বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১০:০৯ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক: সুগন্ধি আর ঝাঁঝে ভরপুর লাল,কালো নাগা মরিচ। এটি এমন এক ফসল যার মাঝে রয়েছে প্রচুর ঝাল,স্বাদ ও গ্রাণের সমন্বয়। সিলেটে বিভাগের মৌলভীবাজার জেলায় এরই আঞ্চলিক নাম নাগামরিচ। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য স্থানে এটি ‘বোম্বাই মরিচ’ বা ‘ফোটকা মরিচ’ নামে পরিচিত।
ব্যাপকভাবে চাষকৃত ঐতিহ্যবাহী নাগামরিচের ঝাঁঝ এখন মৌলভীবাজারের শ্রীঙ্গলের গণ্ডি পেরিয়ে স্থান করে নিয়েছে বহির্বিশ্বে। দেশে নাগা মরিচ ঝাল প্রিয় মানুষের প্রিয় খাদ্য ছাড়াও নাগা মরিচের তৈরি আচারের চাহিদা রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বিশেষ করে সিলেটের ইউরোপে বসবাসকারী বাঙালি ও বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে সাতকরা ও নাগা মরিচের আচার সর্বজনপ্রিয় নাম।
মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন স্থানে হলেও শ্রীমঙ্গলে নাগামরিচের উৎপাদন সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলের রা অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি ব্যস্ত রয়েছে নাগামরিচ চাষে। ফসলটি লাভজনক হওয়ায় ছোট-বড় অনেক চাষিরা এখন নাগামরিচের চাষ করছেন। লেবু ও আনারসের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে এখন এই নাগামরিচ চাষ করা হয় নির্মাঞ্চল ও পাহাড়ের উচু নিচু অঞ্চল জুড়ে।
মৌলভীবাজার জেলার নাগামরিচ দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। ফলে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের চাষিরা নাগামরিচ চাষে হয়ে উঠেছেন আগ্রহীরা। শ্রীমঙ্গল উপজেলার দিলবরনগর,মোহাজেরাবাদ,বিষামনি,রাধানগর এবং ডলুছড়া এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন নাগা মরিচ চাষে।
বিভিন্ন এলাকায় এসব চাষিরা জানান, অল্প খরচে এটি একটি লাভজনক ফসল। বিশেষ করে লেবু গাছের নীচে ও পতিত জায়গায় এ ফসলের চাষ বেশি করা হয়। সব মানুষের কাছে এই নাগামরিচের কদর আলাদা। এ নাগামরিচ দিয়ে সুস্বাদু বিভিন্ন ধরনের আঁচার তৈরি করা হয়। যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে লন্ডন আমেরিকা কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বাঙালি অধ্যুষিত দেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। সাধারণ মরিচ থেকে বহুগুণ বেশি ঝালের কারণে ২০০৭ সালে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস করে এবং নাগামরিচকে পৃথিবীর সবচেয়ে ঝাল মরিচ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছিল। মোহাজেরাবাদ এলাকার কৃষক রুনু মিয়া জানান, নাগা মরিচ সঠিকভাবে চাষ করতে পারলে এর থেকে অনেক লাভ করা যায়।
গতবছর এক হাজার নাগা মরিচের চারা চাষ করে প্রায় ৭লাখ ৫০ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করেছি। যেখানে খরচ হয়েছিল ৬২হাজার টাকার মতো। রাধানগর এলাকার কৃষক ইসলাম মিয়া বলেন, গতবছর ১৫শ’ নাগা মরিচের চারা লাগিয়ে ছিলাম। যা থেকে ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকার মতো মরিচ বিক্রি করেছি। লাভজনক হওয়ায় এবারও ৩হাজার গাছের চারা লাগিয়েছি।
মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে,মৌলভীবাজার জেলায় আরও অধিক পরিমাণে ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নাগা মরিচ বা বোম্বাই মরিচ চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। পাহাড়ি ঠিলা বেষ্টিত ও নির্মাঞ্চল এলাকার এ জেলা নাগা মরিচ চাষের সম্পূর্ণ উপযোগী।
বর্তমানে জেলায় যে পরিমাণ নাগা মরিচ চাষ হচ্ছে তাতে পাওয়া যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।
মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল বারী এ প্রতিবেদককে বলেন, মৌলভীবাজার জেলা জুড়ে অধিক পরিমাণে ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নাগামরিচ বা বোম্বাই মরিচ চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।