ইবনে বতুতা সিলেট এসে হযরত শাহ জালালের সাথে সাক্ষাত করেন। আমাদের প্রিয় পূন্যভূমি সিলেট দেশের আটটি বিভাগ নয় উপ-মহাদেশের মধ্যে একটি প্রাচীন জনপদ। কোলকাতার বয়স যেখানে মাত্র তিন শত বৎসর, ঢাকার বয়স মাত্র চার শত দশ বৎসর সেখানে সিলেটের বয়স সাত শত সতেরো বৎসরের ও অধিক। সেকাল থেকে এ কাল পর্য্যন্ত সর্বকালেই সিলেটের জনগন ধর্ম প্রাণ, সাহসী, বীর যোদ্ধা ও। প্রাচীন কালে কুরু-পান্ডব-দের কুরুক্ষেত্রের ঐতিহাসিক যুদ্ধে এই অঞ্চলের বীর যোদ্ধাগন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছিলেন বলে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন লোক বিজ্ঞানী চৌধুরী গোলাম আকবর সাহিত্য ভূষন এর পুরাতত্ব মূলক লোক ছড়ায় প্রমান পাওয়া যায়। শ্রদ্ধেয় অনুসন্ধান বিষারদ-সাহিত্য ভূষন বলেন-
“কুরু পান্ডব ঝগড়া করেন
বাটুয়া লইয়া,
ভগদত্ত রাজা গেলা
কুরুর পক্ষ হইয়া।
রাজ্য জুড়িয়া যত পলোয়ান
ছিলা যতেক
ছিপাহী হইয়া তারা
গেলা ততেক”।
রাজা ভগদত্ত এক অক্ষৌহিনী সৈন্য সহ কুরু ক্ষেত্রের যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছিলেন বলে প্রাচীন ইতিহাসে প্রমান মিলে। রাজা ভগদত্তের উপ রাজধানীর ধ্বংসাবসেস সিলেট অঞ্চলে ইতিপূর্বে আবিষ্কৃত হয়ে ছিল। আন্দোলন-সংগ্রামের ধারা বাহিকতায় বৃহত্তর সিলেটের বীর জনতা বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন এবং আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন পলাশীর যুদ্ধে-বিনাযুদ্ধে পরাজিত হন বাংলা বিহার উড়িস্যার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা। বাংলায় বানিজ্য করতে আসা বৃটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী রবার্ট ক্লাইভ এর নেতৃত্বে মাত্র তেইশ শত সৈন্য নিয়ে বেঈমানী বিশ্বাস ঘাতকতা এবং প্রতারনার মাধ্যমে বাংলার ইরাকি সিপাহ শালার বেঈমান মীর জাফর আলী খাঁন, সুদ খোর ধনকুরের জগৎ শেঠ, রাজা রাজ বল্লভ, রায় দূর্লভ দের বিশ্বাস ঘাতকতায়-ইংরেজ বনিকের মানদন্ড দেখা দিল রাজ দন্ড রুপে পোহালে শর্বরী”।
বিয়োগান্তক পলাশীর বিপর্য্যায় ও বেঈমানীর পরও বাংলার ভাগ্যহারা-রাজ্য হারা মুসলিম সমাজ বৃটিশ কোম্পানীর গোলামী মেনে নেন নি, কোম্পানী ও তাঁদের এ দেশীয় দোসর দের বিরুদ্ধাচরন করেছেন, বিদ্রোহ করেছেন যুদ্ধ করেছেন। পলাশীর যুদ্ধের দুই দশকের মাথায় কোম্পানীর শাসক ও সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন এ দেশের দেশ প্রেমিক বীর যোদ্ধাগন। প্রতিবেদক সুমন কুমার দাশ উল্লেখিত আলোচিত বৃটিশ কালেক্টার রবার্ট লিন্ডসের কার্য্যকালে মহরম মাসে পূন্য ভূমি সিলেটে কোম্পানী বিরোধী বিদ্রোহের দুই নায়ক এর নাম সৈয়দ হাদি ও সৈয়দ মাহদি। আজ ইংরেজ এর দিন শেষ বলে দুই ভাই কোম্পানীর কর্মচারিও সৈনিকদেরকে আক্রমণ করেন। কুখ্যাত কালেক্টার গন বিরোধী লিন্ডসে অধিক সৈন্য সহ সসস্ত্র