1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৪৯ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

রমজানে ইফতার

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০২৩
  • ২৩৩ বার পঠিত
আফতাব চৌধুরী

রমজান এর বেশ ক’দিন অতিবাহিত। ইফতার প্রথা ক্রমে শুরু হয়ে গেছে বিভিন্ন স্তরে। উল্লেখ্য, আরবি বারো মাসের নবম মাস রমজান সমগ্র মুসলিম জাগতে নিয়ে আসে ত্যাগ তিতিক্ষা ও সংঘমের বার্তা। মাসটা হলো পূণ্য অর্জনের এক মহান মাস। এ মাসের একটি এবাদতের মুল্য অন্য মাসের সত্তরটি এবাদতের মূল্যের সমান অর্থাৎ এ মাসে একটি এবাদত করলে এর সওয়াব মাসের সত্তরটি সওয়াবের সমান। এছাড়া পবিত্র কুরআন শরীফ এ মাসেই অবর্তীন হয়েছে আর পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, রোজা হলো আল্লাহর পরম সান্নিধ্য লাভের প্রধান উপায়। মুসলমানদের আচার ব্যবহার, সংযত কথাবার্তা, দান খয়রাত ইত্যাদি রমজান মাসে একটা আলাদা শান্তিময় পরিবেশের সৃষ্ঠি করে। দেখা হলে একে অন্যকে শুভেচ্ছা বিনিময়, মসজিদে একত্রিত হয়ে তারাবির নামাজ আদায় করা প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মুসলিমই করে থাকেন। বলা যায়, রমজানে ঘুসখোর, মদখোর, মাদকদ্রব্য সেবনকারীরাও রোজার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের উদ্দেশ্য নিজেদের পাপমোচন করতে সচেষ্ট হন। এমন মহান মাসের পবিত্রতা ও গুরুত্বটা কি? বর্তমানে আমরা সঠিকভাবে বা সঠিক অর্থে অনুধাবন করতে পারছি না। কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, রমজানের প্রকৃত তাৎপর্য থেকে দুরে সরে গিয়ে আমরা শুধু বাহ্যিক দিকটাকেই, আড়ম্বরকেই প্রাধান্য বা গুরুত্ব দিচ্ছি। এতসব কথা বলার কারন হলো বর্তমানের ইফতার প্রথা । ইফতার রোজার একটা অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। রোজাদারকে ইফতার করানো সুন্নত ও অনেক পূণ্যের কাজ। রমজানে মুসলমানরা আত্মীয়স্বজন তথা গরীবদের ইফতার প্রধান করেন। এতে একদিকে যেমন সৃসম্পর্ক বজায় থাকে, অন্যদিকে একটা শান্তিপূর্ন সৌহার্দ্যময় পরিবেশেরও সৃষ্টি হয়। সামর্থ অনুযায়ী প্রত্যেক ব্যাক্তিই নিজ খুশি মতে ইফতার করাতে পারেন। এর কোনও ধরা বাঁধা নিয়ম নেই। তবে বর্তমানে ইফতারটা একটা প্রথায় পরিণত হয়ে গেছে। বিগত দিন থেকে ইফতারটা এতদঞ্চল ‘স্ট্যাটাস সিম্বল’-এ পরিণত হচ্ছে। বিশেষ করে মেয়ের শশুর বাড়িতে ইফতার পাঠানো যেন একটা প্রতিযোগিতার বহর দেখা যায়। প্রয়োজনের অধিক প্রচুর খাদ্যসামগ্রী পাঠানো যেন একটা গর্বের সম্মানের ব্যাপার এমনটাই মনে করেন অনেকেই। আর নতুন বিয়ে হলে তো কথাই নেই দু‘তিনবার ইফতার সামগ্রী পাঠানো যেন একটা রেওয়াজে পরিণত হয়ে গেছে।
এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গরিব কন্যাদারগ্রস্ত পিতারা। এমনিতেই বাজারে দ্রব্যমূল্যের চড়াদাম। ফলে হয়ত কোনও গরিব পিতাকে মেয়ের বাড়িতে অনেক কষ্টে টাকা সংগ্রহ করে দু’তিনবার ইফতার পাঠাতে হয়। ভালোভাবে ইফতার পাঠাতে না পারলে যদি মেয়েকে শশুরবাড়ির লোকের লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সইতে হয়, এই ভয়েই বাধ্য হয়েই ইফতার পাঠাতে হয় পিতাকে। ভালোভাবে ইফতার সামগ্রী পাঠাতে না পারলে যদি সমাজের কাছে নববধুকে বা তার পরিবারের লোকদের হেয় প্রতিপন্ন হতে হয়, যা এতদঞ্চলে অহরহ ঘটছে। এদিকে ইফতার পাঠাতে গিয়ে হয়ত সেই পরিবারের সদস্যদের বা ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ঈদের জামাকাপড় বা খাদ্যসামগ্রী জোটানোও মুশকিল হয়ে পড়ে। ফলে ঈদের আনন্দ ¤øান হচ্ছে সেসব পরিবারে। আর অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, এর ফলে সত্যিকার অর্থে আমরা ইফতারের প্রকৃত তাৎপর্য থেকে দূরে সরে যাচ্ছি।
