1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৫৮ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

ক্রেতাস্বার্থ ও অধিকার : প্রয়োজন সচেতনতা সৃষ্টি

  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৬ মার্চ, ২০২৩
  • ১৯৫ বার পঠিত

আফতাব চৌধুরী
ক্রেতাদের অধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলো সমস্ত ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বর্তমানে সারা বিশ্বে এই অধিকার স্বীকৃতি পেয়েছে যে, আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ক্রেতারা আঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। এই ব্যবস্থায় ক্রেতা ও বিক্রেতা এই দুইপক্ষের মধ্যে যে আদান-প্রদান ও লেনদেন হয় সমাজে তার প্রভাব পড়ে। বিভিন্ন ধরনের পণ্যের ব্যাপক হারে উৎপাদন ও তার বিক্রি থেকে মুনাফা অর্জনের সহজাত যে চিন্তা উৎপাদক ও বিক্রেতাদের থাকে তার ফলে ক্রেতাদের শোষণ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। যেহেতু এখন বাজারের বিশ্বায়ন হয়েছে এবং বিভিন্ন ধরনের পণ্য ও পরিষেবার প্রলোভন ক্রেতাদের কাছে বন্যার মতো আছড়ে পড়ছে, তাই কেনাকাটার বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ কঠিন হয়ে পড়েছে।
ইন্টারনেট, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড, এটিএম-এর মতো প্রযুক্তিবাহিত সুবিধাগুলো একদিকে যেমন ক্রেতাদের কাজকে সহজতর করেছে অন্যদিকে, এ থেকে নিরাপত্তাজনিত সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। ক্রেতা বা গ্রাহক হিসাবে ভুসিমাল থেকে আসল জিনিসটি চিনে নিতে জানতে হবে, অন্যথায় কষ্টার্জিত অর্থে নিম্নমানের পণ্য বা পরিষেবা কিনে প্রতারণা বা ঠকার ঝুঁকি থাকছে। এই কারণেই ক্রেতা সুরক্ষা পরিতৃপ্তির মতো বিষয়গুলোর স্বীকৃতির প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। ফিলিপ কোটালারের মতে, ক্রেতা সুরক্ষার বিষয়টি একটি সামজিক আন্দোলনের মতো। এর মধ্য দিয়ে বিক্রেতাদের সঙ্গে তুল্যমূল্য হিসাবে ক্রেতাদের অধিকার ও ক্ষমতাবৃদ্ধি করতে চাওয়া হয়ে থাকে। আজকের দিনে ক্রেতারা তাদের টাকার উচিত মূল্য চায়। এছাড়া, এমন পণ্য বা পরিষেবা তারা চায় যা তাদের সঙ্গত প্রত্যাশা পূরণ করবে এবং যা নিরাপদে পূরণ করা যায়। অন্য সংশ্লিষ্ট পণ্য বা পরিষেবা বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যও ক্রেতারা চায়। এই প্রত্যাশাগুলোকেই ক্রেতাদের অধিকার বলা হয়ে থাকে।