অবস্থায় বিদ্রোহী সৈয়দ ব্রাদার্স এর উপর ঝাপিয়ে পড়েন, নিজ হাতে গুলি করে দুই দেশ প্রেমিক সৈয়দ জাদাকে হত্যা করতঃ বিদ্রোহ দমন করেন। এই দুই অমর শহীদ পূন্যভূমি শাহ জালালের শ্রীহট্টে-চীর শয়ানে শায়িত। হাদা মিয়া ও মাদা মিয়ার টিলাটি শহীদ সৈয়দ হাদি এবং শহীদ সৈয়দ মাহদির উজ্জল স্মৃতি বহন করছে। কালেক্টার রবার্ট লিন্ডসের দেশ স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবার্গ বিশ্বের সেরা বিশটি শহরের একটি হলেও কোম্পানীর কালেক্টার রবার্ট লিন্ডসে একজন গন বিরোধী-লুন্ঠন কারি ঘৃণিত শাসক ছিলেন। সিলেটে কোম্পানীর কালেক্টার উলিয়াম মেকপিস থেকারেও একজন গনবিরোধী এবং সিলেটের সম্পদ লুন্ঠনকারি কর্মকর্তা ছিলেন। সিলেটের একটি টিলা এখনও টেকারের টিলা বলে পরিচিত। সিলেট শাহ জালালের নামে জালালাবাদ নামেও অভিহিত। সিলেটে শাহ জালালের মাজার, ছিলটি-ঐতিহ্য সমগ্র বৃহত্তর সিলেট বাসিকে এক ও ঐক্যবদ্ধ করে রেখেছে। এই পীরানে পীরের মাজার জিয়ারতে সেকালে যেমনি এসেছেন মুঘল বাদশাহ্ ঠিক তেমনি এ কালেও স্বদেশী সকল শাসক বিশেষতঃ নির্ব্বাচনী প্রচারনার সময় সকল রাজনৈতিক দলের প্রধান গন তাঁর মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে নির্ব্বাচনী প্রচারনা শুরু করেন। সিলেটের রাজনীতিতে একটি “মিথ”প্রচলিত আছে- “মিথটি-কখনও মিথ্যা হয়নি। ৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সমগ্র বৃহত্তর সিলেটে শুধু মাত্র সিলেট সদর আসনের জয়লাভ করেছিলেন বি.এন.পি’র প্রতিষ্ঠাকালীন প্রভাব শালী নেতা খন্দকার আব্দুল মালেক। সেবার সরকার গঠন করেছিলেন দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। দেশ ও জাতি ফিরে এসেছিল জবাব দিহিতা মূলক সংসদীয় গনতন্ত্রে। সিলেট সদর-শহরে জাতীয় সংসদের আসনটি অধিকতর মর্য্যাদা সম্পন্ন। এই আসনের সৈয়দ আব্দুল মজিদ সি.আই.ই.বৃটিশ ভারতে আসাম মন্ত্রী সভার শিক্ষা মন্ত্রী হয়ে শিক্ষা উন্নয়নে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে ছিলেন-ঐতিহ্যবাহী এম.সি. কলেজ রক্ষায় সংকট মুক্ত করেছিলেন। স্বাধীনতা উত্তর কালে এই আসনের সাংসদ গন গুরুত্বপূর্ণ পদ প্রাপ্তির মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নে অবদান রেখেছেন। এই আসনের মাননীয় সাংসদ হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী মাননীয় স্পীকার , এম.সাইফুর রহমান মাননীয় অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী, আবুল মাল আব্দুল মোহিত মাননীয় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়ে ছিলেন। এই আসনের বর্ত্তমান সাংসদ ড.