সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২৯ অপরাহ্ন
সামাদ আহমেদ আবির : মিরপুরে আজ সাকিব আল হাসানের দলের সামনে সুযোগ ছিল এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জেতার। সেই সুযোগ লুফে নিয়েছে টাইগাররা। বোলারদের দাপুটে পারফরম্যান্সের পর নাজমুল হোসেন শান্ত’র দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৪ উইকেটের জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। তাসকিন আহমেদের দাপুটে ফিনিশিংয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
টাইগার বোলিং অ্যাটাকের সামনে নাস্তানাবুদ হয়ে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ কেবল ১১৭। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে মেহেদী হাসান মিরাজের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের ব্যাটিং লাইনের সামনে ৮ জন বোলারকে দিয়ে বল করিয়েছে বাংলাদেশ। ৩ ইকোনমিতে মিরাজের ঝুলিতে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট। তাসকিন, সাকিব, মুস্তাফিজ, হাসান মাহমুদের একটি করে।
সিরিজ জয়ের জন্য বাংলাদেশকে ১২০ বলে করতে হত ১১৮ রান। শুরুটা ভালো করেও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি লিটন দাস। স্যাম কারেনকে ওভার বাউন্ডারি হাঁকাতে যেয়ে ক্যাচ হয়েছেন বাউন্ডারি লাইনে। ফেরার আগে ৯ বলে ৯ করেন লিটন। সমান ৯ রানেই বিদায় নিতে হয়েছে আরেক ওপেনার রনি তালুকদারকে।
রেহান আহমেদের অভিষেক উইকেট তৌহিদ হৃদয়। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে শান্ত’র সঙ্গে জুটি গড়ে ১৮ বলে ১৭ করেছেন হৃদয়। এরপর মিরাজকে নিয়ে লড়াই চালান নাজমুল হোসেন শান্ত। ইনিংসের ১৫তম ওভারে মইন আলিকে চার-ছক্কায় মোট ১২ রান খরচ করান মিরাজ-শান্ত। কিন্তু পরের ওভারে আর্চার অ্যাকশনে আসতেই বিদায় নেন মিরাজ। ২ ছক্কায় ১৬ বলে ২০ রান আসে মিরাজের ব্যাট থেকে।
জয়ের জন্য শেষ ৪ ওভারে ২১ রান দরকার হয় বাংলাদেশের। সাকিব আল হাসান ফিরে যান শূন্যহাতে। ৩ ওভারে প্রয়োজন হয় ১৬ রানের। আর্চার স্টাম্প ভেঙ্গে বিদায় করেন আফিফ হোসেন ধ্রুবকে (২)। ৪ ওভারে মাত্র ১৩ রান খরচায় আর্চার দখলে নেন ৩ উইকেট। ক্রিস জর্ডানের করা পরবর্তী ওভারেই অবশ্য জয় নিশ্চিত করে টাইগাররা, ৭ বল ও ৪ উইকেট হাতে রেখে।
এর আগে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে জিতে আগে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। অধিনায়কের সিদ্ধান্তের সঠিক উপহার এনে দিলেন তাসকিন আহমেদ। ডেভিড মালানকে ফিরিয়ে দেন ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই। ফের ব্যর্থ মালান, আজ করেছেন পাঁচ।
আরেক ওপেনার ফিল সল্ট তিনে নামা মইন আলিকে নিয়ে পাওয়ার-প্লের বাকি ওভারগুলো শেষ করেন। কিন্তু সপ্তম ওভারে সাকিব আল হাসান অ্যাকশনে আসতেই ভেঙে যায় জুটি। সাকিব ফিরতি ক্যাচ নিয়ে ফেরান ১৯ বলে ২৫ করা সল্টকে। দুর্দান্ত হাসান মাহমুদ আজ নিজের শুরুর ওভারেই পেলেন সাফল্য। ইংলিশ ক্যাপ্টেন জস বাটলারের স্টাম্প ভেঙে ফেলেন দারুণ এক ইয়র্কার ডেলিভারিতে।
এরপর মিরাজ এসে বিদায় করলেন মইন আলিকে (১৫)। ৫০ থেকে ৫৭ রানের মধ্যে ৩ উইকেট খুইয়ে ফেলে ইংল্যান্ড। ৩ ওভারে যেন রীতিমতো ধ্বংসস্তূপ হয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন। তারপর অবশ্য বেন ডাকেট ও স্যাম কারেনের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে।
ধীরগতির ব্যাটিংয়ে ৩২ বলে ৩৪ করেন এই দুই ব্যাটার। কিন্তু মেহেদী হাসান মিরাজ ২য় স্পেলে এসেই দখলে নেন জোড়া শিকার। ওভারের দ্বিতীয় বলে স্যাম কারেনকে (১২) স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে এক বল পরেই ক্রিস ওকসকে একই স্টাইলে বিদায় জানালেন। উইকেটের পেছনে থেকে মিরাজের জোড়া শিকারের কারিগর লিটন দাস। দলীয় ৯১ রানে ৬ষ্ঠ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।
১৬.৫ ওভারে ১০০ রান পূর্ণ করে ইংল্যান্ড। পরের বলেই মিরাজকে ওভার বাউন্ডারি হাঁকাতে যেয়ে রনি তালুকদারের হাতে ক্যাচ হন ১০ বলে ৩ করা ক্রিস জর্ডান। মিরাজের নামের পাশে ১২ রান খরচায় ৪ উইকেট। এটিই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে মিরাজের সেরা বোলিং ফিগার।
বেন ডাকেট সর্বোচ্চ ২৮ রানের ইনিংস খেলে মুস্তাফিজের করার শেষ ওভারের শুরুতেই ফিরে যান। আদিল রশিদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউটে কাটা পড়েন রেহান আহমেদ। একই ভাবে শেষ বলে রান আউটের শিকার জফরা আর্চার। শেষপর্যন্ত ১১৭ রানে অল-আউট হয়ে যায় ইংল্যান্ড।