ত্রæটিপূর্ণ পণ্যদ্রব্য, পরিষেবার ঘাটতি, নামকরা সংস্থার নকল পণ্য এবং মিথ্যা প্রচারমূলক বিজ্ঞাপনে চারিদিক ভরে গিয়েছে। নিরীহ ত্রেতারা অনেক সময়েই এর প্রলোভনে পা দেয়। ক্রেতাদের অধিকাশংই বিশেষ করে, গ্রামের ত্রেতাদের অনেকেই নিরক্ষর। তাদের অনেক বিষয়েই সচেতনতা ও জ্ঞানের ঘাটতি রয়েছে। ক্রেতারা কোনো পণ্য ক্রয় বা পরিষেবা ভোগ করার ক্ষেত্রে নানা ধরণের ঝুঁকির মুখে পড়েন। এছাড়া, যে কোনো পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে এমন কিছু আর্থিক ঝুঁকি থাকে যাতে তারা তাদের টাকার পূর্ণ মূল্য পান না অথবা পণ্যের জন্য অধিক মূল্য দিতে হয় কিংবা কোনো পণ্যের ক্রয়ের ক্ষেত্রে লুকানো দাম দেওয়ার মতো ঘটনার ফলে তাদের শোষিত হতে হয়। এমন অনেক ঘটনা রয়েছে যেখানে বিমার দাবি মেটাতে অনর্থক সময় নেওয়া হয়, পণ্য বা পরিষেবার জন্য বেশি দাম নেওয়া, একই জিনিষের দু’বার দাম নেওয়া, বিল দিতে দেরি করা, পেনশন প্রদানে বিলম্ব, ভুল বিল ঠিক-করা, উল্টোপল্টা বিজ্ঞাপন, পরিষেবা ক্ষেত্রে যা দেওয়ার কথা ছিল তা না-দেওয়ার মতো বিষয়গুলো থাকে। এছাড়া, ফ্ল্যাটের মালিকানা পেতে দেরি হওয়া, চেক থেকে প্রতিশ্র“তি মতো অর্থ না-মেলা, ব্যাংকে জমা দেওয়া চেক হারানো, চেকে সই জাল হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। এমন উদাহরণও অনেক আছে, যেখানে কোম্পানিরা অর্থলগ্নির জণ্য আকর্ষণীয় ফেরত লাভের বা অল্প সময়ে দ্বিগুণ করার প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দেয় এবং এই প্রলোভনে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা তুলে চম্পট দেয়। বেশ কিছু মানুষ এমন জমি কিনে প্রতারিত হয়েছেন যা আগেই অন্য কারো কাছে বিক্রি করা হয়েছে। একই ফ্ল্যাট দুজনকে বিক্রি করার ফলে প্রকৃত ক্রেতাকে তার অধিকার প্রমাণ করতে দীর্ঘদিন ধরে আইনি লড়াই করতে হয়। শেয়ার কিনতে গিয়েও এমন হয়েছে যেখানে ক্রেতাকে আদৌ শেয়ার দেওয়া হয় না, এমনকি টাকাও ফেরত দেওয়া হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই ধরনের ঘটনায় সাধারণ ক্রেতা বা গ্রাহককে তাদের কষ্টার্জিত সঞ্চয়ের বিরাট পরিমাণ অর্থ থেকে বঞ্চিত হতে হয়। ক্রেডিট কার্ড সংক্রান্ত যেসব অভিযোগ পাওয়া যায় তার মধ্যে রয়েছে অযাচিতভাবে কার্ড পাঠানো, যথাসময়ে কেনাকাটার হিসেব না-পাঠানো, অতিরিক্ত পরিমাণে সার্ভিস চার্জ আদায় করা, যথাসময়ে অর্থ পরিশোধ করা সত্তে¡ও লেট ফি নেওয়া, ক্রেডিট কার্ড পরিষেবা বন্ধ না-করা, কার্ডের মালিককে না-জানিয়ে কার্ডের কার্যকারিতা বন্ধ করে দেওয়া এবং কার্ডের ঋণের অর্থ পরিশোধের জন্য আদায়কারীদের হামলার ঘটনাও রয়েছে। এটিএম পরিষেবা ত্রæটিপূর্ণ হওয়াতে ও গ্রাহকদের ভোগান্তি হয়। চলিত বছরে সরকারের গ্রাহক পরিষেবা মূল লক্ষ্য স্থির হয়েছে গ্রাহকদের আর্থিক লেনদেন বিষয়ে ওয়াকিবহাল করা, যাতে বিপণনকারীরা কোনো ভাবেই তাদের বোকা বানাতে না পারে।
