1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০২:২৮ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

২৮ ফ্রেবুয়ারী সচেতনতা দিবস: ডায়াবেটিসে ভুগছেন? ব্রত পালনে নো টেনশন

  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ২১১ বার পঠিত

:আফতাব চৌধুরী :
রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম। প্রত্যেক মুসলমান রোজা রাখবেন,এটাই স্বাভাবিক। অনেকেই আছেন, যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তারা একদিকে যেমন রোজা রাখতে চান, অন্যদিকে ডায়াবেটিস নিয়ে রোজা রাখা যাবে কিনা বা কীভাবে রাখতে হব, তা নিয়ে দ্বিধাদ্ব›েদ্ব ভোগেন। অনেকে ভয়ে রোজা রাখেন না, অনেকে নিজের মত করে ঔষধ পরিবর্তন করে রোজা রাখতে চান। মোট কথা, ডায়াবেটিস রোগীর রোজা রাখা নিয়ে অনেক রোগী এমনকি অনেক ডাক্তারও বিভ্রান্তিতে ভোগেন। অথচ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য রোজা রাখা অনেক সহজ করে দিয়েছে। ডায়াবেটিস হলে রোগী রোজা রাখতে পারবেন না, একথা মোটেই ঠিক নয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং আলেমরা রোজা রাখার পক্ষেই মত দিয়েছেন। সুতরাং, যে-সব ডায়াবেটিস রোগী ঝুঁকির কথা জেনেও ধর্মীয় কারণে রোজা রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তারা রোজা শুরুর আগেই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে জটিলতা এড়িয়েই রোজা রাখতে পারেন। ডায়াবেটিসে অনেক ধরনের জটিলতা হতে পারে। যেহেতু একজন রোজাদারকে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকেতে হয়, তাই তাদের জটিলতার সম্ভাবনা আরও বেশি। রোজার সময় ডায়াবেটিস রোগীদের যে-সব জটিলতা হতে পারে তা হলো রক্তের সুগার অতিরিক্ত কমে যাওয়া অথবা বেড়ে যাওয়া, পানিশূন্যতা এবং ডায়াবেটিক কিটো-এসিডোসিস। এছাড়া অনেকে এই মাসে রোজা রেখেও বাকি সময় অতিরিক্ত খাওয়া-দাওয়া করেন এবং ব্যায়াম বা হাঁটাচলা প্রায় করেনই না। ফলে রক্তের চর্বি এবং শরীরের ওজন বেড়ে যায়, অনেক সময়ই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে না। অনেকক্ষণ খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকলে রক্তে সুগারের মাত্রা কমে যেতে পারে, তাই বলে হাইপোগøাইসিমিয়া। বিশেষ করে যারা সালফোনাইল ইউরিয়া জাতীয় ঔষুধ খান ইনসুলিন নেন, সেহরি খান না বা খুব কম খান অথবা রোজা রেখে অতিরিক্ত পরিশ্রম করেন, তাদের এই ঝুঁকিটা বেশি। হাইপোগøাইসেমিয়া বোঝার উপায় হলো, বুক ধড়ফড় করা, অতিরিক্ত ঘামুনি, মাথাঘোরা, শরীর কাঁপা, চোখে ঝাপসা দেখা ইত্যাদি। এতে রোগী অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে সম্ভব হলে সঙ্গে সঙ্গে রক্তের সুগারের পরিমাণ পরীক্ষা করে দেখা উচিত।
সুগারের পরিমাণ ৩ বা এর নীচে হলে রোজা ভেঙ্গে ফেলতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে গøুকোজ বা চিনির শরবত বা যে, কোনও খাবার খেয়ে নিতে হবে। রক্তে সুগার কখনও কখনও অতিরিক্ত বেড়ে যেতে পারে, তাকে বলে হাইপারগøাইসিমিয়া । এর লক্ষণ হলো জিহŸা শুকিয়ে যাওয়া, মাথাঘোরা, পানিশূন্যতা, দুর্বলতা, ঝিমুনি, বমি ইত্যাদি। এক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে রক্তের সুগার পরীক্ষা করতে হবে এবং এর পরিমাণ বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ইনসুলিন নিতে হবে। রোজা অবস্থায় ইনসুলিন ইনজেকশন নিলে রোজা নষ্ট হবে না বলেই অনেক ইসলামি চিন্তাবিদের অভিমত। শরীরের পানিশূন্যতা দূর করার উপায় হলো রাতের বেলা পানি বেশি বেশি পান করা। তারপরও যদি রোজা রাখা অবস্থায় পানিশূন্যতার পরিমাণ বেশি হয়, যেমন জিহবা অতিরিক্ত শুষ্ক হওয়া, বেশি বেশি মাথা ঘোরানো, প্র¯্রাবের পরিমাণ অতিরিক্ত কম ইত্যাদির কোনও লক্ষণ দেখা যায়, সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে রোজা ভাঙ্গতে হবে। যারা বেশি বেশি কায়িক পরিশ্রম করেন বা বাইরে অতিরিক্ত গরমের মধ্যে কাজ করেন, তাদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি