বুধবার, ০৭ জুন ২০২৩, ০৪:৪১ পূর্বাহ্ন
আফতাব চৌধুরী
পণ্যসামগ্রীর গায়ে আগুনের আঁচ বেড়েই চলেছে। দাম তো কমছেই না। বরং হু হু করে দ্রব্যম‚ল্য বেড়েই চলছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় বর্ধিত দ্রব্যম‚ল্যের এই ধাক্কা সামলাতে গিয়ে রীতিমত কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন সীমিত আয়ের মানুষ। দ্রব্যম‚ল্যের তপ্ত চাবুকে দিশেহারা ক্রেতারা। দ্রব্যম‚ল্যের ঊর্ধ্বগতির শিকার প্রধানত দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তথা শ্রমিক, ক্ষেতমজুর, কৃষক, পেশাজীবী, কারিগর, নির্দিষ্ট আয়ের কর্মচারী প্রমুখ। মেহনতি মানুষের মজুরি বাড়ে না, কৃষক ফসলের যুক্তিসঙ্গত দাম পায় না, কর্মচারীদের বেতন দ্রব্যম‚ল্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাড়ে না। কিন্তু জিনিষপত্রের দাম ক্রমাগতই বাড়তে থাকে এমনকী লাফিয়ে লাফিয়েও। ফলে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা তথা ‘প্রকৃত আয়’ কমতে থাকে। শুরু হয় দ্রব্যম‚ল্য নিয়ে মানুষের যাতনা। ‘প্রকৃত আয়’ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে চলে যায় অনেক মাস-বছর। ততদিনে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়ে তার ‘প্রকৃত আয়’কে আবার পেছনে ফেলে দেয়। ফলে দ্রব্যম‚ল্যের যন্ত্রণা চলতে থাকে নিরন্তর। দ্রব্যম‚ল্যের ‘পাগলা ঘোড়া’র যন্ত্রণা থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য মানুষের ‘প্রকৃত আয়ের’ ধারাবাহিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য একসঙ্গে নিতে হবে দুই দিক থেকে পদক্ষেপ। প্রথমত, ব্যাপক জনগণের ধারাবাহিক আয় বৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, পণ্যম‚ল্য বৃদ্ধির প্রবণতা কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ম‚ল্য এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যেন তা স্থিতিশীল থাকে কিংবা বৃদ্ধি পেলেও তা যেন কখনওই আয় বৃদ্ধির সাধারণ হারের ঊর্ধ্বে না উঠে।
দ্রব্যম‚ল্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জীবন চালাতে গিয়ে বর্তমানে দেশের সৎ ও স্বচ্ছল মানুষেরও জীবনে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা তার স্বল্প আয়ের কারণে যেমন সীমিত থাকে, ঠিক তেমনি জিনিষপত্রের বাজারদর দ্বারাও তা নিয়ন্ত্রিত হয়। বিত্তবানদের জন্য দ্রব্যম‚ল্য প্রত্যক্ষভাবে কখনই তেমন একটা সমস্যা নয়। কারণ তার আয় প্রায় সীমাহীন। জিনিষপত্রের দাম যতোই বাড়ুক, সবই তার নাগালের মধ্যে। কিন্তু সাধারণ মানুষ যে আয় করে তা দিয়ে তাকে হিসেব করে জিনিষপত্র কিনতে হয়। দ্রব্যম‚ল্যের সঙ্গে জীবন যাত্রার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। একটি পরিবার কীভাবে তাদের দৈনন্দিন জীবনকে নির্বাহ করবে তা নির্ভর করে তাদের আয়, চাহিদা এবং দ্রব্যম‚ল্যের ওপর। প্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের ম‚ল্য যখন সহনীয় পর্যায়ে এবং সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে, তখন তাদের জীবন কাটে স্বস্তিতে। অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ম‚ল্য যখন সাধারণ মানুষের আর্থিক সঙ্গতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপ‚র্ণ হয়ে যায়, তখন দরিদ্র এবং অতি দরিদ্র পরিবারে শুরু হয় অশান্তি। তাই দ্রব্যম‚ল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে একদিকে জনজীবনে নেমে আসে কষ্টের কালো ছায়া। স¤প্রতি পেঁয়াজের ম‚ল্যবৃদ্ধির আশঙ্কাজনক পর্যায়ে উপনীত হওয়ায় তা ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’-তে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে আলোচিত বিষয় হলো পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। পেঁয়াজ নিয়ে যেন তুঘলকি কাÐ দৈনন্দিন জীবনে আমাদের বেঁচে থাকার
জন্য প্রয়োজন হয় অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা। আর এই মৌলিক মানবিক চাহিদাগুলোর মধ্যে অন্নের প্রয়োজন সর্বাগ্রে। কিন্তু খাদ্যদ্রব্য, চাল, ডাল, তেল, লবণ, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, মাছ, তরকারি, চিনি, দুধ ইত্যাদি নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় জিনিষের ম‚ল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি জনজীবনের গতিকে অচল ও আড়ষ্ট করে তোলে। দ্রব্যম‚ল্য বৃদ্ধি দেশের অন্যতম সমস্যা হিসেবে আবির্ভ‚ত হয়েছে।
আজ দ্রব্যম‚ল্যের ঊর্ধ্বগতি জনজীবনে অস্বস্তিকর অবস্থা সৃষ্টি করেছে। আমাদের সাধারণ মানুষের আয় ম‚ল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপ‚র্ণ নয়। ফলে লাগামহীন ম‚ল্যবৃদ্ধির কারণে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ সব চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয়। ভারসাম্যপ‚র্ণ অবস্থা বজায় রাখতে অবশ্যই দ্রব্যম‚ল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রতিহত করতে হবে। দ্রব্যম‚ল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে অসাধু ব্যবসায়ী, মজুতদার ও কালোবাজারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলেই মানুষ এই অভিশাপ থেকে রক্ষা পাবে। সাংবাদিক-কলামিস্ট।