1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৩ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

মৌলভীবাজারের চা বাগানে রঙের মেলা

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১২ মার্চ, ২০২৩
  • ২১৩ বার পঠিত

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের চা বাগানে চা বাগানে চলছে ফাগুয়া উৎসব। কেউ এটিকে বলেন দোল উৎসব, কেউ বলেন বসন্ত উৎসব, কেউবা বলেন লাল উৎসব। নাম যাই হোক এর সাপ্তাহব্যাপী আয়োজনে চলছে নানান ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান সাথে রং খেলা ও আনন্দ উৎসব।যা মৌলভীবাজার জেলা জুড়ে এনে দিয়েছে বারতি আনন্দ।
প্রবীণ চা শ্রমিকনেতা রাজেন্দ্র প্রসাদ বুনার্জী জানান, দোল পূর্নিমার এই উৎসবকে চা বাগানে ফাগুয়া উৎসব বলে। ফাগুন মাসে দোল পূর্ণিমা তিথিতে চাঁদনী রাতে বন থেকে কাঠ সংগ্রহ করে হোলিকা দাহ করা হয়। উদ্দেশ্য অশুভ বিনাশ আর সত্যের জয়ে বিজয় আনন্দে পরের দিন সবাই হোলি খেলে। এই আনন্দে সবাই মেতে উঠে রং খেলায়।যা হোলি উৎসব বা ফাগুয়া উৎসব হিসেবে খ্যাত।
ফাগুয়া উৎসবকে সামনে রেখে বাগানে বাগানে পৃথক পৃথক আনন্দানুষ্ঠানের আয়োজন হলেও বিগত তিন বছর ধরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ফুলছড়া চা বাগানের মাঠে সিলেট বিভাগের সকল চা বাগানেরর সংস্কৃতিসেবীদের অংশগ্রহনের আয়োজন করা হয় ফাগুয়া উৎসবের।
শনিবার সন্ধ্যায় শ্রীমঙ্গল ফুলছড়া চা বাগানে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন ভারতীয় সহকারী হাই—কমিশনার সিলেট এর নীরাজ কুমার জায়সওয়াল।
নীরাজ কুমার জায়সওয়াল বলেন, বাংলাতথা ভারতীয় উপমহাদেশের সংস্কৃতির শিকর অনেক প্রাচীন। সময়ের আবর্তে এই মুল্যবান সংস্কৃতি হারিয়ে যেতে বসেছে। তিনি বলেন, চা জনগোষ্টী যে সংস্কৃতি ধরে রেখেছে এর কোন একাডেমিক চচার্ নেই, নেই প্রশিক্ষন। তারা যা করছেন তাদের ভিতর থেকে। বংশ পরমপরায় তারা তা ধরে রেখেছেন। তিনি বলেন, কিছুক্ষন তাদের সাথে থাকলে তাদের সাথে মিশলে বুঝাযাবে তাদের সারল্যতা। অনুভব করা যাবে তাদের প্রকৃতিগত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি কত সমৃদ্ধ।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ভানুলাল রায়, উপজেলা নিবার্হী কর্মকতার্ আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন, রাজঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিজয় বুনাজীর্ ও কালিঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রাণেশ গোয়ালা।
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, বর্তমান সরকার সংস্কৃতি বান্দব। এই ফাগুয়া উৎসবে প্রধানমন্ত্রীও অনুদান পাঠিযেছেন।