একে আব্দুল মোমেন বর্ত্তমানে পর রাষ্ট্রমন্ত্রীর গুরু দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের অন্য কোন বিভাগীয় সদরে এমন কোন নজির কোথাও নেই। এই শহরে-এই সুরমার তীরে গনমানুষের কবি ছিলেন কবি দিলওয়ার। সুরমা পারের কবি দিলওয়ার ঢাকায় জাতীয় পত্রিকার সম্পাদনা যাবতীয় ঢাকাই সুযোগ-সুবিধা-আভিজাত্য পেছনে ফেলে ছুটে এসেছেন সুরমা পারে, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন এই শহরে, আছে শতাব্দীর প্রাচীন বাতিঘর-মুক্ত বুদ্ধি ও মুক্ত চর্চার কেন্দ্র কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ কেমুসাস, উপ-মহাদেশের প্রাচীনতম পত্রিকা সিলেট বান্ধব আমিনুর রশীদ চৌধুরীর দৈনিক যুগভেরী, ইতিহাস-ঐতিহ্যের নিরব স্বাক্ষী আলী আমজাদের ঘড়ি এই সব সিলেটের গর্বও গৌরব। মুক্ত প্রানের সুস্থ জীবনের এমন সমাহার কোন বিভাগী সদরে নেই।
সর্ব্বোপরি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সিলেটের বীর জনতা বীর যোদ্ধাদের কথাও কাহিনী ইতিহাসের অংশ। স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রধান সেনাপতি বঙ্গঁ বীর মোঃ আতাউল গনী ও সমানী এই শহরেরই সু-সন্তান, এই শহরেই চীর শয়ানে। জেনারেল ওসমানীর পৈত্রিক বাসগৃহ মুক্তিযুদ্ধের যাদুঘর হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছে। এই শহরের যুগল টিলায় অজ্ঞাত স্থানে আরেকটি অনালোচিত ইতিহাস লুক্কায়িত আছে। ভারতের বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ শ্রদ্ধেয় ড.অমলেন্দু দে রচিত গবেষনা গ্রহ্ণ “সিরাজের পুত্র ও বংশ ধরদেন সন্ধানে-পত্রস্থ তথ্য মতে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব শহীদ সিরাজুদ্দৌলার একমাত্র পুত্র সন্তান রাজা মোহন লালের ভাগ্নে যুগল কিশোর রায় চৌধুরীর সমাধি এখানেই। প্রতিহিংসা পরায়ন ইংরেজদের হাত থেকে সিরাজের শিশু পুত্রকে প্রাণে বাঁচার জন্য ছদ্দ নামে মুর্শিদাবাদ থেকে নিয়ে এসে ময়মন সিংহের বিখ্যাত জমিদারের কাছে দত্তক দিয়ে যান। নাম পরিচয় গোপন রেখে প্রয়োজনে স্থানান্তরের ও পরামর্শ ছিল সিরাজ পুত্রের প্রতি। সিরাজ পুত্র যুগল কিশোর রায় চৌধুরী স্থানান্তরিত হয়ে সিলেট এসে বসবাস শুরু করেন। তাঁর নামেই টিলাটি যুগল টিলা নামে খ্যাত। যুগল কিশোর মৃত্যোর সময় নিজ পরিচয় প্রকাশ করে দাহের পরিবর্তে ইসলামি বিধান মতে দাফন-কাপনের ইচ্ছা প্রকাশ করলে তাঁকে এখানেই সমাহিত করা হয়। ইতিপূর্বে সিলেটের বিশিষ্ট সাংবাদিক-কলামিষ্ট প্রকৃতি প্রেমি বন্ধুবর আফতাব চৌধুরীকে নিয়ে সিরাজ পুত্র যুগল কিশোর এর অজানা-অদেখা কবর জিয়ারত করে তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করেছিলাম। আজও কারি। এ ব্যাপারে ব্যাপক অবহিত আছেন সিলেটের বিশিষ্ট আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, মানবাধিকার সংঘটক-সুলেখক, শহীদুল ইসলাম শাহীন।
সিলেটের আরেকটি উল্লেখ্য বিষয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অবতার ও ধর্ম প্রচারক শ্রী চৈতন্যের পিতৃ ভূমি এই সিলেটে। শাহ জালালের সিলেট রাজনৈতিক উচ্ছাস-আবেগ-উত্তেজনা আছে কিন্তু কোন সাম্প্রবদায়ীক সংঘাত-সংকট নেই বরং সিলেটে একটি চমৎকার সাম্প্রদায়িক সাম্প্রতি বিদ্যমান। এ ও একটি উল্লেখ্য বিষয়।
