শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:১৬ অপরাহ্ন
বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানা গেছে। পুলিশের একজন কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। রাজধানীর শাহবাগসহ যেসব জায়গায় তরুণ-তরুণী কিংবা নানা বয়সী মানুষ জমায়েত হওয়ার চেষ্টা করে। সেসব জায়গায় বাড়ানো হয় গোয়েন্দা নজরদারি। পোশাকি পুলিশও দায়িত্ব পালন করে। থানা পুলিশও থানা এলাকায় টহল বাড়ায়। এ ছাড়া ২৪ ঘণ্টার জন্য রাজধানীর বিভিন্ন বার বন্ধ রাখা হয়। কেউ যেন মদ পান করে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোর সুযোগ না পায়, সে অনুযায়ী পুলিশ কার্যকর ব্যবস্থা নেয়।
সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপনে তরুণদের মাধ্যমেই বিশৃঙ্খলার ঘটনাগুলো আগে ঘটেছে। বিশেষ করে তরুণদের ভাবা দরকার, তারা নতুন বছরকে স্বাগত জানাচ্ছে যেন নতুন বছর কল্যাণ বয়ে আনে। এ সময় তারা যদি অপ্রত্যাশিত, শিষ্টাচার বা আচরণবহির্ভূত কোনও কাজ করে, তাহলে সেটি কোনও মঙ্গল বয়ে আনে না। এসব ঘটনা দেশীয় গণমাধ্যম ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেরও দৃষ্টিগোচর হয়।
তারা বলছেন, শুধু থার্টি ফার্স্ট নয়, যেকোনও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলেই নিরাপত্তার ঘাটতির বিষয়ে পুলিশের ওপর আঙুল তোলা হয়। যখনই পুলিশি নিরাপত্তা ভেদ করে কোনও ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, তা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। থার্টি ফার্স্ট নাইট শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপন করে। কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশ অতীত অভিজ্ঞতায় কোনও ধরনের ঝুঁকি নিতে চায় না, সে কারণেই এই রাত উদযাপনে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। খোলা জায়গায় অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেওয়া হয় না। শুধু চার দেয়ালের ভেতর নিজস্ব পরিসরে কিংবা হোটেল-রেস্তোরাঁয় যে যার মতো উদযাপন করতে পারবে।তরুণ প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা বলছেন, শুধু থার্টি ফার্স্ট নয়, উৎসব উদযাপনের জন্য নিরাপত্তা ও কড়াকড়ি থাকাটা যৌক্তিক। কারও সঙ্গে কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা, হাতাহাতি, মারামারি বা কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার সুযোগ থাকবে না, যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সজাগ থাকেন। আগেও থার্টি ফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে অনেক বিশৃঙ্খলার বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, যা তরুণ সমাজের কর্মকাণ্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখার জন্য। অনেক সময় আমাদের দেশের যে সংস্কৃতি, তার সঙ্গে মেলে না, এমন কাজকর্মের কারণে নানা ধরনের প্রশ্ন তৈরি হয়। তখন দায় আসে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেনি বলেই এমন হয়েছে। সে কারণেই পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে। আমাদের দেশে কিছু উচ্ছৃঙ্খল তরুণ-তরুণী রাস্তার ওপর বিভিন্ন ধরনের উত্তাপ তৈরি করে। এ ছাড়া অতীতে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তাকে দৃষ্টান্ত হিসেবে নিয়েই কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। এদিকে জঙ্গিদের হুমকি তো আছেই। কারণ তারা উৎসবকে কেন্দ্র করে তাদের কার্যক্রম করার চেষ্টা করে। সে জন্যই এসব পদক্ষেপ যৌক্তিক বলে আমি মনে করি।’