বাংলাদেশ হচ্ছে একটি দেশ যেখানে প্রগতিশীল আইনের অভাব হয় না। সারা দেশের গ্রাহক সুরক্ষা আন্দোলনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে গ্রাহক সুরক্ষা আইনটি। ওই আইনটি অধিকার সুরক্ষার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করেছিল। সরকারি, বেসরকারি ও সমবায় ক্ষেত্রে লেনদেন হওয়া সব পণ্য ও পরিষেবাকে এই আইনের আওতায় রাখা হয়েছে। সরকারের বিশেষ অনুমতিতে অবশ্য কোনো কোনো ক্ষেত্রকে আইনটির আওতা থেকে ছাড় দেওয়া হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গ্রাহকদের সমস্ত অধিকারই এই আইনে সুরক্ষিত হয়েছে। গ্রাহক বা ক্রেতাদের অধিকার সুরক্ষিত রাখতে ও বৃদ্ধি করতে জেলাও জাতীয় স্তরে ক্রেতা সুরক্ষা পরিষদ গঠন করা হয়েছে। গ্রাহকের অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের মতো মঞ্চও গড়ে তোলা হয়েছে।
সচেতন গ্রাহক যে কোনো সমাজেরই সম্পদ হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে। কোনো গ্রাহক যখন বিমার পলিসি নেন, তখন তার সমস্ত নথিপত্র খুঁটিয়ে দেখাও পড়া উচিত, ভালো এজেন্ট নিয়োগ করা উচিত, সংশ্লিষ্ট পলিসিতে বিমার আওতায় কী কী বিষয় তাও জানা দরকার এবং কীভাবে বিমার জন্য প্রাপ্ত অর্থের দাবি জানাতে হয় তা জেনে রাখা উচিত।
অনুরূপভাবে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার আগে শর্তগুলো ভালোভাবে পড়ে নেওয়া দারকার, সুদের কোন হার ঋণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে তাও জেনে রাখা ভালো। তাছাড়া ঋণ পরিশোধের পরিকল্পনা, সময়সীমা জানা এবং অন্যান্য ঋণ প্রকল্পের তুল্যমূল্য সুবিধাগুলোও খতিয়ে দেখা উচিত। এই ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে লুকানো খরচ সম্বন্ধে জানা এবং খেলাপের ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক শর্তগুলো আগে থেকে জেনে নিতে হয়। ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে সুদের হার, পরিশোধের খেলাপে শাস্তিমূলক শর্ত এবং অন্যান্য শর্তগুলো খুঁটিয়ে জেনে নিয়ে তবেই এই ধরনের কার্ডের গ্রাহক হওয়া উচিত। ব্যাংক ও বিমা পরিষেবার ক্ষেত্রে সমস্যা বা অভিযোগ নিরসনের জন্য সহজে ও বিনামূল্যে ওমবাডম্যানের মধ্যস্থতা পাওয়া যেতে পারে।
যে সমস্ত বিজ্ঞাপনে গ্রাহকদের তথ্যের ও পছন্দের অধিকার লঙ্ঘিত হয় তাতে প্রভাবিত না হওয়াই ভালো। কারণ এই ধরনের বিজ্ঞাপনে প্রলোভিত হলে অর্থের ক্ষতি ও মানসিক শান্তি বিঘিœত হতে পারে। টাকা দ্বিগুণ করার আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনগুলো থাকতে হবে।
খোলাবাজারের শক্তি ও গ্রাহকদের অধিকারের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। গ্রাহকদের পরিতৃপ্তির ওপর গ্রহক পরিষেবা আন্দোলনের সফলতা নির্ভর করে। তারা তাদের পণ্য পরিষেবার যথাযথ মূল্য যেন পায় তা দেখতে হবে। তবে এর জন্য সরকার, বিচারব্যবস্থা, ক্রেতা ও বিক্রেতাদের কাজের সমন্বয় থাকা প্রয়োজন।
সাংবাদিক-কলামিস্ট।

 

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..