বেশি থাকে। অতিরিক্ত গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে পানিশূন্যতা আরও প্রকট হতে পারে। যারা শুধুমাত্র খাদ্য নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখেন, তাদের জন্য রোজা সুবর্ণ সুযোগ। রোজা তাদের জন্য কোনও জটিলতা সৃষ্টি করে না, বরং রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। রোজায় দিনের বেলা খাওয়া থেকে বিরত থাকা ও ইফতার এবং সেহরিতে সময়মতো পরিমিত আহারের অভ্যাস যে, কোনও ডায়াবেটিক রোগীকে সংযম ও শৃঙ্খলার শিক্ষা দেয় যা ডায়াবেটিসে চিকিৎসার মূল উপাদান।
এর মাধ্যমে রোগী তারা রক্তের সুগার এবং চর্বির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারেন, বাড়তি ওজন ঝেড়ে ফেলতে পারেন। অনেকে রোজার সময় অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ করেন, অনেকে আবার খুবই অল্প খাবার খান। মনে রাখতে হবে, ডায়াবেটিক রোগীর জন্য দু’টিই ক্ষতিকর। এক্ষেত্রে নীচের পরামর্শগুলো মেনে চলা যেতে পারে-(১) সেহরি সঠিক সময়ে খাওয়া,(২) ইফতারের সময় বেশি চর্বিযুক্ত বা মিষ্টিজাতীয় খাবার না খাওয়া,(৩) ভাজাপোড়া খাবার অল্প পরিমাণে খাওয়া, (৪) পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও অন্যান্য তরল গ্রহণ,(৫) খাদ্যের ক্যালরি ঠিক রাখা এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, (৬) ইফতারের অতিভোজন এবং সেহরিতে অল্প আহার পরিহার করা। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনও কোনও ক্ষেত্রে মুখে ঔষধ খাবার প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে যারা মেটফরমিন, গিøটাজোন অথবা ইনক্রিটিন জাতীয় ঔষধ খেয়ে থাকেন, তাদের হাইপোগøাইসেমিয়া হওয়ার ঝুঁকি অনেক কম। তবে সানফোনাইল ইউরিয়া জাতীয় ঔষধ অথবা ইনসুলিন রক্তের সুগারের মাত্রা কমিয়ে দিয়ে হাইপোগøাইসেমিয়া করতে পারে। তাই এসব ঔষধ গ্রহণকারী রোগীর উচিত রমজানের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে রাখা। রোজায় ডায়াবেটিক রোগীর ঔষধের কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন হতে পারে। সাধারণত যে-সব পরিবর্তন করা হয়, তা হলো, যারা তিনবার ঔষধ খান তাদের বেলায় বেশি মাত্রায় ইফতারের সময় খাবেন এবং সেহরির সময় কম করে খাবেন। যদি দিনে দু’বার খেতে হয় তবে সকালের মাত্রাটি ইফতারের শুরুতে এবং রাতের মাত্রাটি অর্ধেক পরিমাণে সেহরির সময় খাবেন। যারা ইনসুলিন গ্রহণ করেন, তারা রোজায় দীর্ঘমেয়াদি ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারেন, এতে হাইপোগøাইসিমিয়ার সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃত কম। এই ইনসুলিন ইফতারের সময় নিতে হবে এবং প্রয়োজনে শেষ রাতে অল্পমাত্রায় নিতে হবে। ইনসুলিন গ্রহণকারী রোগীদের অবশ্যই রমজানের আগে ইনসুলিনের ধরন ও মাত্রা ঠিক করে নিতে হবে। বিশেষজ্ঞ ইসলামি চিন্তাবিদ ও আলেমদের মতামত অনুযায়ী রোজা রাখা অবস্থায় দিনের বেলায় রক্ত পরীক্ষা করা এমনকী প্রয়োজনে ইনসুলিন ইনজেকশন নেওয়া যাবে, এতে রোজা নষ্ট হবে না, সম্ভাব্য জটিলতা এড়ানোর জন্য ডায়াবেটিক রোগীর উচিত সেহরির দু’ঘন্টা পর এবং ইফতারের এক ঘন্টা আগে রক্তের সুগার পরীক্ষা করা।
এছাড়া দিনের বেলায় অধিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম থেকে বিরত থাকা উচিত। ইফতার বা রাতের খাবারের এক ঘন্টা পর ব্যায়াম করা যেতে পারে। ডায়াবেটিক রোগীর রোজা রাখা যাবে, কি যাবে না, তা নিয়ে বহু বিতর্ক ছিল এবং আছে। যেহেতু রোজা ফরজ, তাই অজুহাত বা আলস্য করে রোজা পালন থেকে বিরত থাকা উচিত নয়। কারণ, এক মাস রোজা পালনের মধ্য দিয়ে মানুষের দেহ, মন এবং আত্মার পরিশুদ্ধির সুবর্ণ সময়। ডায়াবেটিস এমনকী অন্য কোনও রোগ হলেও চিকিৎসকরা প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রোজা রাখা বা না রাখার ব্যাপারে অবশ্যই সুপরামর্শ দেবেন।
সাংবাদিক-কলামিস্ট। ২৬.০২.২০২৩

 

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..