যেখানে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ফাগুয়া উৎসবে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন চা বাগানে বসবাসরত চা জনগোষ্টীর নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি গান, কাঠিনৃত্য, ঝুমুর নৃত্য, দন্ডনাছ, ঘটি নৃত্য, আবৃতি ও নাটকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। যেখানে চা শ্রমিকদের আয়োজনে সামিল ছিলেন উপজেলা প্রশাসনও।
চা শ্রমিক নেতা পরিমল সিং বারাইক জানান, গত ৭ মার্চ ভগবানের চরণে আবির দিয়ে উৎসবের সূচনা হয়। তার আগের রাতে হোলিকা দাহ করা হয়। তিনি বলেন, শাস্ত্রে আছে অসুর রাজ হিরণ্যকশিপু তার বিষ্ণুভক্ত পুত্র প্রহ্লাদকে হত্যা করতে ফাগুন মাসের পুর্ণিমা তিথিতে ব্রহ্মার বর প্রাপ্ত তার বোন হোলিকাকে আগুন নিয়ন্ত্রক পোষাক পড়িয়ে (যিনি আগুনে পুড়বেন না) ছেলেকে কোলে দিয়ে আগুনে নিক্ষেপ করেন। কিন্তু প্রহ্লাদ কৌশলে সেই পোষাক খোলে নিজের গায়ে জড়িয়ে দেন। এতে সেই আগুনে পুড়ে হোলিকা মারা যান, আর প্রহল্লাদ আগুনের ভিতর থেকে নিরাপদে বেড়িয়ে আসেন।
প্রহল্লাদ বেড়িয়ে আসলে নগরবাসী আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেন। অনেকে মনের আনন্দে রং খেলেন। সেই সময় থেকে হোলিকা দহনের মাধ্যমে অশুভকে পুঁড়িয়ে সত্যকে প্রতিষ্টা করা হয়। এই উৎসবকে অনেকে হোলি উৎসব হিসেবে অভিহিত করে আসছেন।
চা শ্রমিক নেতা প্রাণেশ গোয়ালা জানান, চা বাগানে এই উৎসবটি বৃহত আকারে পালিত হয়। এর জন্য বাগান থেকে বোনাসও দেয়া হয়। তিনি বলেন চা বাগানে শ্রমিকদের দুটি বোনাস দেয়া হয় একটি শরৎকালে শারদীয় দুর্গোৎসবের সময় আরেকটি ফাগুয়া উৎসবের সময়। এই সময় চা শ্রমিকরা অন্যরকম আনন্দে মেতে উঠে। প্রথম দিন তারা পেক খেলে। অর্থাৎ কাদা মাটিদিয়ে একজন আরেকজনকে রাঙ্গিয়ে দেয়। পরের দিন থেকে শুরু হয় রং খেলা সাথে চলে নানান অনুষ্ঠান।
শ্রীমঙ্গল ভুরভুরিয়া চা বাগানের যুবক রাজেস জানান, চা বাগানে সাপ্তাহিক ছুটি রবিবার হলেও শ্রীমঙ্গল ভুরভুরিয়া চা বাগানে সাপ্তাহিক ছুটি নেয়া হয় গত শুক্রবার।
বাগানের যুবসমাজ হোলি উৎসবের জন্য এই দিনটিকে বাছাই করে আয়োজন করে উৎসবের। সকাল থেকেই শুরু হয় রঙ খেলা। বৃদ্ধ, শিশু, যুবক, যুবতি দুপুরের আগেই রঙে রঙ্গিন। দুপুরের দিকে বাগানের নাট মন্দিরের কাছে বড় বটগাছের ঝুলন্ত ডালে বেঁধে দেয়া হয় মিষ্টির হাড়ি। যিনি এটি ভাঙবেন পাবেন পুরস্কার। পানি দিয়ে পিচ্ছিল করে দেয়া হয় এর নিচ। এই পিচ্ছিলেই তৈরী করা হয় মানববেদী।কিন্তু বেদিটি বার বার ভেঙ্গে পড়ে। কেউই উপরে উঠতে পারেন না। প্রায় দুইঘন্টা চেষ্টার পর হাড়ি ভাঙ্গেন বিশ্বজিৎ খেরুয়ার।তাকে দেয়া হয় পুরস্কার।
একই সাথে বিভিন্ন বাগানে চলছে কাঠি নৃত্য, ঝুমুর নৃত্য ও দন্ড নাছসহ তাদের ঐতিহ্যগত বিভিন্ন অনুষ্ঠান মালা। কমলগঞ্জ ফুলবাড়ি চা বাগানের সংস্কৃতিকর্মী মিলন জানান, ১০জনের কাঠি নৃত্যের একটি টিম নিয়ে তারা বিভিন্ন বাগানে ঘরে ঘরে গিয়ে নৃত্য ও গান পরিবেশন করছেন। এতে অনেকে দুই টাকা পাঁচ টাকা করে দেয়। এগুলো দিয়ে তারা দুপুরের খাবার খান।
একই সাথে ফাগুনের এই পূর্ণিমা তিঁথিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমতি রাধিকাকে নিয়ে রঙ খেলায় বা হোলি খেলায় মত্ত হন বলে একে বলে দোল পূর্নিমা। যার অনুকরণ চলে আসছে যুগের পর যুগ ধরে।
শ্রীমঙ্গল শ্রীশ্রী জগন্নাথ জিউর আখড়ায় দোল পূর্নিমা উৎসবে আগত কলকাতার ধর্মগুরু প্রভুপাদ গুরুরাজ কিশোর গোস্বাম বলেন, ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে দোলযাত্রা বা দোল উৎসব উদযাপন হয়। বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, এই ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে বৃন্দাবনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আবির আর রং নিয়ে শ্রী রাধা রাণী ও অন্যান্য গোপীগণের সঙ্গে রং খেলেছিলেন। যুগযুগ ধরে তারই অনুকরণ দোল উৎসব। তবে শাস্ত্রীয় ভাবে তার আরো অনেক ব্যাখ্যা ও বিষয় রয়েছে যা বিশদ আালোচনার প্রয়োজন। তবে দোলপূর্ণিমার পাঁচদিন পর পঞ্চম দোলের মিধ্যদিয়ে এ উৎসবের সমাপ্ত হয়।
এই দোল উৎসবের সময় শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে আসা কানাডিয়ান নাগরিক আদ্রিজা চা বাগানের শ্রমিকদের সাথে রং খেলায় অংশনেন। এ সময় তিনি বলেন, এটি ছিল অন্যরকম এক আনন্দ। চা শ্রমিকরা মনের আনন্দে তাকে রং লাগিয়ে দিয়েছে। মানব বেদী তৈরী করে উপড়ে উঠে হাড়ি ভেঙ্গেছে। আর হাড়ি ভাঙ্গার পর পর সবাই আনন্দে মেতে উঠে। তিনিও তাদের সাথে যোগদেন।কিছু সময়ের জন্য তিনি যেন অন্য এক ভূবনের ছিলেন।
এই দোল বা ফাগুয়া উৎসবের সাথে জড়িয়ে আছে রাধা কৃষ্ণের অমর প্রেম কাহিনি। তেমনি আছে অশুভকে হারিয়ে শুভ শক্তির জয়।

 

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..