1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১১:৩৭ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

সমলিঙ্গ বিবাহ নিয়ে ভারতে বিতর্ক

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০২৩
  • ১৭৫ বার পঠিত

ডেস্ক রিপোর্ট : ভারতে ‘সমলিঙ্গ বিবাহ’ বা সেইম সেক্স ম্যারেজের আইনি স্বীকৃতি দাবি করে সুপ্রিম কোর্টে যে বেশ কয়েকটি মামলা করা হয়েছিল, তা বিবেচনার জন্য বিষয়টি পাঁচ সদস্যের একটি সাংবিধানিক বেঞ্চে রেফার করা হয়েছে। সেই বেঞ্চে ওই আবেদনের শুনানি হবে আগামী ১৮ এপ্রিল।

দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ বলেছে, সমলিঙ্গ বিবাহ এমন একটি ইস্যু যার ‘সেমিনাল ইমপর্ট্যান্স’ বা সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য আছে – ফলে এটি সাংবিধানিক বেঞ্চে শোনাই বাঞ্ছনীয়।

শুধু তাই নয়, পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে ওই শুনানি ইন্টারনেটে ‘লাইভ স্ট্রিম’ বা সরাসরি সম্প্রচার করতে হবে বলেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য ইতোমধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছে তারা একই লিঙ্গের দুজন ব্যক্তির মধ্যে বিয়েকে স্বীকৃতি দিতে রাজি নয়, কারণ এর ফলে সমাজ-জীবনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে তারা মনে করছে।

দেশের আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেছেন, ‘সরকার মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বা নাগরিকদের নিজস্ব কার্যকলাপে কোনো ধরনের ব্যাঘাত (ডিস্টার্বেন্স) ঘটাতে চায় না, কিন্তু যেখানে বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটি জড়িত সেটা সম্পূর্ণ আলাদা একটি নীতির প্রশ্ন।’

সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা পেশ করেও সরকার তাদের এই বক্তব্য প্রধান বিচারপতিকে জানিয়ে দিয়েছে।

এর আগে ২০১৮ সালে ভারতের শীর্ষ আদালতই এক ঐতিহাসিক রায়ে ইন্ডিয়ান পিনাল কোডের ৩৭৭ ধারাকে ‘ডিক্রিমিনালাইজ’ করার কথা ঘোষণা করেছিল – যার ফলে ভারতে সমকামিতা কিংবা যে কোনও দুজন ব্যক্তির মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক আর অপরাধ বলে গণ্য নয়।

ভারতে এলজিবিটিকিউদের ক্ষমতায়নের আন্দোলনের সঙ্গে যারা যুক্ত, তারা মনে করছেন সেই অর্জিত অধিকারকেই এখন আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় এসেছে এবং তাদের অনেকে সুপ্রিম কোর্টে এই মামলাগুলো করেছেন সেই পটভূমিতেই।

আবেদনকারীরা যুক্তি দিচ্ছেন, সমাজের একটা শ্রেণীর মানুষকে শুধু তাদের ‘সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশনে’র কারণে বিবাহের অধিকার থেকে রাষ্ট্র বঞ্চিত করতে পারে না।

পাশ্চাত্যের বহু দেশে সমলিঙ্গ বিবাহ স্বীকৃতি পেলেও পুরো এশিয়াতে একমাত্র তাইওয়ান-ই এই ধরনের সম্পর্ককে ‘বিয়ে’র মান্যতা দেয়।

সেই নিরিখে ভারত এই মহাদেশে দ্বিতীয় দেশ হিসেবে সেই স্বীকৃতি দেবে কি না, এই প্রশ্নটিকে ঘিরেই বর্তমান মামলাটি ভারতে সমকামিতার অধিকারের ক্ষেত্রে একটি মাইলস্টোন ইভেন্টের মর্যাদা পেয়েছে।

সরকারের হলফনামা
ভারতে সেইম সেক্স ম্যারেজের বৈধতার দাবিতে করা মোট কুড়িটি মামলা একত্র করে গতকাল (সোমবার) সুপ্রিম কোর্টে তার শুনানির দিন ধার্য করেছিল প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি পি এস নরসিমহা ও বিচারপতি জে বি পারডিওয়ালার বেঞ্চ।

শুনানির আগের দিনই (রবিবার) কেন্দ্রীয় সরকার এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য লিখিত হলফনামা বা এফিডেভিটের আকারে শীর্ষ আদালতের কাছে পেশ করে।

৫৬ পৃষ্ঠার ওই হলফনামায় বলা হয়, একই লিঙ্গের দুজন ব্যক্তি যদি একত্রে বসবাসও করেন (লিভিং টুগেদার), যেটা এখন আর কোনও অপরাধ নয়, তার পরেও ভারতীয় সমাজে ‘পরিবারে’র ধারণার সঙ্গে তার কোনও তুলনাই হতে পারে না।

