শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:১৮ পূর্বাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট : এ বছরের শুরু থেকে অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুসালেমে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের উত্তেজনা ও সহিংসতা বেড়ে গেছে, বিশেষ করে লায়ন্স ডেন নামের একটি ফিলিস্তিনি গ্রুপের সঙ্গে। আরবিতে এই গ্রুপটির নাম আরীন আল উসুদ।
সশস্ত্র আন্দোলনকারী নতুন এই গ্রুপটির উত্থান হয়েছে পশ্চিম তীরের উত্তরাঞ্চলীয় নাবলুস শহরের পুরোনো অংশ থেকে।
ইসরায়েলি সৈন্য ও বসতি স্থাপনকারীদের ওপর সম্প্রতি যেসব হামলা পরিচালিত হয়েছে, এই গ্রুপটিই তার পেছনে রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
এই গ্রুপের সদস্য ও সমর্থকরা মূলত তরুণ ফিলিস্তিনি এবং তারা দাবি করে যে গত কয়েক দশক ধরে যেসব দল বা গোষ্ঠী ফিলিস্তিনি রাজনীতিকে পরিচালনা করছে সেগুলোর সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
তাহলে এরা কারা এবং তাদের এই আবির্ভাব কতটা তাৎপর্যপূর্ণ?
‘ক্রুদ্ধ ফিলিস্তিনি তরুণ’
‘লায়ন্স ডেন হচ্ছে একদল ক্রুদ্ধ ফিলিস্তিনি তরুণের একটি গ্রুপ। এদের বেশিরভাগেরই বয়স কুড়ির ঘরে। পশ্চিম তীর অথবা গাযায় যেসব রাজনৈতিক দল আছে তারা এগুলোর কোনোটির সাথে জড়িত নয়। তারা হচ্ছে এমন একটি গ্রুপ যারা মূলত ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করার ওপর জোর দিচ্ছে,’ বলেন ইব্রাহিম জিবরিল দালালশা, যিনি পশ্চিম তীরের রামাল্লাহ শহরভিত্তিক হরাইজন সেন্টার ফর পলিটিক্যাল স্টাডিজ নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক।
সশস্ত্র এই গ্রুপটি প্রধানত নাবলুস শহরে সক্রিয়, বিশেষ করে আল-ইয়াসমিনা এলাকায়।
গত কয়েক মাসে এই গ্রুপের সঙ্গে যোগ দিয়েছে বহু ফিলিস্তিনি তরুণ।
যদিও বর্তমান কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এই গ্রুপের আনুষ্ঠানিক কোনো সম্পর্ক নেই, তবে এর কিছু কিছু সদস্যের আগে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
‘এটি একটি নির্দলীয় গ্রুপ, তারা একটি একক মিলিশিয়া বাহিনীর জন্য কাজ করছে, যদিও তাদের কেউ কেউ লায়ন্স ডেনে যোগ দেওয়ার আগে বিশেষ কিছু গ্রুপের সঙ্গে জড়িত ছিল। যেমন ইসলামিক জিহাদ অথবা আল-আকসা মার্টার্স ব্রিগেডস, হামাস অথবা ফাতাহ,’ বলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় রিচমন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দানা এল কুর্দ।
এই গ্রুপের শুরু যেভাবে
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথমে এই গ্রুপটির নাম ছিল নাবলুস ব্যাটালিয়ন। সেসময় এই গ্রুপে ১০ জনের বেশি সদস্য ছিল না।
জেনিন শরণার্থী শিবিরে গড়ে ওঠা একটি সামরিক গ্রুপ জেনিন ব্যাটালিয়ন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে গঠিত হয় এই নাবলুস ব্যাটালিয়ন।
ওই বছরের অগাস্ট মাসে নাবলুসের একটি বাড়িতে ইসরায়েলি সৈন্যদের অভিযানের সময় এই গ্রুপের শীর্ষস্থানীয় একজন যোদ্ধা ইব্রাহিম আল-নাবলুসিহ তিনজন যোদ্ধা নিহত হন।
আল-নাবলুসিকে হত্যার পর এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
ধারণা করা হয় যে গত বছরের গ্রীষ্মকালে লায়ন্স ডেন গ্রুপটি প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে। ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত যোদ্ধাদের স্মরণে নাবলুস শহরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই নামে গ্রুপটির আবির্ভাব ঘটে।
২০২৩ সালের শুরুর দিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই গ্রুপের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করে এবং হত্যা করে। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এসব ফিলিস্তিনি যোদ্ধার বিরুদ্ধে ইসরায়েলি টার্গেটে হামলা পরিচালনার অভিযোগ আনা হয়।
এর পরেই এসব যোদ্ধার ছবি ও ভিডিও সোশাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে টিকটকে।
এর কয়েক মাস পরে মুখোশ পরিহিত কয়েকজন বন্দুকধারী নাবলুসের ওল্ড সিটির অলিগলিতে সশস্ত্র মিছিল বের করে। এ ঘটনায় ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।