খুশি ও শান্তি একে-অপরের পরিপূরক। শান্তির আবহেই মূর্ত ও জাগ্রত হয়ে ওঠে। কিন্তু আমরা কি সেই শান্তির, খুশির আবহ তৈরি করতে পারছি? নিয়ম তো আমাদেরই সৃষ্টি। আমাদেরই তৈরি কোনও নিয়ম যদি সমাজের জন্য হানিকর, অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে সেই নিয়মের বিরুদ্ধে প্রত্যেক শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সচেতন মানুষেরই রুখে দাঁড়ানো উচিত। এ প্রসঙ্গে পয়গন্বরের বক্তব্য উল্লেখযোগ্য। হযরত মোহাম্মদ (স.) আরফার ময়দানে বিদায়ী হজের শেষ বক্তব্যে তাঁর উম্মতদের উদ্দেশে বলেছেন, সেটা হলো কোনও মুসলমানের কাছেই কোনও মুসলমানের দেওয়া জিনিষ ততসময় পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য হবে না যতসময় পর্যন্ত সে নিজ ইচ্ছায়, স্ব-ইচ্ছায় বা মুক্তমনে তা দিচ্ছে। জোর করে কেউ কারও উপর কোনও কিছু চাপিয়ে দিতে, আদায় করতে পারবে না। ইসলামে জোরাজুরি, জবরদস্তির কোনও বিধান নেই।
তাই ইফতার নিয়েও আমাদের এরূপ দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন। এ বিষয়ে প্রত্যেক শুভবুদ্ধিসম্পন্ন, সচেতন নাগরিক তথা এতদঞ্চলের বিশিষ্ট আলেমদেরই এগিয়ে আসতে হবে। ইফতার প্রথাটা যাতে বাধ্যতামূলক না হয়, সে-বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। সুখের কথা হলো, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধর্মীয় বিভিন্ন সংগঠন তথা শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সচেতন নাগরিকের এ প্রথা রোধ করতে অনেকটাই সমর্থ হয়েছেন। আর জনসাধারণেরও এতে মেলে স্বতঃস্ফুর্তি সমর্থন। বলতে দ্বিধা নেই, একমাত্র বাঙালি মুসলিম সমাজেই ইফতারি প্রথাটা বাধ্যতামূলক বা নিয়মে পর্যবসিত হয়েছে। তাই ইফতারি প্রথা রোধ করাটা প্রয়োজন অবিলম্বে। এতে হয়তো কায়িক, ব্যবসায়িক স্বার্থ ক্ষুন্ন হবে ব্যবসায়ীদের, তবে সমাজের বেশিরভাগ মানুষ কিন্তু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন এছাড়াও আর একটা নব কালচার এতদঞ্চলে পরিলক্ষিত হচ্ছে ইদানীং সেটা হলো ইফতার পার্টি। বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিই তথা সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এমন পার্টির আয়োজন করে থাকেন। আপাতদৃষ্টিতে এটা খারাপ না হলেও এতে একটা প্রশ্নচিহ্ন রয়ে যায়, সমাজের বেশিরভাগ লোক যখন অর্ধাহারে অনাহারে ভুগছেন তথা সামান্যতম ইফতারের আয়োজন করতেও হিমশিম খাচ্ছেন, সেখানে মুষ্টিমেয় কয়েকজনের ইফতার পার্টি আয়োজনের যৌক্তিকতা কতটুকু? প্রবল দ্রব্যমূল্যের দরুন ইফতারের জন্য দেদার খরচ বিলাসিতারই নামান্তর তথা দৃষ্টিকটুও দেখায় বটে। ইফতার পার্টি নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে যদি এতে সমাজের গরিব-দুঃখিদের সামিল করা হয়, তা হলে অবশ্যই এর আয়োজন করাটা সার্থক হবে। এসব কথা মনে রেখেই চলতে হবে পবিত্র রমজান। সাংবাদিক-কলামিস্ট।
২৮.০৪.২০১৭

 

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..