সুপ্রিম কোর্টকে আরও জানানো হয়, পরিবার বলতে ভারত বোঝে স্বামী, স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে গঠিত একটি ইউনিট। হিন্দু, মুসলিম বা খ্রীষ্টান – দেশের সবগুলো প্রধান ধর্মের ক্ষেত্রেই এটা সত্যি।

একটা সেইম সেক্স (সমলিঙ্গ) রিলেশনশিপ আর একটা হেটেরোসেক্সুয়াল (নারী ও পুরুষের মধ্যেকার) সম্পর্ক কোনওভাবেই এক নয় এবং দুটোকে একই মাপকাঠিতে বিচার করা যায় না বলেও যুক্তি দেওয়া হয় ওই হলফনামায়।

পরদিন (সোমবার) আদালতের বাইরেও আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু জানিয়ে দেন, যেখানে দুজন পুরুষ বা দুজন নারীর সম্পর্ককে ‘বৈবাহিক’ স্বীকৃতি দেওয়ার কথা আসছে সেখানে বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত প্রশ্ন বলেই সরকার মনে করে।

তিনি বলেন, ‘সরকার কারও ব্যক্তিগত জীবনযাপনে হস্তক্ষেপ করছে না। এটা নিয়ে কোনও বিভ্রান্তি থাকা উচিত নয়। নাগরিকদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বা নিজস্ব কার্যকলাপেও সরকার কোনওভাবে ডিস্টার্ব করবে না।’

‘কিন্তু যখন বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটির কথা আসছে, সেটা কিন্তু অন্য একটা নীতিগত প্রশ্ন – যা নিয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার দরকার আছে,’ মন্তব্য করেন মি রিজিজু।

আদালতে সওয়াল-জবাব
সুপ্রিম কোর্টে আবেদনকারীদের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে সিনিয়র আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি বলেন, কোনও ব্যক্তির সেক্স, সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন বা জেন্ডার আইডেন্টিটির কারণে তাকে বিবাহের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না।

বাদীদের তরফে আর একজন আইনজীবী, সিনিয়র অ্যাডভোকেট এন এন কাউল যুক্তি দেন, ভারতের স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট (বিশেষ বিবাহ আইন) কিন্তু ‘যে কোনও দুজন ব্যক্তির মধ্যে’ বিবাহের অনুমতি দেয় – সেখানে তাদের আর কোনো পরিচয় বিচার্য হতে পারে না।

এর আগে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা শীর্ষ আদালতকে বলেন, নভতেজ সিং জোহর বনাম রাষ্ট্র মামলায় (সমকামিতার স্বীকৃতি) সুপ্রিম কোর্ট যে ‘ভালবাসার অধিকার’, ‘প্রকাশ করার অধিকার’ কিংবা ‘ফ্রিডম অব চয়েস’ দিয়েছে তাতে “কেউ কোনওভাবে হস্তক্ষেপ করছে না।”

তবে সেই রায়টি যে বিবাহের অধিকারসহ এধরনের আর কোনো অধিকার দিচ্ছে না সেটাও সুপ্রিম কোর্ট উল্লেখ করেছিল- মনে করিয়ে দেন তুষার মেহতা।

আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী মেনকা গুরুস্বামী যুক্তি দেন, এমন কী হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্টও সমলিঙ্গ বিবাহকে স্বীকৃতি দিয়েছে – কারণ ওই আইনের ৫ নম্বর ধারায় শুধু দুজন হিন্দুর মধ্যে বিয়ের কথা বলা হয়েছে – আর কোনও মাপকাঠি আসেনি।

কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে স্পষ্ট করে দিয়েছে, তারা সেইম সেক্স ম্যারেজকে বিবাহের প্রচলিত সংজ্ঞা থেকে দূরে রাখতে চায় – কারণ সে ক্ষেত্রে এই ধরনের সম্পর্কের পার্টনারদের মধ্যেও ধনসম্পদ, উত্তরাধিকার, সম্পত্তি বা পেনশনের অধিকার নিয়েও পরে নানা জটিল প্রশ্ন উঠবে।

সলিসিটর জেনারেল বিষয়টি পার্লামেন্টের ওপর ছেড়ে দেওয়ারও দাবি তুলেছিলেন, কারণ সরকার মনে করে একজন বায়োলজিক্যাল পুরুষ ও একজন বায়োলজিক্যাল নারীর মধ্যেকার বৈবাহিক সম্পর্ক ছাড়া আর অন্য কোনও সম্পর্ককে বিয়ে বলে মানলে তা সম্পূর্ণ বিপর্যয় (‘কমপ্লিট হ্যাভক’) ডেকে আনবে।

সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আইনপ্রণেতাদের ওপর না ছেড়ে দিয়ে সাংবিধানিক বেঞ্চেই পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যে দিকে এখন নজর সারা দেশের।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..