পাহাড়, টিলা, নদী, প্রকৃতি প্রসঙ্গেঁ প্রতিবেদকের চেতনার সঙ্গেঁ দ্বিমত পোষন করার অবকাশ নেই। সিলেটের ভূ-প্রকৃতি বৈচিত্রময়-প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও নিসর্গ মন্ডিত। সিলেটের পাহাড় ও নিসর্গ মন্ডিত। সিলেটের পাহাড় টিলা প্রসঙ্গেঁ প্রতিবেদক যথার্থ আলোচনা করেছেন। টিলার শহর সিলেটে থেকারের টিলা, হাদা মিয়া মাদা মিয়ার টিলা এবং গৌড় গোবিন্দের মন্ত্রী মনা রায় এর নামে মনারায় টিলার অবস্থান ও অস্থিত্ব এখনও বিদ্যমান। উন্নয়ন বিদ ও উন্নয়ন বিষারদও বিশেষজ্ঞ গণের মতে ডেভলাপমেন্ট ইজ ও কন্টিনিউয়াস প্রসেস-উন্নয়ন একটি পর্য্যায় ক্রমিক-ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। বিবর্তনও বিকাশের মাধ্যমে আদি গুহা মানব থেকে আধুনিক মানব জাতির অবস্থান। তবে অতি অবশ্যই আমাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে উন্নয়নের কথিত জোয়ারে আমাদের পরিবেশ-প্রকৃতি নষ্ট না হয়, ভেষে না যায়। এ ব্যাপারে মিডিয়া ও পরিবেশবিদ, পরিবেশ বিজ্ঞানী ও মিডিয়া ভূবন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। বর্তমান সিসিক মেয়র কর্ম বীর আরিফুল হক চৌধুরী একজন মিডিয়া বান্ধব ব্যক্তিত্ব। কারও যানযট মুক্ত শহর, নদী নালা খাল দখল মুক্তিতে তাঁর বীরত্ব পূর্ণ ভূমিকা কৃতিত্বের দাবীদার। পরিবেশ সুরক্ষা বৃক্ষ রোপন ও পরিচর্য্যায় সরকার ও প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যক্তি পর্য্যায়েও এগিয়ে আসার এখনই সময়। শাহ জালাল উপশহরের চৌধুরী বাড়ীর একজন আফতাব চৌধুরী মানব প্রেম, প্রকৃতি, পরিবেশ সুরক্ষায় সেই কবে শুরু করেছিলেন-সুন্নতে রসুলুল্লাহ বৃক্ষ রোপন। তাঁর বহুবিধ বৃক্ষ রাজি আমাদের বিবর্ন জীবনকে সবুজাভ বর্ণীল করছে। তিনি পরিবেশ সুরক্ষা ও বৃক্ষ রোপন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পুরষ্কার-স্বর্ণ পদক প্রাপ্ত হয়েছেন। প্রকৃতি ও বৃক্ষ প্রেমি সহজ সরল সাদা মনের মানুষ আফতাব চৌধুরীর মত আরও আফতাব চৌধুরী চাই, তাহলে রবীন্দ্র নাথের শ্রীভূমির শ্রী অধিকতর বৃদ্ধি পাবে।
খন্ডিত ও অসম্পূর্ণ হলেও সাংবাদিক সুমন কুমার দাশকে একটি মূল্যবান প্রাসঙ্গিঁক রচনার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। একজন সিলেটি হিসাবে প্রতিবেদনে অনুল্লেখিত তথ্য-ইতিহাস ঐতিহ্য সংক্ষেপাকারে নিবেদন করে পূন্যভূমি সিলেটের গৌরবময় কথাও কাহিনী দেশবাসির খেদ মতে সবিনয়ে পেশ করলাম।

[ষাটের দশকে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এম.সি.কলেজের ছাত্র ও সংবাদ কর্মি মুক্তিযোদ্ধা। সিনিওর এডভোকেট হাইকোর্ট। সাবেক সভাপতি মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব]

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..